1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আদিবাসীদের ওপর হামলা: এখনও দিন কাটছে আতঙ্কে

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

বিজয় দিবসে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নে আদিবাসীদের তিনটি গ্রামে হামলা হয়৷ এতদিন পর আজও সর্বস্ব খুইয়ে খোলা আকাশের নীচে বাস করছেন পাহাড়ি বাসিন্দারা৷ তাঁদের সহায়তা করার কেউ নেই, নেই নিরাপত্তা৷

Angriff auf Minderheit in Bangladesh
ছবি: Shayantani Twisha

রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের ১৪ মাইল নামের এলাকায় এক কিলোমিটারের মধ্যে পাশাপাশি তিনটি গ্রাম৷ সুরিদাসপাড়া, ক্যাম্পপাড়া ও আমতলা৷ এই তিনটি গ্রামে পাহাড়ি আদিবাসীদের বসবাস৷ আর সেখানেই ১৬ই ডিসেম্বর সকালে হামলা চালানো হয়৷ পুড়িয়ে দেয়া হয় বাড়ি-ঘর, ধ্বংস করা হয় ফল আর ফসলের খেত – শুধুমাত্র বাঙালিদের আনারস ও সেগুন গাছ কাটার অভিযোগ তুলে৷

হামলার শিকার দোকানি লক্ষ্মীরিতা চাকমা এবং সুরিদাসপাড়া গ্রামের প্রধান রাম কার্বারি, গ্রামবাসী সঞ্জীব চাকমা ও লেহকুমার চাকমা জানান, হঠাত্‍ হামলার কারণে তাঁদের পক্ষে কোনো কিছু বাঁচানো সম্ভব হয়নি৷ সকাল সাড়ে আটটা থেকে ন'টার দিকে পাঁচ শতাধিক বাঙালি এই হামলা চালায়৷ হামলাকারীরা ঘর-বাড়িতে আগুন, লুটপাট ছাড়াও আনারস খেত, লিচুবাগান ধ্বংস করে৷

‘ভিটেমাটি খুইয়ে আজ আমরা সর্বস্বান্ত, আতঙ্কগ্রস্ত'

হামলার অপর এক শিকার চঞ্চলাদেবী চাকমা বলেন, ‘‘আমার কমপক্ষে ৫০০ আড়তি ধান (এক আড়তিতে ১০ সের) পুড়ে গেছে৷ জমি থেকে নতুন তোলা এই ধান এখনো আমরা খাওয়াই শুরু করিনি৷ এবার কীভাবে আমাদের সংসার চলবে?''

মাথার ওপর আকাশই এখন সম্বলছবি: Shayantani Twisha

বনবিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমত্‍ ওগাসা ভিক্ষু জানান, ‘‘হামলাকারীরা মন্দিরে থাকা সাতটি পিতলের বৌদ্ধমূর্তিও নিয়ে গেছে৷ এ সময় মন্দিরঘর, সিমেন্ট এবং কঙ্কর দিয়ে তৈরি বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে৷''

সুরিদাসপাড়ার বরদ চাকমার ছেলে রতন চন্দ্র চাকমা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মোট ৫৬টি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ লুটপাট চালানো হয়েছে ৬২টি ঘরে৷ এছাড়া আনারস, লিচু ও সুগন্ধি আগরের বাগান ধ্বংস করা হয়েছে৷ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে গোলার ধান-চালসহ সবকিছু৷'' তিনি বলেন, ‘‘হামলার পর সরকারের তরফ থেকে আমাদের এখনো কোনোরকম নিরপত্তা দেয়া হয়নি৷ দেয়া হয়নি কোনো সহায়তা৷ তাই আমরা নিরপত্তাহীনতায় ভুগছি, আবারো হামলা হতে পারে – এই আতঙ্কে আছি আমরা৷''

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘বাঙালি হামলাকারীরা ‘প্রশাসনের' সহায়তায় দিনের বেলা এই হামলা চালায়, চালায় নির্যাতন৷ অরুণ চাকমার বৃদ্ধা মাকেও রেহাই দেয়নি তারা৷ তাঁকে বেদম মারপিট করে৷ তাদের উদ্দেশ্য পাহাড়িদের ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ করা৷ কিন্তু এখনো অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ আমরা থানায় মামলা করতেও সাহস পাচ্ছি না৷ তিনটি গ্রামের পাহাড়িরা এখন ভিটেমাটি হারিয়ে এক বিভীষিকাময় জীবনযাপন করছেন৷''

সব পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে...ছবি: Shayantani Twisha

‘পোশাক দেখলেই চেনা যায় হামলার সহায়তাকারীদের'

একই গ্রামের প্রীতিবালা চাকমা ডয়চে ভেলেকে জানন, ‘‘হামলার আগে তাঁদের গ্রামে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়৷ আর সেই গুলি ছোড়ার পরই প্রায় পাঁচশ' বাঙালি একযোগে তিনটি গ্রামে হামলা চালায়৷ পাহাড়িরা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তাঁদের ওপর নির্যাতন করা হয়৷ দীর্ঘক্ষণ ধরে হামলাকারীরা অগ্নিসংযোগ এবং তাণ্ডব চালায়৷ সে সময় পুলিশ এবং প্রশাসনের লোকজনকে খবর দেয়া হলেও, তাঁরা কেউ আসেননি৷''

কারা গ্রামে হামলা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘‘তারা' হামলাকারীদের সহায়তা করেছে গ্রামে ঢুকতে৷ ‘তারা' সাধারণ মানুষ না৷ ‘তাদের' নাম বলা যাবে না৷ সবাই ‘তাদের' দেখেছে৷ ‘তাদের' পোশাক দেখলেই চেনা যায়৷''

প্রীতিবালা চাকমা জানান, ‘‘হামলায় মোট ১০২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ পুলিশ হামলার পর এসেই আবার চলে যায়৷ নারী-শিশু এবং বৃদ্ধসহ সবাই এখনো খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন৷ হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা তো দূরের কথা, এখন তারা আবার আমাদের চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে৷''

ঘর-বাড়ি নেই, নেই বিছানা...ছবি: Shayantani Twisha

তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাড়ি-ঘর যখন পুড়িয়ে দেয়া হয় তখন আমারা শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করি৷ ফিরে এসে দেখি সবকিছু ছাই হয়ে গেছে৷''

‘আমরা ত্রাণ, ক্ষতিপূরণ চাই না, চাই নিরাপত্তা'

ঘটনার পর রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার আমেনা বেগম, সেনাবাহিনীর নানিয়ারচর জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সোহেলসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন৷ জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেন৷ তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ এক লাখ টাকা দেওয়া হয়৷ এছাড়া বাড়ি নির্মাণের জন্য ঢেউটিন, কম্বলসহ ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি৷

কিন্তু আদিবাসী নেতা ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সামান্য সহায়তা বা ত্রাণও গ্রহণ করেননি ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসীরা৷ তাঁরা নিরাপত্তা চেয়েছেন৷ তাঁদের নিরাপত্তা না দেয়া হলে তাঁরা কোনো ধরনের সহায়তা না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷''

‘কীভাবে আমরা এবার বাঁচবো?’ছবি: Shayantani Twisha

তিনি বলেন, ‘‘এবার এত বড় হামলা এবং অগ্নিসংযোগের পরও পুলিশ প্রশাসন বা সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না৷ গণমাধ্যমগুলোও কেন জানি নীরব৷ ঢাকায় আদিবাসীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করলেও সুশীল সমাজের প্রতিবাদ লক্ষণীয় নয়৷''

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার কথায়, ‘‘এবারের হামলা নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে৷ প্রশাসনের ইন্ধনেই যে এই হামলা হয়েছে – এমন অভিযোগও রয়েছে৷ তবে যাই হোক এখন ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং নিরাপত্তার আশু প্রয়োজন৷'' এর সঙ্গে তদন্ত কমিশন গঠন করে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান এই আদিবাসী নেতা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ