একটি আপেলের সমান ওজন নিয়ে জন্মেছিল শিশু সেইবি, এ কারণে তাকে বাঁচানোর আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন ডাক্তাররাও৷ তবে, পাঁচ মাস হাসপাতালে থাকার পর বাড়ি ফিরেছে পৃথিবীর সবচেয়ে কম ওজনের এই শিশু৷
ছবি: AFP/Sharp HealthCare
বিজ্ঞাপন
গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগোর হাসপাতালে জন্মের সময় সেইবির ওজন ছিল মাত্র ২৪৫ গ্রাম৷ উচ্চতা ছিল ২৩ সেন্টিমিটার৷ মায়ের গর্ভে ২৩ সপ্তাহ ৩ দিন থাকার পর জরুরি সিজারিয়ানে জন্মগ্রহণ করেছিল সে৷
‘‘ওটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভীতিকর দিন,’’ হাসপাতাল থেকে প্রকাশ করা একটি ভিডিওতে বলেছেন শিশুটির মা৷ জন্মের পর শিশুকে সেইবি নাম দিয়েছেন নার্সরা৷
এর আগে ২৫২ গ্রাম ওজন নিয়ে ২০১৫ সালে জার্মানিতে জন্ম নেয় পৃথিবীর সবচেয়ে কম ওজনের শিশু৷ সে-ও ছিল মেয়েশিশু৷
নাইজেরিয়ার যমজদের শহর
দক্ষিণ পশ্চিম নাইজেরিয়ার ইগবো ওরা শহরে গেলে যে কেউ ধন্ধে পড়বেন৷ কেননা জোড়া চেহারার বহু মানুষের দেখা মিলবে সেখানে৷
ছবি: Reuters/A. Sotunde
যমজদের রাজধানী
নাইজেরিয়ার ওইয়ো রাজ্যের ইগবো ওরা শহরে পর্যটকরা পথে পথে একটি ব্যানারের দেখা পাবেন৷ তার মূল কথা একটাই, ‘স্বাগত বিশ্বের যমজদের রাজধানীতে৷’ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলে তার প্রমাণও মিলবে৷ দেখা মিলবে অনেক যমজ মানুষের সাথে৷
ছবি: Reuters/A. Sotunde
হাজারে ৫০
ছবির এই যমজ ভাইদের নাম কেহিন্দে এবং তাইয়ু কোলাওলে৷ কার নাম কোনটি সেটি মনে রাখাটা অবশ্য মুশকিল হতে পারে৷ ১৯৭০ এর দশকে এক ব্রিটিশ গাইনি বিশেষজ্ঞের গবেষণা অনুযায়ী এই অঞ্চলে প্রতি হাজারের মধ্যে যমজ জন্মের হার ৫০টি, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বেশি৷
ছবি: Reuters/A. Sotunde
নামের বাহার
কেহিন্দে এবং তাইয়ো আদেরগোবা ভাইয়ের মধ্যে মিল ও ভাব দুইই বেশ৷ শুধু চেহারা নয়, সেখানকার যমজদের নামেও থাকে মিল৷ ইয়োরুবা সম্প্রদায়ের মানুষেরা যমজদের একটি নামই রাখেন৷ নামের আগে একজনের ক্ষেত্রে তাইয়ু আরেকজনকে কেহিন্দে বলে ডাকেন, যা দিয়ে বোঝা যায় কে আগে জন্ম নিয়েছে, কে পরে৷
ছবি: Reuters/A. Sotunde
চেনে কী করে!
ইগবো ওরা শহরেই যমজ জন্মের প্রবণতা বেশি, কিন্তু তার মধ্যেও এগিয়ে ইয়োরুবা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ তাদের ১০০ জন ছাত্রছাত্রীর একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের এসেম্বলিতে নয় যমজের দেখা পেয়েছেন রয়টার্সের সাংবাদিক৷ বন্ধুবান্ধব আর শিক্ষকরা তাদের গুলিয়ে ফেলে নাতো!
ছবি: Reuters/A. Sotunde
কেন এত জোড়া?
নবজাতক যমজ শিশুকে কোলে নিয়ে ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছেন এক মা৷ এই শহরের মানুষদের বেশিরভাগের বিশ্বাস ওকরা পাতা খাওয়ার অভ্যাসের কারণেই এত যমজ শিশুর জন্ম দেন তাঁরা৷ এই পাতা পানিতে সেদ্ধ করে খাওয়াটা ইগবো ওরার মানুষদের খুবই প্রিয়৷
ছবি: Reuters/A. Sotunde
কারণ একটাই নয়
ওকরা পাতার বিষয়টি ঠিক সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ অনেকের ধারণা আমালা নামের আরেক খাবার এর জন্য দায়ী৷ লাল আলু আর কাসাভা থেকে তৈরি আটা দিয়ে এই খাবার বানানো হয়৷ এর পেছনে একটি ব্যাখ্যাও আছে৷ খাবারটি নাকি বিশেষ হরমোন তৈরি করে, যা ডিম্বাণুর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: Reuters/A. Sotunde
আসল কারণ কী
কারণ খুঁজতে রয়টার্স দ্বারস্থ হয়েছিল নাইজেরিয়ার রাজধানী লাগোসের একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে৷ তিনি বলেছেন, লাল আলুর যেই খাবারের কথাটি মানুষ বলছেন সেটি সঠিক নয়, কেননা একই ধরণের খাবার বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও প্রচলিত আছে৷ তাঁর মতে সম্ভবত নিজেদের মধ্যে বিবাহ আর জিনগত ঐতিহ্যের কারণেই এখানকার নারীদের যমজ জন্মদানের প্রবণতা বেশি৷
ছবি: Reuters/A. Sotunde
বিশ্বাসে মেলায় বস্তু!
কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন স্থানীয় অধিবাসীরা৷ তাঁদের মতে ওকরা পাতা খাওয়ার উপরই বিষয়টি নির্ভর করে৷ এজন্য সেটি সেদ্ধ করে জমিয়ে না রেখে সাথে সাথেই খেতে হবে৷ ওয়েনিক বেমিমোর নামের এক নারী এর প্রমাণ পেয়েছেন বলে রয়টার্সের সাংবাদিককে জানান৷ ‘‘আমি অনেক ওকরা পাতা খাওয়ায় আট জোড়া যমজ সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/A. Sotunde
8 ছবি1 | 8
এরপর গতবছরের অক্টোবরে জাপানে সবচেয়ে ছোট ছেলেশিশু জন্মগ্রহণ করে মাত্র ২৫৮ গ্রাম ওজন নিয়ে৷ সাত মাস পর গত এপ্রিলে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে রিইউসকে সেকিয়া নামের ওই শিশু৷
আশ্চর্য শিশু
সান দিয়েগোর হাসপাতালে জন্মের পর শিশু সেইবি মাত্র এক ঘণ্টা সময় বাঁচতে পারে বলে তার বাবাকে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা৷ ‘‘তবে সেই এক ঘণ্টা রূপান্তরিত হয়েছে দুই ঘন্টায়, এরপর এক দিনে এবং তারপর এক সপ্তাহে,’’ বলেছেন শিশুটির মা৷
পরে সবচেয়ে কম ওজনের শিশুদের তালিকার শুরুতে স্থান করে নেয় সেইবি৷ যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আইওয়া সংরক্ষণ করে থাকে এমন তালিকা৷
চিকিৎসকরা বলছেন, মায়ের গর্ভে ২৮ সপ্তাহের কম সময় নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ থাকে৷ প্রায়শই স্বাস্থ্য জটিলতার মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে তারা৷
ডাক্তার আর পরিবারের সদস্যদের আশ্চর্য করে দিয়ে ওজন বাড়তে থাকে শিশু সেইবির৷ পাঁচ মাস নবজাতকদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে থাকার পর এখন তার ওজন দাঁড়িয়েছে ২ কেজি ২৬ গ্রামে৷
‘‘আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি৷ সে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট শিশু এবং সে আমারই!’’ বলেছেন শিশুটির মা৷
এমবি/এসিবি (এএফপি, এপি)
বিশ্বের ১৭৫ মিলিয়ন শিশুরই প্রি-স্কুল শিক্ষা নেই
তিন থেকে ছয় বছর বয়সি বিশ্বের অর্ধেক শিশুরই অর্থের অভাবে প্রি-স্কুল শিক্ষা হয় না৷ ইউনিসেফ এক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ করতে সারা বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
ছবি: DW/H. Fischer
শিশুদের জন্য অর্থ বিনিয়োগের আহ্বান
বিশ্বের অর্ধেক শিশুর অর্থের অভাবে প্রি-স্কুল শিক্ষা হয় না৷ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর পরিস্থিতি আরো খারাপ৷ জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় আরো অর্থ বিনিয়োগ করতে সারা বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/S. Auth
জার্মানির অবস্থা
বর্তমানে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের একটি গবেষণায় জানা গেছে, ১৭৫ মিলিয়ন শিশুর প্রাথমিক শৈশব শিক্ষায় কোনো প্রবেশাধিকার নেই৷তবে জার্মানিতে ৯৫ শতাংশেরও বেশি শিশু প্রি-স্কুল শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মাতৃশিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে
দারিদ্র্য ছাড়াও অনেকক্ষেত্রে সংঘাত ও বিপর্যয় শিশুদের জন্য প্রি- স্কুল শিক্ষায় বাধা হয়ে থাকে৷ জাতিসংঘের গবেষণায় দেখা যায়, এক্ষেত্রে মাতৃশিক্ষাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ দেখা গেছে, যেসব মায়ের মাধ্যমিক শিক্ষা আছে, তাঁরা, যেসব মায়ের প্রাথমিক শিক্ষাও নেই, তাদের চেয়ে সন্তানদের প্রাক-স্কুল পরিষেবাগুলি পাঁচগুণ বেশি ব্যবহার করেন৷
ছবি: Imago//biky
শিশুদের জন্য দশ শতাংশ বাজেট
জাতীয় শিক্ষা বাজেটের অন্তত দশ শতাংশ শিশুদের প্রি-স্কুল শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে ইউনিসেফ প্রাথমিকভাবে সকল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷ তবে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে সারা বিশ্বে ৯ দশমিক ৩ মিলিয়ন নতুন প্রি-স্কুল শিক্ষকের প্রয়োজন৷
ছবি: DW/A. G. Kakar
উচ্চশিক্ষার সুযোগ
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, যেসব শিশু প্রি- স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়, তাদের একই ক্লাস পুনরাবৃত্তি বা স্কুলে পড়াশোনা বাদ দেওয়ার আশঙ্কা কম থাকে৷ গবেষণায় জানা যায়, প্রি -স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া শিশুদের পরবর্তীতে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ যেমন বেশি থাকে, তেমনি সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও সৃজনশীল দক্ষতা অর্জনের সুযোগও বেশি হয়৷
ছবি: picture-alliance
শ্রম বাজারে আরো প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতা
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রাক-বিদ্যালয়ের শিশুরা শ্রম বাজারে আরো বেশি প্রতিযোগিতামূলক এবং পরবর্তীকালে তাদের দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নে মূল্যবান অবদান রাখতে পারে৷ তাছাড়া শিশুরা প্রি-স্কুলে গেলে সেই সময় তাদের বাবা-মা-ও কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন৷
ছবি: Colourbox
যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করতে হবে
‘‘আমরা যদি আমাদের সন্তানদেরকে ভালোভাবে মানুষ করতে এবং সুন্দর জীবন দিতে চাই, তাহলে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের প্রি-স্কুল শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করতে হবে,’’ বলেন হেনরিয়েটা ফোর৷