মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন৷ কিন্তু তাঁর এই আদেশ একের পর এক বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রথমে সিয়াটলের একজন বিচারক ট্রাম্পের আদেশ বাস্তবায়ন স্থগিত করে রায় দেন৷ এর প্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় সিয়াটলের ঐ বিচারকের রায় বাতিল করে জরুরি ভিত্তিতে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ বহাল রাখার আবেদন করেছিলেন সান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল আপিল আদালতে৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার আপিল আদালতের তিনজন বিচারকই ট্রাম্পের আদেশ বহালের বিরুদ্ধে রায় দেন৷
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সান ফ্রান্সিসকোর আদালতের রায়ের পরপরই টুইট করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁর প্রশাসন আবারও আদালতে যাবে৷
এরপর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত৷’’
ট্রাম্পের টুইটের পর বিশ্লেষকরা ধরে নিচ্ছেন বিষয়টির সুরাহা হতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে হতে পারে৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ঊর্ধ্বতন গবেষক গ্রেস মেঙ সান ফ্রান্সিসকোর আদালতের রায়ের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘‘এটি (এই রায়) স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা৷ প্রেসিডেন্ট ক্ষতিকর কিছু করতে চাইলে তা নিয়ন্ত্রণে এরকম বিচার ব্যবস্থা প্রয়োজন৷’’
জানুয়ারির ২৭ তারিখে সই করা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকরা আগামী তিন মাস যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না৷ সবগুলো দেশই মুসলিমপ্রধান হওয়ায় অনেকে এই আদেশে মুসলিমদের উপর নিষেধাজ্ঞা হিসেবে দেখছেন৷ তবে ট্রাম্প প্রশাসন এই অভিযোগ অস্বীকার করছে৷
ট্রাম্পের মতোই চান তাঁরা
লন্ডনের থিংক ট্যাংক ‘চ্যাথাম হাউস’এর এক জরিপ বলছে, অধিকাংশ ইউরোপীয় নাগরিক নতুন করে তাদের দেশে মুসলিম দেশ থেকে আসা অভিবাসী নিতে চান না৷ অর্থাৎ তাঁরা ট্রাম্পের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে৷ অবশ্য ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ জারির আগেই জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছিল৷
দশটি দেশের ১০ হাজার নাগরিককে একটি বিবৃতির পক্ষ-বিপক্ষ নিতে বলা হয়েছিল৷ বিবৃতিটি ছিল এরকম, ‘‘আরও অভিবাসী, প্রধানত মুসলিম দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের নেয়া বন্ধ করা উচিত৷’’ প্রায় ৫৫ শতাংশ উত্তরদাতা বিবৃতির পক্ষে বলে জরিপে জানা গেছে৷ যে সব দেশের নাগরিকদের উপর জরিপ করা হয়, সেগুলো হচ্ছে, বেলজিয়াম, জার্মানি, গ্রিস, স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি, অস্ট্রিয়া, গ্রেট ব্রিটেন, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পদ ও সাম্রাজ্য
ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক কতটা ধনি? সেই সম্পদের ভিত্তিই বা কী? ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সম্পদ নিয়ে বড়াই করে থাকেন, কিন্তু বিশদ কিছু না জানিয়ে৷ যেটুকু জানা গেছে, তা হলো...
ছবি: picture-alliance/AA
ট্রাম্প কতটা বড়লোক?
ট্রাম্পের সম্পত্তি নিয়ে কথা উঠলে প্রথমে কিছুটা ধাঁধা লাগে৷ তাঁর ধনসম্পদ সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার অভিযান থেকেও কোনো বিশদ খবরাখবর পাওয়া যায়নি, যেহেতু ট্রাম্প অপরাপর প্রার্থীদের মতো তাঁর আয়করের খতিয়ান প্রকাশ করেননি৷
ছবি: Getty Images/C. Somodevilla
ট্রাম্প নিজে যে বিবৃতি দিয়েছেন
...তা অন্যান্যদের হিসেবনিকেশের সঙ্গে মেলে না৷ ২০১৫ সালের জুন মাসে ট্রাম্প বলেন যে, তাঁর সম্পদের মূল্য আটশ’ কোটি ডলারের বেশি৷ কিন্তু ফর্বসের হিসেব অনুযায়ী তাঁর সম্পদ ৪১০ কোটি ডলার৷ ২০১৫-র জুলাই মাসের মাঝামাঝি ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায় যে, তাঁর বিত্তের পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলার৷ কিন্তু ব্লুমবার্গ সংবাদ সংস্থার মতে তখন ট্রাম্পের সম্পদ ২৯০ কোটি ডলারের বেশি নয়৷
ছবি: Reuters/J. Bourg
গ্লোবাল কর্পোরেট নেটওয়ার্ক
ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত জার্মান পত্রিকা ‘হান্ডেলসব্লাট’-এর বিবরণ অনুযায়ী, ২৫টি দেশের ৫০০ কোম্পানিতে ট্রাম্পের শেয়ার আছে৷ এই সব কোম্পানির কার্যকলাপ, আয়-ব্যয় বা মুনাফা সম্পর্কে প্রায় কিছু জানা নেই৷ ২৫টি দেশে ট্রাম্পের ১৪৪টি কোম্পানি আছে, বলে সিএনএন দাবি করে থাকে৷ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার খবর অনুযায়ী ট্রাম্পের অন্তত ১৮টি দেশে ১১১টি কোম্পানি আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
রিয়্যাল এস্টেট
ট্রাম্পের সাম্রাজ্য হলো ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’, যা তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন৷ ১৯৭১ সাল যাবৎ তিনি এই কোম্পানিটির দায়িত্বে৷ সারা বিশ্বে এই কোম্পানির বড় বড় প্রপার্টি আছে, যেমন নিউ ইয়র্কে ৪০ নম্বর ওয়াল স্ট্রিট, ভ্যানকুভারে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড টাওয়ার বা (ছবিতে) লাস ভেগাসের ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেল৷
ছবি: Getty Images/J.Raedle
চার বাড়িতেই বাজি মাত
ট্রাম্পের সম্পদ মোটামুটি চারটি বহুতল ভবনে আবদ্ধ, বলে ফর্বস পত্রিকার অভিমত৷ নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের দু’টি অফিস ভবন আছে, এছাড়া তিনি ফিফ্থ অ্যাভিনিউ-এর ট্রাম্প টাওয়ারের অংশীদার৷ সান ফ্রান্সিস্কোতেও তাঁর একটি বহুতল ভবন আছে৷ এই চারটি বহুমূল্য স্থাবর সম্পত্তি ট্রাম্পের সম্পদের মোট ৪০ শতাংশ, বলে ফর্বস-এর ধারণা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W.G. Allgoewer
গল্ফ কোর্স
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প মোট ১৭টি গল্ফ কোর্সের মালিক৷ ২০১৬ সালের মে মাসে ট্রাম্প বলেন যে, এই গল্ফ কোর্সগুলি থেকে তাঁর বছরে ৩০ কোটি ডলারের বেশি আয় হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Lawson
তাজ মহল
হ্যাঁ, তবে অ্যাটলান্টিক সিটিতে, এবং এটি একটি ক্যাসিনো৷ ট্রাম্প অ্যাটলান্টিক সিটি ও ফ্লরিডায় তাঁর ক্যাসিনোগুলিতে অনেক টাকা ঢেলেছেন৷ অ্যাটলান্টিক সিটির তাজ মহল ক্যাসিনোটি তৈরি করতে নাকি ট্রাম্পকে প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছে৷ ক্যাসিনোটি প্রথমবার দেউলিয়া হয় ১৯৯১ সালে; তারপর ২০০৪, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে আরো তিনবার দেউলিয়া হয়৷ শেষমেষ ২০১৬ সালের ১০ই অক্টোবর ক্যাসিনোটি বন্ধ করে দেওয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/W.T.Cain
‘ইউ’র ফায়ার্ড’
টেলিভিশন মনোরঞ্জনের জগতেও ভাগ্যানুসন্ধান করেছেন ট্রাম্প৷ ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ নামের সফল টিভি সিরিজটির সঞ্চালক ও প্রযোজক ছিলেন ট্রাম্প৷ শো’টি চলে ২০০৪ থেকে ২০১১ সাল অবধি৷ ১৭টি দেশে তা সম্প্রচার করা হয়েছে৷
আদালতে মামলা আর ব্যর্থ চুক্তির কারণে অধিকাংশ মার্কিন ব্যাংক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টাকা ধার দিতে চায় না৷ জার্মানির ডয়চে ব্যাংক কিন্তু কোনোদিনই ট্রাম্পকে না বলেনি, বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা৷ ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ পত্রিকার খবর অনুযায়ী ডয়চে ব্যাংক ১৯৯৮ সাল যাবৎ ট্রাম্পকে ২৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে৷ সিএনএন-এর খবর অনুযায়ী ডয়চে ব্যাংকের কাছে ট্রাম্পের এখনও ৩৬ কোটি ডলার ধার আছে৷
ছবি: picture-alliance/Markus Ulmer
স্বার্থের সংঘাত?
ঘটতে বাধ্য, বলে মনে হতে পারে৷ অতীতে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা তাদের ব্যবসা কোনো ট্রাস্ট বা নিধির হাতে তুলে দিয়েছেন৷ মালিকানা বজায় থাকলেও, ব্যবসা চালানোয় আর তাঁদের কোনো হাত থাকেনি৷ ট্রাম্পও তাঁর ব্যবসা তাঁর প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দেবার কথা ভাবছেন৷ খুঁটিনাটি নাকি তিনি ২০১৬-র জানুয়ারি মাসে জানাবেন৷