1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আত্মবিশ্বাসের অভাবে অল্পতেই আত্মহত্যায় কমবয়সিরা

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৮ জানুয়ারি ২০২৩

এক বছরে বাংলাদেশে ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে৷ এর মধ্যে স্কুল পর্যায়ে ৩৪০ জন, কলেজ পর্যায়ে ১০৬ জন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আছেন ৮৬ জন৷

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গ
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গছবি: DW

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে৷ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা বাড়ল কেন? মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনকার শিশু-কিশোরদের সকল আবদার সহজেই পূরণ করছেন অভিভাবকরা৷ খেলাধুলা করার সুযোগ পাচ্ছে না৷ ফলে তারা স্বনির্ভর হচ্ছে না৷ তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মাচ্ছে না৷ একটু না পাওয়াতেই ঝুঁকছে আত্মহত্যায়৷

‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা: সমাধান কোন পথে?' -শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আঁচল ফাউন্ডেশন শুক্রবার তাদের গবেষণাপত্র তুলে ধরে৷ গবেষণায় বলা হয়, ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩৭ জন স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নেন৷ গত বছর এপ্রিলে সর্বোচ্চ ৫০ জন আত্মহত্যা করেন৷ আর সর্বনিম্ন ২১ জন আত্মঘাতী হয়েছেন আগস্টে৷ এছাড়া জানুয়ারিতে ৩৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৯ জন, মার্চে ৪১ জন, মে মাসে ৪৫ জন, জুনে ৩১ জন, জুলাইয়ে ৪০ জন, সেপ্টেম্বরে ৩২ জন, অক্টোবরে ৩০ জন, নভেম্বরে ৪৯ জন এবং ডিসেম্বর মাসে ৩৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন৷ আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ২৮৫ জন এবং ছাত্র ১৬১ জন৷ এরমধ্যে ৫৪ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী৷ 

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, ‘‘২০২২ সালের এ জরিপে দেখা যাচ্ছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি৷ অর্থাৎ, তারা যে বয়ঃসন্ধিকালের সময়টি পার করছে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ৷ এ সময়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই৷ কী কারণে এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি তা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন৷ বিশেষ করে তাদের পারিবারিক বন্ধন, ব্যক্তিগত চাহিদা, সামাজিক অবস্থান এসব বিষয় জানা প্রয়োজন৷”

‘পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে না, তারাই বেশি আত্মহত্যা করে’

This browser does not support the audio element.

প্রধান কারণ অভিমান

সমীক্ষা অনুযায়ী,আত্মহননের বড় কারণ অভিমান৷ আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীরা  জীবদ্দশায় নানা জটিলতার মুখোমুখি হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে৷ সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী এ পথ বেছে নিয়েছে ‘মান-অভিমান’ থেকে৷ ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন অভিমানে৷ তাদের বড় অংশেরই অভিমান পরিবারের সঙ্গে৷ এছাড়া প্রেমের কারণ আত্মহত্যার ঘটনা ছিল ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ৷ বাকি কারণগুলোর মধ্যে পারিবারিক কলহে তিন দশমিক ১৪ শতাংশ, হতাশাগ্রস্ততা থেকে দুই শতাংশ, মানসিক সমস্যার কারণে এক দশমিক আট শতাংশ, আর্থিক সমস্যার কারণে আর্থিক দশমিক আট শতাংশ, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে গেছে তিন দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী৷

এ ছাড়া আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া, শিক্ষকের হাতে অপমানিত হওয়া, গেম খেলতে বাধা দেওয়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলেও সমীক্ষায় জানা গেছে৷

হতাশাগ্রস্ত হওয়ার কারণ

মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, "যখনশিক্ষার্থীরা হতাশাগ্রস্থ হয়, বিষন্নতায় ভোগে, যারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে না, তারাই বেশি আত্মহত্যা করে৷ জটিল পরিস্থিতি, কঠিন পরিস্থিতি, চাপযুক্ত পরিস্থিতি তারা যদি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয় তখন আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়৷ ব্রেকআপ, তরুণ প্রজন্মের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারলো না, ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারলো না, শিক্ষার্থীর কাছে দুইটো বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ৷''

তার মতে অল্প বয়সিরা সহজেই প্রেমে পড়ে৷ তখন বাবা-মা সন্তানকে ঘরে বন্দি করে ফেলেন, মোবাইল ফোন কেড়ে নেন, ওয়াইফাই সংযোগ বন্ধ করে দেন৷ অনেকসময় স্কুল-কলেজেও যেতে দেন না, যা তাদের উপর মানসিক চাপ ফেলে৷

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম বলেন, ‘‘আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা তাদের জীবদ্দশায় নানাবিধ বিষয়ের সম্মুখীন হন যা মোকাবিলা করতে না পারায় তারা আত্মহননের পথে ধাবিত হয়৷ এছাড়াও অন্যান্য কারনের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়া, পড়াশোনার চাপ অনুভব করা এবং পারিবারিক চাপে আত্মহত্যা৷”

সমাধানের পথ কী, জানতে চাইলে ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘‘কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সঠিকভাবে ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলতে হবে৷ নিজেকে বিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে হবে৷ সে জন্য পারিবারিক বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ৷’’ তার মতে সন্তানদের এমনভাবে বড় করতে হবে যাতে তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে এবং নিজেদের কাজ নিজেরাই করে৷

‘সন্তানদের মানসিক বিষয়গুলো নিয়ে বাবা মায়েরা উদাসীন’

This browser does not support the audio element.

যেসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার আশা জাগাচ্ছে৷ এর মধ্যে একটি হলো, মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন৷ এ ছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ‘মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক ফাস্ট এইড (পার্ট-১)’ নামে একটি অনলাইন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতি-২০২২ এর গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার৷

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘‘শিশু কিশোরদের মন সাধারণত ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়৷ এ বয়সে ছোট ছোট বিষয়গুলোও তাদেরকে আন্দোলিত করে৷ বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশের সাথে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না৷ ফলে তাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ঘাটতিও তাদেরকে আত্মহত্যার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে৷ এ সমস্যা থেকে উত্তরণে আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের শিক্ষক এবং বাবা মায়েদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে৷ শিশুকালে বাচ্চাদের উপর বাবা মায়ের প্রভাব যেমন বেশি থাকে, কৈশোরে সেই দায়িত্ব বর্তায় শিক্ষদের উপর৷ তাই শিক্ষার্থীদের মানসিক গঠনে তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্যও বেশি৷ সন্তানদের মানসিক বিষয়গুলো নিয়ে বাবা মায়েরা অনেক ক্ষেত্রেই থাকেন উদাসীন৷ তাই সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি তত গুরুত্ব দিতে চান না৷ এটা ঠিক নয়৷” 

আঁচল ফাউন্ডেশন তাদের সুপারিশে হতাশা, একাকিত্ব ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিয়েছে৷ স্কুল-কলেজ পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধী পোস্টার প্রদর্শন৷ প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ও দায় বৃদ্ধিতে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতার বিষয় নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ তাদের মতে স্কুল-কলেজের ছাত্রকল্যাণ ফান্ডের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সমস্যা সমাধান অনেকাংশে সম্ভব৷ এতে আর্থিক সংকটজনিত আত্মহত্যার হার কমে আসবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ