আড়াই হাজার কোটি পাউন্ডের বেশি ব্যবসা হারাবে লন্ডন!
২৭ নভেম্বর ২০২০
ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার বলি হতে পারে লন্ডনের ব্যাংকিং ও আর্থিক কেন্দ্র৷ ঠিক সময়ে ইইউ-র ছাড়পত্র না পেলে বিশাল অঙ্কের লেনদেন হাতছাড়া হয়ে যাবে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনাকে ঘিরে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে লন্ডন শহর নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা সম্পর্কে এতকাল আশাবাদী ছিল৷ ১লা জানুয়ারি ইইউ-র অভ্যন্তরীণ বাজার ও শুল্কমুক্ত এলাকা ত্যাগ করার পরেও বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় লেনদেন আগের মতোই চলবে, এমনটাই ভেবে রেখেছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা৷ কারণ তাঁদের মনে হয়েছিল, ইইউ নিজস্ব স্বার্থে ভবিষ্যতেও লন্ডনের মতো আর্থিক কেন্দ্রের সুবিধা ভোগ করতে চাইবে৷ বিশেষ করে বিষয়টি চূড়ান্ত ব্রেক্সিট সংক্রান্ত মূল আলোচনার বাইরে রাখায় সেই আশা আরও জোরালো হয়েছিল৷
এবার গোটা বিষয়টিকে ঘিরে নতুন অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে৷ ব্রিটেনের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি ভবিষ্যতেও ইইউ-র অভ্যন্তরীণ বাজারের নাগাল পাবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত ১লা জানুয়ারির আগে নেওয়া সম্ভব হবে না বলে ইইউ কমিশনের কিছু সূত্র জানিয়েছে৷ সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হলে ‘সিটি অফ লন্ডন' নামে পরিচিত আর্থিক কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় রপ্তানির গ্রাহক হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং বছরে প্রায় ২,৬০০ কোটি পাউন্ড মূল্যের লেনদেন লোপ পাবে৷
বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনার শুরু থেকে ইইউ ব্রিটেনের কাছে প্রতিযোগিতার ন্যায্য পরিবেশের দাবি করে আসছে৷ লন্ডনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি স্বেচ্ছায় ইইউ মানদণ্ড ও বিধিনিয়ম মেনে চলার অঙ্গীকার করে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে৷ ইইউ সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে একাধিক ‘অ্যাসেসমেন্ট' বা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইইউ কূটনীতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যে ১লা জানুয়ারির আগে সেই প্রক্রিয়ার ফল পাওয়া যাবে না৷ উল্লেখ্য, গত জুন মাসের মধ্যেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হবার কথা ছিল৷ আপাতত সাময়িক অনুমতির ভিত্তিতে লেনদেন চলছে৷ একমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নে দফতরের স্থানান্তর করলেআর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি লেনদেন চালিয়ে যেতে পারবে৷
বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতির অভাবের ফলে ব্রিটেনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে ভবিষ্যৎ লেনদেনের বিষয়টিতেও বিলম্ব ঘটছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন৷ সার্বিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রূপরেখা স্পষ্ট না হওয়ায় ইইউ নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না৷ ১লা জানুয়ারি থেকে ব্রিটেন ইইউ-র বিধিনিয়ম থেকে কতটা বিচ্যুত হতে চায়, সে বিষয়ে স্পষ্ট চিত্র না পাওয়া পর্যন্ত আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত মূল্যায়ন সম্ভব নয়৷
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনার মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো সত্ত্বেও এখনো তেমন অগ্রগতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ আগামী সপ্তাহান্তে দুই পক্ষের মধ্যস্থতাকারীদের মুখোমুখি আলোচনা আবার শুরু হবার কথা৷ দুই পক্ষই যে যার নীতিগত অবস্থানে অনড় রয়েছে৷ চুক্তি ছাড়াই চূড়ান্ত বিচ্ছেদের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে৷
এসবি/জেডএইচ (ডিপিএ, এএফপি)
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷