আদালতের রায়ে ইমরানের শরিক দলের হাতে পাঞ্জাব প্রদেশ
২৭ জুলাই ২০২২
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শরিক দলের প্রার্থী পারভেজ এলাহিকেই পাঞ্জাব প্রদেশের দায়িত্ব নেয়ার রায় দিয়েছে পাকিস্তানের আদালত৷
বিজ্ঞাপন
মাঝরাতেই ‘কাহানি মে টুইস্ট’৷পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল এলাকা পাঞ্জাব প্রদেশেরমুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেছেন ইমরান খান সমর্থিত প্রার্থী৷ মঙ্গলবার মাঝরাতের রায়ে ফের পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন মোড়৷ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ছেলে হামজা শাহবাজের নিয়োগকে বেআইনি ঘোষণা করেছে আদালত৷
পাকিস্তানের শীর্ষ আদালতের এই রায় হামজার বাবা, অর্থাৎ পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের জন্য বড় এক ধাক্কা৷ পাঞ্জাবের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া ছিল সরকার৷ ক্ষমতায় থাকা পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন-এর) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকে এই রায় যথেষ্ট উদ্বেগে ফেলেছে৷
মাস কয়েক আগেই দেশের ধসে পড়া অর্থনীতিএবং ভুল পররাষ্ট্রনীতির অভিযোগে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো৷ দেশের অর্থনীতির সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল তখন৷ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে অনাস্থা ভোটে এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান৷ এবার পাকিস্তান সরকারের উপর ফের চাপ বাড়াল ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)৷
নাটকীয়মোড়
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টএকটি সংক্ষিপ্ত আদেশে ইমরান খান সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে রায় দেয়৷ মঙ্গলবার মধ্যরাতের আগে ইমরান সমর্থিত পারভেজ এলাহিকে পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর নির্দেশ দেয় আদালত৷ ইসলামাবাদের আইওয়ান-ই-সদরে এলাহিকে শপথবাক্য পাঠ করান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি৷ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ছেলে হামজা শাহবাজের নিয়োগ বেআইনি বলে জানায় আদালত৷
এর আগে পাঞ্জাব বিধানসভার স্পিকার এলাহিকে জয়ী মানতে অস্বীকার করেছিলেন৷ কিন্তু শীর্ষ আদালত স্পিকারের সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে৷
মঙ্গলবার মধ্যরাতে রায়ের পর সাংবাদিকদের তথ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত জনগণ মেনে নেয়নি৷ জোটের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে ভবিষ্যতের কর্মসূচি ঠিক করব৷''
গুরুতর অসুস্থ পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ। দেশে ফেরার শেষ ইচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। আপত্তি নেই সেনার।
ছবি: Aamir Qureshi/AFP/Getty Images
মোশাররফ কেমন আছেন?
চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় যে, সাবেক পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। যদিও এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার পরিবারের তরফে ওই খবর অস্বীকার করা হয়। তবে কয়েকঘণ্টা ধরে এ নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
মোশাররফের অসুখ
এক জটিল অসুখে আক্রান্ত মোশাররফ। অসুখের নাম অ্যামিলয়ডোসিস। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অ্যামিলয়েড নামের এক প্রোটিন তৈরি হতে থাকে। যার ফলে গোটা শরীরে অসংখ্য অতিরিক্ত টিস্যু তৈরি হয়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, এটি একটি মারণ রোগ।
ছবি: picture-alliance/dpa
কেমন আছেন মোশাররফ
দিনকয়েক আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন মোশাররফ। কিন্তু তার শরীরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই পরিস্থিতিতে দেশে ফিরতে চেয়েছেন তিনি।
ছবি: Reuters/M. Khursheed
মোশাররফের ইচ্ছা
এক সংবাদমাধ্যমকে মোশাররফ জানিয়েছেন, জীবনের শেষ কয়েকটি দিন তিনি দেশে থাকতে চান। এটাই তার শেষ ইচ্ছা।
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP/Getty Images
পাকিস্তান সেনার বক্তব্য
পাকিস্তানের সেনা জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জীবনের শেষ সময়ে দেশে ফিরতে চাইলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। সেনার মুখপাত্র বাবর ইফতিকার একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ''সেনার অবস্থান পরিষ্কার। মুশারফ দেশে ফিরলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তার পরিবারকে একথা জানানো হয়েছে। এরপর পরিবার যোগাযোগ করলে আমরা তাকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করব।''
ছবি: Getty Images/AFP/A. Qureshi
সরকারের অবস্থান
এক সময় মোশাররফের সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিল পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের। নওয়াজ এখন পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) প্রধান। তার ভাই শেহবাজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। নওয়াজ জানিয়েছেন, মুশারফ দেশে ফিরতে চাইলে সবরকম ব্যবস্থা করুক সরকার। টুইটে তিনি লিখেছেন, 'একসময় আমি যে দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে গেছি, চাই না আর কেউ তা দেখুক। মোশাররফের প্রতি আমার কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই।'
ছবি: K.M. Chaudary/AP/dpa/picture alliance
আমিরাতে মোশাররফ
৭৮ বছরের মোশাররফ ২০১৬ সালে চিকিৎসার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছিলেন। এরপর আর তিনি পাকিস্তানে ফেরেননি। স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। এরমধ্যে ২০০৭ সালে দেশের সংবিধান তুলে দেওয়ার জন্য মোশাররফের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের আদালত মোশাররফকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করে এবং তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মোশাররফকে সেই দণ্ড ভোগ করতে হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।