1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আধিপত্যের লড়াইয়ে ছাত্রলীগ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

এই সময়ে বাংলাদেশের অন্তত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

ঢাকায় ছাত্র লীগের জাতীয় সম্মেলনে
বাংলাদেশে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে (ফাইল ছবি)ছবি: Mortuza Rashed/DW

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর তেমন সক্রিয় হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে ছাত্রলীগই সবখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

ছাত্রলীগ এখন যৌন হয়রানিসহ চাঁদাবাজি, ছিনতাই , টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে ক্যাম্পাসে। আর বিরোধী ছাত্র সংগঠন না থাকায় ছাত্রলীগ নানা গ্রুপ , উপ-গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজেদেও মধ্যে সংঘাত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। এর নেপথ্যেও আধিপত্য, চাঁদাবাজি, হলের সিট ভাড়া, ভর্তি বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজি বলে অভিযোগ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে স্বামীকে আটকে রেখে  স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের আরো অনেক অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তার সেই কাহিনি র‌্যাব জানিয়েছে রীতিমত প্রেস ব্রিফিং করে।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব ব্রিফিং-এ জানিয়েছে ধর্ষণের ঘটনায় আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা যে তথ্য পেয়েছে তা "অ্যালার্মিং”। তারা আটক ছাত্রলীগ নেতামামুনের বরাত দিয়ে জানায়," ধর্ষণের ঘটনায় তাদের আটক করা হয়েছে তারা জানিয়েছে ওই ধরনের অপকর্ম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হরহামেশাই ঘটছে। অনেকেই তা ভয়ে প্রকাশ করছেনা।”

এছাড়া, চাঁদাবাজি, ছিনতাই সেখানে নিয়মিত ঘটনা। যারা বাইরে থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তারাই প্রধান টার্গেট। ক্যাম্পাসে মাদক কেনাবেচা ও মাদকের ব্যবসা রীতিমতো প্রকাশ্যেই হয়। আছে বহিরগতদেও কাছে হলের সিট ভাড়া দেয়ার অভিযোগ। র‌্যাব ওই ব্রিফিং-এ বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব ব্যাপারে আরো কঠোর হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চায়ের দোকানে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের তিন গ্রুপবুধবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা তিনদিন সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ক্যাম্পাসে। ছাত্রলীগের ক্যাডাদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়ার ছবিও ছাপা হয় পত্রিকায়। আর এই সংঘর্ষে পুলিশসহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের কমপক্ষে ৮০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগের প্রায় ৩০০ নেতাকর্মী রামদা, ইটপাটকেল ও লাঠিসোট নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষের ওপর চড়াও হয়। তাদের মধ্যে গত পাঁচ বছরে ১৬৩টি সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটেছে।

আর বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজার কনসার্টকে কেন্দ্র করে দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। একই কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যেও সংঘর্ষ হয়েছে।

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এপর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩টি চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারধর ও প্রতিপক্ষের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের নাম এসেছে। হলের কক্ষ দখল, প্রভাব বিস্তার নিয়ে নিজেদের মধ্যেই কমপক্ষে ১৬ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন চরমে। ফলে বিভিন্ন  এলাকায় ছাত্রলীগের নানা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই আছে।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা যা বলেন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত  বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং জেলা উপজেলায় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন," এটা ক্ষমতা প্রদর্শন করতে গিয়ে হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই হয়েছে।” তবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন্দল থাকার কথা অস্বীকার করেন। বলেন," ওটা সাময়িক উত্তেজনার ফল।”  একইসঙ্গে বলেন," ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির অভিযোগ সঠিক নয়।” সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের  যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এখন কোনো কমিটি নেই। তারপরও ছাত্রলীগে কেন নানা গ্রুপ ও সংঘাত ? জানতে চাইলে  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সাদাফ খান দাবী করেন," কমিটি থাকলে এই পরিস্থিতি হতোনা। এখন কোনো ঘটনা ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই। কেউ কাউকে মানছেনা। নানা গ্রুপ এখন কাজ করে। যে যার আধিপত্য বজায় রাখতে চায়।” তবে তিনিও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সিট বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন," বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এসব বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়না।”

'ক্যাম্পাসে কথা বলার স্বাধীনতা নেই'

This browser does not support the audio element.

এটা এখন আধিপত্যের লড়াই:

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি দীপক শীল বলেন," দেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখন আর সরকারি ছাত্র সংগঠনের বাইরে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের অবস্থান নেই। তাদের সরকারি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নানাভাবে বিতাড়িত করেছে। ক্যাম্পাসগুলোতে কথা বলার স্বাধীনতা নেই। বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা হলে থাকতে পারেনা। ক্যাম্পাসে তাদের সংগঠনের কাজও করতে দেয়া হয়না। আর এখন তারা একচ্ছত্র আধিপত্য পাওয়ার পর তাদের নিজেদের মধ্যে আধিপত্যেও লড়াই চলছে। তারা নানা গ্রুপে ভাগ হয়ে স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে।”

কী ধরনের স্বার্থ জানতে চাইলে তিনি বলেন," এখানে নানা ধরনের আর্থিক দুর্নীতির বিষয় আছে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্যসহ আরো অনেক আর্থিক বিষয় আছে। ছাত্র লীগের যে গ্রুপ শক্তিশালী এগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে এটা নিয়ে সংঘাত হয়।”

'বিরোধী ছাত্র সংগঠন থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যালেন্স থাকত'

This browser does not support the audio element.

ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন," বিরোধী ছাত্র সংগঠনের উপস্থিতি থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটা ব্যালেন্স থাকত। তখনো যে সংঘাত হতো না তা নয়। কিন্তু তাদের তো ছাত্রলীগ বিতাড়িত করেছে। তাই এখন নিজেদের মধ্যে সংঘাত হচ্ছে।”

তার কথা," ওই চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাতের কী কারণ তা আমি অনুসন্ধান করিনি। তবে এধরনের সংঘাত আধিপত্য এবং আর্থিক স্বার্থের কারণেই হয়।”

তিনি বলেন," আওয়ামী লীগ  এইসব ঘটনায় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেনা। কারণ তারা ছাত্রলীগের ওপরই টিকে আছে। ধর্ষণেরই বিচার হয়না। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে গেলে তাদেও চাকরি থাকবেনা।”

ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতি চান ছাত্রলীগ সভাপতি:

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন," যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এগুলো আর যাতে না ঘটে তার চেষ্টা করছি আমরা।  একটি ঘটনা ঘটার পর বহিস্কার বা সংগঠন থেকে বাদ দেয়া কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। আমরা চাই ছাত্র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে। আর সেজন্য আমরা কর্মশালা ও ডায়ালগ শুরু করব।”

'ছাত্র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই'

This browser does not support the audio element.

চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি প্রসঙ্গে তিনি  বলেন," ছাত্র রাজনীতিতে তো নেতিবাচক উপাদান আছে। নেতৃত্বের যে আধুনিক ধারণা সেটা তো আমরা এখানো প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে ব্যবহারের প্রবণতা আছে। সংগঠনের রাজনীতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে দেয়ার যে প্রবণতা তা থেকে সার্বিকভাকে সরে গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”

এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে প্রশ্ন করলে তারা মন্তব্য করা থেকে এড়িয়ে যান। তারা বলেন," আমরা ছাত্রলীগের বিষয়ে কিছু জানিনা। যারা দায়িত্বে আছেন তাদেরও জিজ্ঞেস করুন।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ