সুরক্ষা সামগ্রীর সংকট অনেকটা কাটলেও কোভিড চিকিৎসকরা এখন নানা ধরনের প্রশাসনিক চাপে আছেন৷ বিশেষ করে তাদের আইসোলেশনের নিয়ম মানতে চাইছে না কোনো কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: bdnews24
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালার বাইরে গিয়ে তারা নতুন নতুন নিয়ম চাপিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আদেশ অনুযায়ী একজন চিকিৎসক সাত দিন কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দেয়ার পর ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকবেন৷ এরপর সাত দিন তিনি পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে আবার দায়িত্বে ফিরে যাবেন৷ এরমধ্যে তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসা হবে৷
কিন্তু সর্বশেষ ৩০ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এক আদেশে আইসোলেশন বাতিল করে৷ তারা জানিয়ে দেয় কোভিড-১৯ পজেটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসলে চিকিৎসক কিংবা কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আইসোলেশনে যেতে হবে না৷ কেউ গিয়ে থাকলে তাকে অনুপস্থিত বলে ধরা হবে৷
অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে পাঠানো এই আদেশে তারা বলছে, কেবল কোভিড আক্রান্ত হলে হাসপাতালে আইসোলশনের সুবিধা পাবেন চিকিৎসকরা৷ তাও ১০ দিন, ১৪ দিন নয়৷ আর পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রীও দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়৷ এনিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হচেছ৷
ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী
This browser does not support the audio element.
এনিয়ে বক্তব্য জানার জন্য মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে পাওয় যায়নি৷ তবে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মোস্তফা খালেদ আহমেদ জানান, ‘‘অধ্যক্ষ আসলে ভুল বার্তা দিয়েছেন৷ তিনি অধিদপ্তরের নির্দেশনা বুঝতে পারেননি৷ আশা করি তিনি তার আদেশ সংশোধন করবেন৷’’
এর বাইরেও নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসকরা৷ মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপতালের করোনার সেবা দেয়া চিকিৎসকরা তাদের হোটেলের খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে অন্য হোটেল বুক করায় পরিচালকসহ চারজন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে৷ এর আগে মাস্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দুইজন চিকিৎসককে ওএসডি করা হয়েছে৷ অভিযোগ আছে দুগ্ধপোষ্য শিশুর মা চিকিৎসককেও ডিউটি পালনে বাধ্য করা হচ্ছে৷ কোভিড চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালনের সময় নিয়ম অনুযায়ী বাসায় যান না৷ নির্ধারিত হোটেল বা আবাসস্থলে থাকেন৷
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বিএমএ এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী জানান, ‘‘কুয়েত মৈত্রী হাসাপতালের চিকিৎসকদের অন্যায়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়৷ তাদের মধ্যে একজন কোভিড রোগীর চিকিৎসা শেষে নিয়ম অনুযায়ী আইসোলেশনে ছিলেন৷ আইসোলেশনে থাকার কারণেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ আরেকজন নারী চিকিৎসক দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকায় তিনি ছুটি চান৷ আর আরেকজন দুই মাস আগেই পদত্যাগ করেন৷ কিন্তু নিয়ম নীতি না মেনেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়৷’’
যারা বাঁচিয়ে রাখছেন তাদের ধন্যবাদ
তারা না থাকলে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতো অনেক বেশি মানুষ৷ করোনার কারণে ঘরবন্দি জীবনও হয়ে যেতো অচল৷ সারা বিশ্ব ধন্যবাদ জানাচ্ছে তাদের৷ দেখুন ছবি ঘরে...
ছবি: Reuters/H. McKay
ভবনজুড়ে ধন্য ধন্য
ব্রাজিলের সাও পাওলোর একটি ভবন৷ ভবনজুড়ে লেখা, সংহতি, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, ঐক্য এবং স্নেহ৷ এসবই দেশের সব নার্স, ডাক্তার এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য লেখা৷
খুব বড় অক্ষরে ধন্যবাদও জানানো হয়েছে তাদের
ছবি: Reuters/A. Perobelli
চিকিৎসাকর্মীদের ধন্যবাদ
করোন ভাইরাসের কবলে যুক্তরাষ্ট্রও বিপর্যস্ত৷ নিউ ইয়র্কের এক হাসপাতালে সংক্রমিতদের বাঁচানোর জন্য দিনরাত কাজ করছেন ডাক্তার-নার্সরা৷ বিশাল অক্ষরে তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছেন এক নিউইয়র্কবাসী৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
কৃতজ্ঞ পাব
কদিন আগেও নিউইয়র্কের উইন্টার বিয়ার নামের পাবটির বাইরে লেখা থাকতো মেনু, খোলার সময় আর বন্ধের সময়৷ এখন সেই বোর্ড জুড়ে শুধু ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মীদের ধন্যবাদ জানানোর বার্তা৷
ছবি: Reuters/A. Couldridge
'গুরুত্বপূর্ণ' কর্মীদের ধন্যবাদ
সমাজে ডাক্তার-নার্সদের গুরুত্ব কে না বোঝে৷ তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মুদি বা ঔষধের দোকানদার, কিংবা নিরাপত্তাকর্মীদের গুরুত্বের কথা স্বাভাবিক সময়ে ক''জনইবা মনে রাখে৷ করোনা সংকটের সময় তাদের গুরুত্ব খুব উপলব্ধি করছে সবাই৷ বৃটেনের ম্যানচেস্টার শহরের এক রাস্তায় তাদের ধন্যবাদ জানানো ব্যানার৷
ছবি: Reuters/P. Noble
নীল 'লন্ডন আই'
বৃটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মীদের প্রতি সমর্থন ও কৃতজ্ঞতা জানাতে নীল রঙে সেজেছে লন্ডন আই৷
ছবি: Reuters/H. McKay
কিশোরীর কৃতজ্ঞতা
বৃটেনের হাই উইকম্ব শহরের এক দেয়ালে লিখেকরোনার বিরুদ্ধে যারা সামনে থেকে লড়ছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছে এক কিশোরী৷
ছবি: Reuters/E. Keogh
মুম্বাইয়ের ধন্যবাদ
হাততালি দিয়ে, থালাবাসন বাজিয়ে আর পতাকা নেড়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইরত অগ্রসৈনিকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে ভারতের মুম্বাইয়ের এক ভবনের মানুষ৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
যারা যত্ন নাও...
প্যারিসের এক বাড়ির ব্যালকনিতে সাদা কাপড়ে লেখা, ‘‘যারা আমাদের যত্ন নাও, তাদের অনেক ধন্যবাদ’’
ছবি: Reuters/B. Tessier
'তোমাদের জন্য হাততালি'
তখন সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জুরিখ হাততালি দিয়ে করোনা-সংকটের সময়ও যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে৷ এক নারীও যোগ দিলেন তাতে৷
ছবি: Reuters/A. Wiegmann
খেলার মাঠেও...
ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামেও এখন ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে ধন্যবাদ জানানোর বার্তা৷
ছবি: Reuters/M. Childs
10 ছবি1 | 10
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘অধিদপ্তর নিয়ম করেই খালাস৷ কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইসোলেশন নীতি মানছে না অনেক হাসপাতাল৷ তারা তাদের ইচ্ছেমত নীতিমালা জারি করছে৷ এতে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়তি চাপে আছেন৷ তারা এমনিতেই মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে কোভিড রোগীর চিকিৎসা করছেন৷ আর এই বাড়তি চাপ তাদের আরো বিপর্যস্ত করে তুলছে৷’’
কয়েকজন কোভিড চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আইসোলেশনের নীতি নিয়ে ঢাকার সরকারি হাসপাতালে সমস্যা তেমন হচ্ছে না৷ বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে সমস্যা হচ্ছে৷ তাদের অনেককেই আইসোলেশন সুবিধা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে বা দেয়া হচ্ছে না৷ তাদের বলা হচ্ছে, ‘‘আক্রান্ত না হলে আবার কিসের আইসোলেশন৷’’ অন্যদিকে ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালগুলো তাদের নিজেদের মর্জি মাফিক চলছে৷ পিপিই নিয়েও আছে সংকট৷
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৯৪০ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন ১২ জন৷ বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি ডাক্তার আছেন ৩০ হাজার৷ আর সবমিলিয়ে রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক আছেন এক লাখের মতো৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং কোভিড -১৯ বিষয়ক মিডিয়া সেলের প্রধান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘চিকিৎসক কম থাকায় সরকারি হাসপাতালে কোথাও কোথাও আইসোলেশ নীতি পুরো মানা সম্ভব হচ্ছে না৷ তবে সেটা পরিস্থিতি বিবেচনায় হতে পারে৷ কিন্তু সাধারণভাবে নীতি মানতে হবে৷’’
ডা. নিরুপম দাস
This browser does not support the audio element.
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান ডা. নিরুপম দাস জানান, ‘‘অনেক জায়গা থেকেই আমরা কোভিড চিকিৎসকদের আইসোলেশন নীতি না মানার অভিযোগ পাচ্ছি৷ উপসর্গ না থাকলে আইসোলেশন নিয়ে নানা বাহানা করা হচ্ছে৷ আর কোভিড চিকিৎসকদের সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় সবাই মুখ বন্ধ করে আছেন৷’’
তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসকরা হলেন কোভিডের সুপার স্প্রেডার৷ এখন চিকিৎসক সংকট বলে যদি নীতি অনুসরণ না করা হয় তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হবে৷ তারাতো নানা প্রশাসনিক আদেশে এমনিতেই এখন বিপর্যস্ত৷ উপরন্তু তারাই হতে পারেন করোনা ছাড়ানোর বড় কেন্দ্র৷’’
ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ যে আদেশ দিয়েছেন তা আইনের বাইরে৷ তিনিতো আইনের বাইরে কাজ করতে পারেন না৷ তার জানা উচিত আমাদের দেশে এখন ২৩ ভাগ কোভিড আক্রান্তের কোনো উপসর্গ নেই৷
‘‘আমাদের মনে রাখতে হবে এরইমধ্যে বিশ্বে চারজন কোভিড চিকিৎসক মানসিক চাপের মুখে আত্মহত্যা করেছেন৷ তাই আমাদের চিকিৎসকদের যতদূর সম্ভব চাপ মুক্ত রাখতে হবে,’’ বলেন এই চিকিৎসক নেতা৷
করোনার শিকার ডাক্তার, নার্স, পুলিশদের কথা
করোনার রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কমপক্ষে ৯০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হয়েছেন। অনেকে মারাও গেছেন। অনেক পুলিশ ও দমকল কর্মীরও প্রাণ কেড়েছে করোনা ভাইরাস।
ছবি: Reuters/Str.
মেক্সিকো
করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন নার্স অক্টাভো লোপেজ। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে তার দেহভষ্ম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বোন ক্রিস্টিনা লোপেজ। ইন্টার ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর নার্সেস-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মে পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে কমপক্ষে ২৬০ জন নার্স মারা গেছেন।
ছবি: Reuters/J. Luis Gonzalez
যুক্তরাষ্ট্র
অনেক দেশেই স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা সরঞ্জাম পাননি। এ কারণে প্রতিবাদ, বিক্ষোভও হয়েছে। গত ৭ মে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সামনে এভাবে নিজেদের পায়ের সাদা জুতো সাজিয়ে বিক্ষোভ করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ছবি: Reuters/T. Brenner
ব্রিটেন
স্বাস্থ্যকর্মী স্বামীর মৃত্যুশোকে কাঁদছেন এক নারী। চোখের জল মুছে দিচ্ছে তিন বছরের সন্তান।
ছবি: Reuters/P. Nicholls
ভারত
দূরে দাঁড়ানো অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে আছেন সদ্য করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়া পুলিশকর্মী।
আকাশে গুলি ছুঁড়ে তাকে শেষ বিদায় জানাচ্ছে দিল্লি পুলিশ।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
ফ্রান্স
ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের একটি শহরে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়া চিকিৎসকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তাঁর সহকর্মীরা।
ছবি: Reuters/P. Rossignol
ইকুয়েডর
গুয়াকুলি শহরে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন এক চিকিৎসক ও তার স্ত্রী। তাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত স্বাস্থ্য ও দমকল কর্মীরা।
ছবি: Reuters/S. Arcos
রাশিয়া
সেন্ট পিটার্সবার্গে করোনার শিকার চিকিৎসকের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।
ছবি: Reuters/A. Vaganov
ব্রাজিল
সাও পাওলোর এক হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীকে শেষ বিদায় জানাচ্ছেন তার সহকর্মীরা।
উহানে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে সবাইকে সতর্ক করেছিলেন ডা. লি ওয়েনলিয়াং৷ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে করোনায় সংক্রমিত হয়ে তিনিও মারা যান৷