আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সহকারী হিসেবে এতকাল শুধু স্মার্টফোনের রমরমা ছিল৷ এখন এসে পড়েছে আলাদা ভয়েস অ্যাসিস্টেন্ট৷ তবে সেই খিদমতগারের আবার কান পেতে সব কথা শোনার বদ অভ্যাস আছে৷ অতএব সাবধান৷
বিজ্ঞাপন
কখনো সময় মনে করিয়ে দেবার নির্দেশ, কখনো টিভি চালানোর নির্দেশ – রোব্যার্টো মানসানো এমন হাঁকডাক দিয়েই নিজের সংসার চালান৷ হুকুম পালন করে ছোট্ট এক যন্ত্র৷ ‘হে গুগুল' বললেই ইচ্ছাপূরণ করতে প্রস্তুত সেটি৷ তিনি বলেন, ‘‘দৈনন্দিন জীবনের কিছু কাজ সহজ করতেই আমি এটা ব্যবহার করি৷ রেডিও চালানো, গান শোনা, টেলিফোন এলে গান থামানো – অথবা বাড়ি থেকে বেরোলে সব আলো নেভানোর কাজে৷''
অনেক মানুষ ‘গুগল হোম' বা ‘অ্যামাজন একো'-র মতো ডিজিটাল সহকারী কিনছেন৷ বিশেষ ‘কোড' দিয়ে চালু করা যায় এমন যন্ত্র৷ তারপর ক্লাউড কম্পিউটিং-এর মাধ্যমে প্রশ্ন বা নির্দেশ বিশ্লেষণ করে মোলায়েম নারীকণ্ঠ জবাব দেয়৷
ডিজিটাল সহকারী যখন আড়ি পেতে শোনে
04:04
কিন্তু সংগৃহীত তথ্য নিয়ে কী করা হয়? জার্মানির তথ্য প্রযুক্তি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ‘এভি টেস্ট' অ্যামাজন ভয়েস অ্যাসিস্টেন্ট ভালো করে পরীক্ষা করেছে৷ হ্যাকারদের হামলা থেকে সুরক্ষাররক্ষাকবচ আছে বলেই মনে হচ্ছে৷ কিন্তু তথ্য সংরক্ষণের প্রশ্নে বিশেষজ্ঞদের মনে সংশয় রয়েছে৷ আইটি নিরাপত্তা পরীক্ষক মাইক মর্গেনস্ট্যার্ন বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে আমরা ঠিক জানি না, আসলে কী হচ্ছে৷ কোন তথ্য অ্যামাজন-এর কাছে যাচ্ছে, সেগুলি কীভাবে বিশ্লেষণ করা ও জমা রাখা হচ্ছে, কে জানে?''
আইটি পরীক্ষকরা জানতে পেরেছেন, যে যন্ত্রের মাইক্রোফোন মিউট করে রাখলেও তথ্য পাঠানো বন্ধ হয় না৷ ইন্টারনেট কোম্পানিগুলি যে তথ্য সংরক্ষণ করে, তা নতুন বিষয় না৷ কিন্তু ভয়েস অ্যাসিস্টেন্ট যন্ত্রের রেকর্ডিং ব্যবহারকারীর অনেক ব্যক্তিগত বিষয় ফাঁস করে দিতে পারে৷ এক বিশেষজ্ঞ বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন৷ তথ্য সংরক্ষণ গবেষক মাক্সিমিলিয়ান ফন গ্রাফেনস্টাইন বলেন, ‘‘কণ্ঠের সুর শুনে সেই মুহূর্তে কোনো ব্যক্তির মানসিক অবস্থা ও আবেগ বোঝা যায়৷ আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো, সংগৃহিত তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত আচরণও বোঝা যায়, যেমন কোন সময় সাধারণত আমি বাড়ি ফিরি৷''
এমভিসি ২০১৭: অতীতবিলাস, ব্যবসাবুদ্ধি
বার্সেলোনায় বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন প্রদর্শনী শুরু হয়েছে৷ সব স্মার্টফোন নির্মাতাই ক্রমবর্ধমান চাহিদায় ভাগ বসাতে চান, এমনকি তার জন্য যদি অতীতের সব নামকরা মডেল ফিরিয়ে আনতে হয়, তাও সই৷
ছবি: Reuters/P. Hanna
ব্যাক টু দ্য ফিউচার?
দুনিয়া জুড়ে যে অতীতবিলাস চলেছে, ফিনল্যান্ডের এইচএমডি গ্লোবাল তার সুযোগ নিয়ে নোকিয়া ৩৩১০ মোবাইল ফোনটিকে আবার বাজারে আনছে৷ ‘স্নেক’ নামের গেমটিও এই মডেলে ইনস্টল করা আছে৷ নোকিয়া ৩৩১০-এর ব্যাটারি চলে নাকি একটানা ব্যবহার করলে ২২ ঘণ্টা আর স্ট্যান্ড-বাই-তে রেখে দিলে এক মাস (!)৷ এইচএমডি গ্লোবাল এখন নোকিয়া নাম দিয়ে স্মার্টফোন তৈরি করার লাইসেন্সের অধিকারী৷
ছবি: picture alliance/M. Landi/PA Wire
খদ্দের অগুনতি
এইচএমডি গ্লোবাল নোকিয়া নাম দিয়ে তিনটি মাঝারি দামের মডেল বাজারে আনবে৷ এককালের বিশ্বসেরা আবার মাঠে নামবে৷ নোকিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া যাবৎ বিশ্বে স্মার্টফোনের চাহিদা ভালোমতোই বেড়েছে৷ ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে ১৫০ কোটি স্মার্টফোন বিক্রি হয়৷ এক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে অ্যাপল, তারপরেই আসছে স্যামসাং৷
ছবি: Reuters/P. Hanna
কিবোর্ড ছাড়া যদি না চলে...
মোবাইল ফোনের পথিকৃৎ ব্ল্যাকবেরি-ও অতীতমুখি: তাদের কি-ওয়ান স্মার্টফোনের একটি পুরোদস্তুর কিবোর্ড আছে৷ এই প্রথমবার ব্ল্যাকবেরি তাদের একটি স্মার্টফোন তৈরির দায়িত্ব পুরোপুরি চীনের টিএলসি বা আলকাটেল কোম্পানির হাতে দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Fernandez
বাড়াবাড়ি নয়
স্যামসাং সাধারণত এমডাব্লিউসি প্রদর্শনীতে তাদের গ্যালাক্সি স্মার্টফোনের সর্বাধুনিক সংস্করণ পেশ করে থাকে৷ কিন্তু নোট-সেভেন বিপর্যয়ের পর স্যামসাং এবার শুধু কিছু নতুন ট্যাবলেট পরিবেশন করছে, যেমন গ্যালাক্সি ট্যাব এসথ্রি৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/K. Willens
ট্যাবলেটের চেয়ে বেশি
‘গ্যালাক্সি বুক’ হলো একটি তথাকথিত ‘কনভার্টিবল’ – একটি ট্যাবলেট, যা বাইরের কিবোর্ড লাগালে নোটবুকের মতো কাজ করে৷ ওদিকে গ্যালাক্সি এসএইট নাকি আগামী এপ্রিলে প্রথম বাজারে আসবে৷
ছবি: Reuters/A. Gea
প্রতিযোগীর অভাব নেই
চীনের হুয়াওয়াই সংস্থা স্মার্টফোন বিক্রিতে স্যামসাং-কে দ্বিতীয় স্থান থেকে বিচ্যুত করতে চায়৷ হুয়াওয়াই-এর আশা হলো পি-টেন ও পি-টেন প্লাস, এই দু’টি মডেল – উচ্চমানের উৎপাদন আর লাইকা-র সঙ্গে সহযোগিতায় নির্মিত বিল্ট-ইন ক্যামেরা যাদের বৈশিষ্ট্য৷ মোবাইল ফোনটি আরো তাড়াতাড়ি চার্জ হয় এবং প্রায় দু’দিন ধরে ব্যাটারিতে চার্জ থাকে৷
ছবি: Reuters/P. Hanna
ঘড়ি দিয়ে টেলিফোন
হুয়াওয়াই-এর স্মার্টওয়াচ ক্ল্যাসিক এবং ওয়াচ টু-তে চার গিগাবাইট স্টোরেজ ক্যাপাসিটি আছে৷ গুগল অ্যানড্রয়েড পে-র মাধ্যমে এই ওয়াচ থেকে মোবাইল পেমেন্টও করা যায়৷ অপেক্ষাকৃত দামি ওয়াচ টু-তে নাকি একটি নানো সিমকার্ডের মাধ্যমে স্মার্টফোন ছাড়াই টেলিফোন করা সম্ভব৷
ছবি: Reuters/P. Hanna
আরো বড়...
দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি সংস্থা একটি নতুন ১৮ বাই ৯ ফরম্যাট নিয়ে বাজারে আসছে৷ তাদের জি-সিক্স ফোনটি হাতে ধরে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ফোনটায় একটা বড় স্ক্রিন আছে৷ গতবছরটা এলজি-র লোকসানে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Jesdanun
ভবিষ্যতের বাজার হবে ফাইভ-জি?
বার্সেলোনার স্মার্টফোন প্রদর্শনীতে মোবাইল ফোনের ফাইভ-জি মান নিয়ে সবাই খুব উৎসাহিত৷ সেটা নাকি হবে এক সুপারস্পিড ডাটা নেটওয়ার্ক৷ সোনি-র নতুন এক্সপেরিয়া এক্সজেড আগামীর এই নেটওয়ার্কের জন্য প্রস্তুত৷ তবে এই নতুন ফাইভ-জি স্ট্যানডার্ড সর্বত্র চালু হতে বহু বছর লেগে যাবে৷
ছবি: Getty Images/D. Ramos
9 ছবি1 | 9
শিশুরা এমন যন্ত্র ব্যবহার করলে বিষয়টি অন্য মাত্রা পায়৷ যেমন এক ব্রিটিশ পুতুলের নাম কায়লা, যা একইভাবে কাজ করে৷ ভয়েস অ্যাসিস্টেন্ট-এর বিক্রি কম হচ্ছে না৷ জার্মানিও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়৷ কিন্তু যখন জানা গেল, যে কথোপকথন আড়ি পেতে শোনা যায়, তখন সবার টনক নড়লো৷ জার্মানির যে কর্তৃপক্ষ আড়িপাতার মোকাবিলা করে, তাদের হস্তক্ষেপে পুতুলটিকে বাজার থেকে বিদায় নিতে হয়েছে৷
তা সত্ত্বেও ভয়েস অ্যাসিস্টেন্ট-এর আকর্ষণ বেড়েই চলেছে৷ কিন্তু ব্যবহারকারী কীভাবে নিজস্ব তথ্য সংরক্ষণ করবেন? মাক্সিমিলিয়ান ফন গ্রাফেনস্টাইন বলেন, ‘‘সবার আগে আমি গোপনীয়তা সংক্রান্ত নীতি পড়ে দেখার পরামর্শ দেবো৷ তখন সে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারবে, যেমন যন্ত্রটি সবসময় চালু না রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ তাছাড়া অতিথি এলে তাদের বলতে পারবে, আমরা যা কথা বলছি, তা কিন্তু এই যন্ত্র রেকর্ড করছে৷''
রোব্যার্টো মানসানো-ও এমন কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন৷ তিনি নিয়মিত গুগল-এর সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে ঢুকে নিজের কার্যকলাপের চিহ্ন মুছে দেন৷ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন তিনি৷ রোব্যার্টো বলেন, ‘‘যখন মনে করি, এই যন্ত্রের এখন কান পেতে শোনার কোনো প্রয়োজন নেই, মাইক্রোফোন বন্ধ করার সুযোগ সত্ত্বেও আমি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেই৷''
যারা গুগল হোম অথবা অন্য কোম্পানির সহকারীর প্রেমে পড়েছেন, তাঁদেরও সতর্ক থাকা উচিত, যাতে তথ্যের অপব্যবহারের সম্ভাবনা না থাকে৷
ডিজিটাল ডায়েটিং কী, কেন করবেন ?
মোবাইলটি হাত থেকে রাখলেই যেন অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে – এমন আতঙ্ক আজকাল অনেকের মধ্যেই কাজ করে৷ এই ‘ডিজিটাল রোগ’ থেকে সহজে বের হওয়ার উপায় জানিয়েছেন জার্মান প্রযুক্তিবিদ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
ঘাড়ে ব্যথা
সর্বশেষ খবর, ই-মেল কিংবা স্যোশাল মিডিয়ায় যোগাযোগ রাখার জন্য অনেকেই দিনের কয়েকটা ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন মোবাইল বা স্মার্টফোনে৷ নীচের দিকে তাকিয়ে এত দীর্ঘ সময় কথা বলার কারণে ঘাড়ে চাপ পরে এবং ব্যথা হয়, যা প্রথমদিকে সেভাবে বোঝা না গেলেও ধীরে ধীরে জটিল হয়ে স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷
ছবি: Goméz Verdi, Franz, Meurice
মনোযোগ এবং উৎপাদনশীলতা কমে যায়
যে ব্যক্তি দিনে দুই ঘণ্টা বা তার বেশি সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করে তার অন্যদিকে মনোযোগ এবং ‘প্রোডাক্টিভিটি’ কমে যায়৷ শুধু তাই নয়, কোনো এক সময় এ অবস্থা থেকে ‘বার্নআউট’-ও শুরু হতে পারে৷ অনেকে ছুটিতে গেলেও মোবাইল ও ল্যাপটপ হাতছাড়া করতে চাননা, উত্তর দিয়ে থাকেন অ-দরকারি ই-মেলেরও৷ যদি তাই হয় তাহলে আর টাকা খরচ করে ছুটিতে না গিয়ে বাড়িতে থাকাই শ্রেয়৷ এমনটাই জানান বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?
যে কোনো ডায়েটিংয়ের মতো ডিজিটাল ডায়েটও খুব কঠিন৷ বিশেষ করে এই নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই নিজের ওপর নির্ভর করে৷ নিজেকেই ঠিক করতে হবে, কোন ই-মেল বা মেসেজের উত্তর আপনি দিতে চান আর কোনটা চান না৷ ঠিক যেমন, ওজন কমাতে চাইলে কিছু খাবার থেকে নিজেকে দূরে থাকতে হয়, সেরকম ‘ডিজিটাল ডায়েটের’ ক্ষেত্রেও মোবাইলের মতো কিছু জিনিস বাদ দিতে হয়৷
ছবি: Imago/R. Kurzendörfer
দিনে ৫৩ বার!
মোবাইল অ্যাপের জন্য ৬০ হাজার মোবাইল ব্যবহারকারী নিয়ে বন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে মোবাইল ব্যবহারকারীরা গড়ে প্রতি ১৮মিনিট অন্তর দিনে ৫৩ বার স্মার্টফোন ব্যবহার করেন৷
ছবি: picture alliance/Denkou Images
সবাইকে জানিয়ে দিন
জার্মান প্রযুক্তিবিদ আলেকজান্ডার মার্কোভিৎস জানান, ‘‘যারা সত্যিই ডিজিটাল ডায়েটিং করতে চান তারা সপ্তাহে একদিন মোবাইলটি বাড়িতে রেখে যান৷ আর হ্যাঁ, সে কথা আগে থেকেই বন্ধু আর পরিচিতদের জানিয়ে দিন, যাতে কিছু হারাবার কোনো ভয় বা আতঙ্ক না থাকে৷’’