তরুণ মজুমদার৷ বাংলা সিনেমার বিখ্যাত চিত্র পরিচালক৷ সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ–দের পরের প্রজন্মের পরিচালকদের অন্যতম৷ অসুস্থ শরীরেও তিনি এসেছিলেন রোববার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের সমাবেশে৷ পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়৷ এবার তিনি ব্রিগেড সমাবেশের প্রচারের জন্য স্লোগান লিখে দিয়েছেন৷ ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’খ্যাত পরিচালক অনীক দত্ত, যার পরের ছবি ‘ভবিষ্যতের ভূত’ দেখাতে বাগড়া দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস সরকার, কারণ তাতে রাজনৈতিক কটাক্ষ ছিল৷ সেই অনীক দত্ত এবার ব্রিগেড সমাবেশের পক্ষে প্রচারে, সোশাল মিডিয়ায় শুরু থেকেই সরব ছিলেন৷ বাংলা সিনেমা, টিভি সিরিয়ালের পরিচিত মুখ সব্যসাচী চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মিত্র, এরাও থেকেছেন প্রচারে, ব্রিগেডের সভায় গিয়েও রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷
নেতা–নেত্রীকে দেখে রাজনীতিতে যাওয়া অন্যায়: বাদশা মৈত্র, অভিনেতা
আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা বাদশা মৈত্র রীতিমত ঘোষকের দায়িত্ব পালন করেছেন রবিবার৷
গ্ল্যামারের ছটায়, কিংবা খ্যাতিতে এরা অবশ্যই তাদের ধারেকাছে যেতে পারেন না, যারা এর আগে, অথবা সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন৷ বিজেপিতে যে অভিনেতারা সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন, তাদের কারও কারও সঙ্গেও হয়ত এরা জনপ্রিয়তার দৌড়ে সামান্য পিছিয়েই থাকবেন৷ কিন্তু যেটা মানুষকে সত্যিই অবাক করেছে, তা হল এই বামপন্থী পরিচালক, অভিনেতাদের স্রোতের বিরুদ্ধে হাঁটার সংকল্প এবং সাহস৷ দলবদলই যেখানে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছেন তাদের সতীর্থ, সহকর্মীরা, সেখানে এরা নিজেদের বিশ্বাসে স্থিত থাকতে চেয়েছেন৷ গোপনে সমর্থন জোগানো নয়, প্রকাশ্যে এসে দাঁড়িয়েছেন সেই রাজনৈতিক শক্তির পাশে, যাদের জনসমর্থন ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে৷ কারণ ওরা মনে করছেন, আবার দিনবদল শুরু হবে একদিন৷
কেমন লাগল এবারের ব্রিগেডের সভা? মনে হলো কি বামপন্থার গুরুত্ব কমছে বাংলায়? প্রশ্নটা শুনে হাসলেন শ্রীলেখা মিত্র৷ বললেন, ‘‘এই জনসমাবেশ তো প্রমাণ করে দিল, ব্যাপারটা মিথ্যে কথা, বা ভুল কথা৷ এত মানুষ, এত অসংখ্য মানুষের ভিড়!তরুণ প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়েরা এসেছে৷ যাদের হয়ত অন্য দলের মতো স্টেজের ওপর হুল্লোড়, হুড়োহুড়ি করতে দেখা যায় না৷ কিন্তু তারা তৃণমূল স্তরে কাজ করছে৷ গান, পথনাটিকা নিয়ে ভীষণভাবে তারা দলে রয়েছে৷’’
এই জনসমাবেশ তো প্রমাণ করে দিল, ব্যাপারটা মিথ্যে: শ্রীলেখা মিত্র, অভিনেতা
কিন্তু সিনেমা–সিরিয়ালের জগতে জনপ্রিয় মুখগুলো যে এখন শক্তিধর শিবিরেই ভিড় জমায়, দেশের অবস্থা নিয়ে তাদের কোনও প্রশ্ন নেই, কোনও তর্ক নেই, এটা কেমন লাগে? অভিনেতা বাদশা মৈত্র কিন্তু আদৌ অবাক হচ্ছেন না এই প্রবণতায়৷ তার বক্তব্য, ‘‘তার জন্য তো একটা (রাজনৈতিক) পন্থা সম্বন্ধে জানার একটা ন্যূনতম আগ্রহ, একটা চর্চা থাকবে৷ কিন্তু বাম দলগুলো বাদ দিলে, বিভিন্ন দলে যারা যাচ্ছে, তারা কোনও পন্থার জন্যে যাচ্ছে না৷ মঞ্চে কোনও একজন নেতা বা নেত্রী, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন— তার মুখের দিকে তাকিয়ে যাচ্ছে৷ দলের নাম তারা কেউ বলেনই না!’’
তা হলে কি বিষয়টা এরকমই, যে ভোটের টিকিট পাওয়ার লোভে, বা পদাধিকারের লোভে এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন? বাদশা মৈত্র এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর না দিয়ে বললেন, মানুষ দেখছেন, মানুষ বুঝতে পারছেন সব কিছু৷ তবে ‘‘শুধু কোনও নেতা–নেত্রীকে দেখে (রাজনীতিতে) যাওয়া অপরাধ, অন্যায় বলা যেতে পারে৷ কারণ তাকে যদি কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়, আর তিনি যদি নিজের দেশ, সমাজ, কাল, মানুষ সম্বন্ধে তার যদি কোনও জ্ঞান না থাকে, তা হলে মানুষের প্রতি অন্যায় করা হয়৷’’
পশ্চিমবঙ্গের ভোটে কে কোথায় দাঁড়িয়ে
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট আসন্ন। হাই-ভোল্টেজ লড়াইয়ে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বিজেপি। বাম-কংগ্রেস কি কিছু করতে পারবে?
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
ভোটের দামামা
এপ্রিল-মে মাসে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা পশ্চিমবঙ্গে। সব দলই প্রচারে নেমে গেছে। প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপি। তবে যত দিন যাচ্ছে, শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে বাম এবং কংগ্রেস।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
তৃণমূলের জোর
২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। সেই থেকে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক নির্বাচনে ৪০ শতাংশের উপরে ভোট পেয়েছে তারা। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ আসন পেয়েছিল তৃণমূল।
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
বিজেপির শক্তি
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠে। তারাও ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। এবারের নির্বাচন ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। রাজ্য জুড়ে চলছে রথযাত্রা।
ছবি: Payel Samanta/DW
ধর্মীয় মেরুকরণের নির্বাচন
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে এবার ধর্মীয় মেরুকরণের নির্বাচন হবে। বিজেপি ধর্মীয় তাস খেলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার উত্তর দিতে গিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ বৃদ্ধি করছেন।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
শাহ-মোদীর লক্ষ্য
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে পশ্চিমবঙ্গের রণনীতি তৈরি করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। ৪০টিরও বেশি সভা করেছিলেন তাঁরা। এবারের ভোটেও একই ভাবে প্রচারের পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতাদের এনে প্রচারের ঝাঁজ বাড়াতে চাইছে তারা। সঙ্গে চলছে তৃণমূলের নেতাদের বিজেপিতে নিয়ে আসার কাজ।
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
বারবার আসছেন শাহ
অমিত শাহ এখন বারবার পশ্চিমবঙ্গে আসছেন। ভোটের দিন ঘোষণার আগে তিনি প্রচারের জমি তৈরি করছেন। পরে মোদী প্রচারের ঝড় তুলবেন। আসছেন নাড্ডাও। তাছাড়া অন্য রাজ্যের নেতাদেরও নিয়ে আসা হবে পশ্চিমবঙ্গে।
ছবি: Payel Samanta/DW
রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি ও বাঙালিয়ানা
মোদী, শাহ, নাড্ডার মুখে বারবার শোনা যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ, নেতাজির নাম। উঠে আসছে বাংলা ও বাঙালিয়ানার প্রশংসা। তৃণমূল লড়াইটাকে বাঙালি বনাম অ-বাঙালিতে পরিণত করার চেষ্টা করছিল। তার জবাবে, বাঙালি-প্রেম দেখাতে চাইছেন মোদী-শাহরা।
ছবি: DW/P. Samanta
মমতার পাল্টা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাই একশ। রাজ্য জুড়ে সভা শুরু করে দিয়েছেন তিনি। নির্বাচন স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর সময় সময় পরামর্শ দিচ্ছেন মমতাকে। গত কয়েক মাসে দুয়ারে সরকার এবং সকলের জন্য স্বাস্থ্যবীমা জনমনে সাড়া ফেলেছে।
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বাম-কংগ্রেস জোট
কংগ্রেস এবং বামের ভোট গত ১০ বছরে চোখে পড়ার মতো কমেছে। ২০১৬ সালে তাদের জোট বিশেষ কাজে আসেনি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০২১ সালে তাদের জোট আগের চেয়ে ভালো ফল করবে। বিজেপি এবং তৃণমূলের ভোট বাম-কংগ্রেস জোট সমান ভাবে কাটতে পারলে ফলাফলে তার যথেষ্ট প্রভাব পড়বে।
ছবি: Zumapress/Imago Images
সমীক্ষার ফলাফল
এখনো পর্যন্ত যতগুলি ভোটের আগের সমীক্ষা হয়েছে, তাতে অল্প হলেও এগিয়ে আছে তৃণমূল। তবে বিজেপি ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে। লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। প্রশান্ত কিশোরের স্ট্র্যাটেজি কি তৃণমূলের ভোট-মার্জিন বাড়াতে পাড়বে?
ছবি: Hindustan Times/Imago Images
আসরে ফুরফুরা শরিফ
এরই মধ্যে ইসলামিক প্রতিষ্ঠান ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি নিজের দল তৈরি করেছেন। তিনি বিজেপি এবং তৃণমূল কাউকেই সমর্থন করছেন না। বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের আলোচনা চলছে।