1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আদিবাসীদের হাতে মার্কিন যুবকের মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক

অনিল চট্টোপাধ্যায় (নতুন দিল্লি)২৭ নভেম্বর ২০১৮

আন্দামান-নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের সেন্টিনেল দ্বীপে আদিবাসীদের হাতে মার্কিন যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে চলছে বিতর্ক৷ আদিবাসীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নও তুলছেন অনেকে৷

John Allen Chau - Missionar und Abenteurer wurde auf einer abgelegenen Insel von einheimischene getötet
ছবি: Reuters/J. Chau

 

ভারতের আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের সবুজ অরণ্যে ঘেরা উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ৷ বাইরের জগতের সঙ্গে সংস্রবহীন বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ৷ সেখানকার আদিবাসীরা হাজার হাজার বছর ধরে নিজেদের জীবনধারাতেই অভ্যস্ত৷ বহিরাগত কাউকেই তাঁরা বরদাস্ত করে না৷ ভারত সরকারও তাই ঐ দ্বীপে বিনা অনুমতিতে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ সেন্টিনেল দ্বীপের জলসীমার ছয় কিলোমিটারের মধ্যে যাওয়া নিষেধ ছিল৷ প্রথম প্রশ্ন– জন অ্যালেন চাউ নামে ২৭ বছরের ওই তরুণ কিভাবে সেনটিনাল দ্বীপে গেলেন? জানা গেছে, অবৈধভাবে কয়েকজন স্থানীয় ধীবরকে ভাড়া করে তাঁদের ডিঙি নৌকায় বঙ্গোপসাগরের ওই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে যান চাউ৷ উদ্দেশ– ওই আদিবাসীদের সঙ্গে য়োগাযোগ করা এবং তাঁদের মধ্যে খৃষ্টধর্ম প্রচার করা৷ সেজন্য সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন বাইবেল৷ কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা৷  অধৈর্য্য হয়ে আদিবাসীরা দূর থেকেই তির মেরে চাউকে হত্যা করে৷ তারপর সৈকতে বালির মধ্যে পুঁতে দেয় মৃতদেহ৷

আদিবাসীদের হাতে মার্কিন পর্যটক হত্যা

00:45

This browser does not support the video element.

পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরে গিয়ে ধীবররা সেই ঘটনা পুলিশ প্রশাসন এবং চাউ-এর বন্ধু এক যাজককে জানান৷ খবর যায় মার্কিন দূতাবাসে৷ ভারতের উপকূলরক্ষী বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে দেখা যায় এক শ্বেতাঙ্গের মৃতদেহ৷ কিন্তু দেহ উদ্ধার করা যায়নি৷ হেলিকপ্টার নামতে পারেনি৷ হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে সেন্টিনেলিজ জনজাতির লোকেরা ঝাঁকে ঝাঁকে তির ছুঁড়তে থাকে৷ এর আগেও সেন্টিনেলিজ জনজাতিরা বহিরাগতদের সহ্য করতে পারেনি৷ কয়েকবার চেষ্টা চালানো হয়েছিল, কিন্ত তা সফল হয়নি৷ এখানেই নৃতত্ববিদের প্রশ্ন– শত শত বছর ধরে যাঁরা ঐ দ্বীপে দিব্যি বেঁচে আছেন, তাঁদের কি আদৌ তথাকথিত আধুনিক সভ্যতার প্রয়োজন আছে? সেন্টিনেলিজরা যখন বাইরের লোকদের সহ্য করতে পারে না, তখন তাঁদের অযথা খেপিয়ে লাভ কী? থাকুক না তাঁরা নিজের মতো!

একই কথা বললেন সমাজতাত্ত্বিক দেবদাস ভট্টাচার্য৷ ডয়চে ভেলেকে প্রথমেই তিনি বললেন, ‘‘সেন্টিনালিজ আদিবাসীরা যদি বাইরের লোকেদের সংস্পর্শে আসে, তাহলে তাঁদের সংক্রামক রোগ হতে পারে৷ যেমন ফ্লু, হাম ইত্যাদি৷ ওদের দেহে অ্যান্টি-বায়োটিক, ভ্যাকসিন ইত্যাদি নেই৷ বাইরের লোকেদের সংস্পর্শে এলে রোগ-ব্যাধিতে এদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে৷ এরপর রইলো হত্যার দায়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবার প্রশ্ন৷ সেটা কিভাবে সম্ভব? অ্যামেরিকান যুবক যিনি ওখানে গিয়েছিলেন, তিনি তো আইনি পথে সেখানে যাননি৷ তিনি ঘুষ দিয়ে গিয়েছিলেন৷ ঝুঁকি নিয়েই গিয়েছিলেন৷ ওখানে তো যাওয়াই বারণ৷''

Mr.D_Bhattacharya_Sociologist_27_Nov - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

 

দেবদাস ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘হত্যাকারী হিসেবে কাকে ধরবে পুলিশ? একজনকে বা কয়েকজনকে ধরা যায়৷ এখানে তো সেটা করা যাবে না৷ অত্যন্ত জটিল ব্যাপার৷ নিহত ব্যক্তি একজন মার্কিন নাগরিক৷ সেক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসন থেকে চাপ আসতেই পারে মানছি৷ তবে সবথেকে বেদনাদায়ক দিক হলো, ভদ্রলোক খৃষ্টধর্ম প্রচারক বা যা-ই হোন, তিনি ছিলেন মূলত বেপরোয়া৷ তাঁর ওখানে যাওয়াটা ঠিক হয়নি৷ আমাদের নীতি বলে, ওদের ওদের মতো করেই থাকতে বা বাঁচতে দেওয়া উচিত৷ জোর করে কিছু করতে গেলে পুরো জনজাতিটাই ধ্বংস হয়ে যাবে৷'' তিনি বলেন, ‘‘ওদের পূর্ব পুরুষরা এসেছিল আফ্রিকা থেকে প্রাক-নব প্রস্তর যুগ, মানে প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে৷ এরা লুপ্তপ্রায় এক বিরল জনজাতি৷ এদের ভাষা অন্য কোনে জনজাতি গোষ্ঠী বোঝে না৷ এরা দ্বীপভূমি পাহারা দেয় জবরদস্ত৷ তির-ধনুক আর বর্শা বা বল্লম দিয়ে৷ আধুনিক সভ্যতা কারুর উপর জোর করে চাপিয়ে দিয়ে কোনোদিনই লাভ হয়নি৷''

এক আন্তর্জাতিক সংগঠন সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল মনে করে, সরকারের উচিত জনজাতিদের নিজস্ব অধিকার সুরক্ষিত রাখা৷ তারা আরো মনে করে, জন চাউ-এর মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা না করাই ভালো, কারণ এতে উভয়পক্ষেরই ক্ষতি হতে পারে৷ এক যৌথ বিবৃতিতে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছে নৃতত্ত্ববিদ, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্টরা৷ আন্দামান ও নিকোবার পুলিশের কর্তাব্যক্তিও তাদের এ বক্তব্য সমর্থন করেন৷ কারণ, ২০০৬ সালে কিছু ধীবর পথ হারিয়ে নর্থ সেন্টিনাল দ্বীপে গিয়েছিল৷ তাঁদের কেউ আর ফিরে আসেনি৷ জন চাউ ঘটনার পর পুলিশ সেন্টিনাল দ্বীপের কাছাকাছি গিয়ে দূর থেকে বাইনোকুলার দিয়ে আদিবাসীদের দেখার চেষ্টা করে৷ আদিবাসীরাও পুলিশকে দেখে৷ কিন্তু আক্রমণাত্মক হয়নি তাঁরা৷ উল্লেখ্য, ২০১১ সালের জনগননা অনুসারে এই আদিবাসীদের সংখ্যা আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ জনের মতো৷

এক মার্কিন সংগঠন প্রশ্ন তুলেছেন, যাঁরা একজন মানুষকে হত্যা করল, জনজাতি হলেও তাঁদের হত্যাকারী হিসেবে বিচার হবে না কেন? একটি দেশ তার একটি জনজাতিকে যদি যোগাযোগের যোগ্য মনে না করে, তবু তাঁরা কাউকে মেরে ফেললে তাঁরা দণ্ডের আওতায় পড়বে না, এটা নীতির মধ্যে পড়ে না৷ শোনা যাচ্ছে, এইসব প্রশ্নের উর্ধে উঠে অ্যালেন চাউ নাকি তাঁর ডাইরিতে লিখে গেছেন, ‘‘আমি মরে গেলে, এদের দোষ দিও না৷''

অনিল চট্টোপাধ্যায় (নতুন দিল্লি)

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ