ঈদের ছুটি শেষ শনিবার৷ রোববার থেকে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করবেন দেশের মানুষ৷ ছুটি শেষ হওয়ার পর পরই জামায়াতের টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল৷ বিরোধী দল বিএনপি'র কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারির বিপরীতে সরকারের দাবি না মানতে অনড় অবস্থান৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার ঈদের দিনেও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল আশঙ্কা৷ তাই যারা ঈদগায় নামাজ পড়তে গেছেন, তাঁদের প্রধান চাওয়া ছিল দেশের রাজনৈতিক সংকট যেন কেটে যায়৷ দেশ যেন মুক্ত হয় সংঘাত-সংঘর্ষের হাত থেকে৷
সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আবারও সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে তাঁরা নির্বাচনে যাবেন না৷ আর হতেও দেবেন না৷ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যদি নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়, তাহলে তাঁরা কোনো আন্দোলন করবেন না৷ অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করবেন৷
‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’
সত্যিই তাই, ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে৷ বাংলাদেশ, ভারত, জার্মানি কি গোটা বিশ্ব৷ ঈদের আনন্দে উচ্ছ্বসিত গোটা মুসলিম সম্প্রদায়৷ তাদের উৎসবে সঙ্গী অন্য ধর্মাবলম্বীরাও৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
ঈদ মুবারক
প্রায় এক মাস রোজা পালনের পর আসে ঈদ-উল-ফিতর৷ মুসলমানদের দুটি বাৎসরিক ঈদ উৎসবের একটি এটি৷ এই দিনটি তাই ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই ভালোভাবে উদযাপনের চেষ্টা করেন৷ ঢাকায় শুক্রবার ঈদের জামাতে অংশ নেয়া এক নারীর ছবি এটি৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
জাতীয় মসজিদে ঈদের জামাত
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জাতীয় মসজিদে একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়৷ ৯ই আগস্ট ঈদের দিন তোলা এই ছবিটি জাতীয় মসজিদের৷ মুসল্লিদের সুবিধার্থে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একাধিক ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাঁদ দেখে দিন নির্ধারণ
সাধারণত আরব এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে ঈদ উদযাপনের একদিন পর বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ঈদ পালন করা হয়৷ এই ধর্মীয় উৎসবের দিন নির্ধারণ করা হয় চাঁদ দেখার ভিত্তিতে৷ ছবিতে ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির ঐতিহাসিক জামা মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ছেন মুসলমানরা৷
ছবি: Reuters
গান দেয় পূর্ণতা
পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল, বিশেষ করে বাংলাদেশে ঈদের একটি গান অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ ঈদের আগের রাত থেকে টেলিভিশন, রেডিও থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের দোকান, মার্কেট সর্বত্র বাজতে শুরু করে, ‘‘...রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ৷’’ এই একটি গানই ঈদ-উল-ফিতরের জানান দিতে যথেষ্ট৷ ছবিতে কলকাতার ঈদ জামাতে অংশ নেওয়া মুসলিম নারীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP
কবি নজরুলের কালজয়ী গান
উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় ও আনন্দের উৎসব ঈদ-উল-ফিতর নিয়ে বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কালজয়ী গান৷ বাঙালি মুসলমানের ঈদ উৎসবের আবশ্যকীয় অংশ৷ কবির শিষ্য শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদ-এর অনুরোধে ১৯৩১ সালে কবি নজরুল এই গান রচনা ও সুরারোপ করেন৷’’
ছবি: Noah Seelam/AFP/Getty Images
সবার বাড়িতেই দাওয়াত
ঈদের দিন প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়াতে যেতে প্রয়োজন হয় না কোন দাওয়াতের৷ আধুনিক শহুরে জীবনে প্রতিবেশীদের মধ্যে তেমন সখ্যতা না থাকলেও ছোট শহর, মফস্বল আর গ্রামে ঈদের জামাতের পরই প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যান ছেলে, বুড়ো সবাই৷ কারো বাড়িতে ঈদের পায়েস, কারো বাড়িতে মাংস-পরোটা কিংবা পোলাও – ঈদের দুপুরটা এভাবেই কেটে যায়৷ ছবিতে কলকাতায় ঈদের জামাত শেষে মিষ্টি কিনছেন মুসল্লিরা৷
ছবি: picture-alliance/AP
দিনের বেলা বিক্রি নয়
ঈদ-উল-ফিতর এর আগের একমাস বাংলাদেশে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি একরকম বন্ধই থাকে৷ রাস্তার পাশের খাবার হোটেলগুলো ঢেকে দেওয়া হয় কালো পর্দায়৷ তবে সূর্যাস্তের খানিক আগে থেকে শুরু হয় খাবার বিক্রি৷ ঢাকায় তোলা এই ছবির মতোই ইফতারির পসরা সাজিয়ে রাস্তার পাশে বসেন অসংখ্য দোকানি৷ বিক্রিও হয় প্রচুর৷ ঈদের দিন থেকে পরের এগারো মাস আর এই বাণিজ্য দেখা যায়না৷
ছবি: dapd
লম্বা প্রস্তুতি
রমজানের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মূলত ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয়৷ নতুন পোশাক কেনার জন্য মার্কেটে ভিড় করেন মুসলমানরা৷ এ সময় দোকানগুলোতে দেখা দেয় উপচে পড়া ভিড়৷ আফগানিস্তানসহ অনেক দেশে দোকানিরা ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন বিশেষ অফার দিয়ে থাকেন৷ মিষ্টি এবং শুকনো ফল ঈদ উপহার হিসেবে আফগানিস্তানে বেশ জনপ্রিয়৷
ছবি: DW/I. Spezalai
যানবাহনে ভিড়
রমজানের শেষ সপ্তাহে যানবাহনেও সৃষ্টি হয় ব্যাপক ভিড়৷ এ সময় পরিবার, পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে শিকড়ের টানে ঢাকা ছাড়েন অনেক মানুষ৷ ঈদের ছুটিও বেশ লম্বা হয়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: dapd
পরিবারের সঙ্গে প্রার্থনা
জার্মানিতে ঈদের সকালে সাধারণত পুরো পরিবারই মসজিদে চলে যান৷ অধিকাংশ মসজিদে নারীর নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে৷ আর নামাজের পর সবাই মিলে মসজিদেই ঈদের খাবার খান৷ এরপর বাংলাদেশসহ অন্য অনেক দেশের মতো জার্মানিতেও কবরে পরিদর্শনে যান অনেক মুসলমান৷ ঈদের দিন পরিবারের মৃত সদস্যের কবর জিয়ারত করেন তারা৷
ছবি: Barbara Sax/AFP/Getty Images
উৎসব একই, নাম অনেক
জার্মানিতে ঈদ মূলত ‘বায়রাম’ অথবা ‘সুকারফেস্ট’ নামে পরিচিত৷ বায়রাম শব্দটি এসেছে তুরস্ক থেকে, এর অর্থ ছুটি৷ আর সুকারফেস্ট-এর বাংলা অর্থ হচ্ছে মিষ্টি উৎসব৷ তবে মুসলমানদের অন্যতম এই ধর্মীয় উৎসবটি বাংলাদেশ, ভারতসহ আন্তর্জাতিকভাবে ঈদ-উল-ফিতর হিসেবেই পরিচিত৷
ছবি: MUSTAFA OZER/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন৷ তিনি আবারো বলেছেন, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী৷ কোন অযৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হবেনা৷ তাঁর মতে, বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে৷
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ঈদের পর পরই সারা দেশে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা শুরু হবে৷ এখন ঢাকায় বিলবোর্ডের মাধ্যমে যে প্রচার চালানো হচ্ছে, এটা সরকার করছে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ আরো বড় আকারে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রচার চালাবে৷ বিরোধী দলের অপপ্রচারের জবাব দেয়া হবে৷ আর দলকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা হবে৷
অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ডয়চে ভেলেকে জানান, সরকারকে আর সময় দেয় হবেনা৷ তাদের অনেক সময় দেয়া হয়েছে৷ ঈদের পরই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে সর্বশক্তি নিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন তাঁরা৷ সরকার যদি যৌক্তিক দাবি মেনে না নেয়, তাহলে রাজপধে দাবি আদায়ের কোন বিকল্প নেই৷ তিনি বলেন, সরকার একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে৷
ঈদের পর শুরু হচ্ছে জামায়াতের হরতাল৷ হাইকোর্ট তাদের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার প্রতিবাদে ১৩ ও ১৪ই আগস্ট তারা এই হরতাল পালন করবে৷ বিএনপি তাদের হরতালে এখনো সমর্থন না দিলেও বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল বা নিষিদ্ধের বিপক্ষে তাঁরা৷
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন'র সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, এখন প্রধান ইস্যু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন ব্যবস্থার অধীনে হবে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্টোবরে সংসদ ভেঙে দেয়ার কথা বলেছেন৷ তাই সময় আছে মাত্র দেড় মাস৷ এই সময়ের মধ্যেই সমস্যার সমাধান করতে হবে৷ কারণ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যদি কোন সমঝোতা হয়, তাহলে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে৷ কিন্তু সংসদ ভেঙে দেয়ার পর সংবিধান সংশোধন সম্ভব হবেনা৷ তখন বিরোধী দল রাজপথেই সমাধান খুঁজবে৷ তাঁর মতে, রাজপথের সমাধান সংঘাতময় হবে এটাই স্বাভাবিক৷