‘বিএনপির আন্দোলন চাঙ্গা রাখার দায়িত্ব নিয়েছে মিডিয়া'
৪ মার্চ ২০১৫
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রেখেছে আদালত৷ বুধবার খালেদার অনুপস্থিতিতে প্রায় দুই ঘণ্টা শুনানি শেষে এই রায় দেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার৷
বিজ্ঞাপন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বুধবার আদালতে হাজির হবেন কিনা, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে কিনা তা নিয়ে দু'দিন ধরে আলোচনা চলছিল৷ তাই বুধবার সকাল থেকেই খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে গণমাধ্যমের কর্মীরা অবস্থান নিয়েছিলেন৷ এ ব্যাপারে শীর্ষ একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের একটি অংশ ফেসবুকে তুলে ধরেন শওগাত আলী সাগর৷ ঐ দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘খালেদার কার্যালয়ের ভেতরে নীরবতা থাকলেও কার্যালয়ের সামনে রয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিপুল সংখ্যক কর্মী৷ তাঁদের সক্রিয় উপস্থিতিতে এলাকাটি সরব৷'' সাগরের এই স্ট্যাটাসের নীচে মন্তব্য করেন সুনীতি বিশ্বাস৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘বিএনপির আন্দোলন তো চাঙ্গা রাখার দায়িত্ব এখন মিডিয়া নিয়েছে৷ ফেরারি সালাউদ্দিনের গোপন ফ্যাক্স বার্তা আগাম পৌঁছানোর রীতিমত প্রতিযোগিতা হচ্ছে...৷''
এদিকে, বুধবারের শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, খালেদা জিয়া নিরাপত্তা পেলে শুনানির পরবর্তী তারিখ ৫ এপ্রিলে আদালতে উপস্থিত হবেন৷ প্রথম আলো এ সংক্রান্ত খবর ফেসবুকে শেয়ার করলে সেখানে মন্তব্য করেন মোহাম্মদ মহিউদ্দীন মিন্টু৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ যদি আপনার ডাকা হরতাল, অবরোধের মধ্যে আসা যাওয়া করতে পারে – আপনি কেন পারবেন না৷'' ফারহান মাহমুদ লিখেছেন, ‘‘ম্যাডাম, বাসায় থেকে আর লাভ কী? বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলই আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে৷ আর আমরা ১৬ কোটি মানুষ এই কারাগারের কয়েদি৷''
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
বাংলাদেশে টানা অবরোধ ও হরতালের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা৷ ক্রেতার অভাবে বেচাকেনা প্রায় শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে৷ শুধু অর্থনীতি নয়, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় মুষড়ে পড়েছে পরিবহন ও শিক্ষা ব্যবস্থাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন
পুরনো ঢাকার বাবু বাজারে কাগজ বোঝাই একটি ট্রাকে জ্বলছে দুষ্কৃতিকারীদের দেয়া পেট্রোল বোমার আগুন৷ গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে চলছে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ৷ ডাকা হচ্ছে হরতালও৷ অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে আলোচিত পেট্রোল বোমা৷ শুধু পেট্রোল বোমার আগুনেই পুড়ে মরেছে কমপক্ষে ৬৫ জন সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশ প্রহরায় চলছে পরীক্ষা
ঢাকার মতিঝিল আইডিয়িাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পুলিশ প্রহরা৷ চলমান এ অবরোধ-হরতালে যাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তার মধ্যে শিক্ষার্থীরা অন্যতম৷ বর্তমানে সারা দেশে চলা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন তাই অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে৷ টানা অবরোধের মধ্যে ছুটির দিনগুলোতে চলছে পরীক্ষা৷ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূরপাল্লার বাস নেই বললেই চলে
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলির ডাকা অবরোধে বাংলাদেশের প্রধান সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিত্ত৷ দুপুর বেলায় তোলা এ ছবিতে মহাসড়কটি প্রায় যানবাহন শূন্য৷ কিন্তু সাধারণ সময়ে এ সড়কটি থাকে যানবাহনে ভরা৷ বাংলাদেশে চলমান অবরোধে দূর পাল্লার গাড়ি চলাচল কমে গেছে বহুলাংশে৷ একের পর এক পেট্রোল বোমার ঘটনায় ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাচ্ছেন না অনেক মালিকই৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিজিবি-র টহল পর্যাপ্ত নয়
অবরোধের মধ্যে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোয়, মানে ঢাকার বাইরে বিজিবি-র টহল থাকলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য৷ এছাড়া সম্প্রতি রাত ন’টার পরে বাস চলাচলে সকলকে নিরুৎসাহ করার কারণে বাস মালিকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকায় অস্বাভাবিক নয় যানজট
বাংলাদেশে চলমান এই অবরোধে ঢাকার ভেতরের সড়কের দৃশ্য অবশ্য আলাদা৷ যান চলাচল অন্যান্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলক কম হলেও, অনেক জায়গাতেই যানজট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসযাত্রীরা
ঢাকার ফার্মগেটে অফিস শেষে গাড়ির অপেক্ষায় বাড়িমুখী মানুষের ভিড়৷ টানা অবরোধে গণ পরিবহন ব্যবস্থা বেহাল হলেও, অর্থাৎ গাড়িঘোড়ার চলাচল কম থাকাতে দুর্ভোগ বেড়েছে অফিসমুখী ও অফিস ফেরত মানুষের৷ অফিসে যেতে বা অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে সাধারণ মানুষ তাই পড়ছেন দুর্ভোগে৷
ছবি: DW/M. Mamun
অবরোধে নদীপথের ভিন্ন চিত্র
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদীবন্দর ঢাকার সদরঘাটের চিত্র এটি৷ গত একমাসেরও বেশি সময়ের এই অবরোধে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য বড় কোনো সহিংসতা ঘটেনি নদীপথে৷ তাই নদীপথে যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিকই আছে৷ ঢাকা থেকে প্রধানত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
যাচ্ছে না দূরপাল্লার বাসগুলো
বিএনপি ও সমমনা দলের জোটসমূহের ডাকা হরতাল-অবরোধে ঢাকার অন্যতম প্রধান বাস স্টেশন গাবতলীর দৃশ্য এটি৷ বেশিরভাগ দূর পাল্লার রুটের বাসই এ স্টেশনে পার্ক করে রাখা৷ হরতাল-অবরোধে দূর পাল্লার বাস চলাচল অনেকাংশেই বন্ধ আছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. Mamun
খদ্দেরহীন এক রেস্তোরাঁ
ঢাকার গাবতলী বাস স্টেশনের খদ্দেরশূন্য মোহাম্মাদীয়া রেস্তোরাঁ৷ অবরোধের কারণে এ রেস্তোরাঁর লোকবল ১৬ জন থেকে ৮ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ বাকি যে আটজন আছেন তাঁদেরও নিয়মিত বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না মালিক৷ গাবতলী স্টেশন থেকে দূর পাল্লার বাস চলাচল কম থাকায় এ রেস্তোরাঁটি দিনের বেশিরভাগ সময় খালি থাকছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ
অবরোধ আর হরতালকারীদের প্রধান লক্ষ্য সড়কে চলাচলকারী বাস আর ট্রাক৷ বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতগুলো হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগেই যাত্রীবাহী বাস কিংবা ট্রাকে৷ এতে কমপক্ষে ৬০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে পোড়ায় ক্ষত শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছেন আরো শতাধিক সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
কমলাপুর রেল স্টেশনে অপেক্ষায় যাত্রীরা
অবরোধে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করলেও, সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ৷ বিভিন্ন সময়ে অবরোধকারীদের রেল লাইনের ‘ফিশপ্লেট’ খুলে ফেলার কারণে কয়েকটি ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনায় ট্রেনের গতি কমিয়ে চালাতে হচ্ছে৷ তাই বেশিরভাগ ট্রেনই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমপক্ষে তিন-চার ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন৷
ছবি: DW/M. Mamun
খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশা
টানা অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ফুটপাথের ভ্রাম্যমাণ দোকানদাররা৷ স্বল্প পুঁজির এ সব ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমে যাওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে অনেকেরই৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুঁজি ভেঙে চলছে যাঁর সংসার
ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকার ফুটপাথে কম্বলের ব্যবসা করেন গাজীরুল ইসলাম৷ দুপুরবেলা পর্যন্ত এ দিন তাঁর বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৭’শ টাকার একটি কম্বল৷ তাও তার কেনা দামের থেকে ৩০০ টাকা কম৷ লাভ তো দূরের কথা সংসার চালাতে এখন পুঁজি টুকুনিই ভরসা৷
ছবি: DW/M. Mamun
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রই যখন ভরসা
ঢাকার নবাবপুর থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ফিরছেন এক গাড়ি চালক ও তাঁর সহকারী৷ টানা অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমার ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতা হিসেবে নিজেদের গাড়িতে এখন থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখবেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
14 ছবি1 | 14
চলমান সংকটের কারণে অন্য অনেক কিছুর পাশাপাশি ‘সত্য'-ও আক্রান্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন আব্দুর রহমান মিল্টন৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে তিনি লিখেছেন, ‘‘বিখ্যাত একটি কথা আছে – ‘ট্রুথ ইজ দ্য ফার্স্ট ক্যাজুয়ালটি অফ ওয়ার', অর্থাৎ যুদ্ধে প্রথম যা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হচ্ছে ‘সত্য'৷ অর্থাৎ যুদ্ধের সময় যত মিথ্যা কথা বলা হয় তা অন্য যে-কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি৷ এটাকে বলে মনস্তাত্বিক যুদ্ধ৷ বর্তমানে বাংলাদেশে গভীর রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করলেও যুদ্ধাবস্থা নিশ্চয়ই বিরাজ করছে না৷ তবে দুই বিবদমান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে এক ধরনের ‘রাজনৈতিক যুদ্ধ' চলছে – যা আবার সহিংস রূপ ধারণ করেছে৷ একদিকে পেট্রোল বোমা, অপরদিকে ক্রসফায়ার৷ এই ‘যুদ্ধে'ও বলি হচ্ছে ‘সত্য' বা ‘ট্রুথ'৷ দুই পক্ষই চরম মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে৷''