প্রবল স্বাধীনচেতা হিসেবে পরিচিত দেশ সুইজারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তির পথ থেকে সরে এলো৷ ফলে ইইউ-র সঙ্গে সম্পর্কের ‘সুইস মডেল' প্রশ্নের মুখে পড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
ব্রিটেনের বিদায়ের পরেও প্রতিবেশীদের নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমস্যা কাটছে না৷ সদস্য না হয়েও এই রাষ্ট্রজোটের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও নিবিড় সহযোগিতার মডেল হিসেবে এতকাল নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডকে তুলে ধরা হতো৷ এই দুটি দেশ ইইউ-র প্রায় সব বিধিনিয়ম ও প্রথা মেনে ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বাজারের কমবেশি নাগাল পেয়ে এসেছে৷ তবে নরওয়ের সঙ্গে সম্পর্কের এক স্থিতিশীল কাঠামো থাকলেও সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তুলনামূলকভাবে জটিল৷ কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে নিয়মকানুন স্থির করতে হয়৷ সেই জটিলতা দূর করতে ১২০টি বিচ্ছিন্ন চুক্তির বদলে এক সার্বিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তির রূপরেখা তৈরির উদ্যোগ চলছিল৷ আইনি সুরক্ষার লক্ষ্যে বিরোধ মেটানোর কাঠামোও সেই চুক্তির অন্তর্গত হবার কথা ছিল৷ কিন্তু গত প্রায় সাত বছর ধরে আলোচনার পর সোমবার সুইজারল্যান্ড প্রস্তাবিত চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
২০১৮ সালের শেষেই চুক্তির খসড়া প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু জাতীয় সংসদে অনেক তর্ক-বিতর্ক সত্ত্বেও রাজনৈতিক ঐকমত্য অর্জন করা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলো না৷ প্রেসিডেন্ট গি পার্মেল্যাঁ বলেন, তিনটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমাধানসূত্র পাওয়া যায় নি বলে আলোচনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ তবে সুইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগনাৎসিও কাসিস বলেন, বর্তমান দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলির ভিত্তিতে ইইউ-র সঙ্গে সম্পর্কে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেই একতরফা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করেছে৷ বিশেষ করে গত কয়েক বছরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ক্ষেত্রে যে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে আরও অগ্রগতি সম্ভব হতে পারতো বলে ইইউ কমিশন মন্তব্য করেছে৷
মূলত রাষ্ট্রীয় সহায়তা, বেতন ও মজুরির ক্ষেত্রে কর্মী ও শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং নাগরিকদের বসবাসের অবাধ অধিকারের প্রশ্নে সুইজারল্যান্ডের শ্রমিক সংগঠনগুলি ও চরম দক্ষিণপন্থি শিবির কোনো আপোশ করতে প্রস্তুত নয়৷ এমনকি ইইউ-র অভ্যন্তরিণ বাজারে চিকিৎসা সরঞ্জাম বিক্রির অবাধ সুযোগ হারাতেও প্রস্তুত চুক্তির বিরোধীরা৷ দেশের প্রায় অর্ধেক রপ্তানি ইউরোপীয় ইউনিয়নে যায় এবং আমদানির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সেখান থেকেই আসে৷ ফলে শিল্প ও বাণিজ্য জগত সার্বিক চুক্তি সম্ভব না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছে৷
এমন ব্যর্থতা সত্ত্বেও দুই পক্ষই ভবিষ্যতে আলোচনার পথ বন্ধ রাখতে চায় না৷ ইইউ মনে করছে, ১২০টি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি আপাতত চালু থাকলেও ধীরে ধীরে সেগুলির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে৷ অন্যদিকে সুইজারল্যান্ড নতুন করে আলোচনা শুরু করতে আগ্রহ দেখিয়েছে৷ তবে মতবিরোধের বিষয়গুলির নিষ্পত্তির বিষয়ে আপাতত কোনো দিশা দেখা যাচ্ছে না৷
জ্ঞানের দৌড়ে কারা এগিয়ে, কারা পিছিয়ে
উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, উদ্ভাবনসহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় কোন দেশ কতটা এগিয়ে সেটি বোঝা যায় বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকের মাধ্যমে৷ প্রতিবছর ইউএনডিপি একটি তালিকা প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে দেখুন চলতি বছরে সূচকে কার কী অবস্থান৷
ছবি: picture-alliance/PAP/M. Bielecki
পরিমাপ প্রক্রিয়া
২০১৭ সাল থেকে বৈশ্বিক জ্ঞান সূচক প্রকাশ করে আসছে জাতিসংঘের উুন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএনডিপি৷ প্রাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, উচ্চ শিক্ষা, উন্নয়ন ও উদ্ভাবন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, অর্থনীতি আর পরিবেশ- এই সাতটি বিষয়কে সেখানে বিবেচনায় নেয়া হয়৷ ১৯৯টি সূচকের মাধ্যমে করা হয় ১৩৮ টি দেশের র্যাংকিং৷
ছবি: picture-alliance/PAP/M. Bielecki
শীর্ষে সুইজারল্যান্ড
বৈশ্বিক জ্ঞান সূচক ২০২০-এ শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে সুইজারল্যান্ড৷ প্রশিক্ষণ ও গবেষণার পর্যাপ্ত সুবিধা, মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান, অত্যাধুনিক উৎপাদন প্রক্রিয়া আর দক্ষ সরকার ব্যবস্থা দেশটিকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে৷ তাদের মোট স্কোর ৭৩ দশমিক ছয়৷ ৭১ দশমিক এক স্কোর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয়৷ প্রথম চারে আছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার আরো দুই দেশ; ফিনল্যান্ড ও সুইডেন৷ স্কোর যথাক্রমে, ৭০ দশমিক আট ও ৭০ দশমিক ছয়৷
ছবি: picture-alliance/robertharding
ইউরোপের সাত
ইউরোপের বাকি দেশগুলোর মধ্যে নেদারল্যান্ডসের অবস্থান পঞ্চম৷ এর পরপরই রয়েছে লুক্সেমবুর্গ৷ অষ্টম ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য নবম আর জার্মানি আছে ১১ তম অবস্থানে৷ সব মিলিয়ে প্রথম দশে ইউরোপেরই সাতটি দেশ৷
ছবি: Imago Images/Danita Delimont/D. R. Frazier
এশিয়ায় শীর্ষে সিঙ্গাপুর
জ্ঞান সূচকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার উপরে সিঙ্গাপুর৷ সাতটি খাতের মধ্যে অর্থনীতিতে তারা প্রথম আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে আছে দ্বিতীয় অবস্থানে৷ সামগ্রিকভাবে তালিকায় তারা সপ্তম৷ ১০ম অবস্থানে হংকং আর ১২ তম অবস্থানে জাপান৷ এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ১৯ তম, চীন আছে ৩১তম অবস্থানে৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/B. Morandi
মধ্যপ্রাচ্যের আলো ইউএই
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণা সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ বৈশ্বিক জ্ঞানে দেশটি ১৫ তম জায়গা করে নিয়েছে৷ অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়ারও আছে উপরে৷ মধ্যপ্রাচ্যের বাকি দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েল ২১তম, কাতার ৩৯তম, সৌদি আরব ৪২তম, বাহরাইন ৪৩ তম, ওমান ৫৮তম, ও কুয়েত আছে ৬৫তম অবস্থানে৷
ছবি: Sheikh Mohammed bin Rashid Al Maktoum/Twitter/AP/picture-alliance
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের নেতৃত্ব
দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ভারত৷ ৪৪ দশমিক চার স্কোর নিয়ে সব দেশের মধ্যে তাদের অবস্থান ৭৫তম৷ এছাড়া শ্রীলংকা ৮৭, ভূটান ৯৪, নেপাল ১১০, পাকিস্তান ১১১ আর এই অঞ্চলে সবার শেষে বাংলাদেশ৷ এগিয়ে থাকা ভারত গবেষণা ও উদ্ভাবনে সবচেয়ে ভালো করেছে; সব দেশ মিলিয়ে সেখানে তাদের অবস্থান ৪৪তম৷ তবে প্রাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও পরিবেশের মানে বেশ পিছিয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. D´Souza
বাংলাদেশের দুর্বলতা
বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ ১৩৮ টি দেশের মধ্যে ১১২তম অবস্থানে রয়েছে৷ বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনে; স্কোর মাত্র ১৬ দশমিক চার৷ আর উচ্চ শিক্ষায় ২৪ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে গোটা বিশ্বের মধ্যে অবস্থান ১২৯৷ অর্থাৎ, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের নীচে আছে মাত্র নয়টি দেশ৷
ছবি: Sawpan Chandra Dash
তলানিতে যারা
তালিকায় শেষের দিকে থাকা দেশগুলো আফ্রিকার৷ সবার নীচে বা ১৩৮তম অবস্থানে আছে চাদ৷ শেষ পাঁচে থাকা বাকিরা অ্যাঙ্গোলা, মৌরিতানিয়া, নাইজার ও কঙ্গো৷