অনুব্রত মন্ডল এখন জেলে। তাতে কী হয়েছে? আদালত চত্বর থেকেই তিনি বিরোধীদের হুমকি দিলেন।
বিজ্ঞাপন
শনিবার আদালত চত্বর থেকেই সামনে এল সেই অনুব্রতের বচন। যখন তিনি জেলের বাইরে ছিলেন, তখন এই বচন নিয়মিত শোনা যেত। তিনি গুড়-বাতাসা দেয়ার কথা বলতেন। ঢাক যে চড়াম চড়াম করে বাজবে, সেটাও জানাতেন। এমনকি নকুলদানা দেয়ার কথাও জানাতেন। এ সবই ছিল সাদা কথার পিছনে হুমকি। সেই হুমকি তার বিরোধী শিবিরে ছড়িয়ে পড়তে খুব একটা দেরি হতো না।
এখন দেখা গেল, জেলে থাকার পরেও সেই হুমকি দিচ্ছেন তিনি। শনিবার আসানসোল জেল থেকে তাকে বিশেষ সিবিআই আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা করেন তার ঘনিষ্ঠ নেতারা। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা জানাচ্ছে, অনুব্রতএজলাসে রাখা বেঞ্চিতে বসেন। পরণে নীল পাঞ্জাবি। দলের কর্মীরা এসে বিজয়ার প্রণাম করেন। কেউ কেউ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কেউ তারাপীঠের প্রসাদী ফুল মাথায় ঠেকিয়ে হাতে তুলে দেন। তখনই পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে হুমকিটা আগাম দিয়ে দেন অনুব্রত। জেলার প্রতিটি ব্লকের নাম ধরে ধরে অনুগামীদের কাছে ফিডব্যাক-ও নেন।
তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা অনুব্রত গ্রেপ্তার
গরুপাচার কাণ্ডে বোলপুরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার অনুব্রত মণ্ডল। সিবিআইয়ের ক্যাম্প অফিসে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বোলপুর থেকে গ্রেপ্তার
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ বোলপুরের বাড়ি থেকে অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিবিআইয়ের বিশাল দল তার বাড়িতে গিয়ে অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিবিআইয়ের কৌশল
বুধবার মাঝরাতে পাঁচটি গাড়ি নিয়ে বোলপুরে পৌঁছে যান সিবিআই অফিসাররা। বৃহস্পতিবার সকালে তার বাড়ি ঘিরে ফেলে সিআরপিএফ জওয়ানরা। দেড়ঘণ্টা বাড়িতে কথা বলার পর অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গরুপাচার কাণ্ডে গ্রেপ্তার
অনুব্রতের বিরুদ্ধে গরুপাচার কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ। আগেই তৃণমূলের এই হেভিওয়েট নেতার দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি উদ্ধার হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিতর্কিত নেতা
বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন অনুব্রত। এর আগে পুলিশকে বোমা মারার কথা বলেছিলেন অনুব্রত। ভোটের সময় চড়াম চড়াম ঢাক বাজানোর কথা বলেছেন। গাঁজা কেসে বিরোধীদের গ্রেপ্তার করানোর কথা বলেছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অনুব্রতের লুকোচুরি
এর আগে ১০ বার অনুব্রতকে তলব করেছিল সিবিআই। একবার মাত্র সিবিআইয়ের নিজাম প্যালেসে গেছেন তিনি। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বার বার জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে গেছেন অনুব্রত।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অসুখ বিতর্ক
এসএসকেএম হাসপাতালে গত সোমবার চিকিৎসার জন্য গেছিলেন অনুব্রত। সেখানে তাকে দেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, বার্ধক্যজনিত কিছু রোগে ভুগছেন তিনি। তবে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বোলপুরের চিকিৎসকরা তাকে বেডরেস্টের নির্দেশ দেন।
ছবি: Subrata Goswami
আসানসোলের পথে
আসানসোল আদালতে তোলা হতে পারে অনুব্রতকে। তার আগে সিবিআই তাকে আরো জেরা করতে পারে মনে করা হচ্ছে। অনুব্রতকে সরাসরি গরুপাচার মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
7 ছবি1 | 7
অনুগতদের কাছেই তিনি শোনেন, কিছু নেতা নিজের ইচ্ছেমতো চলছেন। গোষ্ঠীবাজি করছেন। শুনেই উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ''আমি সব খবর রাখছি। দলের মধ্যে গ্রুপবাজি বরদাস্ত করব না। মনে রেখো, আমি কিন্তু চিরকাল জেলে থাকব না। যারা দলের মধ্যে গ্রুপবাজি করছে, বেরিয়েই সব কটা'কে ছেঁটে দেব। পঞ্চায়েত নির্বাচন সামনে। এখন থেকেই ভোটের কাজে নেমে পড়ো। সবাই এক হয়ে কাজ করবে।''
বিধায়কদের নিজের নিজের বিধানসভায় কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। অন্যের বিধানসভায় নাক না গলানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দলের সব পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু গরুপাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত অনুব্রতকে বীরভূম জেলা সভাপতির পদ থেকে সরাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুজো আছে, নেতা নেই
তাদের নামেই চলে এই পুজোগুলি। এবছরও হচ্ছে পুজো। কিন্তু নেতারা নেই। কেউ জেলে, কেউ পরলোকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নাকতলার পুজো
শহরবাসীর কাছে নাকতলার পুজো মানেই ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো’। কিন্তু সম্প্রতি সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়ে সংশোধনাগারে। পার্থের পুজো আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করলেও এইবছর নাকতলার পুজো উদ্বোধনে যাননি মুখ্যমন্ত্রী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উদ্বোধনে নেই
হেভিওয়েট নেতা পার্থকেও প্রতিবছর অন্যান্য পুজোর উদ্বোধন করতে হতো, কিন্তু এই বছর তিনি আলিপুর জেলে বন্দিদশা কাটাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মোটা কাপড়
পার্থের পুজো নাকতলা উদয়ন সংঘের এইবছরের থিম ‘মোটা কাপড়’। যদিও পার্থহীন এই বছরের পুজোর জৌলুস এতটুকু কমেনি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এবং অর্পিতা
পরপর দু’বছর নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজোর মুখ ছিলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ২০১৯ এবং ২০২০, দুই বছরই উদয়ন সংঘের পুজোর পোস্টার থেকে হোর্ডিং, সর্বত্র জ্বলজ্বল করতেন অর্পিতা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্পিতা প্রধান অতিথি
প্রধান অতিথি হয়ে পুজোর পুরস্কার প্রদানও করেছেন অর্পিতা। নিজের আবাসন থেকে পুরনো পাড়ার পুজো, সর্বত্রই কোনও না কোনওভাবে দেখা গিয়েছে তাকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্পিতা জেলে
পার্থের সঙ্গী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও এই পুজোয় প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেষ্টর পুজো
বোলপুরের নীচুপট্টি এলাকার এই বাড়ির সামনেই লাগানো হয়েছে তার এলাকার পুজোর ব্যানার। এবারের পুজো পাড়ায় নয় জেলেই কাটাতে হবে বীরভূমের কেষ্টকে। ইডি গ্রেপ্তার করেছে তাকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পারিবারিক গ্রাম
বীরভূমের নানুরের হাটসেরান্দি গ্রাম। অনুব্রতর পারিবারিক দুর্গাপুজো এখানে ‘মোড়ল বাড়ির পুজো’ নামেই খ্যাত। সেইবাড়ির মেজো ছেলে এই বছর পুজোয় থাকবে না। কমেছে পুজোর জাঁকজমকও।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পারিবারিক দুর্গামন্দির
পারিবারিক দুর্গামন্দির প্রতিবারের মত রং করা হয়েছে। প্রথামাফিক পালিত হবে সব নিয়মই, কিন্তু অন্যান্য বারের মত এই বছর পুজোয় গ্রামে আসবে না ‘মোড়ল’ বাড়ির কেষ্ট।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কলকাতা থেকে মাছ
গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, কলকাতা থেকে চিংড়ি, ইলিশ, ভেটকি আসতো পুজোয়। খাসির মাংস হতো। সঙ্গে হরেক মিষ্টি। অনুব্রত জেলবন্দি থাকায় তেমন কোনও আয়োজন হচ্ছে না এ বার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সুব্রত নেই
প্রায় একবছর হতে চলল তিনি নেই। জীবদ্দশায় নিয়ম করে সময় পেলেই একবার ক্লাবে আসতেন। এই বছরের পুজোর সন্ধেগুলোয় আর রঙিন নকশা পেড়ে ধুতি পরে বসে থাকতে দেখা যাবে না ক্লাবের সভাপতিকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ক্লাব মনে রেখেছে
এখনও একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবের ছত্রে ছত্রে জড়িয়ে রয়েছেন তিনি। সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ছবি সামনে রেখেই এইবছর খুঁটিপূজা করা হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মণ্ডপে তার ছবি
এই পুজোকে ঘিরে নানান জায়গায় লাগানো রয়েছে ক্লাবের সাবেক সভাপতির স্মৃতিচিত্র। পুজোমণ্ডপে ঢোকার মুখেও রয়েছে তার ছবি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
13 ছবি1 | 13
অনুব্রতের সঙ্গে শনিবার বীরভূম জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র মলয় মুখোপাধ্যায়, জেলা সংখ্যালঘু সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শেখ নাজিমউদ্দিন, তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা ত্রিদিব ভট্টাচার্য-সহ কয়েক জন নেতা-কর্মী দেখা করেন।
অনুব্রত কথাগুলো কি শুধু দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, নাকি, তার লক্ষ্য দল ও বিরোধী দলের নেতারা সকলেই? প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তের মতে, ''সব বিরোধীকেই হুমকি দিয়েছেন তিনি। দলের বিরোধী এবং বিরোধী দলের নেতা, সকলকেই। এভাবেই তো অনুব্রত রাজনীতি করে এসেছে। হুমকি ও ভয়ের রাজনীতি।''
কিন্তু এতদিন জেলে থাকার পর তার কি ক্ষমতা কমতে পারে? আশিসের মতে, ''এটা নির্ভর করে দলনেত্রীর উপর। প্রশাসন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাশে না থাকলে কেউ এরকমভাবে ক্ষমতাশালী হতে পারে না।''
পার্থের চিৎকার
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও এদিন জেল থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। আদালতে যাওয়ার পথে সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা কি সত্যি? পার্থ চিৎকার করে বলেন, ''চোপ।''