ডেমোক্র্যাটদের কনভেনশনে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হলেন জো বাইডেন। তিনিই হবেন ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী।
বিজ্ঞাপন
সিদ্ধান্তটা জানাই ছিল। দরকার ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে দলের নেতা নির্বাচন হওয়া। সেই প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হলো। অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ডনাল্ড ট্রাম্পেরবিরুদ্ধে লড়বেন জো বাইডেন। তিনিই মঙ্গলবার রাতে ডেমোক্র্যাটদের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষা বলছে, বাইডেন এখন ট্রাম্পের তুলনায় এগিয়ে আছেন।
করোনার সময়ে এই প্রথমবার ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় কনভেনশন হলো পুরোপুরি ভার্চুয়াল। সাধারণত বিশাল এলাকায় এই ধরনের কনভেনশন হয়। সবকটি রাজ্যের প্রতিনিধিরা সেখানে জানান, প্রেসিডেন্ট পদে দলের প্রার্থী হিসাবে তাঁরা কাকে চান। কিন্তু এ বার করোনার আতঙ্কে এরকম বিশাল সমাবেশ সম্ভব ছিল না। তাই পুরো প্রক্রিয়াটাই হয়েছে ভার্চুয়ালি। বাইডেন, তাঁর স্ত্রী এবং অন্য ডেমোক্র্যাট নেতাদের ভাষণ অনলাইনে দেখা গেছে।
এই ভার্চুয়াল সভায় একের পর এক রাজ্যের প্রতিনিধিরা এসেছেন এবং জানিয়েছেন, তাঁরা কেন বাইডেনকে সমর্থন করছেন। আর বাইডেন বলেছেন, ''হৃদয়ের গভীর থেকে সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। এটা আমার কাছে অনেকখানি পাওয়া। বাকি কথা হবে বৃহস্পতিবার।'' ওই দিন বাইডেন এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে দীর্ঘ ভাষণ দেবেন।
‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ এর অজানা কিছু কথা
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট দিনটি অ্যামেরিকার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে৷ সেদিন ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, যিনি অ্যামেরিকায় আফ্রিকান-অ্যামেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা৷
ছবি: AP
লক্ষ্য বর্ণবাদের অবসান
এই সেই বিখ্যাত ছবি৷ ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়ালে প্রায় আড়াই লক্ষ সমর্থকের উদ্দেশ্যে ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ণবাদ দূর করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাগরিক অধিকার আন্দোলন
বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’ বা নাগরিক অধিকার আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তারই অংশ হিসেবে ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট আয়োজিত ‘মার্চ অন ওয়াশিংটন’ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি৷ ছবিতে সামনের সারিতে বাম থেকে দ্বিতীয়তে দেখা যাচ্ছে তাঁকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
যেভাবে আন্দোলনের শুরু
ছবির এই নারীর নাম রোজা পার্কস৷ বাস চালকের নির্দেশের পরও বাসের পেছনে বসতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তার প্রতিবাদেই শুরু হয়েছিল নাগরিক অধিকার আন্দোলন - যাঁর অন্যতম নেতা ছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ মার্কিন কংগ্রেস পরবর্তীতে রোজা পার্কসকে ‘দ্য ফার্স্ট মিনিস্টার অফ সিভিল রাইটস’ উপাধি দিয়েছিল৷
ছবি: AP
বাস বয়কটের দায়ে অভিযুক্ত
রোজা পার্কসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বাস বয়কট আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৬ সালের ২২ মার্চ তোলা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিংকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী কোরেটা স্কট কিং৷ এটা আদালত ছাড়ার সময়কার ছবি৷ মন্টগোমারি শহরের বাসে চালু থাকা নিয়ম ভঙ্গের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল লুথার কিং এর বিরুদ্ধে৷ তবে তাঁর আপিলের পর বিচারক ৫০০ ডলারের জরিমানা মওকুফ করে দিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকার
১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চের এই ছবিতে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং ও তাঁর স্ত্রী সহ অন্যান্যদের৷
ছবি: William Lovelace/Express/Getty Images
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবি নিয়ে ১৯৬৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
জন্ম
১৯২৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি জর্জিয়ার অ্যাটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৫ সালে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি৷ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৫৷ নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ৷ ছবিটি ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণের৷
ছবি: picture-alliance/akg
জার্মান মার্টিন লুথার
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর নাম কিন্তু শুরুতে ছিল মাইকেল কিং৷ পরবর্তীতে তাঁর বাবা ষোড়শ শতকে যে জার্মান ক্যাথলিক যাজক প্রোটেস্টান্ট গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন, সেই মার্টিন লুথারের নামে তাঁর ছেলে ও নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মার্টিন লুথার কিং৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
মৃত্যু
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তাঁকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জেমস আর্ল রে’কে (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে)৷ ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রে একবার জেল থেকে পালিয়ে যাবার পর এফবিআই তাঁকে ধরতে এই পোস্টারটি ছাপিয়েছিল৷ তিনটি ছবিই রে’র৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection
9 ছবি1 | 9
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য বাইডেনও সেই ১৯৮৮ থেকে চেষ্টা করছেন। এতদিনে তাঁর চেষ্টা সফল হলো। তাঁর ধৈর্য ও লেগে থাকার ক্ষমতা সাফল্য পেল। গতবারও তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন হিলারি ক্লিন্টন। এটাই ছিল তাঁর কাছে শেষ সুযোগ। সেটাকে কাজে লাগাতে পেরেছেন বাইডেন। ১৯৭২ সালে তিনি সেনেটর হন। তারপর এতদিন পরে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হলেন। অন্য কোনো ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়নি।
ডেমোক্র্যাটদের অধিবেশনে দলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরা যেমন বলেছেন, তেমনই বলেছেন নতুন প্রজন্মের নেতারা, যাঁদের দল ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করছে। জিমি কার্টার, বিল ক্লিন্টন, বারাক ওবামারা যেমন অধিবেশন থেকে ট্রাম্পকে আক্রমণ করেছেন, তেমনই তরুণ নেতারাও জানিয়েছেন, কেন ৭৭ বছর বয়সী বাইডেনকে তাঁরা পছন্দ করছেন। তাঁরা কেউ স্বাস্থ্য পরিষেবা ঠিক করার কথা বলেছেন, কেউ বন্দুকধারীদের হামলা বন্ধের ওপর জোর দিয়েছেন, কেউ বলেছেন বিদেশনীতিকে ঠিক করতে হবে, কেউ জলবায়ুর পরিবর্তনকে প্রধান সমস্যা হিসাবে উল্লেখ করে তার মোকাবিলার কথা বলেছেন। বোঝা যাচ্ছে, ডেমোক্র্যাট নেতারা করোনার বাইরে গিয়ে অ্যামেরিকার সমস্যা ও সমাধানের বিষয়েই জোর দিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে অন্যতম প্রধান বক্তা ছিলেন জো বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেন। তিনি বলেছেন, ''আমরা দেখাতে পেরেছি, আমাদের জাতির হৃদয় এখনো সাহস ও দয়াতে ভরা। এটাই অ্যামেরিকার আত্মা, যার জন্য জো বাইডেন লড়াই করে যাচ্ছেন।''