আত্মঘাতী হামলা, নাকি গুলিতে জঙ্গি নিহত?
১১ মে ২০১৭ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তাদের প্রতিবেদনে বলছে, সকালে ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার জন্য হ্যান্ড মাইকে জঙ্গিদের আহ্বান জানায় পুলিশ৷ জবাবে বাড়ি থেকে দুই রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়৷ এরপর পুলিশ সেখানে অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে৷ সকাল পৌনে ৮টার দিকে হঠাৎ কয়েকজন বেরিয়ে আসে এবং পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর হামলা চালায়৷ এক পর্যায়ে জঙ্গিরা আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়৷
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর হাবাসপুরের ঐ ‘জঙ্গি আস্তানায়’ পাঁচ জনের লাশ পড়ে আছে৷ গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)-র বরাত দিয়ে দৈনিক প্রথম আলো ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, ‘‘জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গতকাল বুধবার রাত একটা থেকে বাড়িটি ঘিরে ফেলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যরা৷ সকালে ভেতর থেকে কয়েকজন বেরিয়ে এসে ‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণ’ ঘটান৷’’ বোমা ও ধারালো অস্ত্রের হামলায় সাত পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে গোদাগাড়ী থানার ওসি হিফজুল আলম মুন্সি জানিয়েছেন৷
এদিকে, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘বাড়ির ভেতর থেকে সুইসাইড ভেস্ট পরিহিত তিন জন নারীসহ ছয় ‘জঙ্গি’ বের হয়ে আসে এবং এক জন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে৷ এরপর, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে তাদের বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়৷’’ ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান আবদুল মতিনকে হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়৷
এদিকে, পুলিশ কর্মকর্তা সুমিত চৌধুরী সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘‘হঠাৎ এই আক্রমণে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি৷ ওদের মধ্যে দু'জন আমাদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়ে৷ ঠিক তখনই একজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঐ দমকল কর্মীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে৷’’ তিনি আরও জানান, ‘‘আমাদের গুলিতে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়৷ এদের মধ্যে ওই বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেন, তার স্ত্রী বেলী, দুই ছেলে আলামিন ও শোয়েব এবং এক মেয়ে কারিমা৷’’
সুমিত বলেন, ‘‘পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আমাদের কাছে তথ্য এসেছিল ঐ আস্তানায় জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ জেএমবি’র সদস্যরা লুকিয়ে আছে৷’’
সাজ্জাদের আরেক মেয়ে সুমাইয়া ঘণ্টা তিনেক পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন৷ ওসি জানান, ওই হামলা ও বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে সুমাইয়ার তিন মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে তার আট বছর বয়সি ছেলে৷ পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে নেয়৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, এর ফলে দেশটির অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি হুমকির মুখে পড়েছে৷ এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতাকেও উগ্রবাদের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা৷
গুলশান হামলার পর সন্ত্রাসবিরোধী বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী৷ এ পর্যন্ত ৭০ জন নিহত হয়েছে৷ এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহে নিহত হয়েছে ১১ জন৷ গত মার্চে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের সাতটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নারী-শিশুসহ ২৬ জন নিহত হয়৷
এপিবি/এসিবি (এএফপি, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, বিডিনিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম)
প্রিয় পাঠক, এই বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...