আন্তর্জাতিক স্তরে জার্মানির প্রভাব বাড়ছে বলে মনে করেন ইউরোপীয়রা৷ তবে ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের প্রভাব ক্রমশ কমে যাচ্ছে বলেও মত তাদের৷ নতুন এক সমীক্ষা থেকে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
পিউ রিসার্চ সেন্টার মঙ্গলবার এক সমীক্ষা প্রকাশ করেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে জার্মানি গত একদশক আগের তুলনায় বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্তরে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দশটি দেশের মধ্য থেকে জরিপে অংশ নেয়াদের প্রায় অর্ধেক মানুষ এই ধারণা পোষণ করেন৷
সেন্টারটি বলছে, ‘‘ইউরোপে এমন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে জার্মানির ক্ষমতা যেমন ক্রমশ বাড়ছে, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের ক্ষমতা স্থির হয়ে আছে কিংবা ক্রমশ পড়তির দিকে৷''
ইউরোপের মানুষরা যা ভাবছেন
জার্মানি বর্তমানে আগের চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে মনে করাদের অবস্থান সবচেয়ে বেশি গ্রিসে৷ জরিপে অংশ নেয়া সেদেশের ৯১ শতাংশ মানুষই এই মত প্রকাশ করেছেন৷
ইটালি এবং স্পেনের ৫৬ শতাংশ মানুষও এই ধারণা পোষণ করেন৷
তবে জার্মানির বৈশ্বিক ভূমিকা যে বাড়ছে তা মানতে রাজি নন জরিপে অংশ নেয়া ব্রিটেনের অংশগ্রহণকারীরা৷ তাদের মাত্র ৩৭ শতাংশ এমনটা মনে করেন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দশটি দেশের মোট ৪৭ শতাংশ জরিপে অংশগ্রহণকারীর মত হচ্ছে আন্তর্জাতিক স্তরে জার্মানির প্রভাব বাড়ছে৷
ইইউ সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
জরিপে অংশ নেয়া দশটি দেশের প্রতিনিধিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মনে করেন যে সামগ্রিকভাবে ইইউ শান্তি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সমৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে৷ পোল্যান্ড এবং স্পেনের প্রতিনিধিরা ইইউ-র পক্ষে সবচেয়ে বেশি রেটিং দিয়েছেন, অন্যদিকে গ্রিস এবং যুক্তরাজ্য ইইউ-র কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তেমন একটা ইতিবাচক মানসিকতা দেখাননি৷
তবে সাধারণ জনগণের সঙ্গে ইইউ-র দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে বলেও মত দিয়েছেন জরিপে অংশনেয়ারা৷ ৬২ শতাংশ মানুষ এই ধারণা পোষণ করেন৷
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে প্রায় নয় লাখের মতো অভিবাসীকে গ্রহণ করে জার্মানি৷ তাঁদের অনেকেই যুদ্ধ এবং চরম দরিদ্রতা থেকে বাঁচতে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ সেসময় এত মানুষকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
তবে অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়ার সেই ঘটনা গোটা ইউরোপেই এক রাজনৈতিক বিতর্কের সূচনা করে যার প্রভাব এখনো রয়েছে৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, অভিবাসন ইস্যুতে ইউরোপের কিছু দেশের মানুষের মধ্যে এখনো এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে৷
লুইস স্যান্ডার্স ফোর/এআই
প্যারিসে অভিবাসী উচ্ছেদ!
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি ক্যাম্প উচ্ছেদ করেছে পুলিশ৷ চ্যাপেল রিং ব্রিজের নীচের এই অস্থায়ী এ ক্যাম্প উচ্ছেদের কিছু দৃশ্য দেখুন...
ছবি: REUTERS/B.Tessier
ব্রিজের নীচে বসবাস
প্যারিসের চ্যাপেল রিং ব্রিজের নীচে আবাস গড়ে তুলেছিলেন অবৈধ অভিবাসীরা৷ গত তিন-চার মাস যাবত এখানেই তাবু টানিয়ে অবস্থান করছিলেন তাঁরা৷ স্টোভে রান্না আর আশেপাশের স্টেশন ও শপিংমলের বাথরুমে গোসল ও অন্যান্য কাজ সেরে নিতেন তাঁরা৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
৩০০ জন
পুলিশ জানিয়েছে রিং ব্রিজের নীচে আবাস স্থাপনকারী অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা ৩০০-র কাছাকাছি৷ এর মধ্যে শিশু ও কিশোরও রয়েছে৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
তাঁদের দেশ
চ্যাপেল ব্রিজের নীচে অবস্থান নেওয়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের অধিকাংশই সুদান, সোমালিয়া এবং আফ্রিকার অন্যান্য দেশের নাগরিক বলে জানায় পুলিশ৷ তবে আফগানিস্তানের অভিবাসনপ্রত্যাশীও রয়েছেন এই দলে৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
অবৈধদের জন্য কঠোর ফ্রান্স
ফ্রান্সের প্রশাসন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয় দিতে নারাজ না হলেও অবৈধদের প্রতি বরাবরই কঠোর৷ এ নিয়ে গত ৩ বছরে পঞ্চম অভিবাসী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলো প্যারিস পুলিশ৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
প্যারিসের প্রতি বেশি নজর!
এ পর্যন্ত উচ্ছেদের যতগুলো ঘটনা ফ্রান্সের পুলিশ ঘটিয়েছে তার সবই প্যারিসে৷ ২০১৫ সালে এই চ্যাপেল ব্রিজ থেকেই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷ ২০১৬ সালে প্যারিসের স্ট্যালিনগ্রাদ মেট্রো স্টেশন থেকে উচ্ছেদ করা হয় ৩ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ ২০১৭ সালে ফের চ্যাপেল ব্রিজে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
কোথায় যান অভিবাসীরা
উচ্ছেদকৃত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের শহরের বাইরে সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্যারিসের পুলিশ৷ শহর ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
স্বাস্থ্য ঝুঁকি
এভাবে খোলা আকাশের নীচে তাঁবুতে প্রচন্ড শীতে থাকা তিনশ’ অভিবাসী নিজেদের জন্য বিপদ ডেকে আনছেন৷ এতে বিপদে পড়তে যাচ্ছে অভিবাসী সেবাদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও৷ তাঁদের সবাইকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পুলিশ৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
সম্বল কম্বল
এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে যখন উচ্ছেদ করা হয়, তখন তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েই পুলিশের গাড়িতে ওঠেন৷ সেই সময় দেখা যায়, গুটি কয়েক শীতের কাপড় ও কম্বল ছাড়া তাঁদের তেমন কিছু নেই৷
ছবি: REUTERS/B.Tessier
শরণার্থী নীতিমালা
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই শরণার্থীদের আশ্রয়ের ব্যাপারে একটি নীতিমালা গ্রহণ করেন৷ ওই নীতিমালায় ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১২ হাজার শরণার্থীকে অভিবাসী হিসেবে আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ সে মোতাবেক কাজও করে যাচ্ছে ফ্রান্স প্রশাসন৷