চকোলেট খেতে কে না ভালোবাসে? কিন্তু চকোলেট তৈরি করা মোটেই সহজ নয়৷ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকলে রূপ ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ একমাত্র বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োগ করেই আদর্শ চকোলেট তৈরি করা সম্ভব৷
বিজ্ঞাপন
আদর্শ টফি তৈরির কৌশল আয়ত্ত করা মোটেই সহজ নয়৷ নানা রকম রাসায়নিক, প্রাকৃতিক ও কাঠামোগত সমস্যা চকোলেটের মধ্যে ঘটতে পারে – যেমন ‘ফ্যাট ব্লুম'৷ খাদ্য ও বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউটের লিলিয়া আর্নে বলেন, ‘‘ফ্যাট ব্লুম হলো টফির উপর ধূসর বা সাদা স্তর৷ অন্য চকোলেটের সঙ্গে তুলনা করলেই চোখে পড়বে৷ টফির মধ্য থেকে ফ্যাট উপরে বেরিয়ে এলে এমনটা হয়৷ ভিতর থেকে সারফেসের উপর এসে সেই ফ্যাট ঘনীভূত হয়৷''
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী ৭টি খাবার
প্রতিদিন হাজার চিন্তার সঠিক কাজটা করতে হয় মস্তিষ্ককে৷ তাই তার জন্য চাই প্রকৃত খাবার৷ কীভাবে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে সুস্থ ও সক্রিয় রাখবেন – এখানে থাকছে তেমনি কিছু খাবারের তালিকা৷
ছবি: Fotolia/gaai
ডার্ক চকোলেট
প্রতিদিন এক টুকরো ডার্ক চকোলেট খেলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে৷ অল্প পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খাওয়ার অভ্যাস স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে, বলছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: picture alliance/dpa
আখরোট
আখরোটে অন্যান্য বাদামের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে৷ এটি মস্তিষ্ককে যে কোনো রোগ থেকে রক্ষা করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টমেটো
টমেটো – সহজলভ্য এই সবজিটি মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, কারণ এতে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোর ক্ষতি হওয়া থেকে বাঁচায়৷ এছাড়া স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে টমেটো৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTOs
স্যামন ও সামুদ্রিক মাছ
মানুষের মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশ চর্বি দিয়ে তৈরি৷ তাই এটিকে সক্রিয় রাখতে প্রয়োজন ফ্যাটি অ্যাসিড৷ সামুদ্রিক মাছ যেমন – স্যামন, টুনা ও অন্য সামুদ্রিক মাছ মস্তিষ্কের খাবার হিসেবে বেশ উপকারী৷ কারণ এই খাবারগুলোতে আছে ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আলজইমার রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে৷
ছবি: picture-alliance/chromorange
গ্রিন টি
গবেষকরা বলছেন, গ্রিন টি মস্তিষ্কের সংযোগ ক্ষমতা বাড়ায়, সেই সাথে পারকিনসন্স ও স্মৃতিভ্রংশের হাত থেকে রক্ষা করে৷ চিনি ছাড়া দিনে তিন কাপ সবুজ চা আপনার মস্তিষ্কের জন্য ভীষণ উপকারী৷
ছবি: Fotolia/gaai
ব্লু বেরি
বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা বাড়াতে ব্লু বেরির জুড়ি নেই৷ এতে আছে ফ্ল্যাভোনয়েডস৷ এছাড়া এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে৷ মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা করে এটি৷ পারকিনসনস আর আলজাইমার থেকেও রক্ষা করে ব্লু বেরি৷
পালংশাক
পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে, যা মস্তিষ্কের সংযোগ শক্তি বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়৷ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্টও রয়েছে, আছে ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে, যা ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে৷
ছবি: Fotolia/JOETEX1
7 ছবি1 | 7
‘ফ্যাট ব্লুম' সমস্যার সমাধান করতে লিলিয়া ‘প্রো-প্রালিন' নামের এক ইউরোপীয় প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ সেই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছোট চকোলেট প্রস্তুতকারকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ যেমন হাঙ্গেরির সামোস মারসিপান কোম্পানি৷ রপ্তানি সহকারি এডিনা রোসা বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়াররা আমাদের চকোলেটের নমুনা পরীক্ষা করে ল্যাবে বিশ্লেষণ করেছেন, যাতে সত্যিকারের ভালো চকোলেট তৈরি করতে তাঁরা সঠিক প্রক্রিয়া বাতলে দিতে পারেন৷''
সেই বিশ্লেষণের পর সামোস কোম্পানি চকোলেট তৈরির প্রক্রিয়ায় নতুন যন্ত্রে বিনিয়োগ করেছেন৷ টফি তৈরির প্রক্রিয়ায় ‘ফ্যাট ব্লুম' এড়ানোর চাবিকাঠি হলো সঠিক তাপমাত্রা৷ এডিনা রোসা বলেন, ‘‘টেম্পারিং শব্দটির অর্থ হলো, চকোলেট ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রায় গরম করে তারপর ২৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ঠান্ডা করতে হবে৷ তারপর মিশ্রণের আগে আবার ৩২ ডিগ্রিতে গরম করতে হবে৷ ঠিকমতো টেম্পারিং প্রক্রিয়া করলে চকোলেট বেশ চকচকে ও মচমচে হবে৷''
টফি উৎপাদন প্রক্রিয়া রপ্ত করতে পারলে স্বাদের ক্ষেত্রে আরও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে৷
জার্মানিতে বিশ্বের একমাত্র চকলেট মিউজিয়াম
চলুন, ঘুরে দেখা যাক
ছবি: picture alliance/Horst Galuschka
সবার জন্য চকলেট
‘চকলেট খায় বাচ্চারা’ – এমনটাই আমরা আগে শুনেছি৷ তবে জার্মানিতে এসে দেখছি চকলেট ছোট, বড় সবার জন্য৷ বাচ্চাদের জন্য অবশ্য আলাদা বিশেষ চকলেট রয়েছে, যেগুলোতে দুধ এবং মিষ্টির পরিমাণ একটু বেশি থাকে৷ আজকাল তো দেখা যায় হৃদরোগীদের ডাক্তাররা কালো বা বিটার চকলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/ZB
রাইন নদীর বুকে চকলেট মিউজিয়াম
জার্মানির কোলন শহরের এই মিউজিয়ামটি বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র চকলেট মিউজিয়াম৷ মিউজিয়ামটি দেখে মনে হয় যেন কাঁচ আর ধাতুর তৈরি একটি সুন্দর জাহাজ৷ ৪,০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে চকলেট আর কোকোর পুরনো ইতিহাস বহন করছে এই মিউজিয়ামটি৷
ছবি: DW
কোলনকে বিশেষ উপহার
চকলেট কোম্পানি ‘স্টলভের্ক’-এর মালিক হান্স ইমহোফ এই মিউজিয়ামটি তৈরি করেন ১৯৯৩ সালে৷ যেখানে চকলেটের ৩,০০০ বছরের পুরনো ইতিহাস নানাভাবে তুলে ধরা হয়েছে৷ বিশেষ ধরণের এই মিউজিয়ামটি হান্স ইমহোফ কোলন শহরকে উপহার দিয়ে দিয়েছেন এবং যার মধ্য দিয়ে তিনি অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন৷ ২০০৭ সালে তিনি মারা যান৷
ছবি: Foustontene - Fotolia.com
কোকো দানা
কোকোর দানা বা বিচি থেকে তৈরি করা হয় চকলেট৷ মিউজিয়ামের ভেতরের ঘরটিতে শুধু কোকো সম্পর্কেই দেওয়া হয়েছে নানা তথ্য৷ যেমন ২০ জাতের কোকোর পরিচয়, কোকোর চাষ ইত্যাদি৷ কোকো দানার জন্ম ল্যাটিন অ্যামেরিকায়৷ ১৭০০/১৮০০ শতকে এটি প্রথম ইউরোপে আসে ড্রিংক চকলেট হিসেবে৷ এরপর ১৯ ও ২০ শতকে কোকো প্রথম চকলেট আকারে বানানো শুরু হয়৷
ছবি: DW
বিশেষ আকর্ষণ – চকলেট গাছের ঝরনা
তিন মিটার উঁচু এই সুন্দর ঝরনাটি যে চকলেট মিউজিয়ামের বিশেষ আকর্ষণ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ যা দেখে একটুখানি চেখে দেখার লোভ সামলানো যায় না৷ আর সেজন্যই হয়ত বা যারা মিউজিয়ামে ঢোকেন, সবাইকেই একটি করে বিস্কুট গরম চকলেটের মধ্যে ডুবিয়ে খেতে দেওয়া হয়, তার আসল স্বাদ গ্রহণ করার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur Huber
যে দেশের যে সংস্কৃতি
আসলে বাংলাদেশ বা ভারতে যেমন কোনো উপলক্ষ্য বা কোথাও গেলে মিষ্টি নিয়ে যাওয়ার রীতি রয়েছে, তেমনি জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয় চকলেট৷ আপনি এখানে কোনো জার্মান বাড়িতে আমন্ত্রিত, কি নেবেন ভাবছেন? না, ভাবনার কিছু নেই৷ অনায়াসেই নিয়ে যেতে পারেন সুন্দর এক বাক্স চকলেট৷ আর যদি কারো পছন্দের চকলেটের নাম জানা থাকে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা !
ছবি: DW
কত রকমের চকলেট
এই ২১ শতকে চকলেট ছাড়া জার্মানদের জীবন ভাবা যায়না৷ লিন্ড, স্টলভের্ক, রিটার স্পর্ট, মিলকা, নিউটেলা, মোত্সার্ট মার্বেল, সারোটি – কত ছোট বড় কোম্পানির চকলেট যে রয়েছে এদেশে৷
ছবি: DW
চকলেট মিউজিয়াম দেখা মানেই অভিজ্ঞতা অর্জন
চকলেট খেলে শরীর মনে কি প্রভাব পড়ে, আগে কিভাবে চকলেট বানানো হতো আর এখনই বা কিভাবে তৈরি করা হয় ইত্যাদি বিষয়েও জানা যাবে এই মিউজিয়ামে গেলে৷
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
চকলেট দিয়ে তৈরি মানুষের মিছিল
মানুষের মিছিলের মতো কোকো আর চকলেট দিয়ে ১৮ সেন্টিমিটার উঁচু এই চকোলেট মিছিলটি তৈরি করেছেন এক শিল্পী৷ একটি প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে এটা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রিয়জনের জন্য চকলেট
চকলেট খেতে ভালোবাসে এমন মানুষের অভাব নেই৷ কিন্তু চকলেটের ইতিহাসও জানতে ইচ্ছে করে অনেকেরই৷ তাই এরই মধ্য প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ কোলনের এই চকলেট মিউজিয়াম পরিদর্শন করেছেন৷ মিউজিয়ামে চকলেট বানানোর রহস্য অর্থাৎ রেসিপি ও প্রণালী দেওয়া আছে৷ তবে এভাবে বাড়িতে বসে চকলেট তৈরি করা না গেলেও, একটা ধারণাটা তো পাওয়া যাবে!
ছবি: imago/INSADCO
বাড়তি পাওয়া
চকলেট মিউজিয়াম ঘুরে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার পর ঢুকে পড়ুন চকলেট মিউজিয়ামের ক্যাফেতে৷ সেখানে খেতে পারেন খুবই মজার এক টুকরো চকলেট কেক বা গরম চকলেট, যাকে বলে ‘হট চকলেট’৷ আর সেই সাথে উপভোগ করতে পারেন রাইন নদীর সৌন্দর্য, যে অনুভূতি অনেকদিন মনে রাখার মতো৷