আন্তর্জাতিক আদালতে ‘ভারতীয় গোয়েন্দার' মৃ্ত্যুদণ্ড স্থগিত
১৭ জুলাই ২০১৯
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানের আদালতে মৃ্ত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তার সাজা স্থগিত করেছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত৷
বিজ্ঞাপন
সাজা বাতিলে ভারতের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার কুলভূষণ সুধীর যাদবের বিষয়ে এই রায় দেয়৷
১৬ বিচারকের মধ্যে ১৫ জন ভারতের আবদেনের পক্ষে রায় দিয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি৷ একইসঙ্গে যাদবকে কনস্যুলার সেবা দেওয়ার রায়ও দিয়েছে আদালত৷
আন্তর্জাতিক আদালতকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তান কর্তৃক যাদবের রায়ের বিষয় কার্যকরভাবে রিভিউ এবং সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আগ পর্যন্ত সাজা স্থগিত থাকবে৷
বালুচিস্তানে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ২০১৬ সালের মার্চে গ্রেপ্তার হন সুধীর যাদব৷ এরপর ২০১৭ সালে পাকিস্তানের সেনা আদালতে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হলে তীব্র প্রতিবাদ জানায় ভারত৷
পাকিস্তান বলছে, ইরান থেকে ঢোকার পর কুলভূষণ যাদবকে ২০১৬ সালের ৩ মার্চ বালুচিস্তান থেকে গ্রেপ্তার করে দেশটির সেনাবাহিনী৷
কিন্তু ভারতের দাবি, ব্যবসার কাজে ইরান গিয়েছিলেন কুলভূষণ যাদব, সেখান থেকেই তাঁকে অপহরণ করা হয়।
ফেব্রুয়ারিতে মামলার শুনানিতে ভারতের আইনজীবীরা বলেন, ‘বিদ্বেষপ্রসূত প্রচারণার‘ উপর ভিত্তি করে যাদবের বিরুদ্ধে ‘প্রহসনমূলক মামলা‘ করা হয়৷ যদিও যাদবের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করেন পাকিস্তানের আইনজীবীরা৷
পাকিস্তানের সেনা আদালতে মামলার রায়ের পর সাজা কার্যকর স্থগিত চেয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে আবেদন করে ভারত৷ এরপর সাজা কার্যকরে স্থগিতাদেশ দেয় জাতিসংঘের আদালত৷
ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, পাকিস্তানে, বিশেষ করে চীন-পাকিস্তান করিডরে, অরাজকতা সৃষ্টির জন্য কাজ করেছিলেন যাদব৷
পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী যাদবের সঙ্গে তাঁর পরিবারকে দেখা করা নিয়েও পরস্পরবিরোধী অভিযোগ করে আসছে ভারত ও পাকিস্তান৷ ভারতের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর ইসলামাবাদে দেখা করতে গেলে, কুলভূষণের মা ও স্ত্রী-কে হেনস্থা করে পাকিস্তান।
১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক বিচার আদালত৷ দুই দেশের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করে রায় দিলেও সেটি কার্যকরের ক্ষমতা তাদের নেই৷
পরস্পরের বিরুদ্ধ নিয়মিত গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ করে থাকে ভারত ও পাকিস্তান৷ বিরোধপূর্ণ কাশ্মীরসহ বিভিন্ন কারণে নানা যুদ্ধাবস্থাও বিরাজ করে তাঁদের মধ্যে৷
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷