1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রায়ের আগেই রায় নিয়ে বিতর্ক

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা৭ মার্চ ২০১৬

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে মঙ্গলবার৷ তবে এই রায় ঘোষণার আগেই মামলা নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেল বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন৷

Mir Quasem Ali
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images

২৪শে ফেব্রুয়ারি, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির শেষ দিন, ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন এবং তদন্ত সংস্থার কাজ নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা৷ তিনি বলেন, ‘‘তাঁদের (প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থা) পেছনে সরকার যথেষ্ট অর্থ খরচ করছে৷ অথচ তাঁরা সঠিকভাবে মামলা তদন্ত ও পরিচালনা করছেন বলে মনে হয় না৷'' তাঁর কথায়, ‘‘যেসব প্রসিকিউটর অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, তাঁদের সরিয়ে দেয়া উচিত৷''

পরে ঐ দিনই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মীর কাসেমের আপিল শুনানির সময় আপিল বিভাগে বেশ কিছু অসংগতি ধরা পড়ার ফলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার ওপর আদালত গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে৷''

রানা দাশ গুপ্ত

This browser does not support the audio element.

এরপর থেকেই এই মামলা নিয়ে কয়েকজন মন্ত্রীর প্রকাশ্য মন্তব্য এক নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে৷ খাদ্যমন্ত্রী এবং সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রকাশ্যে বলেন ‘‘এই মামলার রায় কী হবে, তা প্রধান বিচারপতির প্রকাশ্য আদালতে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি৷ তাঁর বক্তব্যের মধ্যে এটা অনুধাবন করেছি যে, এই মামলায় আর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই৷'' তাই তিনি এই মামলার ফের শুনানি দাবি করেন৷

ওদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মন্ত্রীর ঐ বক্তব্যকে ‘অসংবিধানিক' আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘প্রধান বিচারপতি কোনো ব্যক্তি নন, একটি প্রতিষ্ঠান৷ প্রধান বিচারপতিকে বিতর্কিত করা মানে, বিচারব্যবস্থাকে বিতর্কিত করা৷ তাই প্রধান বিচারপতি বা বিচারালয় নিয়ে বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷''

জানা গেছে, এই বিতর্কের পর সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মীর কাসেম আলীর মামলা নিয়ে মন্ত্রীদের প্রকাশ্য মন্তব্য করা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন৷ শুধু তাই নয়, এ নিয়ে আর কোনো কথা না বলতেও নির্দেশ দেন তিনি৷

এই প্রেক্ষাপটে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার কাছে পুরো বিতর্কটিকে কোনোভাবেই শোভন মনে হয়নি৷ তবে আমি মনে করি যে, এতে মামলার রায়ে কোনো প্রভাব পড়বে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘বিচারকরা স্বাধীন, তাঁরা স্বাধীনভাবেই সিদ্ধান্ত নেন৷ এছাডা় এই মামলার আপিল শুনানি করেছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চারজন বিচারপতি৷ আমার মতে, কোনো বিচারপতির ভিন্নমত থাকতেই পারে৷''

রানা দাসগুপ্ত আরো বলেন, ‘‘আমি মনে করি, প্রধান বিচারপতি তাঁর রায়ের মধ্যে দিয়েই কথা বলতে পারেন৷ তাই প্রকাশ্য আদালতে এমন কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয় যা বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে৷ আর যাঁরা প্রধান বিচারপতির কথা নিয়ে বাইরে কথা বলেছেন, তাঁরাও ঠিক করেননি৷ আমার কাছে পুরো বিষয়টি অশোভন মনে হয়েছে৷ ভবিষ্যতে এ ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে চলাই উচিত হবে৷''

২০১৪ সালের ২রা নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালয়২৷ আটজনকে নির্যাতন করার পর হত্যা ও মরদেহ গুম করা এবং ২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতন কেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ১০টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন তিনি৷ অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আল-বদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা এবং সে সময়ের ইসলামি ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন৷

এই রায়ের বিরুদ্ধে গত ৯ই ফেব্রুয়ারি থেকে মীর কাসেমের আপিল মামলাটির শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে৷ আপিল বিভাগ ২৪শে ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষ করে ৮ই মার্চ (মঙ্গলবার) রায়ের দিন ধার্য করে৷

প্রসঙ্গত, আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধ মামলায় এর আগের ছয়টি রায়ের মধ্যে চারটিতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়৷ ইতিমধ্যে এদের সকলেরই ফাঁসি কার্যকর হয়েছে৷

এছাড়া আপিল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷ সেই রায়ের ব্যাপারে দুই পক্ষের করা রিভিউ আবেদন এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায়৷

আপিল বিভাগের সর্বশেষ রায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ৷ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ