গুলশান হামলার আতঙ্ক এখনো কাটেনি৷ আতঙ্কের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে৷ বিদেশিরা আছেন সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে৷ গুলশান-বারিধারা এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন প্রায় ক্রেতাশূন্য৷
বিজ্ঞাপন
তবে এমন আতঙ্কের পিছনে পুলিশের কিছু অদক্ষ এবং অপেশাদার কার্যকলাপও ভূমিকা রাখছে৷
গুলাশান হামলার পর একটি গুজব ছড়িয়েছিল মোবাইল ফোনের এসএমএস-এর মাধ্যমে৷ জানানো হয়েছিল ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কোনো শপিংমলে হামলা হতে পারে৷ গত সপ্তাহের এই গুজবটি নগরবাসীকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে৷ শেষ পর্যন্ত পুলিশ একে গুজব বলে উড়িয়ে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত কোনো হামলার ঘটনা না ঘটায় তা গুজবই থেকে যায়৷
তবে বুধবার সত্যিই কোনো অঘটনের আশঙ্কা হয়তো ছিল৷ সে কারণে পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থাও চোখে পড়েছে৷ ঢাকায় অবস্থিত জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্মীরা বুধবার তাদের কর্মস্থলে যাননি৷ অনেকে বাসায় বসে অফিসের কাজ সেরেছেন৷ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধই ছিল৷
গুলশানে হামলার পর তাঁদের সতর্কভাবে চলাফেরা করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছিল৷ এর মধ্যে ১৯ জুলাই রাতে তাঁদের মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি বার্তা দেওয়া হয়৷ সেখানে বলা হয়, নিরাপত্তাজনিত কারণে ২০ জুলাই কর্মস্থলে আসার প্রয়োজন নেই৷ আরো বলা হয়, প্রয়োজন হলে তাঁরা বাসায় বসেই অফিসের কাজ করতে পারেন৷ ঢাকার ইংরেজি স্কুলগুলোও এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থার আওতায় ছিল৷
নূর খান
এদিকে ১৮ জুলাই হামলার আশঙ্কা জানিয়ে মন্ত্রীদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে সতর্ক করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান৷ ডিএমপি কমিশনারের পাঠানো ওই বার্তায় বলা হয়, ‘‘গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী জঙ্গিরা যে কোনো সময় মন্ত্রিসভার যে কোনো সদস্যের ওপর হামলা চালাতে পারে৷ এ জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷''
এর আগে গত ১১ জুলাই মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিজে সতর্ক থাকা এবং অন্যকে সতর্ক করার পরামর্শ দেন৷
আসেম সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গোলিয়া যাওয়ার আগের দিন প্রধানমন্ত্রী আরো হামলার আশঙ্কা করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলাই শেষ নয়৷'' এ সময় জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী, পুলিশ, ব়্যাব, বিজিবি, সশস্ত্র বাহিনী, সাংবাদিক, বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি৷
পুলিশের পক্ষ থেকেও আরো হামলার আশঙ্কা জানিয়ে গত সপ্তাহে বিভিন্ন ব্যবসা এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নিজ উদ্যোগে নিরপত্তা বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়৷এক চিঠিতে বলা হয়, পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় নিজেদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে৷
সন্ত্রাসীতৎপরতা উপেক্ষা করে ঈদ উদযাপন
সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতের কাছে সন্ত্রাসী হামলা হলেও, সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হয়েছে ঈদ৷ নিরাপত্তার কঠোরতা থাকলেও, এক মাসের সিয়াম সাধনা শেষে আনন্দ উদযাপনের এ উৎসবে শরিক হয়েছিলেন আপামর মানুষ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa
ঈদের দিনেও সন্ত্রাসীদের হামলা
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিনে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ জামায়াতের কাছের একটি স্কুলের সামনে বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা৷ হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজন মারা যায়৷ নিহত চারজনের মধ্যে একজন নারী এবং অন্যজন শান্তিবিনষ্টকারী সন্ত্রাসী বলে পুলিশ জানিয়েছে৷ ছবিতে দেখুন এক আহতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Jamuna TV
ঈদের দিনের ‘সন্ত্রাসী’
শোলাকিয়ায় বোমা হামলার পর দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ছবিতে গ্রেপ্তার হওয়া এক ‘সন্ত্রাসী’-কে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘তারা ইসলামের শত্রু’
শোলাকিয়ার অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়া সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হয়েছে ঈদ৷ দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ঈদের দিন কিশোরগঞ্জে বোমা হামলা চালানো দুর্বৃত্তদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যেখানে ঈদের জামাত হবে, তার কাছাকাছি জায়গায় হঠাৎ আমাদের আইন-শঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা...৷ এ ধরনের জঘন্য, ঘৃণ্য অপরাধ যারা করে থাকে, তারা আদতে ইসলামে বিশ্বাস করে না, তারা ইসলামের শত্রু৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/D. Emmert
‘আমরা গভীরভাবে মর্মাহত’
ঈদের দিন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও শোলাকিয়া ঈদ জামাতের কাছে বিস্ফোরণ এবং গুলির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘শোলাকিয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক৷ আমরা গভীরভাবে মর্মাহত৷’’ তবে গুলশানের রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এ সরকার জঙ্গি দমনে ব্যর্থ৷ এখন ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারের উচিত সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরে যাওয়া৷’’
ছবি: M. uz Zaman/AFP/Getty Images
ঈদের নামাজ
অবশ্য গুলশানের জঙ্গি হামলার কারণে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও নির্ভয়ে, স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ঈদ উদযাপন করেছে সর্বস্তরের মানুষ৷ ছবিতে ঈদের নামাজ আদায়ের দৃশ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP
অপেক্ষা
নামাজের জন্য মসজিদের বাইরে অপেক্ষা করছেন অনেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
পুলিশ প্রহরা
সব রকমের সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রতিহত করতে দেশজুড়ে নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ ছবিতে এক মসজিদের সামনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ‘ক্যানাইন স্কোয়াড’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah
নিরাপত্তাবলয়ে প্রার্থনা
রাজধানীর জাতীয় ঈদগায় ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা৷ সেখানে পুলিশের পাশ দিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে যাচ্ছেন কয়েকজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah
8 ছবি1 | 8
আর এরই মধ্যে সংসদে কয়েকজন এমপি অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে নিরাপত্তার জন্য গানম্যান দেয়ার দাবি তোলেন৷
এ পরিস্থিতিতে সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে বলে মনে করেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান৷ তিনি বলেন, ‘‘গুলশান হামলার পর পুলিশের দৃশ্যমান নিরপত্তা তত্পরতা সাধারণ মানুষকে নিশ্চিন্ত করতে পারেনি৷ আর মন্ত্রীদের এসএমএস পাঠিয়ে পুলিশ কমিশানর হামলার আশঙ্কার কথা জানালে তা যদি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তাহলে সাধারণ মানুষতো আতঙ্কিত হবেই৷''
তিনি বলেন, ‘‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সতর্কবার্তা দেয়ার কিছু কৌশল আছে৷ আমার মনে হয়, পুলিশ সেখানে ভুল করছে৷ ফলে উল্টো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে৷''
এদিকে পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান বলেছেন, ‘‘কোনো মাধ্যমে হামলার কোনো গুজব ছড়ালে যারা ছড়াবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''
তবে নূর খান মনে করেন, ‘‘কোনটা আসল হুমকি আর কোনটা গুজব তা পুলিশকেই নিশ্চিত করতে হবে৷''
নতুন করে হামলার আশঙ্কায় সাধারণ মানুষও সতর্কভাবে চলাফেরা করছেন৷ বিনোদন কেন্দ্র, শপিংমল, সিনেমা হল বা পাবলিক প্লেসে এখন ভীড় কম৷ পাশাপাশি বেড়ে গেছে নিরপত্তা সরঞ্জামের বিক্রি৷
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ঢাকার গুলশানের আর্টিজান ক্যাফেতে দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার জিম্মি ঘটনার অবসান হলেও মানুষের মন থেকে আতঙ্ক যাচ্ছে না৷ এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই নিহত হয়েছে ২০ জিম্মি৷ নিহত হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
ঘটনার শুরু
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছ'জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেছেন, বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যায়নি৷ এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছে বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
এ যেন দুঃস্বপ্ন
কমান্ডো অভিযানে মুক্ত গুলশানের ক্যাফে থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ১২ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটছে না৷ তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভীতির ছাপ৷ তারা বলছিলেন, কয়েকজনের মৃতদেহ দেখেছেন, অনেক জায়গায় রক্তের ছাপ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
তাঁরা বলছেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে৷ সুরা পড়তে পারার পর তাঁদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়৷ যাঁরা হিজাব পরা ছিল, তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/S. K. Das
আইএস-এর দায় স্বীকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে৷ এই জঙ্গি দলের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সব খবরে দাবি করা হয় যে, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪০ জন৷
ছবি: picture-alliance/abaca
কমান্ডো অভিযান
সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়৷ ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ভবনের নিয়ন্ত্রণ ও আতঙ্কের অবসান
৮ টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা৷ গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে৷ ৯ টা ১৫ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়৷