ঈদের পর সরকার বিরোধী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার কথা জানিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা৷ অথচ ঈদের পর প্রায় একমাস হতে চললেও এখনো সেটা না হওয়ার কারণ খুঁজছেন কেউ কেউ৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে তারই কিছু নমুনা৷
বিজ্ঞাপন
আমারব্লগে মাহবুবুল আলম ‘বিএনপির পরনির্ভশীল আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ও বাস্তবতা' শীর্ষক একটি বিশ্লেষণমূলক ব্লগ লিখেছেন৷ তিনি বলছেন, ‘‘বিএনপির আন্দোলনের হুমকি যে তর্জন-গর্জন ছাড়া আর কিছুই নয় তা ইতিমধ্যেই দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে৷'' তিনি মনে করেন, ‘‘সরকারের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে বিএনপির মধ্যে দুইটি পরস্পরবিরোধী অংশ কাজ করছে৷ দলের একটি অংশ এখনই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করে সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইলেও বিএনপির অন্য একটি অংশ ও বিএনপি হাইকমান্ড সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা থেকে আন্দোলনের পরিবর্তে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে পরবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে সমঝোতায় যেতে চাচ্ছে৷ কেননা তারা মনে করেন বিএনপিকে পরমুখাপেক্ষী আন্দোলন থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের শক্তিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে৷ জামায়াত ও অন্যান্য উগ্র ইসলামিক দলগুলোর সাহায্যে পরমুখাপেক্ষী আন্দোলনের পরিণতি কী হয় তা তারা ইতিমধ্যেই টের পেয়েছে৷ তাছাড়া জামায়াত, হেফাজত ও অন্যান্য সরকারবিরোধী ইসলামি দলগুলোও বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের বিরুদ্ধে অলআউট আন্দোলনে যেতে রাজি নয়৷ তাদের কথা হলো, আমাদের কাঁধে বন্ধুক রেখে বিএনপিকে আর শিকার করতে দেয়া উচিত নয়৷''
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
এদিকে, একই ব্লগে অন্তহীন নামে আরেক ব্লগার ‘বিএনপি কি আসলেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে ??!!' নামে পোস্টে লিখেছেন, ‘‘জামায়াত-শিবির-রাজাকারদের হাতে প্রায় বিলীন হওয়া বিএনপি হয়ে আছে স্থবির৷ অনাদিকাল ধরে সেই নাম সর্বস্ব দলে হয় না গণতন্ত্র চর্চা, হয় না দলীয় কাউন্সিল৷''
বিএনপির জন্য তাঁর পরামর্শ এরকম, ‘‘...এমতাবস্থায় দলীয় সংস্কার এবং দেশের প্রত্যেকটি অর্জনে উল্লাস এবং সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে হয়ত বিএনপি নামের নামসর্বস্ব দলটি ফিরে পেতে পারে জনগণের আস্থা৷ পরিহার করতে হবে ৭১-এর খুনি নারী ধর্ষণকারী জামায়াত শিবির রাজাকারদের৷ সহায়তা করতে হবে খুনি রাজাকারদের বিচারিক প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করতে এবং বন্ধ করতে হবে হরতাল, বোমাবাজি, খুন এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি৷''