শুক্রবার লন্ডন থেকে দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ দুর্নীতির দায়ে আদালতের দেয়া কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন নওয়াজ৷
বিজ্ঞাপন
নওয়াজের আইনজীবীরা সোমবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন৷ তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম আইনজীবী খাজা হারিস আহমেদ বলেন, ‘‘কোনো প্রমাণ ছাড়াই দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় দেয়া হয়েছে৷''
গত ৬ জুলাই পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন)-এর নেতা নওয়াজ তাঁর মেয়ে মরিয়মের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে পাকিস্তানের দুর্নীতিবিরোধী মামলার আদালত৷ দুর্নীতির দায়ে নওয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ৮৯ লাখ পাউন্ড জরিমানা করে আদালত৷ অন্যদিকে মরিয়মের বিরুদ্ধে দেয়া হয় ৮ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ লক্ষ পাউন্ড জরিমানার আদেশ৷
গত শুক্রবার মেয়ে মরিয়মসহ পাকিস্তানে ফেরেন নওয়াজ শরিফ৷ কিন্তু বিমান লাহোর বিমানবন্দরে অবতরণের পরই ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো তাঁদের পাসপোর্ট জব্দ করে৷ এরপর ছোট প্রাইভেট বিমানে দু'জনকেই নিয়ে যাওয়া হয় ইসলামাবাদে৷ নওয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান থেকে টাকা নিয়ে তিনি লন্ডনে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বানিয়েছেন৷ রায় ঘোষণার সময় নওয়াজ লন্ডনে ছিলেন৷ তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে পলাতক দেখিয়েই রায় ঘোষণা করে আদালত৷
আগামী ২৫ জুলাই পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন৷ দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নওয়াজ শরিফ এ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না৷ তবে তাঁর দল মুসলিম লিগ অংশ নেবে৷ দলটির এ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভেরও সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ মুসলিম লিগ (এন) সমর্থকরা মনে করেন, এ নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই নওয়াজকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷
তালেবান: যাদের কারণে চাপের মুখে পাকিস্তান
ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার অন্যতম কারণ, পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের সাহায্য করছে৷ কিন্তু কেন? পাকিস্তানের রাজনীতির সঙ্গে তালেবানের সম্পর্কই বা কী?
ছবি: Majid Saeedi
গোড়ার কথা
১৯৭৮ থেকে ’৯২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ পাশতুন জনজাতির যোদ্ধারা সে সময় রাশিযার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল৷ পরবর্তীকালে তারাই তালেবান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে৷ রাশিয়াকে ঠেকাতে সেই সময় পাকিস্তান এবং অ্যামেরিকা তালেবানকে সাহায্য করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/A. Khan
গৃহযুদ্ধ এবং তালেবান
১৯৯২ থেকে ’৯৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়৷ সেই সময় তালেবান ত্রমতার কাছাকাছি পৌঁছে যায়৷ অভিযোগ, তালেবানদের সেই উত্থানেও পাকিস্তান সাহায্য করেছিল৷ বস্তুত, বিস্তীর্ণ আফগানিস্তান জুড়ে তালেবান যে সরকার গঠন করেছিল, কেবল পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল৷ বিশ্বের অন্য কোনও দেশ তালেবান সরকারকে সমর্থন দেয়নি৷
ছবি: Majid Saeedi
৯/১১ এবং মার্কিন সৈন্য
নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে আল কায়দা হামলা চালানোর পর অ্যামেরিকা আল কায়দা এবং তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে৷ আফগানিস্তানে পৌঁছায় মার্কিন সৈন্য৷ আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই সরকারকে সমর্থন জানায় অ্যামেরিকা এবং ন্যাটো বাহিনী৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সৈন্যরাও ন্যাটোর ছত্রছায়ায় তালেবানবিরোধী লড়াইয়ে শামিল হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পাকিস্তানের লাভ
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের প্রথম এবং প্রধান শত্রু আফগান তালেবান নয়, ভারত৷ এ কারণে ভারতের বিরুদ্ধে ‘প্রক্সি’ যুদ্ধ চালানোর জন্য তালেবান জঙ্গিদের পাকিস্তানের প্রয়োজন৷ ভারত বহুবার অভিযোগ করেছে যে, সীমান্তে আটক করা জঙ্গিদের সঙ্গে তালিবান যোগ আছে৷ তালিবান পাকিস্তানেই প্রশিক্ষণ নেয় বলেও অভিযোগ করে আসছে ভারত৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
অন্য কূটনীতি
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছাড়লে আফগানিস্তানের মৌলবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে পাকিস্তানকে পশ্চিমের সীমান্ত নিয়ে ভুগতে হতে পারে৷ তাই তালেবান প্রশ্নে ‘কৌশলগত’ অবস্থান নিতে হয় পাকিস্তানকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
পাকিস্তানেও তালেবান হামলা
গত এক দশকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে জঙ্গিরা৷ পাঁচ তারা হোটেল থেকে ভলিবল স্টেডিয়াম, বাজার থেকে সামরিক ঘাঁটি সর্বত্রই হামলা হয়েছে৷ বারবারই আঙুল উঠেছে তালেবানের দিকে৷ অভিযোগ, এতৎসত্ত্বেও পাকিস্তান তালিবানের প্রতি নরম থেকেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
মার্কিন হুমকি
ভারতসহ বেশ কিছু দেশ বার বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে৷ এতদিনে অ্যামেরিকা সে অভিযোগে শিলমোহর দিল৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস জানিয়ে দিলো যে, পাকিস্তানকে তারা আর কোনও সামরিক সহায়তা দেবে না, কারণ, সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা স্পষ্ট নয়৷