মি টু আন্দোলন অত্যন্ত জরুরি একটি ঘটনা৷ কিন্তু তা ব্যবহার করছেন, এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়৷
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় ফৌজদারি আইনে ৪৯৮(এ) ধারাটি নিয়ে একসময় বিপুল বিতর্ক শুরু হয়েছিল৷ গার্হস্থ্য হিংসার জন্য ওই ধারা ব্যবহার করা যেত৷ যে কোনো বিবাহিত নারী ওই ধারায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে স্বামী এবং তার পরিবারকে গ্রেপ্তার করতে পারতো৷
ধারাটি গুরুত্বপূর্ণ, সন্দেহ নেই। ভারতে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার নারীর সংখ্যা ভয়াবহরকমের বেশি৷ প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এর শিকার হন৷ ফলে তা বন্ধ করতে কড়া আইনের অবশ্যই প্রয়োজন৷ কিন্তু এর উল্টো দিকের চিত্রটিও খুব পরিষ্কার নয়। নারীবাদীদের একাংশও মনে করেন, বহু নারী এই আইনের সুয়োগ নিয়েছেন৷ অপ্রয়োজনে এই আইনের সুযোগ নিয়ে স্বামী এবং তার পরিবারকে অন্তত কিছুদিনের জন্য জেলে পাঠিয়েছেন৷ পরে দেখা গেছে, অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। একবার নয়, বার বার ঘটেছে এই ঘটনা৷
যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত সেলিব্রেটিরা
বিশ্বজুড়ে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিই যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন৷ অনেক সেলিব্রেটিই শিকার হয়েছেন মিথ্যা অভিযোগের, আবার কেউ কেউ ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্তও হয়েছেন৷ এমন কয়েকজনের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
স্নুপ ডগ
২০২২ সালের শুরুর দিকে মার্কিন ব়্যাপার স্নুপ ডগের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন এক নারী৷ তিনি একসময় স্নুপ ডগের দলের নৃত্যশিল্পী ছিলেন। ২০১৩ সালে মারধর এবং গালিগালাজের ঘটনা ঘটেছিল দাবি করে এই ব়্যাপারের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও হিপ হপ ব্যক্তিত্ব বিশপ ডন হুয়ানের বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন এ নারী৷
ছবি: Willy Sanjuan/Invision/AP/picture alliance
হার্ভি ওয়াইনস্টিন
বিনোদন শিল্পে অনেকের কাছেই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিত ছিলেন হার্ভে ওয়াইনস্টিন৷ কিন্তু তার অন্ধকার দিকের কথা জানতেন কিছু নারী৷ অ্যাশলে জুড এবং রোজ ম্যাকগোয়ানের মতো অভিনেত্রীরা তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করার পর ওয়াইনস্টিন শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার না করলেও পরবর্তীতে ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন৷ নিউ ইয়র্কে হওয়া ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের মামলায় সাজা হিসাবে ২৩ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন তিনি৷
ছবি: Angela Weiss/AFP
বিল কসবি
প্রায় অর্ধ শতক আগের নানা ঘটনাতেও অভিযোগ উঠেছে জনপ্রিয় মার্কিন অভিনেতা বিল কসবির বিরুদ্ধে৷ ১৯৮০ দশক থেকেই কসবির বিরুদ্ধে কানাঘুষা ছিল৷ ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে ২০০৪ সালে৷ টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী আন্দ্রেয়া কনস্টান্ড কসবির বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ না থাকায় মামলা করা সম্ভব হয়নি৷ পরবর্তীতে একে একে প্রায় ৬০ জন নারী বিল কসবির বিরুদ্ধে মাদক প্রয়োগ করে ধর্ষণ করার অভিযোগ তোলেন৷
ছবি: Dennis Van Tine/STAR MAX/IPx/picture alliance
প্রিন্স অ্যান্ড্রু
ইংল্যান্ডের রাজা চার্লসের ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধেও রয়েছে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ৷ মার্কিন বিনিয়োগকারী জেফ্রি এপস্টাইনের সহায়তায় অভিনেত্রী ভার্জিনিয়া রবার্টস জিউফ্রেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চলছে তার বিরুদ্ধে৷ নারী পাচারের দায়ে এপস্টাইনের সাজা হয় ২০০৮ সালে৷ তখন থেকেই অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে অভিযোগের তির ধেয়ে আসছে৷ এরপরই রাজকীয় সব দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তাকে৷
এপস্টাইনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা আরেক সেলিব্রিটি হিসাবে নাম এসেছে মার্কিন অভিনেতা কেভিন স্পেসিরও৷ অল্পবয়স্ক ছেলেদের হয়রানির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে৷ ২০২০ সালে স্পেসির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেন অভিনেতা অ্যান্থনি ব়্যাপ৷ অভিযোগ, ১৯৮৬ সালে ১৪ বছর বয়সের থাকাকালীন মাতাল অবস্থায় ব়্যাপকে হয়রানি করেন স্পেসি৷ এরপর আরো অন্তত ১৫ জন একই ধরনের অভিযোগ করেন৷ স্পেসি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
ছবি: zz/Dennis Van Tine/STAR MAX/IPx/picture alliance
মাইক টাইসন
১৮ বছর বয়সি ডিজায়ার ওয়াশিংটন নামের এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হন বক্সিং কিংবদন্তী মাইক টাইসন৷ ১৯৯২ সালে মামলার রায় ঘোষণার পর টাইসনকে তিন বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়৷ ওয়াশিংটন ছিলেন তৎকালীন মিস ব্ল্যাক রোড আয়ল্যান্ড৷
ছবি: Joe Scarnici/Getty Images
মাইকেল জ্যাকসন
১৯৯৩ সালে শিশুদের যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে৷ ১৯৯৪ সালে সমঝোতার মাধ্যমে এই মামলার নিষ্পত্তি হয়৷ কিন্তু ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে এমন আরো সাতটি অভিযোগে মামলা দায়ের হয়৷ ২০০৫ সালে মাইকেল জ্যাকসনকে নির্দোষ বলে রায় দেয় আদালত৷
ছবি: Rusty Kennedy/AP/picture alliance
7 ছবি1 | 7
ভারতের মি টু আন্দোলন নিয়েও সেই একই কথা বলতে হয়৷ ২০১৭-১৮ সালে যখন মি টু আন্দোলন শুরু হয়েছিল গোটা বিশ্বে এবং ভারতে, একের পর এক ভয়াবহতার কথা গোচরে এসেছিল৷ সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করে নারীরা জানাচ্ছিলেন, কত কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের৷ সমাজের ভয়ে, কাজ হারানোর ভয়ে এতদিন যা তারা বলে উঠতে পারেননি৷ সমাজের বহু বিশিষ্ট, প্রতিষ্ঠিত, তথাকথিত 'বুদ্ধিজীবী', 'বিদ্বজ্জনে'র মুখোশের আড়ালে থাকা আসল পরিচয় স্পষ্ট হয়েছিল৷ পাল্টা প্রতিবাদ না করে অনেকেই তখন মুখ লুকনোর জায়গা খুঁজছিলেন৷
কিন্তু প্রায় সেই সময় থেকেই একটা পাল্টা স্বরও ক্রমশ জোরালো হচ্ছিল৷ যা বলা হচ্ছে, তাতে অতিকথন নেই তো? সমাজের আবেগের ঝোল নিজের দিকে টানতে কোথাও অতিরঞ্জন হয়ে যাচ্ছে না তো? বিতর্কিত প্রশ্ন, সন্দেহ নেই৷ ব্যক্তিগত অনুভূতির জায়গা থেকে বলতে পারি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যা লেখা হয়েছে, বাস্তব ঘটনা তার চেয়েও ভয়ংকর ছিল৷ মি টু আন্দোলন বহু নারীকে মুখ খোলার সাহস জুগিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সমাজের সামনে সমস্ত কথা বলে ফেলার জোর এখনো তাদের নেই৷ এই সমাজ ঐতিহাসিকভাবে নারীর উপর যে অত্যাচার চালিয়ে গেছে, এত দ্রুত, একটা দুটো আন্দোলনে তার পুরোটা প্রকাশ পাওয়া অসম্ভব৷
এমন অনেক বন্ধুকে চিনি, মি টু-র ড্রাফট তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত তা প্রকাশ করতে পারেনি৷ ভয় পেয়েছে৷ সমাজ, কর্মক্ষেত্র, পরিবারকে ভয় পেয়েছে৷ এমন অনেক বন্ধুকে চিনি, মি টু-র স্রোতে ভেসে কিছু কথা লিখে ফেললেও, বাস্তবের অর্ধেকটা বলতে পেরেছে মাত্র৷
তবে এমন বন্ধুও আছে কাছেই, যারা মি টু-র শিকার হয়েছে৷ আলো থাকলে অন্ধকার থাকেই৷ আন্দোলনের ঝড় উঠলে বেনো জল ঢুকবেই৷ সমাজমাধ্যমে এমন অনেকের নামে এমন অনেক কথা লেখা হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে জানি, যা সম্পূর্ণ ঠিক নয়৷ ভালোবাসার অভিব্যক্তি জানানোর মধ্যে কোনো অপরাধ নেই৷ অপরাধ তখনই হয়, যখন অন্যের অভিব্যক্তিকে সম্মান না করে কোনো হীন আচরণ করা হয়৷ মুশকিল হলো, ইদানীং সমাজমাধ্যমে এমন অনেক স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়, যা হীন নয়৷ একটি মানুষের, একটি মুহূর্তের অভিব্যক্তিমাত্র৷
সমাজ আসলে এখন 'ট্রোল' নামক এক আশ্চর্য শব্দে বিভক্ত হয়ে গেছে৷ একদল ট্রোল করে, একদল ট্রোলের শিকার হয়। এই ট্রোলের কোনো যুক্তি থাকে না৷ দুইটি পক্ষ থাকে কেবল৷ যার পাল্লা যত ভারী, সমাজ মাধ্যমে সে তত প্রতিষ্ঠিত৷ এই অদ্ভুত খেলায় নীতির কোনো বালাই নেই৷ প্রকাশ্য আর ব্যক্তিগতের কোনো ভেদ নেই৷ দুইদিন আগেও ব্যক্তিগত স্মৃতি হিসেবে যা সংগ্রহ করা হয়েছিল, আচমকাই তা প্রকাশ্য ট্রোলের হাতিয়ার হয়ে উঠল। বার বার ঘটছে এমন ঘটনা৷ বাইনারিতে কাউকে সাদা কাউকে কালোয় ভেঙে ফেলছে সমাজ৷ বিচারের, তলিয়ে দেখার ইচ্ছা এবং অবকাশ খতম হয়ে যাচ্ছে। এইটে চিন্তার৷
সামাজিক মাধ্যম এমনই এক মাধ্যম যা এভাবে ব্যবহৃত হবেই৷ ইদানীং কেউ কেউ তা বুঝতে পারছেন৷ ফলে ট্রোলাক্রান্তের পাশেও দাঁড়াচ্ছে মানুষ৷ সমাজমাধ্যমে দাঁড়াচ্ছে, ব্যক্তিগত পরিসরেও৷ এমনই এক বন্ধু সম্প্রতি ট্রোলের শিকার হয়ে আত্মহত্যার কথা ভেবেছিল৷ তাকে বুঝিয়ে, সঙ্গে থেকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনেছেন যারা, তারাও কলকাতার বিশিষ্ট মানুষ৷ যে ট্রোল করেছিল, তার সঙ্গে বারংবার কথা বলে একটা ব্রিজ তৈরির চেষ্টা করেছেন তারা৷ পুরোটা হয়তো সম্ভব হয়নি৷ কিন্তু চেষ্টা তো হলো? এ-ও তো কম নয়!
৪৯৮(এ) যেমন ভুল নয়, মি টু-ও ভুল নয়৷ সমাজের গভীর ক্ষত থেকেই এক ধারা এবং এক আন্দোলনের জন্ম। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে না গেলে মানুষ পথে নামেন না৷ নিজের জীবনের অন্ধকার কাহিনি সমাজের সামনে তুলে ধরেন না৷ ঘর ভাঙবে জেনেও স্বামীর নামে অভিযোগ দায়ের করেন না৷ যারা এর সুযোগ নেন, তাদের প্রথম ধাপেই চিনে ফেলা দরকার৷ কাজটা কঠিন৷ কাজটা বিশ্বাসের৷ বিশ্বাসটুকু ধরে রাখতে পারলে, সমাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়৷
২০১৮ সালের ছবিঘর
বলিউডে যৌন হয়রানির অভিযোগ, ভারত জুড়ে তোলপাড়
সাবেক মিস ইন্ডিয়া থেকে বলিউড নায়িকা হলেও বহুদিন শিরোনামে ছিলেন না তনুশ্রী দত্ত৷ তবে দশ বছর আগে নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির অভিযোগ ঘিরে এখন তোলপাড় চলছে ভারতে৷তনুশ্রীও ফিরেছেন শিরোনামে৷ বিস্তারিত এই ছবিঘরে৷
ছবি: imago/Hindustan Times/S. Bate
দশ বছর আগে...
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তনুশ্রী তুলে আনেন ২০০৮ সালের সেই ঘটনা৷ জানান, সে বছর ‘হর্ণ ওকে প্লিজ’ ছবির সেটে অভিনেতা নানা পাটেকার তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন৷পরে সেই ছবি থেকে তিনি সরে দাঁড়ান৷ তাঁর বদলে নেওয়া হয় রাখি সাওয়ান্তকে৷ হেনস্থার বিষয়ে চলচ্চিত্র ও টিভি প্রোগ্রাম প্রযোজক সংস্থা, ‘সিন্টা’-র কাছে অভিযোগ করেও কোনো বিচার পাননি৷ এর আগে ২০১৩ সালেও এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন তিনি৷
ছবি: Youtube/ABP News
কে এই তনুশ্রী দত্ত?
২০০৪ সালের মিস ইন্ডিয়া তনুশ্রী দত্ত একজন ভারতীয় মডেল এবং অভিনেত্রী৷ ‘চকলেট’ ও ‘আশিক বানায়া আপনে’-র মতো ছবিতে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন তিনি৷ ২০০৪ সালের মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় দশজন ফাইনালিস্টের মধ্যেও ছিলেন তিনি৷ ২০০৮ সালের ঘটনার পর তনুশ্রী হতাশাগ্রস্ত হয়ে বলিউড থেকে বিদায় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান৷
ছবি: Getty Images/AFP
দশ বছর পর...
যৌন হেনস্থাবিরোধী ‘মি টু’ আন্দোলনের ঢেউ অবশেষে ভারতেও লেগেছে৷ সম্প্রতি তনুশ্রী ভারতে ফিরে এসে জনসমক্ষে নানা পাটেকারকে অভিযুক্ত করেন, যার ফলে শুরু হয় তোলপাড়৷ দশ বছর আগে যে ঘটনায় কেউ কান দেয়নি, তা নিয়েই শুরু হয় তুমুল আলোচনা৷ দশ বছর আগে তনুশ্রীর বাবা যে নানা পাটেকার, পরিচালক রাকেশ সারং, কোরিওগ্রাফার গণেশ আচার্য ও প্রযোজক সামি সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন – সেই সত্যও বেরিয়ে আসে৷
ছবি: Getty Images/AFP
মন্তব্যহীন ‘বিগ বি’
এক অনুষ্ঠানে বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চনের কাছে নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করতে বলে প্রসঙ্গটি তিনি বেমালুম এড়িয়ে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘ আমার নাম তনুশ্রী দত্ত বা নানা পাটেকার কোনটিই নয়, এ বিষয়ে আমি কেন মন্তব্য করব?’’
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/India Today
সলমানও এড়িয়ে গেলেন
বলিউড সুপারস্টার সলমান খানও এই ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘আমার এ বিষয়ে ভালো জানা নেই৷ গোটা বিষয়টি এখনও বুঝে না উঠলেও আমি নিশ্চিত যে আইনি পথেই বিষয়টি চলবে৷’’
ছবি: DW/S. Zain
আমির সন্দিহান!
জনপ্রিয় অভিনেতা আমির খানও ঘটনাটি সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য না করে সমালোচিত৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি না যে, আমার এখানে কিছু বলা ঠিক হবে৷ আপাতত তদন্ত করে দেখা উচিত সত্যিই এই ধরনের ঘটনা আদৌ ঘটেছে কি না৷’’
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade
ভিডিও কী বলে?
ইতিমধ্যে ২০০৮ সালে অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্তের গাড়ি ভাঙচুরের দৃশ্যসম্বলিত একটি ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে৷ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কিছু লোক তনুশ্রীর গাড়ির উপর হামলা করছে৷ তনুশ্রী মনে করেন, নানা পাটেকারের হয়ে একটি রাজনৈতিক দলের গুন্ডারা এ হামলা চালিয়েছিল৷ তাঁর মতে, অভব্য আচরণের প্রতিবাদে তিনি শুটিং স্পট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নানা পাটেকারই মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার ওই সদস্যদের খবর দিয়েছিলেন৷
ছবি: Youtube/ABP News
নানার পাল্টা জবাব
তনুশ্রী দত্তের নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে নানা পাটেকার বলেন, ‘‘১০ বছর আগে যা সত্য ছিল আজও তাই আছে ও আগামীতেও তাই থাকবে৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার আইনজীবী আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন বলেই আমি নীরব৷ নইলে, প্রেসে কথা বলার কোনো সমস্যা আমার নেই৷’’ নানা পাটেকরের আইনজীবী ইতিমধ্যে তনুশ্রীকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন৷
ছবি: Gety Images/AFP
তনুশ্রীর পাশে সোহা আলি খান
অভিনেত্রী সোহা আলি খান তনুশ্রীর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বলেন,‘‘ভারতের মতো দেশে নারীর সঙ্গে প্রতিদিনই কিছু-না-কিছু ঘটতে থাকে৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘এমন ঘটনার বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াতে অনেক সাহস লাগে, তাই আমি মনে করি নারীদের এই বিষয়ে সমর্থন জানাতে হবে, উৎসাহিত করতে হবে।’’ সোহা জানান, তিনি তনুশ্রী বা যৌন হয়রানির শিকার এমন যে কোনো মহিলার পাশে আছেন৷
ছবি: UNI
ফারহানও তনুশ্রীর পাশে
তনুশ্রীর সাহসের প্রশংসা করে চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা ফারহান আখতার বলেছেন, ‘‘যদি কোনো নারী নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে চায়, তবে আমাদের তা শোনা অন্তত উচিত৷ আমরা তার কথা শোনার আগেই ঘোষণা করছি যে, অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর কেরিয়ার শেষ হওয়ার কারণে তিনি মিডিয়ার আলোচনায় আসতে চান!’’ অভিযোগ তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তিনি৷ নেহা ধুপিয়া, অর্জুন কাপুরের মতো তারকারাও তনুশ্রীকে সমর্থন জানিয়েছেন৷
ছবি: AP
দায় এড়ানোর কৌশল?
২০০৮ সালে চলচ্চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠান প্রযোজক অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে থাকা সাবেক সেন্সর বোর্ডপ্রধান পহলাজ নিহলানি পুরো বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে দাবি করেছেন, তিনি শুধু শুটিং সেটে মনোমালিন্য সম্পর্কে জানতেন৷ তনুশ্রী আগে কখনো হয়রানি সম্পর্কে কিছু বলেননি বা না পাটেকারের নাম কোথাও উল্লেখ করেননি বলেও দাবি তাঁর। অথচ দশ বছর আগেই এফআইআর করেছিলেন তনুশ্রী৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
তনুশ্রীর জবাব
মহারাষ্ট্র রাজ্য মহিলা কমিশনে ইতিমধ্যে নানা পাটেকার, রাকেশ সারং, গণেশ আচার্য ও সামি সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তনুশ্রী৷ ১০ বছর আগে রাজনৈতিক হুমকি ও সহিংস হামলার জন্য মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার কর্মীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
আরো কেচ্ছা বেরোলো
এই ঘটনাবলীর আলোকে, 'মি টু' আন্দোলন ভারতে যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে। রজত কাপুর ও বিকাশ বেহলের মতো তারকাদের বিরুদ্ধেও নতুন ও পুরোনো অভিযোগ খবরে উঠে আসছে। এখন দেখার এটাই যে, আন্দোলনটি আদৌ সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করতে সক্ষম হয় কিনা।