‘পর্ন ও জুয়া' বিষয়ক ওয়েবসাইটের তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশে আটমাস বন্ধ রাখার পর অবশেষে খুলে দেয়া হয়েছে সামহোয়্যার ইন ব্লগ৷ বিশ্বের প্রথম কমিউনিটি বাংলা ব্লগ সাইটটি এখন আবারো সাধারণ উপায়ে ভিজিট করা যাচ্ছে৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
সামহোয়্যার ইন ব্লগ খুলে দেয়ার ঘোষণাটি ফেসবুকে দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার৷ ২৩ অক্টোবর তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনি হয়তো জানেন না টিকটক, বিগো, সামহয়ারইন ব্লগ এখন আর ব্লক করা নয়৷''
কমিউনিটি ব্লগ সাইটটি খুলে দেয়ার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেকে৷ ব্লগটির সহপ্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পর্ন ও জুয়া সাইটের তালিকাভুক্ত করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দীর্ঘ আট মাস যাবৎ সামহোয়্যার ইন ব্লগটি বাংলাদেশ থেকে বন্ধ রেখে অবশেষে মুক্ত করে দেয়া হলো। গুরুতর অপমান মাথায় নিয়ে সুস্থ ও মুক্ত বুদ্ধির হাজার হাজার ব্লগার এবং পাঠক বিনা কারণে বিগত আটমাস যেন গহীন অরণ্যে নির্বাসিত ছিল।''
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারছবি: bdnews24.com
তিনি বলেন, ‘‘আমরা সাধ্যমত এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লাড়াই করেছি। আজ সত্যের জয় হয়েছে। ব্লগাররা যেন নিজের বাড়িতে ফিরে আসতে পেরে স্বস্তি পেয়েছে, উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে।''
প্রসঙ্গত, সামহোয়্যার ইন ব্লগ বন্ধের পেছনে এর আগে সাইটটির প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের কোনো ক্ষোভ কাজ করেছে বলে দাবি করেছিলেন জানা৷ বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘চুড়ান্ত আপত্তিকর, কুরুচিসম্পন্ন এবং অপমানজনক অন্ধকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইন্টারনেটে মাতৃভাষা বাংলা চর্চার সর্বপ্রথম, সর্ববৃহৎ এবং সমৃদ্ধ প্ল্যাটফর্মটি যিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন, সেই মন্ত্রী জনাব মোস্তফা জব্বার দীর্ঘ আট মাস লেগে গেলেও যেকোনভাবেই হোক অবশেষে নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছেন৷ এর মাধ্যমে স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার অপচেষ্টা উম্মোচিত হয়েছে পরিষ্কারভাবে৷''
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সামহোয়্যার ইন ব্লগে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার আগে দিনে প্রায় চারশ ব্লগ পোস্ট হতো, ৬০ হাজার পাঠক সেটিতে প্রবেশ করতেন৷ সাইটটির নিবন্ধিত ব্লগারের সংখ্যা দুই লাখ। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করে এই সাইটটি বাংলাদেশে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
মিয়ানমারের হিজাব পরা এক ব্লগার
নাম উইন লে ফাইয়ু সিন৷ বয়স ১৯৷ রূপচর্চার বিষয়াদি নিয়ে তিনি ব্লগিং করেন৷ হিজাব পরা এই ব্লগার প্রায়ই সমালোচনা ও বৈষম্যের শিকার হন৷
ছবি: Reuters/A. Wang
মুসলিম ব্লগার
পাঁচ কোটি মানুষের দেশ মিয়ানমারে মুসলমান মাত্র পাঁচ শতাংশ৷ অনেকদিন ধরে তাঁরা সেখানে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন৷ নতুন মসজিদ নির্মাণের অনুমতি পাচ্ছেন না৷ বৌদ্ধ বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে বাসা ভাড়া পেতেও তাঁদের সমস্যা হয়৷ তেমনি এক দেশে ব্লগার হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন হিজার পরা তরুণী উইন লে ফাইয়ু সিন৷
ছবি: Reuters/A. Wang
বিষয় রূপচর্চা
এই বিষয়ে ভিডিও ব্লগিং করেন সিন৷ রূপচর্চার নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি৷ ব্লগার হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রও খুলেছেন৷ এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জন সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Wang
যেভাবে শুরু
সিন জানান, হাইস্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পর তাঁর ছেলেবন্ধু তাঁকে একদিন মেক-আপের কিছু পণ্য উপহার দিয়েছিল৷ কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের নিয়ম তখনো তিনি জানতেন না৷ ফলে গুগলের সহায়তা নিয়ে সেসব বিষয়ে ধারণা নিয়েছিলেন তিনি৷ পরে অন্যদের সাহায্য করতে মেক-আপ বিষয়ে পরামর্শমূলক একটি ভিডিও তৈরি করে ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন৷ সেই থেকে শুরু৷
ছবি: Reuters/A. Wang
অনুসারী বাড়ছে
সিনের ফেসবুক পাতায়ও অনুসারীর সংখ্য প্রায় ছয় হাজার৷ এবং তা দিন দিন বাড়ছে৷ সম্প্রতি রূপচর্চা বিষয়ক পণ্যের এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন তিনি৷ রূপচর্চা নিয়ে ব্লগ করা অন্য ব্লগাররাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ ঐ অনুষ্ঠানে হিজাব পরা ও সারা শরীর ঢাকা সিনের পোশাক আলোচিত হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/A. Wang
‘হিজাব চাবির মতো’
হিজাব পরা নিয়ে সিনের কোনো সংকোচ নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আল্লাহ আমার জন্য অনেক রাস্তা খুলে দিয়েছেন৷ হিজাব আমার কাছে চাবির মতো৷ এটা ব্যবহার করে আমি যেখানে ইচ্ছা যেতে পারি, যা ইচ্ছা করতে পারি৷’’
ছবি: Reuters/A. Wang
সমালোচনা
ফেসবুকে অনেক সমালোচনামূলক মন্তব্য পান তিনি৷ কারণ, রক্ষণশীল মুসলমানদের কাছে মেক-আপ বিষয়টি ট্যাবু হিসেবে বিবেচিত৷ কিন্তু সিন এসব সমালোচনার জবাব দেন না৷ কারণ, এটা তাঁর কাছে শুধু সময়ের অপচয় মনে হয়৷ ‘‘আমার অনেক কাজ,’’ বলেন তিনি৷ ছবিতে সিনকে (ডানে) অন্য ব্লগারদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/A. Wang
বৈষম্যের শিকার
একবার এক বৌদ্ধ নারী যখন জানতে পারেন সিন একজন মুসলিম, তখন তিনি তাঁর (সিন) রূপচর্চার ক্লাস থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন৷ ছবিতে সিনকে পাঠদান শেষে বাড়ি ফিরতে দেখা যাচ্ছে৷