গ্রহণকালের ফেরে এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট৷ মাঠ থেকে তাই আর জয় নিয়ে ফেরে না জাতীয় দল৷ এমনকি হেরে যায় আফগানিস্তানের মতো নবীন টেস্ট খেলুড়ে দেশের কাছে; দেশের মাটিতে৷ খামচে ধরা এই দুঃসময়ে দিশেহারা লাল-সবুজের ক্রিকেট মানচিত্র৷
বিজ্ঞাপন
এমন নয় যে, পরাজয়ের সঙ্গে সেভাবে পরিচয় নেই বাংলাদেশের৷ যতটা হার, তার চেয়ে বেশি জয় তো গেল কয়েক বছরের চিত্র মাত্র৷ ক্যানভাসের পুরো ছবিটায় বরং পরাজয়ের আঁকিবুকিই বেশি৷ আফগানদের বিপক্ষে এই ম্যাচের আগে ৮৫ টেস্ট হেরেছে; হেরেছে ২৪১ ওয়ানডে এবং ৫৭ টি-টোয়েন্টি৷ তবে সাকুল্যের এই ৩৮৩ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হারের কোনোটিই এমন সতর্কঘন্টা বাজাতে পারেনি, যতটা পাগলাঘন্টি বাজাচ্ছে রশিদ খানের দলের কাছে টেস্ট হারে৷ বাংলাদেশ ক্রিকেটের হর্তাকর্তারা তা আমলে আনছেন কিনা, সেটি অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ৷
আর যদি আমলে না আনেন, তাহলে তো দেশের ক্রিকেটেরই চোরাবালিতে তলিয়ে যাবার আশঙ্কা৷
একটি মাত্র ম্যাচ হারে এমন আতঙ্ক বাড়াবাড়ি ঠেকতে পারে৷ কিন্তু আফগানিস্তানের কাছে টেস্টকে ‘শুধু একটি ম্যাচ হার' হিসেবে দেখার উপায় নেই যে! বছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দুঃস্বপ্নের গহবরে৷ নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে যাচ্ছেতাই পরাজয় সব ম্যাচে৷ আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি জয় একটু আলোর রেখা দেখায় বটে৷ তাতে অন্ধকার লেপ্টে দেয় বিশ্বকাপের বিবর্ণ পারফরম্যান্স৷ এরপর শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই৷ তারপর আফগানদের বিপক্ষে টেস্ট হার৷
এটিকে তাই বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ কোথায়!
আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের আবহে এমন কিছুর শঙ্কা অবশ্য কারোই ছিল না৷ নতুন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো হয়তো নিজেকে খানিকটা ভাগ্যবানই ভাবছিলেন৷ কারণ তাঁর আগের দুজন স্থায়ী কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে এবং স্টিভ রোডসের প্রথম সিরিজ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে৷ তুলনায় ঘরের মাঠে আফগানরা তো সহজ প্রতিপক্ষ৷ টেস্ট বলে তা আরো সহজ! মাত্রই দুটো টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাই ওদের সম্বল৷ সে পুঁজি নিয়েই যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের দেউলিয়াত্ব এভাবে প্রকাশ করে দেবে রশিদ খানের দল, সেটি ডমিঙ্গো নিশ্চয়ই ভাবতেই পারেননি৷ অন্য কেউও না!
যেসব টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ
সেই ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা৷ তার মধ্যে জয় এসেছে ২১টিতে৷ চলুন জেনে নিই সেই টেস্টগুলোর কথা৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
আগস্ট ৩০-সেপ্টেম্বর ০৩, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
পরপর ২ টেস্ট পাকিস্তানকে নিজেদের মাটিতে হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ৷ রাওয়ালপিন্ডিতে বাবর আজমদের দুই ইনিংসে ২৭৪ ও ১৭২ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেন শান্তরা৷ লিটনের সেঞ্চুরি, মিরাজের অর্ধশতক ও ৫ উইকেট, হাসান মাহমুদের ৫ উইকেট এই জয়ে বড় ভূমিকা রাখে৷ এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মধ্য সিরিজ জয় পায় বাংলাদেশ৷
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance
আগস্ট ২১-২৫, ২০২৪, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান
টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ১০ উইকেটের জয়। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ১৪তম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়। টেস্টে নবম দল হিসেবে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাকি থাকলো শুধু ভারত ও সাউথ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটা সপ্তম জয়। ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানের বড় সংগ্রহ তোলে। পাকিস্তানের ২য় ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে।
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর, ২০২৩, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানের বিশাল এক জয় পায় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বাংলাদেশের হয়ে ৬ উইকেট নেন তাইজুল। নিউজিল্যান্ড : ৩১৭ ও ১৮১, বাংলাদেশ:৩১০ ও ৩৩৮৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
জুন ১৪-১৮ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান
মিরপুরে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ৷ ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ, যা টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের তিন নম্বরে আছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৩৮২ রানে অল-আউট হয়। পালটা ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান ১৪৬ রান তুলেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ব্যাটিং ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ। শেষ ইনিংসে আফগানিস্তান অল-আউট হয় ১১৫ রানে।
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
এপ্রিল ৩-৭ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৭ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা৷ আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংসে ২১৪ এবং ২য় ইনিংসে ২৯২ করে৷ বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৩৬৯ এবং ২য় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৩৮ রান করে ৭ উইকেটের জয় পায়৷
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
জানুয়ারি ১-৫ (২০২২), প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে টেস্টে ঐতিহাসিক এক জয় পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটেই এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম টেস্টের শেষ দিনে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে মুমিনুলবাহিনী।
ছবি: Marty Melville/Photospor/AP/picture alliance
জুলাই ৭-১১ (২০২০) প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
হারারের একমাত্র টেস্ট ২২০ রানে জিতেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের দেওয়া ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবোয়ে অলআউট হয় ২৫৬ রানে। এই জয়ের অন্যতম রূপকার মেহেদী হাসান মিরাজ।
মুশফিকুর রহিমের দ্বিশতক (২০৩) আর মুমিনুলের শতকে (১৩২) ভর করে বাংলাদেশ জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এক ইনিংস ও ১০৬ রানের জয় পায়৷ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবোয়ে ২৬৫ রান করেছিল৷ এরপর বাংলাদেশ খেলতে নেমে ছয় উইকেটে ৫৬০ রান তোলে৷ পরের ইনিংসে জিম্বাবোয়ে ১৮৯ রান করে অলআউট হয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ৩০-ডিসেম্বর ২, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মিরপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ৷ এই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলো অন করানো ও ইনিংস ব্যবধানে জয়ের অনির্বচনীয় দুটি স্বাদ দল পেল একদিনেই৷ দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০তে জয়৷ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ১১৭ রানে ১২ উইকেট, বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি৷ ম্যান অব দা ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ম্যান অব দা সিরিজ সাকিব আল হাসান৷
ছবি: Picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
নভেম্বর ২২-২৪, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
প্রতিপক্ষকে দুই ইনিংস মিলিয়ে সবচেয়ে কম বলে দুবার অলআউট করে জেতা ম্যাচের নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ৷ আড়াই দিনে টেস্ট জিতেছিল টাইগাররা৷ সাড়ে সাত সেশনের মতো খেলা হয়েছে এই টেস্টে৷ এটিই টেস্টে বাংলাদেশের দ্রুততম জয়৷ নাঈম হাসান প্রথম ইনিংসে পেয়েছেন ৫ উইকেট৷ দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল পেয়েছেন ৬ উইকেট৷ মুমিনুল হক পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ১১-১৫, ২০১৮ প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ২১৮ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ৷ সিরিজ ১-১ ড্র৷ ৪৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় সেশনে জিম্বাবুয়ে থামে ২২৪ রানে৷ ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সফলতম বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ৷ দ্বিশত হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম৷ সিরিজ সেরা হয়েছেন তাইজুল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
জানুয়ারি ৬-১০, ২০০৫, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ২২৬ রানে জয়ী
টাইগাররা প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় চট্টগ্রামে৷ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রান তোলে স্বাগতিকরা৷ আর দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে৷ প্রথম ইনিংসে জিম্বাবোয়ের স্কোর ছিল ৩১২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৪ রান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জুলাই ৯-১৩, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ: বাংলাদেশ ৯৫ রানে জয়ী
দেশের বাইরে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয়ের দেখা পায় ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই৷ কিংসটাউনে সেই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯৫ রানে হারায় টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
জুলাই ১৭-২০, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্টইন্ডিজ: বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়ী
সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল সাফল্যে ঠাসা৷ দ্বিতীয় টেস্টে সেন্ট জর্জেসে স্বাগতিকদের হারায় টাইগাররা, সেবার জিতেছিল চার উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Brooks
এপ্রিল ২৫-২৯, ২০১৩, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৪৩ রানে জয়ী
জিম্বাবোয়ের হারারেতে স্বাগতিকদের আবার ‘বধ’ করে টাইগাররা৷ প্রথম ইনিংসে ৩৯১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৯১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ৷ জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৮২ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবোয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Njikizana
অক্টোবর ২৫-২৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ তিন উইকেটে জয়ী
ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়৷ তিন দিনে শেষ হওয়া সেই টেস্টে শুরুতে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে ২৪০ রান করে জিম্বাবোয়ে৷ আর দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ১১৪৷ অন্যদিকে, প্রথম ইনিংসে ২৫৪ আর দ্বিতীয় ইনংসে ৭ উইকেটে ১০৭ রান তুলে জিতে যায় স্বাগতিকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ৩-৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৬২ রানে জয়ী
খুলনায় জিম্বাবোয়েকে হারায় বাংলাদেশ৷ সেই টেস্ট পাঁচ দিন পর্যন্ত গড়ালেও শেষমেশ তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবোয়ে৷ ফলাফল স্বাগতিকদের ১৬২ রানের জয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ১২-১৬, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৮৬ রানে জয়ী
আবারো চট্টগ্রামে জিম্বাবোয়েকে হারায় টাইগাররা৷ সেবার ব্যবধান ছিল ১৮৬ রানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
অক্টোবর ২৮-৩০, ২০১৬, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড: বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী
এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্রিকেট শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট জয় এটি৷ ঢাকায় ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করে টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
মার্চ ১৫-১৯, ২০১৭, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
একদিকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের শততম ম্যাচে জয়, অন্যদিকে প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়-দুই দিক দিয়েই ঐতিহাসিক বাংলাদেশের এই টেস্ট ম্যাচটি৷ পঞ্চম দিনে ৪ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা৷ ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
আগস্ট ২৭-৩০, ২০১৭, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া: বাংলাদেশ ২০ রানে জয়ী
প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ে৷ এটা ছিল সাকিব ও তামিমের ৫০তম টেস্ট। সাকিব মোট ১০ উইকেট নিয়ে এবং তামিম দুই ইনিংসেই অর্ধশত করে স্মরণীয় করে রাখলেন এই টেস্টকে৷ ম্যাচ সেরা সাকিব আল হাসান৷ দ্রষ্টব্য: ইএসপিএন ক্রিকইনফো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
21 ছবি1 | 21
টেস্টের আগে থেকেই উইকেট নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা৷ বছর তিনেক হল নিজেদের মাঠে প্রবল স্পিনিং উইকেট বানিয়ে সাফল্যের ‘চোরাপথ' খুঁজে নেয় বাংলাদেশ৷ সেভাবেই হারায় ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তিদের৷ যাঁদের কারোই বোলিং আক্রমণের মূল শক্তি স্পিন নয়৷ আফগানিস্তানের মূল শক্তি স্পিন৷ রশিদ-নবী-কায়েস-জহিরের বিপক্ষে কেমন উইকেট বানানো হবে, এ নিয়ে সেজন্য চলে বিস্তর গবেষণা৷ শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামে যে ২২ গজে খেলা হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট নন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান৷ এটি নাকি যথেষ্ট স্পিনিং উইকেট না৷ ওদিকে টেস্টের মাঝপথেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান অবধারিত পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে উইকেট নিয়ে উগড়ে দেন নিজের ক্ষোভ৷ এটি নাকি স্পিনিং উইকেট৷ স্পিননির্ভর আফগানদের বিপক্ষে এমন উইকেটে খেলার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি৷
দুজনের বিপরীতমুখী দাবির পরও এ সত্য পাল্টায়নি যে, উইকেট দুই দলের জন্যই সমান৷ হ্যাঁ, টস জিতে আফগানেরা এগিয়ে গেছে বটে৷ কিন্তু নিজেদের তৈরি করা ফাঁদে পড়ার এ আশঙ্কা নিয়েই তো এমন উইকেট তৈরির চর্চায় গিয়েছে বাংলাদেশ৷ ঘরের মাঠে আগের ১০ টেস্টের যে পাঁচটিতে জেতে, এর সবগুলোর পূর্বশর্তে স্বাগতিক অধিনায়কের টস জয়ের বাধ্যবাধকতা৷ এবার জেতেননি বলে টেস্টের প্রথম বল গড়ানোর আগেই যেন ম্যাচ থেকে গড়িয়ে ছিটকে যাবার দশা বাংলাদেশের৷
সেই মাঠের ক্রিকেটটাও সাকিবের দল খেলেছে যাচ্ছেতাই৷ আফগান স্পিন চতুষ্টয়ের বিপক্ষে রীতিমতো অসহায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা৷ বাংলাদেশের চার স্পিনার আবার প্রতিপক্ষ ব্যাটিং লাইনকে ততটা ভোগাতে পারেনি৷ যে কারণে ম্যাচে আফগানেরা একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি করে চারটি ফিফটি; যার মধ্যেও ৯২ ও ৮৭ দুটি ইনিংস প্রায়-সেঞ্চুরি! আর দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের একটি মাত্র পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস৷ তা-ও মোটে ৫২ রানের!
তুলনামূলক অচেনা টেস্ট ক্রিকেটে আফগানরা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে কী দারুণভাবে! বিপরীতে খেই হারিয়ে খাবি খাবার দশা বাংলাদেশের৷ অতিথি অধিনায়ক রশিদ খান ম্যাচে ১১ উইকেট নেবার পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে করেন গুরুত্বপূর্ণ ফিফটি৷ আবার স্বাগতিক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান হয়ে থাকেন অবিমৃশ্যকারিতার চূড়ান্ত উদাহরণ৷ শেষ দিনের শেষ বিকেলের ওই শটের কারণে৷
পুরো টেস্টে বাজে খেলা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সামনে ড্রয়ের সুযোগ আসে বৃষ্টির দাক্ষিণ্যে৷ শেষ বেলায় চার উইকেট নিয়ে ১৮.৩ ওভার টিকে থাকলেই হত! সাকিব করলেন কী, নেমে অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের প্রথম বলেই মারতে গিয়ে আউট! যেন সেটি চার বা ছক্কা হলেই জিতে যাবে বাংলাদেশ! যেন ওভারপ্রতি ১৩.৯৩ রান করে নিয়ে ১৮.৩ ওভারে ২৫৫ রান করে ফেলবে দল! অন্যরা অধিনায়কের অনুগামী হয়ে ঐতিহাসিক এক জয় আফগানিস্তানকে উপহার দেয় বাংলাদেশ৷ নিজেরা ঐতিহাসিক পরাজয়ের শিকার হয়ে৷
ম্যাচের আগ-পরের ছয় দিনের মধ্যে চার দিনই সংবাদ সম্মেলনে আসেন অধিনায়ক সাকিব৷ অহেতুক নয়৷ তিনি যে টেস্ট অধিনায়ক থাকতে চান না, সে বার্তা স্পষ্ট করে দেবার জন্যই হয়তো-বা৷ ওদিকে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান ফল নিয়ে নিজের ক্রোধের কথা জানিয়েছেন৷ চারিদিকে তাই নানা কথা; হরেক গুঞ্জন৷ রীতিমতো হ-য-ব-র-ল অবস্থা৷ সামনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগে যদি সবার সুর না মেলে, তাহলে অসুর ভর করবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপর৷
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ কী?
বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অ্যাশেজ শুরু হচ্ছে৷ এর মধ্য দিয়েই শুরু হচ্ছে দুই বছরব্যাপী বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ৷ ছবিঘরে থাকছে নতুন এই প্রতিযোগিতার বিস্তারিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Copley
টেস্টের সেরা বের করা
ওডিআই ও টি-টোয়েন্টির মতো এবার টেস্টেরও বিশ্বসেরা বের করতে চায় আইসিসি৷ এছাড়া দ্বিপক্ষীয় টেস্ট সিরিজগুলো আরও অর্থবহ করতে দুই বছর মেয়াদি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করা হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অ্যাশেজ দিয়ে এই প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে৷ ফাইনাল হবে ২০২১ সালের জুনে, লর্ডসে৷
ছবি: Imago Images
যারা খেলছে
নয়টি দেশ এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছে৷ বাংলাদেশও আছে এর মধ্যে৷ বাকিরা হলো অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, সাউথ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ৷
ছবি: bdnews24.com/M. Mostafigur Rahman
কয়টি খেলা?
হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ফরম্যাটে প্রতিটি দেশ তিনটি করে মোট ছয়টি সিরিজ খেলবে৷ একেকটি সিরিজে অন্তত দুটি ম্যাচ থাকবে৷ এছাড়া তিন, চার ও পাঁচ ম্যাচের সিরিজও রয়েছে৷
ছবি: Reuters/D. Gray
সবদলের ম্যাচ সংখ্যা সমান নয়
প্রতিযোগিতায় একেক দেশের টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা একেক রকম হবে৷ যেমন দুই বছরে ইংল্যান্ড খেলবে সর্বোচ্চ ২২টি টেস্ট৷ আর সবচেয়ে কম খেলবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা, ১৩টি করে৷
ছবি: bdnews24.com/M. Mostafigur Rahman
পয়েন্ট সিস্টেম
একেকটি সিরিজে দুটি দল ১২০ পয়েন্টের জন্য লড়বে৷ সেক্ষেত্রে দুই টেস্টের সিরিজ হলে একটি ম্যাচ জিতলে ৬০ পয়েন্ট পাওয়া যাবে৷ সিরিজ তিন টেস্টের হলে ম্যাচপ্রতি পয়েন্ট হবে ৪০ করে৷ চার টেস্টেট সিরিজে ম্যাচপ্রতি পয়েন্ট ৩০ আর পাঁচ টেস্টের সিরিজে এক ম্যাচে জয়ের জন্য ২৪ পয়েন্ট পাওয়া যাবে৷ কোনো টেস্ট টাই হলে পয়েন্ট ভাগাভাগি হবে৷ আর ড্র হলে প্রতিটি দল এক-তৃতীয়াংশ পয়েন্ট পাবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
ফাইনাল
লিগ ভিত্তিতে খেলা শেষে যে দুই দলের পয়েন্ট সর্বোচ্চ থাকবে তারা লর্ডসে ফাইনাল খেলবে৷ ফাইনাল টাই কিংবা ড্র হলে দুই দলই যৌথ চ্যাম্পিয়ন হবে৷
ছবি: AP
বাংলাদেশের খেলা
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট নভেম্বরে ভারতের বিরুদ্ধে৷ ভারত সফরে দুটি টেস্ট খেলবে টাইগাররা৷ এরপর বাংলাদেশ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুটি ও ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুটি টেস্ট খেলবে৷ সেগুলো কোথায় হবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি৷
ছবি: bdnews24.com/M. Mostafigur Rahman
টাইগারদের আরও খেলা
২০২০ সালের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুটি ও আগস্টে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে দুটি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ৷ এরপর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে তিনটি টেস্ট খেলার কথা টাইগারদের৷ এই প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কোনো টেস্ট খেলবে না বাংলাদেশ৷ এমনিভাবে প্রতিটি দলই মোট ছয়টি দেশের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
8 ছবি1 | 8
আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট হার হয়তো সেটির কেবল শুরু!