বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তি কোম্পানি আইবিএম (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন) তাদের বাৎসরিক ‘আইবিএম নেক্সট ৫' তালিকাটি প্রকাশ করেছে৷ এই তালিকার মধ্যে আছে ‘ক্লাসরুমস অফ দ্য ফিউচার' ও রোগীদের সেবা দিতে চিকিৎসকদের ডিএনএন ব্যবহার৷
বিজ্ঞাপন
প্রতি বছরই প্রযুক্তিক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবে পরিণত হবে এমন কিছু প্রযুক্তি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকে আইবিএম৷ আইবিএম জানিয়েছে, এবার তারা এমন কিছু প্রযুক্তির কথা বলছে, আগামী পাঁচ বছরে যা মানুষের জীবন বদলে দেবে৷ এমন একটি যুগের সূচনা করবে, যার ফলে যন্ত্রপাতি কোনো কিছু করার ক্ষেত্রে কারণ এবং ফল সম্পর্কে ভাববে৷ অর্থাৎ তাদের মধ্যে বোধ তৈরি করা হবে৷ আইবিএম জানিয়েছে, মানুষের মস্তিষ্ক যেমন কাজ করে সফটওয়ারও যদি সেভাবে কাজ করে তবে কি পরিবর্তন হবে তা ধারণা করাই যায়৷
প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীর নাম দিয়েছে ‘ক্লাসরুমস অফ দ্য ফিউচার'৷ যে শ্রেণিকক্ষটি এমন সব সিস্টেমে পরিপূর্ণ থাকবে, যার কাজ হবে শিক্ষার্থীদের তথ্য অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণ করা৷ সেইসাথে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর যোগ্যতা অনুযায়ী তার উপযোগী করে পাঠ্যসূচি তৈরি করা এবং শিক্ষা উপকরণ তৈরি করতে শিক্ষকদের সাহায্য করা৷ আইবিএম ভাইস চেয়ারম্যান বার্নি মেয়ারসন এএফপিকে জানান, ‘‘আসলে এই ক্লাসরুমই আপনাকে শিক্ষা দেবে৷''
এছাড়া রিটেল শপ বা খুচরা দোকানে অনলাইন ও সরাসরি বিক্রির মধ্যে সংযোগ ঘটানোর নতুন সিস্টেম উদ্ভাবনের কথাও ভাবছেন তারা৷
সব দেশেই শিক্ষার ধরণ আলাদা
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই শিক্ষকরা চক দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে লেখেন – এ দৃশ্য তাই সবারই জানা৷ কিন্তু তারপরও দেশ ভেদে এর পার্থক্য রয়েছে, বিশেষকরে আজকের এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে৷
ছবি: Getty Images
সব স্কুল কি এক রকম?
সারা বিশ্বের ছাত্ররা একইভাবে পড়ালেখা শেখে? না, তবে প্রায় সব দেশেই শিক্ষকরা চক দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে লেখেন – এ দৃশ্য তাই সবারই জানা৷ কিন্তু তারপরও দেশ ভেদে এর পার্থক্য রয়েছে৷ কোনো দেশে ছাত্র-ছাত্রীরা খোলা আকাশের নীচে মাটিতে পা মুড়ে বসে লেখাপড়া করে, কোথাও আবার স্কুল বেঞ্চে বসে৷ আবার কোনো কোনো দেশের ছাত্রদের রয়েছে নিজস্ব ল্যাপটপ৷
ছবি: AP
ডিজিটাল স্কুলের বই
দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ডিজিটাল সিস্টেমে চলে৷ প্রতিটি ক্লাস রুমেই রয়েছে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট৷ সরকারের ইচ্ছে সব স্কুল বই পুরোপুরিই ই-বুকে রূপান্তরিত করার৷ ডিজিটাল সিস্টেমে লেখাপড়া করতে কোনো ছেলে-মেয়ের যেন অসুবিধা না হয় এবং ডিজিটাল বইয়ের অভাবে যেন কারো লেখাপড়া বন্ধ না হয়, সেজন্য সরকার বিনা মূল্যে তাদের ট্যাবলেট এবং কম্পিউটার দিয়ে থাকে৷
ছবি: AP
গ্রামের স্কুলে যাওয়ার অসুবিধা
অন্যভাবেও পড়াশোনা চলতে পারে৷ কোনোরকমে ঝুলানো একটি ব্ল্যাকবোর্ড এবং কয়েকটি কাঠের বেঞ্চই আফ্রিকার ঘানার এই স্কুলটির জন্য যথেষ্ট৷ এই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে লেখা পড়া করা যায়, যদিও কাগজে কলমে রয়েছে ক্লাস নাইন পর্যন্ত লেখপড়া বাধ্যতামূলক৷ পড়াশোনার মাধ্যম ইংরেজি হওয়ায় গ্রামের ছাত্রদের অনেকেরই লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন হয়৷
ছবি: Fotolia/Living Legend
টাচপ্যাডের মাধ্যমে লেখা শেখা
তবে জার্মানির এই স্কুলটি ব্যতিক্রম৷ কাগজ, পেন্সিল ছাড়া ছাত্ররা পুরোপুরি স্মার্টবোর্ড এবং নেটবুকের মাধ্যমে লেখা শেখে৷ ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং-এর ছাত্রদের যোগাযোগের কাজে সাহায্য করে এবং কর্মদক্ষতা বাড়ায়৷ জার্মানিতে এখনো দুই মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ লিখতে পড়তে পারেন না, যদিও পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে জার্মানির সবাই লেখাপড়া জানেন৷
ছবি: AP
শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ছোটবেলা থেকেই সুবিধা
শিল্পোন্নত দেশ মানেই সে দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের অন্যদেশের চেয়ে লেখাপড়ায় অনেক বেশি এগিয়ে থাকা৷ এমনকি ছোট বাচ্চাদেরও সেভাবেই তৈরি করা হয়, যেমন অ্যামেরিকার এই স্কুলটিতে৷ শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ছোটবেলার শিক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং ৭০ শতাংশ বাচ্চাই প্রাইমারি স্কুলে যাওয়ার আগে অনেককিছু শিখে ফেলে৷ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ১০ জনের মধ্যে হয়ত তিনজন কিন্ডারগার্টেনে যাওয়ার সুযোগ পায়৷
ছবি: AP
যেখানে শিক্ষা অর্থের জন্য বাঁধাগ্রস্থ
কেনিয়াতে সব ছাত্রই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়তে পারে৷ তারপরও অনেকে তার আগেই স্কুল ছেড়ে দেয়৷ স্কুল ড্রেস, বই, খাতা, জুতো ইত্যাদি জোগাড় করা অনেক বাবা মায়ের জন্য কষ্টকর হয় দাঁড়ায়৷ সেখানে ছাত্রের সংখ্যা অনেক বেশি এবং পড়াশোনার মানও নিম্ন৷ যাঁদের সামর্থ রয়েছে সে রকম অনেক বাবা-মা তাঁদের বাচ্চাদের প্রাইভেট স্কুলে পাঠান৷
ছবি: DW/J.Bruck
স্কুল ড্রেস পরে লেখাপড়া
ইংল্যান্ডে স্কুল ড্রেস ছাড়া কেউ স্কুলে যায় না৷ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য স্কুল ড্রেস পরা বাধ্যতামূলক৷ কারণ স্কুল ড্রেস যার যার স্কুলের পরিচয় বহন করে এবং পড়াশোনার প্রতি উৎসাহী করে৷ দরিদ্র পরিবাররের ছেলে-মেয়েরা স্কুল ড্রেসের জন্য স্কুল থেকে টাকা পেয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
খোলা আকাশের নীচে ক্লাসরুম
একটি পাবলিক পার্কে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে পাকিস্তানের একটি স্কুলে৷ গরিব বাবা-মায়েরা পয়সার অভাবে এমন স্কুলেই তাঁদের সন্তানদের পাঠিয়ে থাকেন৷ পাকিস্তানে শিক্ষা খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে, কারণ সরকার শিক্ষার চেয়ে সামরিক খাতে বেশি খরচ করে৷ যা ছাত্ররাও বুঝতে পারছে৷
ছবি: AP
কমপক্ষে মৌলিক শিক্ষা থাকতে হবে
আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ ও নানা সমস্যার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত৷ বিশেষকরে মেয়েদের ক্ষেত্রে একথাটি বেশি প্রযোজ্য৷ প্রতি দশজনের একজন লিখতে পড়তে পারে সেখানে৷ তবে এ হার পুরুষদের ক্ষেত্রে শতকরা ৪০ জন৷ তাছাড়া স্কুলগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট স্কুলও নেই, অভাব রয়েছে শিক্ষক এবং শিক্ষার সরঞ্জামেরও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত
আফগানিস্তানের মতো প্রায় একই অবস্থা দক্ষিণ সুদানেও৷ এদেশেও মেয়েদের প্রতি পাঁচজনের একজন লিখতে ও পড়তে পারে৷ সেজন্যই বিদেশি সাহায্য সংস্থাগুলো সুদানের মেয়েদের শিক্ষার দিকে বিশেষ নজর দিয়ে থাকে৷ বহু বছরের গৃহযুদ্ধ সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ঘুণ ধরিয়ে দিয়েছে৷ অনেক স্কুলেই বই-খাতা এবং টেবিল-বেঞ্চও ঠিকমতো নেই৷
ছবি: dapd
কো-এডুকেশন পছন্দ নয়
কো-এডুকেশন? না, ইরানে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ ছেলে এবং মেয়ে আলাদাভাবে পড়াশোনা করে ইরানে৷ এমন কি এই ইহুদি স্কুলেও ইসলামিক স্কুল ড্রেস পরা বাধ্যতামূলক৷ এখানে মেয়েরা যে ধর্মেরই হোক না কেন সবাইকেই চুল ঢেকে রাখতে হবে, অর্থাৎ হিজাব পরতে হবে৷
ছবি: AP
ধনী-গরিবের পার্থক্য
ব্রাজিলের গ্রামাঞ্চলের ছাত্রদের জন্য লেখাপড়া করা বেশ কঠিন৷ কারণ সেখানকার স্কুলগুলোতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই৷ যেমন মন্টে আলেগ্রের এই স্কুলটির মতো ৷ যদিও ব্রাজিল শিল্পোন্নত দেশগুলোর একটি, তারপরও এদেশে গরিব এবং ধনীদের মধ্যে অনেক পার্থক্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশের অবস্থা অনেকটা একই রকম
বাংলাদেশের গ্রামের স্কুল এবং রাজধানী ঢাকা শহরের স্কুলের মধ্যে বিশাল পার্থক্য৷ বড় শহরগুলোতে ছাত্ররা কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে৷ আর গ্রামের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কম্পিউটার ব্যবহার করার ইচ্ছা – এখনো স্বপ্ন!
ছবি: Getty Images
13 ছবি1 | 13
তৃতীয়ত, রোগীর ডিএনএ ব্যবহার করে তার উপযোগী চিকিৎসা করা৷ মেয়ারসন আরো জানান, ডিএনএ'র গঠন দেখে চিকিৎসকরা ঠিক করতে পারবেন আপনার রোগের জন্য ঠিক কোন ধরনের চিকিৎসা দরকার৷
এমনকি স্মার্ট মেশিনগুলো হতে পারে আপনার ‘ডিজিটাল অভিভাবক'৷ অর্থাৎ অনলাইনে আপনার তথ্য হ্যাকিং থেকে প্রতিরোধ করবে আপনাকে৷ যেমন ডিজিটাল গার্ডিয়ান জানে আপনি পোকার সাইট এর প্রতি আগ্রহী নন৷ ফলে আপনার অ্যাকাউন্টে এমন কোনো তথ্য সরবরাহ থেকে বিরত রাখবে সে৷ এমনকি আপনি যে এটা পছন্দ করছেন না সেই তথ্য ঐ সাইটের কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিবে৷
শেষ ভবিষ্যদ্বাণী হলো, প্রতিটি শহর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, স্মার্টফোন, সেন্সরস-এর মধ্যে যোগাযোগ সাধন করবে অর্থাৎ শহরের অধিবাসীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সহায়তা ব্যবস্থাপনার কাজ করবে৷ যার অর্থ শহর আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে৷ মেয়ারসন জানান, প্রযুক্তির সাথে খুব পরিচিত এবং এর সঠিক ব্যবহার করতে পারে – নতুন প্রজন্মের এমন নেতারা এই ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেবে৷