আদালতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট
১৫ নভেম্বর ২০১৩বাংলাদেশ ও ভারতের মতো জার্মানির প্রেসিডেন্টের ভূমিকা সাংবিধানিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ৷ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি বিদেশেও দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন৷ অর্থাৎ দলীয় রাজনীতির সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না৷ তবে অতীত তো আর মুছে ফেলা যায় না৷ এমনই এক অভিযোগের জের ধরে জার্মান প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিদায় নিতে হয়েছিল ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফকে৷ লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ২০০৮ সালে তিনি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন – এই অভিযোগে তাঁকে শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পদত্যাগ করতে হয়৷
এবার সেই অভিযোগ মামলার আকারে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে৷ বৃহস্পতিবার ছিল মামলার প্রথম দিন৷ বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ২০টি শুনানি হবে৷ মামলায় প্রায় ৪৫ জন সাক্ষীর বয়ান নথিভুক্ত হবার কথা৷ তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বেটিনা ভুল্ফ-ও৷ স্বামী-স্ত্রী বেশ কিছুকাল একসঙ্গে থাকেন না৷
ভুল্ফ এখনো নিজেকে নির্দোষ দাবি করে চলেছেন৷ আদালতেই এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে – এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত৷ কারণ ক্ষমতায় থাকতে তিনি সব সময়ে সঠিক আচরণ করে এসেছেন, বলেন ভুল্ফ৷
দুর্নীতির অভিযোগ শুনলেই মনে হয় কোটি কোটি টাকার অনিয়মের কথা৷ ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ-এর ক্ষেত্রে অর্থের অঙ্ক মোটেই সেরকম নয়৷ এমনকি তিনি সরাসরি কোনো অর্থও গ্রহণ করেন নি৷ ২০০৮ সালে তিনি যখন সপরিবারে মিউনিখের ‘অক্টোবারফেস্ট' উৎসব দেখতে গিয়েছিলেন, তখন হোটেলে থাকার ও বাচ্চার দেখাশোনার খরচ পড়েছিল ৫১০ ইউরো৷ রেস্তোরাঁয় সান্ধ্যভোজনের খরচ পড়েছিল ২১০ ইউরোর মতো৷ ডাভিড গ্র্যোনেভল্ড নামের এক চলচ্চিত্র প্রযোজক নিজের পকেট থেকেই নাকি সেই বিল মিটিয়ে দিয়েছিলেন৷ নিছক সৌজন্যের বশে নয়, এর বদলে গ্র্যোনেভল্ড নিজের একটি চলচ্চিত্রের বিপণনের ক্ষেত্রে ভুল্ফ-এর সক্রিয় ভূমিকা দেখতে চেয়েছিলেন৷ ভুল্ফ তাঁকে হতাশ করেন নি৷ এই চলচ্চিত্রের প্রশংসা করে তিনি ডিসেম্বর মাসে সিমেন্স কোম্পানির প্রধানকে একটি চিঠি লেখেন৷
টাকার অঙ্ক খুব বেশি নয়, এমন অভিযোগের অকাট্য প্রমাণ কতটা সহজ হবে, তা বলা কঠিন৷ কিন্তু দুর্নীতি দুর্নীতিই৷ তাছাড়া ভুল্ফ-এর বিরুদ্ধে এটাই একমাত্র অভিযোগ নয়৷ অবিশ্বাস্য সহজ শর্তে গৃহঋণ থেকে শুরু করে শিল্পপতি বন্ধুদের খরচায় ছুটি কাটানোর মতো আরও কিছু অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে৷
তাহলে কি দুর্নীতির প্রশ্নে জার্মান মানদণ্ড সত্যি বেশ কড়া? নাকি শুধু রাজনীতিকদের ক্ষেত্রেই উচ্চ প্রত্যাশা রয়েছে৷ বায়ার্ন মিউনিখ ফুটবল ক্লাবের প্রেসিডেন্ট উলি হ্যোনেস-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রশ্নে ক্লাবের সদস্যরা কিন্তু অনেক উদার৷ বুধবার কান্নাভরা কণ্ঠে হ্যোনেস যখন তাঁর বিরুদ্ধে আনা কর ফাঁকির অভিযোগের কথা বলছিলেন, তখন গোটা হল করতালিতে ফেটে পড়ে৷ গত ৭ মাস ধরে তিনি শাস্তি ভোগ করছেন৷ তাঁর প্রতি প্রায় নিঃশর্ত সমর্থন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে৷ এমন একটি দৃষ্টান্ত সারা দেশে আইন সম্পর্কে নৈতিক অবস্থানের ক্ষেত্রে মোটেই ভালো নয় বলে মনে করছে অনেক মহল৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি)