১৬ জন ভারতীয় মৎসজীবী আটক বাংলাদেশে, চিন্তায় পরিবার
মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিলেন এই মৎসজীবীরা। কীভাবে তাদের ফেরানো যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় পরিবার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কাকদ্বীপের ছবি
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপের অনেক বাড়িরই বর্তমান ছবিটা এরকম। সংসারের মূল উপার্জনকারী বাংলাদেশ প্রশাসনের হাতে বন্দি, আর পরিবারের লোকেরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কী ঘটেছিল
গত ২২ নভেম্বর ১৬জন ভারতীয় মৎসজীবীকে আটক করে বাংলাদেশের নৌবাহিনী। অভিযোগ ওই মৎসজীবীরা বাংলাদেশের জল-সীমান্তে ঢুকে পড়েছিলেন। জানা গেছে, বাংলাদেশর নৌবাহিনী সমুদ্রে নজরদারি চালানোর সময় দেশের জলসীমায় অবৈধ গতিবিধি লক্ষ্য করে। এরপরেই অভিযান চালিয়ে ১৬ জন ভারতীয় মৎস্যজীবীকে আটক করা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আগেও ঘটেছে
দেড় মাস আগে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন ৭৯ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী। তারাও সকলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। সকলেই এখনো বাংলাদেশের জেলে বন্দি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পরিবারের বক্তব্য
জানা গিয়েছে, গত ১৫ নভেম্বর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য রওনা দিয়েছিল এফবি ঝড় নামক ট্রলারটি। কাকদ্বীপের হারউড পয়েন্ট এলাকা থেকে ট্রলারটি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন মৎস্যজীবীরা। এরপর ২২ নভেম্বর তাদের আটক করা হয়। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে মৎস্যজীবীদের পরিবার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তেজেন্দ্রের পরিবার
কাকদ্বীপের পশ্চিম গঙ্গাধরপুর এলাকার বাসিন্দা তেজেন্দ্র মাঝি ছিলেন ওই ট্রলারে।পরদিন সকাল ন’টা নাগাদ পরিবারের কাছে খবর আসে বাংলাদেশ প্রশাসন ধরে নিয়ে গিয়েছে তেজেন্দ্রকে। পরিবারের লোকেরা যোগাযোগ করেন ট্রলারের মালিকের সঙ্গে। ট্রলার মালিক তাদের জানান, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ওখানে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে যতটুকু খবর পাওয়া গেছে, তেজেন্দ্ররা কলাপাড়া থানায় আছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাংলাদেশ সূত্র
তেজেন্দ্রের স্ত্রী মঞ্জরী দাসের বাপের বাড়ি বাংলাদেশ। মঞ্জরী জানান, তার বাপের বাড়ির লোকেরা চেষ্টা করেও দেখা করতে পারেননি ওই মৎসজীবীদের সঙ্গে। তেজু মাঝি নামে পরিচিত মঞ্জরীর স্বামী ‘ঝড়’ নামের ট্রলার নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন বাংলাদেশের জলসীমায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বন্দি সুরজিৎ
শিপ্রা দাসের স্বামী সুরজিৎ দাসও এখন বাংলাদেশের নৌবাহিনীর হাতে বন্দি। তার ট্রলারের নাম ‘জয় জগন্নাথ’। শিপ্রা জানাচ্ছেন, তারা বহুবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন ট্রলার কোম্পানির সঙ্গে কিন্তু কেউ ফোন ধরছেন না। ম্যানেজারকে ফোন করলে তিনি ফোন সুইচ অফ করে দিচ্ছেন। এমন অবস্থায় দিশাহারা শিপ্রারা সরকারি মদতের আশায় মুখ্যমন্ত্রীদপ্তরে আবেদন জানিয়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ছেলেকে ছাড়া বাঁচব কী করে
“আমার ছেলেকে ছাড়া বাঁচব কী করে” বলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন প্রসেনজিৎ দাসের মা চিনু দাস। ট্রলার মালিকেরা বলছেন ‘চেষ্টা করছি’, ব্যাস ওইটুকুই। কাকদ্বীপেরই অক্ষয়নগরের বসন্তপুরে থাকেন প্রসেনজিৎ দাস। অভাবের সংসারে হাল ধরতে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরেন তিনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ
সোমবার এই ঘটনা নিয়ে বিধানসভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, মৎস্যজীবীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা তিনি কেন্দ্র সরকারকে জানিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্র এখনো কোনো সদর্থক উত্তর দেয়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
9 ছবি1 | 9
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব লুৎফুন নাহার জানিয়েছিলেন, ভারতীয় মৎস্যজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে। ট্রলারও ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ৯০ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকেও মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।