জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত একজন পেশাজীবীর সহায়তা নিয়ে আত্মহত্যার পক্ষে রায় দিয়েছে৷ বুধবার দেয়া এই রায়ে আদালত বলেছে, ‘নিজের মৃত্যুর বিষয় ঠিক করার অধিকার' মানুষের রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালে জার্মান সংসদে পাস হওয়া এক আইনে এ ধরনের আত্মহত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ পরে মুমূর্ষু রোগী, চিকিৎসক ও আত্মহত্যায় সহায়তা করা বিভিন্ন সংস্থা এই আইনের বিরুদ্ধে মামলা করে৷
জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত ‘ফেডারেল কন্সটিটিউশনাল কোর্ট'-এর দেয়া রায়ের আরেক অংশ সবাইকে অবাক করেছে৷ আদালত বলেছে, একজন পেশাজীবীর সহায়তা নিয়ে আত্মহত্যার অনুমতি শুধু মুমূর্ষু রোগীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবেনা৷ ‘‘জীবনের যে কোনো পর্যায়ে মৃত্যু নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা একজন ব্যক্তির রয়েছে,'' বলে মন্তব্য করেছে আদালত৷
আত্মহত্যা নয়, বেঁচে থাকাই সঠিক সিদ্ধান্ত
চরম অবসাদ, অপমান, গ্লানি, অবহেলা – একাধিক কারণে বেঁচে থাকার ইচ্ছা লোপ পেতে পারে৷ কিন্তু দুর্বল মুহূর্তের সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেললে ফিরে আসার আর কোনো উপায় থাকে না৷
ছবি: Fotolia/ lassedesignen
জীবন-মৃত্যুর প্রান্তে
সামনে শূন্যতা৷ ঝাঁপ দিলেই সব শেষ৷ মত বদলের কোনো অবকাশ নেই৷ কিন্তু মনের কোণে সামান্য সংশয় তো থেকেই যায়৷ বেঁচে না থাকলে সেই সংশয় যাচাই করার কোনো উপায় আছে কি?
ছবি: picture-alliance/dpa
আবেগ নয়, চাই যুক্তি
পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেও সেটি দ্রুত কার্যকর না করাই বুদ্ধিমানের কাজ৷ নেতিবাচক আবেগের কালো মেঘ কেটে গিয়ে যুক্তির খুঁটি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত মন থেকে দূর করতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Chlorophylle
চরম কষ্টের তাড়না
আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের পেছনে থাকে চরম বেদনা, হতাশা বা গ্লানি৷ সেই কষ্ট সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যায়৷ দিশাহারা অবস্থায় মনে হয়, সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে৷ অথচ সেই কষ্ট কম করা, তা নিয়ে চলতে পারাও কিন্তু সম্ভব৷
ছবি: vkara - Fotolia.com
‘এই জগতে আমাদের ঠাঁই নেই’
একা নয়, প্রিয় মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে পার্থিব জগত ছেড়ে চলে যাবার কঠিন সিদ্ধান্তও নেন কেউ কেউ৷ সমাজ, ধর্ম, সম্প্রদায় বা রাষ্ট্র তাদের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় কোণঠাসা হয়ে মৃত্যুই একমাত্র পথ বলে মনে হয়৷ অথচ বিকল্প কি একেবারেই থাকে না?
ছবি: Getty Images/AFP
অন্যের প্রতি দায়িত্ববোধ
জগতটা শুধু নিজেকে নিয়ে নয়৷ নিজের দুঃখ, কষ্ট, কঠিন সমস্যার গণ্ডির বাইরেও আছে এক বৃহত্তর পৃথিবী৷ অন্যরাও সেখানে পুরোপুরি সুখি নয়৷ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, সম্ভব হলে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে নিজের মনও শান্ত হতে পারে৷ অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজের জগত দেখলে নতুন উপলব্ধি জাগতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিঃসঙ্গতা থেকে আত্মহত্যার হাতছানি
নিঃসঙ্গতা, চরম একাকিত্ববোধ থেকেও আত্মহত্যার চিন্তা মনে আসে৷ অথচ নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার বদলে চারিদিকে তাকালে কাউকে না কাউকে ঠিকই পাওয়া যাবে৷ পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা অন্য কোনো বৃত্তের মধ্যে এমন কাউকে খুঁজে নেওয়া সম্ভব, যে দুঃখ-বেদনার কথা শুনতে প্রস্তুত৷ মন হালকা হলে আত্মহত্যার হাতছানিও উধাও হয়ে যাবে৷
ছবি: Fotolia/ lassedesignen
6 ছবি1 | 6
জার্মান সরকার বলছে, তারা সর্বোচ্চ আদালতের রায় ‘খুব ভালোভাবে' পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে৷
এদিকে, গির্জার প্রতিনিধিরা এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ জার্মান বিশপস কনফারেন্স ও এভানজেলিক্যাল চার্চ এক যৌথ বিবৃতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, এই রায়ের কারণে বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষরা সহায়তা নিয়ে আত্মহত্যার সেবা নিতে ‘অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাপ' অনুভব করতে পারেন৷
সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি রাজ্যে সহায়তা নিয়ে আত্মহত্যা বৈধ৷