আদানির বিদ্যুতের আমদানিমূল্য অনেক কমাতে চায় বাংলাদেশ
২ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রোববার রয়টার্সকে বলেন, আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি আদালতে বাতিল না হলে ঐ গ্রুপের কাছ থেকে কেনা বিদ্যুতের দাম অনেক কমাতে চায় বাংলাদেশ সরকার৷
বিজ্ঞাপন
আদানির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের জন্য গত সপ্তাহে একজন আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের হাইকোর্ট চুক্তিটি পুনর্মূল্যায়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নির্দেশ দেন৷ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে আদালত আদেশ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷
বিশ্বের বৃহত্তম বস্তি নিয়ে আদানির প্রকল্পে সন্দেহ বাসিন্দাদের
মুম্বইয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বস্তি খ্যাত ধারাভিতে আদানি গ্রুপের প্রকল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷ সরকার বস্তির পরিবেশ উন্নয়নে এই প্রকল্প নিলেও কার্যাদেশ পাওয়া আদানিকে নিয়ে রয়েছে বাসিন্দাদের সন্দেহ৷
ছবি: Niharika Kulkarni/REUTERS
স্লামডগ মিলিওনেয়ার
ধারাভি বস্তিটি স্বচক্ষে দেখার সুযোগ না পেলেও অনেকেই দেখেছেন সিনেমার পর্দায়৷ বলিউডের অস্কারজয়ী মুভি ‘স্লামডগ মিলওনেয়ারের’ কথা মনে আছে? সিনেমার গল্পের পটভূমি ছিল এই বস্তিকে ঘিরে, দৃশ্যও ধারণ করা হয়েছে ধারাভিতে৷
ছবি: Niharika Kulkarni/REUTERS
উন্নয়নের উল্টো পিঠ
ভারতের অভিজাতদের শহর মুম্বইয়ের শান-শৌকতের ঠিক উল্টো পিঠ ধারাভি৷ সুউচ্চ সব ভবনে ঘেরা, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশেই এর অবস্থান৷ খোলা নর্দমা, শত শত মানুষের গণশৌচাগার, অন্ধকার, ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করেন লাখো মানুষ৷
ছবি: Java
বস্তির অর্থনীতি
মুম্বইর অর্থনীতিতে এই বস্তির গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য৷ বিভিন্ন পেশার মানুষেরা বসবাস করেন প্রায় ৬০০ একরের এই এলাকায়৷ ২০০৭-২০০০৮ সালের হিসেব অনুযায়ী, এখানে আছে ১৩ হাজার বাণিজ্যিক কাঠামো৷
ছবি: Niharika Kulkarni/REUTERS
আদানির প্রকল্প
মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার বস্তিটি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ জুলাইতে প্রায় সাড়ে ৬১ কোটি ডলারের একটি দরপত্র চুক্তিপত্র চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে সরকার৷ নথি অনুযায়ী, ‘অস্বাস্থ্যকর, শোচনীয়’ পরিবেশের বস্তিতে গড়ে তোলা হবে বহুতল ভবন৷ যেখানে বস্তির বাসিন্দাদের মাথা গোঁজার পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ করে দেয়া হবে৷
ছবি: Niharika Kulkarni/REUTERS
১২০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ
কনসালটেন্সি লায়াসেস ফোরাস নামের একটি সংস্থার হিসাবে ধারাভি প্রকল্পে আদানি বারোশ’ কোটি ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে৷ এর বিনিময়ে তারা ২৪০০ কোটি ডলার বা দ্বিগুণ মুনাফা তুলতে সক্ষম হবে৷
ছবি: Niharika Kulkarni/REUTERS
আদানিকে নিয়ে বিতর্ক
সম্প্রতি ভারতে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে আদানি গ্রুপ৷ জালিয়াতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ১৫ হাজার কোটি ডলারের মূলধন হারিয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি৷
ছবি: Francis Mascarenhas/REUTERS
বস্তিবাসীর সন্দেহ
আদানির এই প্রকল্প নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে বস্তিবাসীর মনে৷ এই প্রকল্পের প্রতিবাদ করছেন অনেকে৷ আদানি ও তার কোম্পানির আর্থিক সংকটে তারা প্রকল্পটি কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবে সে নিয়েও তাদের প্রশ্ন আছে৷
ছবি: Niharika Kulkarni/REUTERS
আইনি চ্যালেঞ্জ
প্রকল্প বাস্তবায়নে আদানির জন্য নতুন হুমকি সেকলিঙ্ক টেকনোলোজিস কর্পোরেশনের আইনি চ্যালেঞ্জ৷ ২০১৮ সালে মহারাষ্ট্র সরকার এই প্রকল্পের জন্য প্রথম দরপত্র আহ্বান করে৷ সেখানে সর্বোচ্চ দরদাতা ছিল বাহরাইনের রাজপরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুবাই ভিত্তিক কনসোর্টিয়ামটি৷ তাদের অভিযোগ আদানিকে কাজ দেয়ার জন্যই ২০২২ সালে নতুন শর্ত আরোপ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়৷ অভিযোগ অস্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Niharika Kulkarni/REUTERS
আদানি ও মোদী
গুজরাটের রাজনীতিবিদ মোদির সঙ্গে একই রাজ্যের ব্যবসায়ী গৌতম আদানির সম্পর্ক নিয়ে আছে নানা গুঞ্জন৷ বিরোধীদের অভিযোগ ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বন্দর, জ্বালানি থেকে শুরু করে সরকারি নানা প্রকল্প বাগিয়ে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে আদানি গ্রুপ৷ যদিও সরকার বা আদানি দুই পক্ষই অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে৷
ছবি: Siddharaj Solanki/Hindustan Times/IMAGO
‘আদানিকে হটাও’
আগস্টের শুরুতে ধারাভির সামনে জড়ো হন প্রায় ৩০০ বিরোধী রাজনৈতিককর্মী ও বস্তির বাসিন্দারা৷ ‘আদানিকে হটাও, ধারাভি বাঁচাও’ এমন স্লোগান দেন তারা৷ তাদের সন্দেহ এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবে না আদানি গ্রুপ৷ তাতে বস্তিবাসীর থাকার আর কোনো জায়গা থাকবে না৷
ছবি: Francis Mascarenhas/REUTERS
10 ছবি1 | 10
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ৷ এর আওতায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্য ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলে আদানি গ্রুপ৷ এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গতবছর উৎপাদনে যায়৷ সেখান থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার এক দশমাংশ পূরণ করে৷
জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘চুক্তিতে অসঙ্গতি থাকলে আদানির সঙ্গে পুনরায় আলোচনা হবে৷ আর দুর্নীতি ও ঘুসের মতো অনিয়ম হয়ে থাকলে চুক্তিটি বাতিল করা হবে৷''
তিনি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতে যে করছাড় পাচ্ছে তার উপকার বাংলাদেশ না পাওয়ার বিষয়টি ইতিমধ্যে আদানি গ্রুপকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আদানি গ্রুপ সোমবার রয়টার্সকে জানায়, বাংলাদেশ সরকার যে চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা করছে তা তারা জানে না৷
সম্প্রতি আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুস লেনদেনের অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ৷ আদানি এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও এরই মধ্যে ভারতের একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি পুনর্বিবেচনা করার ঘোষণা দিয়েছে৷ সেই সঙ্গে আদানি গ্রুপে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে ফ্রান্সের তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান টোটাল এনার্জি৷
তবে ফাওজুল কবির খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আদানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না৷
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যেসব বিদ্যুৎ চুক্তি হয়েছে সেগুলো এখন পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করে দেওয়া একটি কমিটি৷ চুক্তিগুলো যথাযথভাবে হয়েছে কি না, চুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে কি না, জাতীয় স্বার্থ বিনষ্ট হয়েছে কি না, এসব বিষয় যাচাই করে দেখছে কমিটি৷