1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আদানি ইস্যুতেও মমতার ‘একলা চলো' নীতি

পায়েল সামন্ত
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আদানি বিরোধিতায় অধিকাংশ বিরোধী দলই একজোট। তবে এ ক্ষেত্রেও দৃশ্যত একক আন্দোলনের পথ নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

আদানিদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রকে আক্রমণ করছে প্রধান বিরোধী কংগ্রেস।
আদানিদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রকে আক্রমণ করছে প্রধান বিরোধী কংগ্রেস।ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images

হিন্ডেনবার্গের সমীক্ষা প্রকাশের পর টালমাটাল গৌতম আদানির সাম্রাজ্য। রকেটের গতিতে উত্থান ভারতের এই শিল্পপতির। বিশ্বশ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকাতেও স্থান পেয়েছেন। কিন্তু শেয়ার দাম নিয়ে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে তার সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে। এর জেরে যখন আদানিদের শেয়ারের মূল্য নীচে নেমেছে, তখন তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

এই চাপানউতোরে তৃণমূল কংগ্রেস কোন দিকে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আদানিদের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রকে আক্রমণ করছে প্রধান বিরোধী কংগ্রেস। তাদের সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য সব বিরোধী দল। অথচ তৃণমূল কংগ্রেস ‘একলা চলো' নীতি নিয়েছে।

বাজেট অধিবেশন চলাকালীন প্রায় রোজই বিরোধী সাংসদরা সংসদ চত্বরে গান্ধীমূর্তির নীচে আদানি-বিরোধী বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আদানির সখ্যের বিষয়টি প্রবলভাবে সামনে আনছেন। এই বিক্ষোভে অধিকাংশ দিনই গরহাজির তৃণমূল সাংসদরা। তারা পৃথক কর্মসূচি নিচ্ছেন।

আদানির ব্যাপারে তৃণমূল অদ্ভুত আচরণ করছে: আশিস ঘোষ

This browser does not support the audio element.

বুধবার সকালে কংগ্রেস সভাপতি, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বিরোধী দলের নেতাদের বৈঠক ডাকেন। সেখানে ১৫টি বিরোধী দল উপস্থিত থাকলেও তৃণমূল ছিল না। বার বার অনুপস্থিতির জন্য বিরোধীদের একাংশের সমালোচনার মুখে পড়েছে তৃণমূল। গত কয়েকদিন এই সমালোচনা চলার পর আজ, বুধবার তৃণমূল সাংসদরা দিল্লিতে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। প্ল্যাকার্ড হাতে তারা ব্যাংক ভবনের ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাধা দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। উভয় পক্ষের মধ্যে বচসা হয়। মঙ্গলবার সাংসদরা ভারতীয় জীবনবিমা নিগম-এর সদর দপ্তরে বিক্ষোভ দেখান।

তৃণমূলের এ ধরনের অবস্থানের জন্য কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী সরাসরি দলের নেত্রীর দিকে আঙুল তুলেছেন। সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার মন্তব্য, ‘'মোদী ও আদানির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে পরিবর্তন এসেছে। তিনি কারো বিরুদ্ধেই নন। তাই তৃণমূল একেবারে ঠান্ডা।‘' যদিও লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদানিকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছেন। ইডি দ্রুত তদন্ত শুরু করুক, এমনও সওয়াল করেছেন তিনি।

পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, আদানিদের কেলেঙ্কারি সামনে আসায় কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে তৃণমূল। এর পিছনে রয়েছে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কারণ। পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির ক্ষেত্রে গৌতম আদানির সংস্থা এগিয়ে এসেছে। তৃণমূলের ১২ বছরের শাসনে এটাই হতে চলেছে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এছাড়া দেউচা পাচামির কয়লাখনি প্রকল্প, হলদিয়া ও কলকাতা বন্দরের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে আদানিরা।

এ কারণেই আদানির প্রশ্নে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি‘ গোছের অবস্থান নিচ্ছে তৃণমূল। এমনটাই মত বিশ্লেষকদের। প্রবীণ সাংবাদিক আশিস ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘'আদানির ব্যাপারে তৃণমূল অদ্ভুত আচরণ করছে। শিল্প-খরার রাজ্যে লগ্নি আনতে এই শিল্পগোষ্ঠীকে তারা ঘাঁটাতে রাজি নয়। অন্য ইস্যুতে যেভাবে তৃণমূল পথে নামে, এক্ষেত্রে নামেনি। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নামমাত্র উল্লেখ করছেন। তার মানে বিরোধিতার দলে থেকেও দলে নেই!‘'

তৃণমূলের কাজকর্মে বিজেপির সুবিধা হচ্ছে: রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

আদানি প্রসঙ্গে তৃণমূল আলাদা বিরোধিতা করায় বিরোধী ঐক্য কার্যত দুর্বল হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী শক্তি জোট বাধে কি না, এটাই যখন কৌতূহলের বিষয়, সেই সময় তৃণমূলের এমন ভূমিকা কেন? দলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘'আমরা বিরোধী জোট থেকে সরে যাচ্ছি না, জোটকে পথ দেখাচ্ছি। তৃণমূল বলেছিল, আলোচনা ছাড়া এই অনিয়মের রহস্য উদঘাটন করা যাবে না। সব বিরোধীই সেই পথে হাঁটতে চলেছে।‘'

যদিও বিরোধীদের বড় অংশই মনে করছে, তৃণমূলের কাজকর্মে বিজেপির সুবিধা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘'একগুচ্ছ দুর্নীতির তদন্ত কিংবা বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রশ্নে কেন্দ্র যাতে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছে তৃণমূল। ত্রিপুরা, মেঘালয়ে তৃণমূল লড়ছে যার ফলে বিরোধী ভোট ভাগ হবে। আদানির বিষয়েও অবস্থান স্পষ্ট নয়। এতে বিরোধী জোটকে ছন্নছাড়া দেখাবে। বিজেপির লাভ হবে।‘'

লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ার দৌড়ে শামিল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস, তেলঙ্গানার ভারতীয় রাষ্ট্র সমিতির মতো মূলত অঞ্চলভিত্তিক দলগুলি। কিন্তু সাংসদ সংখ্যা বা দেশজোড়া ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে প্রধান বিরোধী কংগ্রেসই।

২০২২ সালের ছবিঘর

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ