বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ডাব্লিউএইচও-র মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান ফিলিপাইনে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে পাঠানো ভিডিও বার্তায় এ মন্তব্য করেন৷ সঠিক তথ্য বিতরণের মাধ্যমে এই রোগের ভয়াবহতা এড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন৷
বিজ্ঞাপন
এ প্রসঙ্গে তিনি বিশ্বব্যাংকের একটি তথ্য উল্লেখ করেন৷ বিশ্বব্যাংকের হিসেবে দেখা গেছে, যে-কোনো মহামারিতে যে ক্ষতিটা হয় তার ৯০ শতাংশের জন্য দায়ী ‘সংক্রমণ এড়াতে মানুষের অযৌক্তিক ও বিশৃঙ্খল প্রচেষ্টা৷'
ইবোলা বা এবোলার ক্ষেত্রে যেন সেটা না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডাব্লিউএইচও প্রধান৷
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ইবোলার কারণে মারা যাওয়া রোগীকে সেবা দিয়েছেন এমন একজন নার্স এবার ইবোলা আক্রান্ত হয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের দেহে ইবোলা ভাইরাস গমনের এটাই প্রথম উদাহরণ৷
গত বুধবার টেক্সাসের একটি হাসপাতালে থমাস এরিক ডানকান নামে লাইবেরিয়া ফেরত এক মার্কিন নাগরিক ইবোলার কারণে মারা যান৷ ডানকানকে সেবা দিয়েছিলেন নতুন এই মার্কিন ইবোলা রোগী৷
ইবোলার সেবা যাঁরা দিচ্ছেন তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়৷ লাইবেরিয়ায় এখন পর্যন্ত ২০১ জন নার্সের ইবোলায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ এর মধ্যে মারা গেছেন ৯৫ জন৷
সিয়েরা লিওনে ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াই
পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ইবোলা বা এবোলার সংক্রমণ মহামারির রূপ নিয়েছে৷ সিয়েরা লিওনও আছে সেই তালিকায়৷ ছোট্ট দেশটিতে চলছে ইবোলার বিরুদ্ধে বড় এক লড়াই৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
জীবন তবু বহমান...
সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনের সবজির বাজারে গোলমরিচ বিক্রি করেন সুয়ার্ড ডেম্বি (ডানে)৷ প্রতিদিন শত শত লোক এবোলায় সংক্রমিত হচ্ছে৷ বাজারে এত ভিড়, কার কাছ থেকে যে এবোলা এসে তাঁর শরীরেও বাসা বাঁধবে, কে বলবে! ভয় আছে ঠিকই, তবুও ডেম্বিকে প্রতিদিন আসতে হয় বাজারে৷ তাঁর আয়েই সংসারটা চলে৷ ডেম্বি মরিচ বিক্রি না করলে সংসার চলবে কী করে!
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
স্থপতিও লড়াইয়ে
এবোলায় সংক্রমিতদের চিকিৎসা করতে হয় আলাদাভাবে৷ সে কারণে চাই বিশেষ ইউনিট৷ এখন অনেক জায়গাতেই এমন ইউনিট গড়ে তুলতে হচ্ছে৷ আছে উপযুক্ত স্থানের অভাব, প্রশিক্ষিত সেবাকর্মীর অভাব তো আরো বেশি৷ ছবির এই মানুষটির নাম কামারা৷ পেশায় স্থপতি৷ নানান প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এতদিন৷ সব ছেড়ে চলে এসেছেন ফ্রিটাউনে৷ নিজেকে সঁপে দিয়েছেন এবোলা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য বিশেষ ইউনিট গড়ার কাজে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
পুলিশই সবার ‘মা’
ইনি নিজের নাম কাউকে বলতে চান না৷ স্থানীয়রা তাঁর নাম দিয়েছেন ‘মামা জি’৷ সিয়েরা লিওনের সাধারণ এক মহিলা পুলিশ৷ স্বভাবে মায়ের মতো৷ সবার দুঃখ দুর্দশায় পাশে থাকেন৷ এখনো আছেন৷ এবোলার শিকার হয়ে কেউ মারা গেলে লাশ দাফন করতে আর কেউ না এলেও ‘মামা জি’ আসেন৷ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয় আছে জেনেও লাশ হয়ে যাওয়া মানুষদের পরম মমতায় পৌঁছে দেন শেষ ঠিকানায়৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
এক জার্মান
ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক জার্মান নাগরিক৷ প্রায় এক বছর ধরে আছেন সিয়েরা লিওনে৷ ‘ক্যাপ আনামুর’ নামের এক বেসরকারি সংস্থার হয়ে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে৷ লিওন প্রিমিয়ার লিগে একটি দলের হয়ে ফুটবলও খেলছেন চুটিয়ে৷ সে দেশে এখন এবোলা আতঙ্ক৷ ওলে হ্যাঙ্গেলব্রক তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন না৷ সিয়েরা লিওন তাঁর কাছে দ্বিতীয় জন্মভূমি৷ রোগের ভয়ে জন্মভূমি ছাড়বেন, তা হয় নাকি!
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
প্রথম অভিজ্ঞতা
সংক্রমণ নিরোধক এই পোশাক আগে কখনো পরেননি মোমেডো লাম্বো৷ এবোলা রোগীদের ওয়ার্ডে কাজ করতে চান বলে ফ্রিটাউনে এসেছেন প্রশিক্ষণ নিতে৷ প্রশিক্ষণের প্রয়োজনেই পরতে হলো এ পোশাক৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
সচেতনতা বাড়াতে...
এবোলার সংক্রমণ রুখতে হলে এ ভাইরাস সম্পর্কে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন৷ পকেটের টাকা খরচ করে এ সম্পর্কে জেনেছেন উসমান রহিম বাহ৷ এখন দ্বারে দ্বারে গিয়ে এবোলা সম্পর্কে সচেতন করে তুলছেন সবাইকে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
সদাব্যস্ত স্টেলা
৩০ বছর বয়সি স্টেলা এক হাসপাতালের সেবিকা৷ রোগযন্ত্রণা, মৃত্যু, কান্না, আহাজারি কম দেখেননি৷ কিন্তু এবোলা-আতঙ্ক তাঁর জন্যও এক নতুন অভিজ্ঞতা৷ এবোলায় সংক্রমিত প্রথম রোগীটি যখন এলো, বলতে গেলে সব সহকর্মীই হাসপাতাল ছাড়লেন৷ কিন্তু স্টেলা যাননি৷ তাঁর দেশ শিগগিরই এ বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসবে - এ আশায় দিন-রাত রোগীর সেবা করে যাচ্ছেন এখনো৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
পায়ে পায়ে বিপদ
ডেসমন্ড রিজ রেড ক্রসের টিম লিডার৷ দলনেতা হিসেবে তাঁর মূল দায়িত্ব, মৃতদেহ সৎকারের কাজে ব্যস্ত সহকর্মীদের সুস্থতা নিশ্চিত করা৷ বড় কঠিন দায়িত্ব৷ ডেসমন্ড রিজ বললেন, ‘‘আমরা যে ভালো প্রশিক্ষণ পেয়েছি এবং সংক্রমণ এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েই কাজ করছি সেটা আমি জানি৷’’ তবু ভয় একটু থাকেই৷ রিজ প্রতিদিন ভাবেন, আজই হয়তো মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইটা শেষ হবে৷
ছবি: DW/Scholz/Kriesch
8 ছবি1 | 8
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে, যেখানে সংক্রামক রোগের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা, সেখানে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সে দেশের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন' বিভাগের প্রধান ডা. টম ফ্রিডেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সংক্রামক রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার যে বিধিবিধান রয়েছে, এক্ষেত্রে সেটা হয়ত ঠিকভাবে নাও মানা হয়ে থাকতে পারে৷''
লাইবেরিয়ায় নার্সদের দাবি
ইবোলা সেবা দেয়ার জন্য লাইবেরিয়ার নার্সরা ‘বিশেষ ভাতা' পেয়ে থাকেন৷ সাধারণত মাসে সেটা প্রায় ৫০০ ডলারের সমপরিমাণ হয়ে থাকে৷ সঙ্গে থাকে মাসিক বেতন৷ যেটা ২০০ থেকে ৩০০ ডলারের মধ্যে৷ নার্সরা এখন বিশেষ ভাতার পরিমাণ বাড়ানো দাবি করছেন৷ তাঁরা প্রায় ৭০০ ডলারের মতো চাইছেন৷ কিন্তু এখনও দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা প্রথমে সেবাপ্রদানে ঢিলেমি শুরু করেন৷ আর সোমবার থেকে তাদের একেবারে ধর্মঘটে যাওয়ার কথা৷
এদিকে, নার্সদের এই পদক্ষেপের কারণে ইতিমধ্যে কয়েকজন ইবোলা রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থাগুলো৷