ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি৷ এই সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীটি৷
বিজ্ঞাপন
‘অরক্ষিত জমিতে পা পড়ছে বাংলাদেশির' এমন শিরোনামে গত শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আনন্দবাজার পত্রিকা৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল,মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহকুমার সীমান্তে রানিনগর ১ এবং ২ নং ব্লক ও জলঙ্গি জুড়ে ভারতের প্রায় ২২ হাজার একর জমি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে৷ বাংলাদেশ সীমান্তের গ্রামবাসীরা এই জমি তাদের বলে দাবি করছে৷
তবে বিজিবিবিবৃতিতে বলেছে, ‘‘বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতের অভ্যন্তরে গিয়ে চাষাবাদ করা তো দূরের কথা, আন্তর্জাতিক সীমারেখা বরাবর চাষাবাদ করাই অসম্ভব একটি ব্যাপার।'' সেখানে প্রতিনিয়ত শূন্যরেখা বরাবর বিজিবি সদস্যরা রাত দিন টহল দিয়ে সীমান্ত রক্ষা করছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে আরো লিখেছে, ‘‘দিন কয়েক আগে দু'জন বাংলাদেশি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয়এলাকায় চলে আসায় তাদের আটক করেছিল বিএসএফ। ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে মুক্তিপণ হিসেবে রানিনগর সীমান্তের গ্রাম থেকে দুই গ্রামবাসীকে তুলে নিয়ে যায় বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা।''
শান্তির খোঁজে সীমান্তের ওপারে
গত ১৫ মাসে পাকিস্তানে থেকে ষোল হাজারের বেশি হিন্দু সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ পাকিস্তানে তাদের জীবন যাপনের ব্যবস্থা ভাল থাকলেও প্রতিবেশি দেশেই তারা বেশি নিরাপদ বোধ করছেন বলে দাবি করেন৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
দেশভাগে দেশছাড়া
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তানের বসবাসরত হিন্দুদের বড় অংশই পাড়ি জমায় ভারতে৷ তারপরও কিছু মানুষ তাদের ভিটেমাটিতেই থেকে যান৷ বর্তমানে দেশটির মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র দুই শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
নিজ দেশে পরবাসী
পাকিস্তানে হিন্দু, আহমদিয়াসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের উপর বৈষম্য আর নির্যাতন দিনদিন বেড়ে চলছে৷ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অভিযোগ দেশটির ব্লাসফেমি আইনের মূল উদ্দেশ্যই সংখ্যালঘুরা৷ আফগান সীমান্তবর্তী উপজাতি অঞ্চলগুলোসহ বেশ কিছু স্থানে এমনকি জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মান্তরের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
মোদীর ডাকে সাড়া
ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকার প্রতিবেশি দেশগুলোর হিন্দুদের আশ্রয় দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে৷ নতুন নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের আগে আসা হিন্দুরা সহজেই নাগরিকত্ব পাবেন ভারতে৷ ছবিতে একজন শরণার্থীর ঘরের দেয়ালে নরেন্দ্র মোদীর পোস্টার ঝুলছে৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
শরণার্থী স্রোত
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে ১৬ হাজার ১২১ জন পাকিস্তানের নাগরিক ভারতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ গত কয়েক বছরে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা শত থেকে হাজারে পৌঁছেছে৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
উগ্র হিন্দুদের অভ্যর্থনা
শরণার্থীদের এই স্রোতকে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর কাজে লাগাচ্ছে উগ্র হিন্দু গোষ্ঠীগুলো৷ যেমন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ শরণার্থী শিবিরগুলোতে তাদের ধর্মীয় শিক্ষাগুরুদের নিয়োগ দিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এই দলটির বিরুদ্ধে মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
কথা বলতে মানা
শরণার্থীদের গণমাধ্যমে কথা বলতে বারণ করেছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা৷ সেখানে বসবাসরতদের একজন ধর্মবীর সোলঙ্কি বলেন, ‘‘তারা আমাদের সাহায্য করতে চায়৷’’ নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখানে নতুন করে বাঁচতে চেষ্টা করছি৷’’
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
একই জীবন ভারতীয় মুসলিমদের
পাকিস্তানে সংখ্যালঘু হিন্দুদের মতোই পরিস্থিতি ভারতের মুসলিমদের৷ মোদী সরকারের নতুন নাগরিকত্ব আইন ভারতে তাদের অবস্থান আরো কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম কমিশনের এক শুনানিতে ভারত বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদরা এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ এই আইনে মুসলিম সংখ্যালঘুরা নাগরিকত্ব হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: DW/Rajib Chakraborty
7 ছবি1 | 7
এর প্রতিবাদে বিজিবিবলছে, ‘গত ২ জুলাই জলঙ্গি সীমান্তে দুটি ঘটনা ঘটে, যা পত্রিকার মূল বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত৷'' মূলত ২ জুলাই জলঙ্গি সীমান্তে দুটি ঘটনা ঘটে৷ নয়ন শেখ ও শহিদুল শেখ নামের দুই ব্যক্তি জলঙ্গি সীমান্ত দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে৷ তারা বাংলাদেশে স্থানীয় লোকজনের ওপর চড়াও হয়৷ পরে স্থানীয়রা তাদেরকে ঘেরাও করে৷ পরবর্তীতে সেখানকার বিজিবি ক্যাম্প খবর পেয়ে ভারতীয় দুজনকে তাদের হেফাজতে নিয়ে নেয়৷ একই দিন দুপুরে বিএসএফ টহল দল অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে ৩০০ মিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ইউসুফপুর এলাকা থেকে তিন জন কৃষককে ধরে নিয়ে যায় বলেও উল্লেখ করেছে বিএসএফ৷
এই দুই ঘটনা নিয়ে একই দিনে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক করেছে৷ ৩ জুলাই শান্তিপূর্ণভাবে উভয় দেশের নাগরিক হস্তান্তর ও গ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিজিবি৷
এফএস/এসিবি (ঢাকা ট্রিবিউন, প্রথম আলো, আনন্দবাজার পত্রিকা)