জার্মানিতে যে সব রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে, তাদের প্রায় অর্ধেক আদালতে আপিল করছেন৷ ২০১৭ সালে ১১৯ হাজার বাতিল আবেদনের ৪৭ শতাংশ আদালতে যায়, বলে জানিয়েছে সরকারি উদ্বাস্তু সংস্থা ‘বাম্ফ’৷
বিজ্ঞাপন
অভিবাসন ও উদ্বাস্তু সংক্রান্ত ফেডারাল কার্যালয় ‘বাম্ফ’-এর হেড অফিস নুরেমবার্গ শহরে৷ ‘বাম্ফ’ আরো জানিয়েছে যে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে প্রত্যাখ্যাত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রায় ২৪ শতাংশ আপিল করে সফল হয়েছেন – অর্থাৎ আদালতকে বোঝাতে পেরেছেন যে, তারা বাস্তবিক আশ্রয় পাবার যোগ্য৷ সফল আপিলকারীদের অধিকাংশ যুদ্ধপীড়িত সিরিয়া থেকে এসেছেন৷ অপরাপর ক্ষেত্রে আদালত মূলত ‘বাম্ফ’-এর সিদ্ধান্তই বজায় রেখেছেন৷
২০১৫-১৬ সালে বিপুল পরিমাণ উদ্বাস্তু জার্মানিতে আসেন ও তাদের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন দাখিল করেন৷ ‘বাম্ফ’ ইতিমধ্যে সেই সব জমে থাকা আবেদনের সংখ্যা ৮০ হাজারে নামিয়ে আনতে পেরেছে, বলে জানিয়েছে৷ সব মিলিয়ে ‘বাম্ফ’ চলতি বছরের প্রথম ছ'মাসে চার লাখের বেশি আবেদনপত্র পরীক্ষা করে দেখেছে ও তার মধ্যে ১১৯,০০০ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে৷ ২০১৬ সালে গোটা বছরে ‘বাম্ফ’ মোট সাত লাখ আবেদনপত্র যাচাই করতে পেরেছিল – ‘বাম্ফ’-এর কর্মক্ষমতা বাড়ার একটা কারণ এই যে, ‘বাম্ফ’-এ আরো অনেক বেশি কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে৷
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
10 ছবি1 | 10
২০১৭ সালের জুলাই মাস অবধি ‘বাম্ফ’-এর কাছে নতুন আবেদন জমা পড়েছে ১৩০,০০০ – যার মধ্যে ৪৮ হাজার আবেদনের ক্ষেত্রে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷
সামনে নির্বাচন
সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখে জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অর্থাৎ দু'মাসেরও কম সময় বাকি৷ ওদিকে গত সপ্তাহে হামবুর্গে এক প্রত্যাখ্যাত ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী এলোপাথাড়ি ছুরি চালিয়ে একজন ব্যক্তিকে হত্যা ও আরো কয়েকজনকে আহত করার পর, উদ্বাস্তুদের কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক নতুন ইন্ধন পেয়েছে৷ খুব সম্ভবত তারই পরিপ্রেক্ষিতে ‘বাম্ফ’-এর প্রধান ইউটা কর্ড বুধবার তাঁর পরিসংখ্যান পেশ করেন৷ অন্যদিকে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের একাধিক রক্ষণশীল রাজনীতিক দাবি করেছেন যে, হামবুর্গের আততায়ীর মতো ‘‘বিপজ্জনক’’ ব্যক্তিদের কোনো কিছু ঘটার আগেই আটক করা দরকার৷
সহিংসতার ঘটনার সঙ্গে উদ্বাস্তুদের (অপ্রমাণিত) বিশেষ সংযোগ যেমন এক পর্যায়ের জার্মানদের কাছে একটি বদ্ধমূল ধারণা, তেমনই ‘স্ট্যার্ন’ পত্রিকার একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে, ৫১ শতাংশ জার্মান আজও উদ্বাস্তুদের আগমনের উপর কোনো সর্বোচ্চ সীমা আরোপ করার বিরোধী – অর্থাৎ জার্মানদের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আজও উদ্বাস্তু নীতির প্রশ্নে চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের অনুগামী৷ ওদিকে সিডিইউ দলের বাভেরীয় সহযোগী সিএসইউ এখনও উদ্বাস্তুদের আগমনের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া সপক্ষে৷
মানবাধিকার
‘ডি ভেল্ট’ পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী স্ট্রাসবুর্গের ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত জার্মানির ব্রেমেন শহর থেকে এক ১৮ বছর বয়সি ‘‘বিপজ্জনক’’ বিদেশির বহিষ্কারকে রুখে দিয়েছে, যদিও জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত তার আপিল নাকচ করেছিল৷
ইউরোপে শরণার্থী সংকট কীভাবে শুরু হয়েছিল?
মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় সহিংসতা বৃদ্ধি থেকে ইউরোপের অসংলগ্ন শরণার্থী নীতি অবধি ইউরোপে শরণার্থী সংকটে কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুদ্ধ এবং দারিদ্র্যতা থেকে পালানো
২০১৪ সালের শেষের দিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চতুর্থ বছরে পা দেয়ার প্রাক্কালে এবং দেশটির উত্তরাঞ্চলে তথাকথিত ‘ইসলামিট স্টেট’-এর বিস্তার ঘটার পর সিরীয়দের দেশত্যাগের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়৷ একইসময়ে সহিংসতা এবং দারিদ্র্যতা থেকে বাঁচতে ইরাক, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, নিগার এবং কসভোর অনেক মানুষ ইউরোপমুখী হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সীমান্তের ওপারে আশ্রয় খোঁজা
সিরীয় শরণার্থীদের অধিকাংশই ২০১১ সাল থেকে সে দেশের সীমান্ত সংলগ্ন তুরস্ক, লেবানন এবং জর্ডানে আশ্রয় নিতে শুরু করেন৷ কিন্তু ২০১৫ সাল নাগাদ সেসব দেশের শরণার্থী শিবিরগুলো পূর্ণ হয়ে যায় এবং সেখানকার বাসিন্দারা সন্তানদের শিক্ষা দিতে না পারায় এবং কাজ না পাওয়ায় এক পর্যায়ে আরো দূরে কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পায়ে হেঁটে লম্বা পথ পাড়ি
২০১৫ সালে ১৫ লাখের মতো শরণার্থী ‘বলকান রুট’ ধরে পায়ে হেঁটে গ্রিস থেকে পশ্চিম ইউরোপে চলে আসেন৷ সেসময় ইউরোপের শেঙেন চুক্তি, যার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অধিকাংশ দেশের মধ্যে ভিসা ছাড়াই চলাচাল সম্ভব, নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ কেননা শরণার্থীরা গ্রিস থেকে ধীরে ধীরে ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ধনী রাষ্ট্রগুলোর দিকে আগাতে থাকেন৷
ছবি: Getty Images/M. Cardy
সমুদ্র পাড়ির উন্মত্ত চেষ্টা
সেসময় হাজার হাজার শরণার্থী ‘ওভারক্রাউডেড’ নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে শুরু করেন৷ লিবিয়া থেকে ইটালি অভিমুখী বিপজ্জনক সেই যাত্রায় অংশ নিতে গিয়ে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সাগরে ডুবে যায় অন্তত আটশ’ মানুষ৷ আর বছর শেষে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার হাজার৷
ছবি: Reuters/D. Zammit Lupi
সীমান্তে চাপ
ইউরোপের বহির্সীমান্তে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কয়েকটি রাষ্ট্র চাপে পড়ে যায়৷ হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, ম্যাসিডোনিয়া এবং অস্ট্রিয়া এক পর্যায়ে সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, সেসময় শরণার্থী আইন কঠোর করা হয় এবং শেঙেনভুক্ত কয়েকটি দেশ সাময়িকভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/epa/B. Mohai
বন্ধ দরজা খুলে দেয়া
জার্মান চ্যান্সেল আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সমালোচকরা মনে করেন, তাঁর ‘ওপেন-ডোর’ শরণার্থী নীতির কারণে বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে অনেক শরণার্থীই ইউরোপে আসতে উৎসাহ পেয়েছেন৷ এক পর্যায়ে অবশ্য অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত পথ নিয়ন্ত্রণ শুরু করে জার্মানিও৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি
২০১৬ সালের শুরুতে ইইউ এবং তুরস্কের মধ্যে একটি চুক্তি হয়৷ এই চুক্তির আওতায় গ্রিসে আসা শরণার্থীদের আবারো তুরস্কে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়৷ তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই চুক্তির বিরোধিতা করে৷ নভেম্বর মাসে অবশ্য তুরস্কের ইইউ-তে প্রবেশের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা স্থগিত ঘোষণার পর, সেই চুক্তি আবারো নড়বড়ে হয়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
পরিস্থিতি বদলের কোনো লক্ষণ নেই
ইউরোপজুড়ে অভিবাসীবিরোধী মানসিকতা বাড়তে থাকলেও সরকারগুলো সম্মিলিতভাবে শরণার্থী সংকট মোকাবিলার কোনো সঠিক পন্থা এখনো খুঁজে পাননি৷ কোটা করে শরণার্থীদের ইইউ-ভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চলমান সহিংসতার ইতি ঘটার কোনো লক্ষণও নেই৷ ওদিকে, সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে শরণার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Mitrolidis
8 ছবি1 | 8
যে সব উদ্বাস্তু, বিদেশি-বহিরাগত বা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের তরফ থেকে সন্ত্রাস বা সহিংস ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে, তাদের জন্য জার্মান নিরাপত্তা বিভাগ ও রাজনীতিক মহলের নতুন পরিভাষা হল ‘গেফেয়ারর্ডার’ বা যে ব্যক্তি বিপদ ঘটাতে পারে৷ জার্মানির ফেডারাল তদন্ত কার্যালয় বিকেএ কিন্তু বলছে যে, অভিবাসীদের সঙ্গে যুক্ত অপরাধমূলক ঘটনার সংখ্যা ২০১৭ সালের প্রথম তিন মাসে কমে ৬৪,৭০০-য় দাঁড়িয়েছে৷ এ ধরনের ঘটনায় সিরীয়, আফগান অথবা ইরাকিদের সংশ্লেষ কম – সেই তুলনায় আলজেরিয়া, মরক্কো, টিউনিশিয়া, গাম্বিয়া, নাইজেরিয়া ও সোমালিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের অপরাধের সঙ্গে সংযোগ গড়ের তুলনায় বেশি৷ অপরাধীদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে; প্রসঙ্গত, এই বয়সের জার্মান তরুণদের মধ্যেও অপরাধের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে৷
আদালত বনাম ‘বাম্ফ’
‘বাম্ফ’-এর প্রধান ইউটা কর্ড বলেছেন যে, তাঁর লক্ষ্য হল, তারা জার্মানিতে থাকতেন পারবেন কিনা, সে বিষয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ‘‘যথাশীঘ্র সম্ভব স্পষ্ট’’ জবাব দেওয়া৷ এই উদ্দেশ্যে ‘বাম্ফ’ ক্রমেই নথিপত্র থেকে ইলেকট্রনিক প্রসেসিং-এর দিকে ঝুঁকছে৷ এক্ষেত্রে যে সব আপিল আদালতে প্রত্যাখ্যাত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আপিলের মামলাগুলির শুনানি হয়, সেখানে আজও ফাইল চালাচালিতে বহু সময় লেগে যায়, বলে ‘বাম্ফ’-এর কর্মকর্তাদের অভিযোগ৷ অপরদিকে বার্লিনের প্রশাসনিক আদালতে ১৩ হাজার আপিলের মামলা ঝুলছে; কিন্তু ‘বাম্ফ’-এর কাছে কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়লে ‘বাম্ফ’-এর হটলাইনে যেতে হয়, যেহেতু ‘বাম্ফ’ ‘‘বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ’’ মামলা ছাড়া আদালতে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠায় না৷
এসি/ডিজি (ইপিডি, কেএনএ, ডিপিএ)
৮ তারকা যাঁরা একসময় শরণার্থী ছিলেন
সংগীত শিল্পী, অভিনেত্রী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ - বিশ্বখ্যাত এমন অনেক তারকাকে নানা কারণে জীবনের একটি সময় শরণার্থীর জীবন বেছে নিতে হয়েছিল৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কয়েকজনের কথা৷
ছবি: Getty Images
মারলেনে ডিটরিশ
১৯০১ সালে জার্মানিতে জন্ম নেয়া ডিটরিশ গায়িকা ও অভিনেত্রী হিসেবে বেশ নাম কুড়িয়েছিলেন৷ ১৯৩০ সালে তিনি হলিউডে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান৷ সেখানে থাকলেও নাৎসি আমলের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তিনি৷ ১৯৩৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মার্কিন বাহিনীর জন্য গান গেয়েছেন৷ নাৎসি সরকার জার্মানিতে তাঁর মুভি প্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হেনরি কিসিঞ্জার
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যে জন্মেছিলেন৷ নাৎসি সরকারের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ১৯৩৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schiefelbein
মেডেলিন অলব্রাইট
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলব্রাইট চেক প্রজাতন্ত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ ১৯৪৮ সালে সে দেশে কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় গেলে তিনি তাঁর পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
আলবার্ট আইনস্টাইন
জার্মান ইহুদি এই নোবেল বিজয়ী যখন ১৯৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন তখনই বুঝতে পারেন যে, তাঁর পক্ষে আর জার্মানি ফেরা সম্ভব নয়৷ কারণ ঐ বছরই হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হন৷ ফলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৪০ সালে সে দেশের নাগরিকত্বও গ্রহণ করেন৷
ছবি: Imago/United Archives International
গেওর্গ ভাইডেনফেল্ড
ইহুদি এই মানুষটির জন্ম অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়, ১৯১৯ সালে৷ নাৎসিরা যখন অস্ট্রিয়া দখল করে নিলে তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান৷ সেখানে তিনি একটি প্রকাশনা সংস্থা চালু করেন৷ ইসরায়েলের প্রথম প্রেসিডেন্টের ‘চিফ অফ স্টাফ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N.Bachmann
বেলা বার্টোক
হাঙ্গেরির কম্পোজার, পিয়ানোবাদক ও লোক সংগীত সংগ্রাহক বার্টোক ইহুদি ছিলেন না৷ কিন্তু নাৎসিদের হাতে ইহুদিদের নিপীড়িত হওয়ার বিষয়টির ঘোর সমালোচক ছিলেন তিনি৷ ফলে ১৯৪০ সালে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে হয়৷
ছবি: Getty Images
ইসাবেল আলেন্দে
১৯৭৩ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চিলির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সালভেদর আলেন্দেকে হটিয়ে দেয়া হয় এবং সেই সময়ই তাঁর মৃত্যু হয়৷ এরপর একসময় আলেন্দের এক কাজিনের মেয়ে ইসাবেলকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়৷ তা থেকে বাঁচতে প্রথমে ভেনেজুয়েলায়, তারপর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান ইসাবেল৷ তাঁর লেখা কয়েকটি উপন্যাস আন্তর্জাতিকভাবে বেশ প্রশংসিত হয়েছে৷
ছবি: Koen van Weel/AFP/Getty Images
মিরিয়াম মাকেবা
‘মামা আফ্রিকা’ নামে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত শিল্পী মাকেবা একবার গান গাইতে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন৷ সেই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বর্ণবাদবিরোধিতার অভিযোগে তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়৷ ফলে তিনি আর দেশে ফিরতে পারেননি৷ কয়েক দশক পর অবস্থার পরিবর্তন হলে দেশে ফিরে যান মাকেবা৷