না, ভাববেন না আপনার ব্যক্তিগত সব বিষয়াদি বুঝি ফাঁস করে দিল ফেসবুক৷ সেসব বিষয় এখনো গোপনই আছে৷ তবে ব্রাজিলের ফুটবল ভক্তরা কিভাবে রাতারাতি দল বদল করেছে সেটা প্রকাশ করেছে ফেসবুক৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারে ব্রাজিল৷ এমন জয় আসলে কোন পক্ষেরই প্রত্যাশায় ছিল না৷ অনেকে ফেসবুকে হয়ত মজা করে লিখেছিলেন, ‘আজ এক হালি গোল দেবে জার্মানি৷' কিন্তু দেখা গেলো সেই মজা করা প্রত্যাশাও টপকে গেল জার্মানি৷ আর এমন হারের পর অনেকেই ব্রাজিলের সঙ্গ ত্যাগ করেছেন৷ তাহলে গেছেন কোথায়?
ফেসবুকের ডাটা সায়েন্স টিম এই বিষয়ে গবেষণা করেছে৷ তাদের দেয়া হিসেব অনুযায়ী, সেমিফাইনালের পর ব্রাজিলের ৭১ শতাংশ সমর্থক জার্মানিকে সমর্থন দিতে শুরু করেছে৷ বাকি একুশ শতাংশ গিয়েছে আর্জেন্টিনার দিকে৷ এই হিসেবে অবশ্য বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই৷ কেননা আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের ফুটবল ভক্তদের মধ্যকার বৈরি সম্পর্কের কথা বাঙালি মাত্রই জানেন৷
সেভেন আপ, ওয়ান ডাউন
ব্রাজিল বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে বিশ্ব দেখল এক নির্মম পরাজয়৷ স্বাগতিক ব্রাজিলকে জার্মানি হারালো ৭-১ গোলে৷ ছবিঘরে থাকছে এই ম্যাচের দুর্দান্ত কিছু ছবি৷
ব্রাজিলের জালে প্রথম গোলটি ম্যুলারের৷ জার্মানির প্রথম কর্নারকেই গোলে পরিণত করেন তিনি৷ ১১ মিনিটে ডানদিক থেকে ক্রোসের কর্নার সোজা ম্যুলারের পায়ে এসে পড়ে৷ এক মুহূর্ত দেরি না করে এই ফরোয়ার্ড বল জালে জড়ান৷ এই বিশ্বকাপে ম্যুলারের এটি পঞ্চম গোল৷ গত বিশ্বকাপেও পাঁচটি গোল করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters
দ্বিতীয় গোল
২৩ মিনিটে ক্লোজের রেকর্ড গড়া গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে জার্মানি৷ ডি বক্সের ভেতর থেকে ক্লোজের প্রথম চেষ্টাটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক৷ কিন্তু ফিরতি শট আর ফেরাতে পারেননি তিনি৷
ছবি: Reuters
তৃতীয় গোল
পরের মিনিটে মেসুত ও্যজিল বল দেন ফিলিপ লামকে৷ তিনি বল বাড়ান ম্যুলারের দিকে৷ কিন্তু বল পেয়ে যান ক্রোস৷ তার বাঁ পায়ের শট জালে জড়ালে ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-০ তে৷ স্টেডিয়ামে নেমে আসে নীরবতা৷
ছবি: Reuters
চতুর্থ গোল
২৬ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যান ক্রোস৷ ফার্নান্দিনিয়োর মারাত্মক ভুলে বল পেয়ে তিনি পাস দেন সামি খেদিরাকে৷ রিয়াল মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার বল ফিরিয়ে দেন ক্রোসকে৷ ক্রোসের মধ্যে কোন দ্বিধা ছিল না৷ তার কারণে চতুর্থ গোল পায় জার্মানি৷ দর্শকদের অবশ্য মনে হয়েছিল প্রথম গোলের রিপ্লে দেখছেন৷ এরপর স্টেডিয়ামে উপস্থিত ব্রাজিল সমর্থকরা আর নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি৷
ছবি: Reuters
পঞ্চম গোল
২৯ মিনিটে আবার গোল৷ ও্যজিলের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান খেলে ডি বক্সে ঢুকে ব্যবধান ৫-০ করে ফেলেন সামি খেদিরা৷ ছয় মিনিটেই চার গোল!
ছবি: Reuters
গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে বেশ কয়েকটি আক্রমণ করে ব্রাজিল৷ কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ান জার্মান গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার৷
ছবি: Reuters
৬ষ্ঠ গোল
৬৯ মিনিটে ব্রাজিলের নড়বড়ে রক্ষণের সুযোগে গোলদাতাদের তালিকায় নাম তুলে ফেলেন বদলি হিসেবে নামা আন্দ্রে শ্যুর্লে৷ ষষ্ঠবারের মতো ব্রাজিলের জালে বল জড়ায় জার্মানি৷
ছবি: Reuters
৭ম গোল
৭৯ মিনিটে ব্রাজিলকে আরো বড় লজ্জায় ডুবান শ্যুর্লে৷ বাঁ দিক থেকে ব্রাজিলের ডি বক্সে ঢুকে চেলসির এই ফরোয়ার্ডের নেয়া শট ক্রসবারে লেগে জালে জড়ায়৷ স্কোরলাইন তখন ৭-০৷
ছবি: Reuters
ব্রাজিলের একমাত্র গোল
অবশেষে নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে নয়ারকে পরাস্ত করেন অস্কার৷ মাঝমাঠ থেকে দৌড়ে এসে করা সান্ত্বনার এই গোলটি করেন তিনি৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
সামগ্রিকভাবে কিন্তু বিষয়টি একটু ভিন্ন ছিল৷ সাধারণত যে দল যার কাছে হেরেছে, সেদলের সমর্থকরা পরবর্তীতে বিজয়ী দলের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷ যেমন দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিলের কাছে হেরে যাওয়া চিলির ৬১ শতাংশ সমর্থক কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে কলম্বিয়াকে সমর্থন করেছে৷
প্রসঙ্গত, বিশ্বকাপ ফেসবুকে নতুন রেকর্ড গড়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগ সাইটটির ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় বিশ্বকাপ৷ টুর্নামেন্ট চলাকালে ৩৫০ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রায় তিন বিলিয়ন ইন্টাব়্যাকশনে (লাইক, কমেন্ট, শেয়ার) অংশ নিয়েছেন৷ আর ফাইনালে জার্মানি এবং আর্জেন্টিনার স্ব স্ব দেশের ৯৫ শতাংশ ফুটবল সমর্থক তাদের নিজেদের দলকে সমর্থন জানিয়েছে৷
বিশ্বকাপ দেখেন এমন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ৫৫ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ফাইনালে জার্মানি জয়ী হবে৷ আর বাকিরা ছিলেন আর্জেন্টিনার পক্ষে৷ এমনকি সেমিফাইনালে দু'বার বিশ্বকাপ জয়ীদের কাছে পরাজিত নেদারল্যান্ডসের ফুটবল ভক্তদের ৮১ শতাংশ গিয়েছে জার্মানির দলে৷ বাকিরা সমর্থন জানিয়েছে আর্জেন্টিনাকে৷
প্রশ্ন করতে পারেন, ফেসবুক এসব তথ্য কিভাবে যোগাড় করেছে? আসলে একাজে সহায়তা করেছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরাই৷ খেলা চলাকালে অনেকেই স্ট্যাটাসে প্রিয় দলের পতাকার ইমোটিকসহ জানিয়েছেন খেলা দেখার কথা কিংবা লিখেছেন ‘গো টিম ইউএসএ' কিংবা ‘ভাই ব্রাজিলের' মতো বিভিন্ন বার্তা৷ পাশাপাশি ‘ট্রেন্ডিং ওয়ার্ল্ড কাপ' পাতাতেও বিভিন্ন সমীক্ষার আয়োজন করেছিল ফেসবুক৷ এসব কিছুই পর্যালোচনা করেছে ডাটা সায়েন্স টিম৷