আন্দোলন হলেই মারমুখী পুলিশ!
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১সোমবার বাংলাদেশে জাতীয় প্রেসকাবের সামনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ৷ এই কর্মসূচির জন্য ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দুপুরে জমায়েত শুরুর আগেই পুলিশ লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুন খানসহ অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী এতে আহত হয়েছেন৷ পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে৷
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই সরকারের তো কোন জনসমর্থন নেই৷ মাফিয়া সরকার সবকিছুই দমন করতে চায়৷ এই কারণে সব আন্দোলনকেই তারা ভয় পাচ্ছে৷ এখন কারাগারে ১০ মাস ধরে বন্দি মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর দায় সরকারকে নিতে হবে৷ তাকে জামিন দেওয়া হয়নি৷ এখন এটার প্রতিবাদ করতে গেলেই বাধা দেওয়া হচ্ছে৷”
এর আগে শুক্রবার শাহবাগে বিক্ষোভের সময় লাঠিপেটার পর গ্রেপ্তার সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে শাহবাগ থানার পুলিশ৷ তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজহারে বলা হয়েছে, "আসামিরা বেআইনি জনতাবদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠিসোটা, ইটপাটকেলসহ পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা প্রদান করত হত্যার উদ্দেশে আক্রমণ করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে৷ মিছিলকারীরা মশাল দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে৷’’
অবশ্য বিভিন্ন দেশি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে আন্দোলনকারীদেরকেই লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে পুলিশকে৷
সরকারের এই ধরনের অবস্থানে গণতন্ত্রের চর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে তা অবশ্য নাকচ করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ৷ তারা মনে করে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে নিয়ে ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করছে৷ দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন যেভাবে দেশে মত প্রকাশের সুযোগ আছে, আগে সেটা কখনই ছিল না৷ ৩৪টি টিভি চ্যানেলে যে যার ইচ্ছে মতো বলছে৷ এখন যেগুলো ইস্যু না, সেগুলোকে কেউ ইস্যু বানাতে চেষ্টা করলে তাদের তো আটকাতেই হবে৷ জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ৷ কারাগারে লেখক মুশতাক মারা গেছেন, এটা দুঃখজনক৷ এখন কেউ কেউ এটাকে ইস্যু বানাতে চেষ্টা করছে৷ এটার তো তদন্ত হলে বোঝা যাবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে৷ এর আগেও কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে৷ এখন যারা আন্দোলন করছে, তখন কী তারা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন?”
অবশ্য আন্দোলনে বাধা দেয়ার বিষয়টি হঠাৎ করে নয়৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বিরোধী আন্দোলন বা প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনকেই পুলিশের বাধায় পড়তে হয়েছে৷ কেন সব আন্দোলনেই বাঁধা দিচ্ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী? জানতে চাইলে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সর্বশেষ দু'টি নির্বাচনে তো জনমতের প্রতিফলন হয়নি, তাই সরকার হয়ত ভয় পাচ্ছে৷ আমার মনে হয় এর দু'টি কারণ৷ প্রথমত, সরকার মনে করছে, এই ছোট আন্দোলনগুলো যে কোন সময় বড় আন্দোলনে রূপ নিতে পারে৷ তাই বিচ্ছিন্ন এই আন্দোলনগুলোও চলতে দিচ্ছে না৷ জনমত না থাকায় তাদের তো একটা ভয় আছে৷ আর দ্বিতীয়ত, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগেই সব করছে সরকারকে খুশি করতে৷ তারা মনে করছে, এগুলো করে সরকারকে খুশি করতে পারলে তাদের উন্নতি হবে৷ ব্যক্তিগত উন্নতির আশায় তারা এটা করছে৷”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক মনে করে সরকার যে বিরোধীদের মত প্রকাশ করতে দেবে না, আন্দোলন করতে দেবে না সেখানে কোন রাখঢাকের ব্যাপার নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা তো সোজা সাপ্টা৷ এটা তো আওয়ামী লীগ পরিস্কার করে দিয়েছে৷ এখন বিরোধীরা কী করছে? তারা কি এমন কোন দাবি দাওয়া নিয়ে সামনে এসেছে, যেটা জনগনের দাবি? তাহলে তাদের আন্দোলনে জনগন কেন সম্পৃক্ত হবে? ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ ৬ দফা দিয়েছিল৷ সেটা দেখে মানুষ আকৃষ্ট হয়েছিল৷ ফলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়৷ জিয়াউর রহমানেরও ১৯ দফার প্রতি মানুষের সমর্থন ছিল৷ এখন বিএনপির এমন কোন দাবির কথা আপনি বলতে পারবেন, যেটার প্রতি মানুষের সমর্থন আছে৷ আসলে ভার্চুয়ালি আন্দোলন হয় না, রাজপথে আন্দোলন করতে হয়৷ তাহলেই জনগন সম্পৃক্ত হবে৷”
এদিকে সম্প্রতি বিএনপি ৭ই মার্চ পালনের ঘোষণাও নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়৷ সরকারকে তুষ্ট করে রাজনীতি করতেই এমন পরিকল্পনা কীনা সে প্রশ্নের উত্তরে ইমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘কাউকে তুষ্ট করে নয় বরং স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস মানুষ জানাতে চায় বিএনপি৷ এখন ৭ই মার্চ আওয়ামী লীগের কাছে এক রকম, বিএনপির কাছে আরেক রকম৷ আমরা আমাদের মতো করে ঐতিহাসিক দিনগুলো পালন করব৷”