দাদি-নানি অথবা মায়ের হাতের রান্নার অপূর্ব স্বাদ কি দামি রেস্তোরাঁয় আনা সম্ভব? আলবেনিয়ার দুই শেফ ঠিক সেই অসাধ্যসাধন করতে পুরানো ঐতিহ্যগত উপকরণ ও রন্ধনপ্রণালী নতুন করে তুলে ধরছেন৷
বিজ্ঞাপন
শেফ ব্লেডার কোলা-র রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে চরম ব্যস্ততা৷ ‘মুলিজিউ' নামের রেস্তোরাঁর একটিমাত্র মূলমন্ত্র, আর তা হলো স্লো ফুড – আলবানিয়ার নিজস্ব স্লো ফুড৷ ব্লেডার বলেন, ‘‘আমি আলবানিয়ার রন্ধনশিল্পকে নতুন করে তুলে ধরতে চাই, আধুনিক ছোঁয়া দিয়ে খাবার থেকে ফ্যাট ও কড়া গন্ধ দূর করে মৌলিক স্বাদ অক্ষত রেখে এই খাদ্যকে ‘আপডেট' করতে চাই৷''
সেই স্বপ্ন পূরণ করতে ব্লেডার আবার তাঁর নিজের দেশে ফিরে গেছেন৷ ১৯৯০ সালে সমাজতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রের অবসানের পর থেকে রাজধানী টিরানা অত্যন্ত ধীরে ধীরে উন্নতির মুখ দেখেছে৷ আজ গোটা শহরে সমৃদ্ধির ছাপ দেখা যায়৷ তার আগে অবশ্য চরম বেকারত্মের কারণে অনেক মানুষ কাজের খোঁজে দেশ ছেড়েছিলেন৷
১৯৯৯ সালে লন্ডনে চলে যাবার সময় ব্লেডার কোলা-র বয়স ছিল ১৫৷ রেস্তোরাঁয় বাসন ধোয়ার কাজ শুরু করে তিনি সুইডেনের দুই তারকা রেস্তোরাঁ ফেভিকেন ও কোপেনহেগেন শহরের বিখ্যাত নরমা রেস্তোরাঁয় কাজের সুযোগ পান৷
২০১৬ সাল থেকে তিনি টিরানা শহরে নিজের রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন৷ ‘মুলিজিউ' দেশের ঐতিহ্যগত খাবার ও স্থানীয় শাকসবজি ব্যবহারের উপর জোর দেয়৷ এমনকি নিজস্ব গম ভাঙানোর যন্ত্রে রুটি ও নুডলসের জন্য ময়দাও পেশা হয়৷ আলবেনীয় ভাষায় ‘মুলিজিউ' মানে মিলের কর্মী৷ ব্লেডার কোলা বলেন, ‘‘আমার ফিরে আসা দরকার ছিল, কারণ আমি দেশের খাবারের গভীরতা বুঝতে চেয়েছিলাম৷ জানেন তো, পুরানো রন্ধন প্রণালী সব কিছুর ভিত্তি৷ কখনোই অতীত ভুলে যাওয়া উচিত নয়৷ অতীত না থাকলে ভবিষ্যতও থাকবে না৷ পিছনে ফিরে তাকিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগোনো উচিত৷
এমন প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ব্লেডার কোলা একা নন৷ আন্টন প্রেংগা ২০১০ সালে ভাইয়ের সঙ্গে আলবেনিয়ার উত্তর পশ্চিম প্রান্তে এক স্লো ফুড রেস্তোরাঁ খোলেন৷ প্রথমদিকে উচ্চ মানের স্থানীয় উপকরণের অভাব ছিল৷ সেই ঘাটতি পূরণ করতে দুই ভাই সেই রেস্তোরাঁকে কেন্দ্র করে এক যৌথ খামার গড়ে তোলেন৷
দরিদ্র এই অঞ্চলে এভাবে অনেক ক্ষুদ্র চাষী ও ২৫ জন কর্মীর কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে৷ রেস্তোরাঁর সব খাবারের উপকরণ সেখানেই উৎপাদন করা হয়৷ চিজ, টমেটো স্যালাড, ঝিঙা অথবা ব্ল্যাকবেরি পানা অথবা যে পদই হোক না কেন৷ আন্টন প্রেংগা বলেন, ‘‘প্রায় ৫ বছর চাষবাস করার পর আমরা ব্লেডার-এর সঙ্গে দেখা করি৷ সবাই মিলে আমরা হারিয়ে যাওয়া শস্য আবার খাবার টেবিলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাতে চেয়েছিলাম৷ সেখান থেকেই টিরানা শহরে ‘মুলিজিউ' রেস্তোরাঁ চালু করার আইডিয়া আসে৷''
দুই শেফই ব্যবসার সহযোগী ও বন্ধু৷ দুজনেই বিদেশে গিয়ে উচ্চ মানের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন৷ দুজনেই সচেতনভাবে আবার দেশে ফিরে কাজ করতে চেয়েছিলেন৷ দু'জনেরই সাফল্যের মূলমন্ত্র এক৷ ব্লেডার কোলা বলেন, ‘‘রেস্তোরাঁর জন্য স্টার সংগ্রহ করে বিশ্বকে আমাদের রন্ধনশিল্পের ঐতিহ্য দেখানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়৷ স্টার যোগ হলে আমাদের আপত্তি নেই৷ কিন্তু সেটাই লক্ষ্য নয়৷''
মিশল্যাঁ স্টার না থাকলেও রেস্তোরাঁয় খাবারে স্বাদ অনবদ্য৷ ব্লেডার কোলা টিরানায় স্লো ফুড আন্দোলনে এবং শেফদের মধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন৷
ডানিয়েলা শুলৎস/এসবি
জার্মানির সবচেয়ে ‘হট’ দশটি ‘পার্টি মাইল’
‘পার্টি মাইল’ বলতে শহরের যে অঞ্চলে বার-রেস্টুরেন্ট-নাইট ক্লাবের ছড়াছড়ি৷ যারা ‘পার্টি’ করতে চান, তাদের জন্য জার্মানিতেও মজা করার জায়গার অভাব নেই! হামবুর্গ থেকে মিউনিখ অবধি দশটি সেরা পার্টি মাইলের খোঁজ পাবেন এই ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
বার্লিন: কিবা দিন, কিবা রাত, সারাক্ষণ পার্টি!
বার্লিনে ২৪ ঘণ্টা পার্টি করা যায়৷ বহু আমুদেরা সপ্তাহান্তে রাজধানীতে এসে গোটা শনি আর রবিবার শুধু একটি জায়গা থেকে আরেকটি জায়গায় গিয়ে পার্টি করে কাটান৷ বিশেষ করে স্প্রে নদীর তীরে, এছাড়া ক্রয়েৎসব্যার্গ ও ফ্রিডরিখসহাইন এলাকায় একটির পর একটি ফুর্তি করার জায়গা, যেমন সুবিখ্যাত ব্যার্গহাইন টেকনো ক্লাব৷ টেকনো বলতে টেকনো মিউজিক৷
ছবি: Visit Berlin
হামবুর্গের রেপারবান
চতুর্দিকে নিয়নসাইন, নাইট ক্লাব থেকে মাইকের গান ভেসে আসে, উৎসবে মশগুল জনতা একটি পানশালা থেকে আরেকটি পানশালায় গিয়ে ভিড় করছে৷ সন্ধ্যা যতো বাড়ছে, ততোই সান্ক্ট পাউলি এলাকার সুবিখ্যাত রেপারবান রাস্তাটিতে মানুষের দঙ্গল বাড়ছে: ‘গোল্ডেন পুডেল ক্লাব’ কিংবা ‘মলোটভ’-এর মতো নাইট ক্লাবের টানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Heimken
মিউনিখ: সেলিব্রিটিদের মজা করার জায়গা
বাভারিয়ার রাজধানী মিউনিখের গ্লকেনবাখ বা শোয়াবিং, কিংবা শহরের প্রাচীন অংশ রাত বাড়লে জমজমাট হয়ে ওঠে৷ অভিজাত ডিস্কো ‘পি-ওয়ান’-এ এককালে লেডি গাগা, রোলিং স্টোনস বা প্যারিস হিলটনের মতো নামিদামি মানুষ পার্টি করে গেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Horhager
ফ্রাংকফুর্ট: ‘হাউস মিউজিক’-এর তীর্থ
নাইট ক্লাবে গিয়ে নাচা, কিংবা কোনো বার-এ গিয়ে ফ্রাংকফুর্টের সুপরিচিত ‘অ্যাপল ওয়াইন’ খাওয়া৷ ফ্রাংকফুর্টের নাইটলাইফ নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই৷ সাক্সেনহাউজেন এলাকাটি ‘রাতের প্যাঁচাদের’ কাছে খুবই প্রিয়, কেননা এখানে একটির পর একটি বার৷ শহরের বহু নাইট ক্লাবে হাউস মিউজিক বাজানো হয়৷ অনুরাগীরা স্বভাবতই সে খবর রাখেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
কোলোন: ননস্টপ পার্টি
কোলোনে পার্টি করতে গেলে জ্যুলপিশার স্ট্রাসে’তে যেতে হবে৷ ‘রোনবুর্গ’-এর মতো নাইট ক্লাবে বাজে পপ চার্ট-এর গান, নাইনটিজ-এর গান আর জার্মান হিট সং, যার নাম ‘শ্লাগার’৷ ‘এমটিসি’ নাইট ক্লাবটিতে প্রায়ই রক কনসার্ট হয়৷ অধিক রাতে অধিকাংশ নাইট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাবার পরেও খোলা থাকে ‘ভেনুস কেলার’৷
ছবি: Roonburg
ড্যুসেলডর্ফ: বিশ্বের দীর্ঘতম বার
ড্যুসেলডর্ফ শহরের প্রাচীন অংশে মাত্র আধ বর্গমিটার এলাকার মধ্যে পাওয়া যাবে শ’তিনেক বার, ডিস্কোথেক এবং রেস্টুরেন্ট৷ ড্যুসেলডর্ফের মানুষ গর্ব করেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা বার’৷ বল্কার স্ট্রিট হল ড্যুসেলডর্ফের নাইটলাইফের প্রাণকেন্দ্র: এখানে ৫০টি বার, ব্রুয়ারি ও ডিস্কোথেক আছে৷ এখানকার একটি নামকরা ক্লাব হল ‘কু’স্টাল’ বা ‘গরুর গোয়াল’৷
ছবি: Kuhstall
স্টুটগার্ট: ‘থিও’ বরাবর ‘বারহপিং’
‘থিও’ বলতে থিওডোর হয়েস স্ট্রাসে বা স্ট্রিট৷ আর বারহপিং মানে এক বার থেকে আরেক বার-এ যাওয়া৷ বিশেষ করে সপ্তাহান্তে৷ এই সব বার-এ বাজে হাউস মিউজিক কিংবা হিপ-হপ গান৷ বহু জায়গাতেই কোনো প্রবেশমূল্য নেই, কাজেই বারহপিং-এর পক্ষে আদর্শ৷ নামকরা নাইট ক্লাবগুলোর মধ্যে পড়ে ‘মুটারমিলশ’ কিংবা ‘বারকোড’৷
ছবি: Stuttgart-Marketing GmbH-Gilardone
বোখুম: রুর শিল্পাঞ্চলের ফুর্তি করার জায়গা
বোখুম-এর পার্টি মাইলে প্রতিবছর ত্রিশ লাখ ‘রাতের প্যাঁচা’ নাচগান-খানাপিনা করতে আসেন৷ বিয়ারের পাঁইট হাতে চকমকে রেস্টুরেন্ট বা নাইট ক্লাবে ফুর্তি করতে আসেন যারা, তাদের জন্য ভিতরে আর বাইরে মিলিয়ে বসার জায়গা আছে প্রায় দশ হাজার৷
ছবি: Stadt Bochum, Presse- und Informationsamt
লাইজিগ-এর ‘কার্লি’
কার্লি বলতে কার্ল লিবক্নেশট স্ট্রাসে বা স্ট্রিট৷ লাইপজিগের ছাত্রজনতার বসে আড্ডা দেবার জায়গা৷ সারি দিয়ে বার ও রেস্টুরেন্ট, তারই মাঝে নানা ধরনের ‘বিকল্প বিপণীতে’ হিপি স্টাইলের জামাকাপড় বা পুরনো এলপি রেকর্ড বিক্রি করা হচ্ছে৷ ‘ফাইনকস্ট’ নামধারী সাবেক ব্রুয়ারিটিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা আছে৷
ছবি: Andreas Schmidt
ব্রেমেন-এর ‘ফিয়ার্টেল’
ব্রেমেন শহরে পার্টি করতে গেলে কোনো শক্ত নাম মনে রাখার দরকার নেই৷ এখানে পার্টি করার জায়গা বলতে ‘ফিয়ার্টেল’ বা ‘মহল্লা’, যেখানে বহু কাফে, বার ও নাইটক্লাব রয়েছে৷ ওয়েজার নদীর তীরে ‘স্ট্র্যান্ডের’ ওপরেই পাওয়া যাবে ‘শ্লাখ্টে’ নামধারী বিয়ারগার্ডেনটিকে৷