বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সরকার পতনের আন্দোলন আর সরকারের তা প্রতিহত করার কর্মযজ্ঞে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের ‘আম আদমি৷’
বিজ্ঞাপন
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশানের বাসভবনে কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷ রবিবার তিনি পুলিশের বাধার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় অংশ নিতে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটার দিকে গুলশানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ কিন্তু তাঁর পথরোধ করতে বাড়ির গেটে মানব দেয়াল তৈরি করে পুলিশ এবং ব়্যাবের সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
আটকে ছিলেন গেটে
পুলিশ এবং ব়্যাব সদস্যদের বাধার মুখে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে ছিলেন খালেদা জিয়া৷ এরপর এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
গাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ এসময় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘‘দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? এরা সবাই গোপালগঞ্জের৷ গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে৷’’ দৈনিক প্রথম আলো খালেদার এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সোমবারও চলবে কর্মসূচি
নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া৷ তবে তিনি বাড়ির মধ্যে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘‘এই সরকার জালেম এবং অগণতান্ত্রিক৷ এই সরকারের পতন হবেই৷’’ এসময় তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও চলবে বলে ঘোষণা দেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
বালুভর্তি ট্রাকের ব্যারিকেড
খালেদা জিয়ার বাড়ির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল৷ শনিবার তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় সাধারণ ব্যারিকেডের পাশাপাশি বালুভর্তি ট্রাকও যোগ করা হয়৷ কয়েকটি ট্রাক এমনভাবে রাখা হয়, যাতে খালেদার গাড়ি বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বের হতে না পারে৷ আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশিদ স্বপন জানান, খালেদা জিয়াকে কার্যত গুলশানের বাড়িতে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশের বক্তব্য
খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নয়াপল্টনে কোনো জমায়েত বা সমাবেশের অনুমতি নেই৷ তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না৷ আর তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখার আছে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাণহানি
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে ঘিরে সংঘর্ষ এবং বিস্ফোরণে ঢাকায় কমপক্ষে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ রবিবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাকার মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মনসুর আলী৷ অন্যদিকে, কমলাপুরে তল্লাশির সময় বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সুপ্রিমকোর্টে তাণ্ডব
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় যোগ দিতে সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কোর্টের মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভিতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
বিরল সংঘর্ষ
বলাবাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বাইরে থেকে কোন দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়নি৷ সেক্ষেত্রে রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াটা বিরল ঘটনা বলে অবিহিত করেন আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷
ছবি: Reuters
চুপচাপ নয়াপল্টন
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির আওতায় গোটা দেশ থেকে সক্ষম নেতাকর্মীদের ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া৷ কিন্তু রবিবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে পারেনি৷ কিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ফলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দৃশ্যত পুলিশ এবং সাংবাদিক ছাড়া কেউ ছিল না৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন
উল্লেখ্য, আগামী পাঁচ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় এবার ১৫৪টি আসনে ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না৷ এসব আসনে একজন করে প্রার্থী রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন৷ মানুষের হাতে কাজ নেই৷ আর ব্যবসা-বাণিজ্যে নামছে ধস৷ চলছে না স্কুল-কলেজ৷ পেছাচ্ছে পরীক্ষা৷ মানুষ যেন এখন রাজনীতির হাতে বন্দি হয়ে পড়েছেন৷ নানা আলোচনা, টকশো, ক্ষুরধার লেখনী আর সভা-সেমিনারে কাজ হচ্ছে না৷ সাধারণ মানুষও জানেনা, তাদের মুক্তি মিলবে কবে৷
সোমবারও ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা'
বিএনপির নেতৃত্বে ‘রোড ফর ডেমোক্রেসি' বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা' রবিবারে শেষ হয়নি৷ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পুলিশের বাধার মুখে রবিবার নয়াপল্টনে না যেতে পেরে সোমবারও একই কর্মসূচি বহাল রাখার ঘোষণা দিয়ে ঘরে ফিরেছেন৷ আর সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এর সঙ্গে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছেন৷ তবে প্রেসক্লাবে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বের হওয়ার পরই পুলিশ হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে আটক করেছে৷
এদিকে, শাসক দল আওয়ামী লীগ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদাকে আবারো ব্যর্থ করার ঘোষণা দিয়েছে৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রবিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘খালেদা জিয়া আবারো ব্যর্থ হয়েছেন৷ তাঁর আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের কোন আত্মিক সম্পর্ক নেই৷'' তিনি ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হবেন বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ আশরাফ৷
‘রাস্তায় থাকে জীবনের শঙ্কা'
তাহলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুই রাজনৈতিক জোটের রাজনীতির সম্পর্ক কতটুকু? এমন প্রশ্নের জবাবে অফিস ফেরত ইকবাল হোসেন রবিবার সন্ধ্যায় বাংলামোটর এলাকায় ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সকালে পায়ে হেঁটে অফিসে যেতে হয়েছে৷ এখন পায়ে হেঁটেই বাসায় ফিরছি৷ আর রাস্তায় থাকে জীবনের শঙ্কা৷ জানিনা কতদিন এভাবে চলতে হবে৷'' রাস্তায় তাঁর সহযাত্রী আরো শত শত মানুষ৷ সবার চোখে মুখেই চিন্তার ছায়া৷ তাদের একজন মতিঝিলের ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রবিউল আলম৷ তাঁর কথায়, গত ৮ মাস ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসা লাটে উঠেছে৷ পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে বাঁচবেন জানেন না তিনি৷
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা'য় ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা জাতীয় পতাকা হাতে নয়াপল্টনে সমবেত হতে চেয়েছিলেন৷ দুই মাসের সহিংস অবরোধের পর তারা এই কর্মসূচিকে অহিংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্তু পুলিশ আর আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিরোধীদের কর্মসূচি প্রতিহতে সফল হয়েছেন৷ তবে সরকার সমর্থকরা এবার নিজেরা অহিংস থাকতে পারেননি৷ তারাও মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে লাঠি হাতে সুপ্রিমকোর্টের ভিতরে ঢুকে হামলা চালিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ওপর৷ বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের একটি মিছিলে চড়াও হওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে৷ অভিযোগ আছে, বিএনপিপন্থি সাংবাদিকদের ওপর হামলার৷
গুলশানের বাসভবনে ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশানের বাসভবনে কার্যত ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷ রবিবার তিনি পুলিশের বাধার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় অংশ নিতে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর তিনটার দিকে গুলশানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷ কিন্তু তাঁর পথরোধ করতে বাড়ির গেটে মানব দেয়াল তৈরি করে পুলিশ এবং ব়্যাবের সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
আটকে ছিলেন গেটে
পুলিশ এবং ব়্যাব সদস্যদের বাধার মুখে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে ছিলেন খালেদা জিয়া৷ এরপর এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
গাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ এসময় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন৷ উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে খালেদা বলেন, ‘‘দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? এরা সবাই গোপালগঞ্জের৷ গোপালগঞ্জের নামই বদলে যাবে৷’’ দৈনিক প্রথম আলো খালেদার এই বক্তব্য প্রকাশ করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সোমবারও চলবে কর্মসূচি
নিরাপত্তা বাহিনীর বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি খালেদা জিয়া৷ তবে তিনি বাড়ির মধ্যে ফিরে যাবার আগে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘‘এই সরকার জালেম এবং অগণতান্ত্রিক৷ এই সরকারের পতন হবেই৷’’ এসময় তিনি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সোমবারও চলবে বলে ঘোষণা দেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
বালুভর্তি ট্রাকের ব্যারিকেড
খালেদা জিয়ার বাড়ির চারপাশে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল৷ শনিবার তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তায় সাধারণ ব্যারিকেডের পাশাপাশি বালুভর্তি ট্রাকও যোগ করা হয়৷ কয়েকটি ট্রাক এমনভাবে রাখা হয়, যাতে খালেদার গাড়ি বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে বের হতে না পারে৷ আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশিদ স্বপন জানান, খালেদা জিয়াকে কার্যত গুলশানের বাড়িতে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশের বক্তব্য
খালেদা জিয়াকে বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নয়াপল্টনে কোনো জমায়েত বা সমাবেশের অনুমতি নেই৷ তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সেখানে যেতে দেয়া হবে না৷ আর তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিও পুলিশের দেখার আছে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাণহানি
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে ঘিরে সংঘর্ষ এবং বিস্ফোরণে ঢাকায় কমপক্ষে দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ রবিবার সকাল এগারোটার দিকে ঢাকার মালিবাগে পুলিশ আর জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মনসুর আলী৷ অন্যদিকে, কমলাপুরে তল্লাশির সময় বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন নিরাপত্তাকর্মী আবুল কাশেম৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সুপ্রিমকোর্টে তাণ্ডব
এদিকে, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’য় যোগ দিতে সুপ্রিমকোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কোর্টের মূল গেট দিয়ে মিছিল করে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের জল কামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আটকে দেয়৷ এরপর তারা ভিতরে গিয়ে পুলিশের প্রতি ইট পাটকেল ছোড়ে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একদল সমর্থক সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ঢুকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়৷ সেখানে কয়েকজন আইনজীবী আহত হন৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
বিরল সংঘর্ষ
বলাবাহুল্য, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বাইরে থেকে কোন দলের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়নি৷ সেক্ষেত্রে রবিবার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আদালত চত্বরে প্রবেশ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়াটা বিরল ঘটনা বলে অবিহিত করেন আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷
ছবি: Reuters
চুপচাপ নয়াপল্টন
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচির আওতায় গোটা দেশ থেকে সক্ষম নেতাকর্মীদের ২৯ ডিসেম্বর, রবিবার বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া৷ কিন্তু রবিবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে পারেনি৷ কিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে যেতে চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ ফলে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দৃশ্যত পুলিশ এবং সাংবাদিক ছাড়া কেউ ছিল না৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাঁচ জানুয়ারি নির্বাচন
উল্লেখ্য, আগামী পাঁচ জানুয়ারি বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এই নির্বাচন বর্জন করায় এবার ১৫৪টি আসনে ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না৷ এসব আসনে একজন করে প্রার্থী রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করার ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
‘মানুষ আরো সংকটে পড়বে'
বিরোধী দলের ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা' কর্মসূচি ঘোষণার পর শুক্রবার থেকেই তা প্রতিহত করার কাজ শুরু হয়৷ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়৷ এখনো বিচ্ছিন্নই আছে৷ আর বিরোধী দলের একই কর্মসূচি আরো একদিন বাড়ানো হয়েছে৷ সঙ্গে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নতুন করে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে৷ সরকারের প্রতিহত কর্মসূচিও সমান তালে চলবে বলেই মনে হয়৷ তাহলে দেশের মানুষের কি হবে? এই প্রশ্নের জবাবে রাজনীতির বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশের মানুষ আরো সংকটে পড়বে৷ আপাতত এই অবস্থা থেকে দেশের মানুষ মুক্তি পাবেন না৷ কারণ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সরকার সমর্থকরা যখন প্রতিরোধে নামেন তখন পরিস্থিতি জটিল হওয়াই স্বাভাবিক৷''
তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী দলের অবরোধের পর সাধারণ মানুষ এখন সরকারের অবরোধের মুখে পড়েছেন৷ আর এই অবস্থা রাজনৈতিক সংঘাতকে আরো তুঙ্গে নিয়ে যাবে৷''
এই বিশেষজ্ঞের মতে, বিরোধী দলের আচরণ যদি সরকার করে তাহলে পরিস্থিতি জটিল করার দায় সরকারের ওপরই বর্তায়৷ কারণ সরকারের দায়িত্ব হল দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার ও বিরোধী দল কেউই গণতন্ত্রের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা দেখাচ্ছে না৷ দেশে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে৷ সরকারকে রাজনীতি রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে৷ আর বিরোধী দলইবা কেন ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে' যাবে৷ সরকার প্রতিরোধে নেমে লাভবান হয়নি৷ জনগণ এটা পছন্দ করেনা৷ আর বিরোধী দল আন্দোলনের নামে যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে তাও গ্রহণযোগ্য নয়৷''