প্রভাবশালীরা প্রায় সব দেশেই কম-বেশি কর ফাঁকি দিয়ে থাকে৷ কিন্তু বাংলাদেশে একটি মাত্র অর্থবছরে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ২১ হাজার কোটি টাকা৷ এর কারণ হিসেবে ডিডাব্লিউ-র ফেসবুক পাতায় পাঠকদের কেউ কেউ দেশের দুর্নীতিকেই দায়ী করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
সব দেশের মানুষই কর ফাঁকি দিতে চায়৷ তবে অনেক দেশ নাগরিকদের কাছ থেকে প্রাপ্যটা আদায় করে নেয় এবং সকলের জন্য নাগরিক সুবিধা ও ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করে৷ তাই বাংলাদেশ সরকারেরও কর নেয়ার আগে আয় নিশ্চিত করা ও নাগরিক সুবিধা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন পাঠক বিজয়৷
বাংলাদেশের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে ফারুক হোসেন লিখেছেন, ‘‘এটা ডিজিটাল দেশ৷ এখানে আপনি কর দেবেন, লুটেপুটে খাবে সরকার৷ সরকার কোনো রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ তৈরি করছে, তা ছ'মাসও টেকে না৷ এত দুর্নীতি৷'' ফারুক হোসেনের এই মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন ইমরান হোসেনও৷
প্রভাবশালীরা কর ফাঁকি দেয় আর চাপে পড়ে সাধারণ মানুষ৷ এই কথাটাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কতটা সত্য, সেটাই পাঠক আকাশ ইকবাল তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন এভাবে: ‘‘এখানে বলতে গেলে অনেক কথাই উঠে আসবে৷ মূল কথাটি হলো, এই দেশের শ্রমিক শ্রেণি, অর্থাৎ যারা ভোক্তা, তারা সব সময় চাপে পড়ে৷ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোই রাজস্ব ফাঁকির একটা বড় অংশের জন্য দায়ী৷ প্রভাবশালী ব্যাংক কর্ম-কর্তারা সাধারণ মানুষের জমা দেওয়া টাকা লুট করে৷ সাধারণ মানুষ তাদের জমানো অর্থের জন্য হাহাকার করে৷ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও একই ব্যাপার৷ আমরা যদি গার্মেন্টস শিল্পের দিকে তাকাই, সেখানেও দেখবেন রাজস্ব ফাঁকি৷ সাধারণ মানুষ যারা শ্রমিক, তারা কাজ করে তাদের মুজুরি পায় না ঠিকভাবে৷ সরকারের বড় বড় কর্মকর্তারা রাজস্ব লুট করে৷ আর সেই লুটের দায় পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর৷ দুঃখ-কষ্ট করতে হয় সাধারণ মানুষকেই৷''
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার পাঁচ কৌশল
বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইন্ডিকেটরস গ্রুপ’-এর পরিচালক আওগুস্তো লোপেজ-কার্লোস এক ব্লগ পোস্টে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার কয়েকটি কৌশল আলোচনা করেছেন৷ ছবিঘরে থাকছে সে’সব কথা৷
ছবি: Getty Images
সরকারি চাকুরেদের জন্য ভালো বেতন
যাঁরা সরকারি চাকরি করেন তাঁদের বেতন যদি খুব কম হয়, তাহলে আয় বাড়াতে তাঁরা ‘অনানুষ্ঠানিক’ পথ অবলম্বন করতে পারেন৷ বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সরকারি চাকুরেদের কম বেতন ও দুর্নীতির মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া গেছে৷
ছবি: DW
অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা
যে সমস্ত দেশের নাগরিকদের সরকারি কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার সুযোগ আছে সেসব দেশে দুর্নীতি কম হয়৷ অর্থাৎ যেখানে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, শিক্ষিতের হার বেশি এবং সক্রিয় সুশীল সমাজ রয়েছে সেখানে দুর্নীতির হার কম৷ কেননা এর ফলে বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়, সরকারের নীতি নিয়ে আলোচনা করা যায়৷
ছবি: Colourbox/Hin255
লাল ফিতার দৌরাত্ম কমানো
বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস’ প্রতিবেদন বলছে, যে সব দেশে ব্যবসা শুরু করতে, সম্পত্তি নিবন্ধন করতে, আন্তর্জাতিক ব্যবসায় জড়িত হতে নানা ধরনের সার্টিফিকেট, আইন, লাইসেন্স ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সে’সব দেশে দুর্নীতি বেশি হয়৷ তাই বিশ্বব্যাংকের এক গবেষক দুর্নীতির জন্ম দিতে পারে এমন আইনকানুন বাদ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷
ছবি: DW
ভর্তুকি নয়
জ্বালানি খাতে ভর্তুকির নানা সমস্যা আছে৷ প্রায়ই এর সুবিধাভোগী হন ধনীরা৷ এছাড়া ভর্তুকি মূল্যে কেনা জ্বালানি চোরাচালানের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হন অনেকে৷ তাই ভর্তুকির মতো ব্যয়বহুল পদ্ধতির চেয়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষদের অর্থ সহায়তা দেয়া যেতে পারে৷
ছবি: DW/W.Jantschits
স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগ যত কমানো যাবে, দুর্নীতি কমানো ততই সম্ভব হবে৷ এক্ষেত্রে বিভিন্নক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সহায়তা নেয়া যেতে পারে৷ সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনলাইনে টেন্ডার আহ্বানের মতো বিষয়াদি চালু করলে দুর্নীতির সুযোগ কমবে৷