1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মন্দির-মসজিদ বিতর্কের অবসান?

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১৭ অক্টোবর ২০১৯

পাঁচশ' বছরের বিতর্ক বোধহয় মিটতে চলেছে৷ অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নাকি রাম মন্দির, জানাবে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত৷ নাটকীয়ভাবে সমাপ্ত হয়েছে একটানা ঊনচল্লিশ দিনের সওয়াল-জবাব৷ এখন চূড়ান্ত রায়দানের অপেক্ষা৷

ছবি: Imago/Hindustan Times/S. Mehta

নাটকের অন্ত নেই৷ বহু বিতর্কিত এই মামলার সওয়াল-জবাবের সময় আদালত কক্ষে মানচিত্র ছিঁড়ে ফেললেন আইনজীবী৷ যা দেখে ওয়াকআউটের হুমকি দিয়ে দিলেন প্রধান বিচারপতি৷ দিনভর শুনানি শেষ হওয়ার পর মামলার রায়দান আপাতত স্থগিত রেখেছে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ৷ এদিকে, আগামী ১৭ নভেম্বর অবসর নেবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ৷ তার আগেই এই মামলার রায়দানের সম্ভাবনা প্রবল৷ রায় যার পক্ষেই হোক না কেন, আইন-শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখা ভারতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে৷

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অযোধ্যার সাধারণ মানুষ মন্দির-মসজিদ বিতর্কে দাঙ্গা, হানাহানি চায় না৷ তারা শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়৷ ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় যা ঘটেছে তা বাইরে থেকে গিয়ে ঘটানো হয়েছে৷ চূড়ান্ত রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে বিচারপতিদের৷ অনেকে বলছেন, বিতর্কিত জমির দাবিদার তিনটি পক্ষ যখন জমি ভাগাভাগি করতে রাজি নয়, তখন ওই জমি অধিগ্রহন করে জনগণের স্বার্থে হাসপাতাল গড়ে তোলা হোক৷

আদালতকে অনেকগুলি স্পর্শকাতর বিষয় মাথায় রাখতে হবে: সুজিত রায়

This browser does not support the audio element.

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ সুজিত রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘রামের জন্মস্থান নাকি বাবরি মসজিদ গড়া হবে, সেই বিতর্কের সমাধান করার সময় আদালতকে অনেকগুলি স্পর্শকাতর বিষয় মাথায় রাখতে হবে৷ বিষয়টিকে সরাসরি রাজনৈতিক ইস্যু বললে ভুল হতে পারে৷ কারণ এটি বিজেপির চেয়ে অনেক বেশি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ইস্যু৷ ফৈজাবাদ ও অযোধ্যার স্থানীয় কেউই দাঙ্গা হাঙ্গামা করে বিতর্কের সমাধান চায় না৷ সাধারণ মানুষের দাবি, বিতর্কিত জমিতে হাসপাতাল গড়া হোক৷’’

মন্দির, মসজিদ বিতর্ক ভারতের হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়৷ পরিস্থিতি বুঝে গত ১৪ অক্টোবর থেকে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত অযোধ্যায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে৷ শুনানি চলাকালীন আরও কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে শীর্ষ আদালত৷ যেমন, অনুমতি ছাড়া সেখানে ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ৷ তাছাড়া নৌকা চালানো, আতশবাজি তৈরি এবং বিক্রি না করা ইত্যাদি৷

পুরো মামলাটি বিশ্বাস ও ভাবাবেগের ওপর দাঁড়িয়ে আছে: সৌম্য চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

আসলে পাঁচশ’ বছর ধরে বিতর্ক চলছে৷ মহাকাব্য রামায়ণে বলা হয়েছে অযোধ্যা রামজন্মভূমি৷ যা উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত৷ মোঘল যুগে সেখানে মসজিদ তৈরি হয়৷ তারপর প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর ধরে মন্দির না মসজিদ তাই নিয়ে টানাপোড়েন চলেছে৷ তবে, আইনি লড়াই শুরু হয় ভারতে ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ার পর৷ এরপর কেটে গেছে ১৩৪ বছর৷ ১৮৮৫ সালে বিতর্কিত জমির বাইরে শামিয়ানা টাঙিয়ে রামলালার মূর্তি স্থাপনের আবেদন জানান মহন্ত রঘুবীর দাস৷ আর্জি খারিজ করে দেয় ব্রিটিশ আদালত৷ ১৯৫৯ সালে বিতর্কিত জমির মালিকানা দাবি করে নির্মোহী আখড়া৷ ১৯৫০ সালে বিতর্কিত জমিতে রামলালার পুজোর অনুমতি চেয়ে মামলা হয় ফৈজাবাদ আদালতে৷ ১৯৮১ সালে জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করে সেন্ট্রাল সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড৷ ১৯৮৬ সালে পুজোর জন্য বিতর্কিত কাঠামোর দরজা খুলে দিতে নির্দেশ দেয় ফৈজাবাদ আদালত৷ আবার ১৯৮৯ সালে বিতর্কিত জমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেয় এলাহাবাদ উচ্চ আদালত৷ এই পর্যন্ত চলছিল আইনি লড়াই৷ তারপর যা ঘটেছে তা ভারতের ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায় বলে অনেকে দাবি করেন৷ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয় হিন্দুত্ববাদীরা৷

১৯৯৩ সালে দেশের সংসদে আইন পাস করে অযোধ্যার ওই বিতর্কিত জমির দখল নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ ২০১০ সালে এক মামলার রায়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানায়, জমিটি তিনভাগ করা হোক৷ দাবিদার রাম লালা, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এবং নির্মোহী আখাড়ার মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করা হোক৷ সেই রায়ের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় মামলাকারী তিনটি পক্ষই৷ তারপর সুপ্রিম কোর্ট ২০১১ সালে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়৷

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সৌম্য চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘পুরো মামলাটি বিশ্বাস ও ভাবাবেগের ওপর দাঁড়িয়ে আছে৷ প্রমাণের খুব বেশি বালাই নেই৷ তবে, আদালত সব পক্ষের কথা শুনেছে৷ ১৭ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি অবসর নিচ্ছেন৷ তার আগেই চূড়ান্ত রায় আসতে পারে৷ সব সম্প্রদায়ের মানুষ কৌতুল নিয়ে রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে৷’’

এরপরেও ঘটনা থেমে থাকেনি৷ ২০১৭ সালে ৭ আগাস্ট মামলার শুনানির জন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট৷ ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এস আব্দুল নাজিরের বেঞ্চে নতুন করে মামলার শুনানি শুরু হয়৷ ২০১৮ সালের ২৯ আগাস্ট নতুন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে ফের নতুন করে তিন সদস্যের বেঞ্চ গঠত হয়৷ ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে নতুন করে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ তৈরি হয়৷ গত ৬ আগস্ট থেকে প্রতিদিন অযোধ্যা মামলার শুনানি শুরু চলেছে৷ এখন এই মামলার প্রধান বিবেচ্য বিষয় হল, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিটি কার হাতে যাবে? এখন আদালত সূত্রে খবর, আগামী ৯ নভেম্বর এই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হতে পারে৷

২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ