সাভারে ভবন ধসকে ‘প্যান কেক শেপ কলাপস’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বলছেন, এ ধরণের ধসের ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি৷ নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ ত্রুটির কারণে এটা হয়ে থাকে৷ এতে হতাহতের পরিমাণ হয় সবচেয়ে বেশি৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে এ ধরণের ভবন ধস অতীতে হয়নি৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধিকে নিয়ে শুক্রবার সরেজমিন পরিদর্শন করেন সাভারের ধসে যাওয়া রানা প্লাজা৷ তিনি সেখানে উদ্ধারকর্মী এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে ধসে পড়া ভবনটির নির্মাণ সামগ্রী পর্যবেক্ষণ করেন৷ পর্যক্ষেণের পর তিনি জানান, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও নির্মাণ ত্রুটিই এই ভয়াবহ ভবন ধসের কারণ৷
তিনি জানান, ভবনের পিলারগুলো ২ ফুট বাই ৩ ফুট ছিল৷ কিন্তু এ ধরণের বহুতল ভবনের পিলার হওয়া উতিত কমপক্ষে ৪ ফুট বাই ৬ ফুট৷ ভবনের বিম ও কলামের সংযোগ স্থলে কাটা রড ব্যবহার করা হয়েছিল৷ আর সেটা জোড়া লাগানো হয়েছিল খুবই নিম্নমানের ধাতব তার দিয়ে৷ রডও ব্যবহার করা হয়েছিল খুবই সাধারণ মানের৷ এর কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়৷
সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে বহু হতাহত
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷
ছবি: Reuters
আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷ সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তবে ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহু হতাহত
১০ মে সকাল পর্যন্ত ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে ১০৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই’
ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে৷ এমন ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই৷ এ কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন
সাভারে ধসে পড়া বহুতল ভবনে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা৷ সকালে ভবন ধসের পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে আসেন৷ এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters
রক্ত চাই
ধ্বংসস্তুপ থেকে থেকে উদ্ধার করা শত শত আহতের জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ এজন্য ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে রক্ত দানে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সংগঠনও রক্ত সংগ্রহে নেমেছে৷
ছবি: Reuters
জোর করে ঢোকানোর অভিযোগ
আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ ভবনে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যেতে না চাইলেও মালিকরা তাদেরকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ছবি: Reuters
ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি
‘রানা প্লাজা’ ইমারত বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর৷ বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
হরতাল প্রত্যাহার
উদ্ধার তৎপরতা নির্বিঘ্ন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার পথে বাঁধা দূর করতে হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: Harun Ur Rashid
সরকারের আশ্বাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷
ছবি: dapd
খালেদার শোক প্রকাশ
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ উদ্ধারকাজ যথাযথভাবে চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদা জিয়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
ড. কামাল বলেন, নিম্নমানে ইটই শুধু ব্যবহার করা হয়নি, বালু ও সিমেন্টের অনুপাতও ঠিক ছিল না৷ আর দেয়াল ঢালাই না করে ইটের গাঁথুনি দেয়া হয়েছিল৷ এছাড়া, আশেপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণ করে তিনি জানান, জলাভূমি ভরাট করে তৈরি করা হলেও ঠিকমতো পাইলিং করা হয়নি৷ এই সব মিলিয়েই ঘটেছে বিপর্যয়।
এর ফলে ভবনটি ধসে গিয়ে একটি তলার সঙ্গে আরেকটি তলা প্যান কেকের মতো মিশে গিয়েছে৷ দু'টি তলার মধ্যে ফাঁকা আছে মাত্র বিমের ২/৩ ফুট৷ এর কারণ, পিলারগুলো টিকে থাকেনি৷ ফলে শুরুতেই ভবনের ভিতরের থাকা মানুষ বড় একটি অংশ মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা যায়৷ যারা এখনো ভিতরে বেঁচে আছেন তাদের পক্ষে ৭২ থেকে ৯০ ঘণ্টার বেশি টিকে থাকা সম্ভব হবে না৷ তিনি জানান, এ ধরনের ধসকে বলে ‘প্যান কেক শেপ কলাপস'৷ এই ধসে ২টি তলার মাঝে খুবই অল্প জায়গা থাকে৷ তাই উদ্ধার তৎপরতা চালানোও খুব কঠিন হয়ে পড়ে৷
তিনি জানান, ভবনের পিছন দিকটা আগে দেবে গেছে৷ কারণ জলাভূমি পিছনের দিকে৷ তার ওপর, তারের টানে পুরো ভবনটিই বসে পড়েছে৷ আর খারাপ নির্মাণ সামগ্রীর কারণে একটির ওপর আরেকটি তলা বসে গেছে, যা ভিতরে থাকা মানুষগুলোকে দ্রুত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে৷
মাকসুদ কামাল জানান, এই ধরণের ভবন কিভাবে নির্মাণের অনুমতি দেয়া হলো আর নির্মাণের পর তা কিভাবে ব্যবহারের ছাড়পত্র পেল, তা বিস্ময়কর৷