তালেবান শাসনে আফগানিস্তানের সামাজিক চিত্র কেমন হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আফগানিস্তান কী ভূমিকা নেবে, তা-ও আলোচনার বিষয়। এই পরিস্থিতিতে তালেবান মুখপাত্রের সাম্প্রতিক বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলবার তিনি দুইটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মার্কিন বাহিনীকে ৩১ অগাস্টের মধ্যে দেশ ছাড়তেই হবে। এবং আফগানরা যেন কাবুল বিমানবন্দরে না আসেন। তার বক্তব্য, বিশেষ করে স্কিলড নাগরিকদের আফগানিস্তানে প্রয়োজন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের আগামী দিনের আফগানিস্তানে প্রয়োজন। ফলে তারা যেন দেশ ছেড়ে কোথাও না যান।
দিল্লিতে আফগান শরণার্থীদের বিক্ষোভ
কাজের দাবিতে দিল্লিতে জাতিসংঘের দফতরের বাইরে আফগান শরণার্থীদের বিক্ষোভ। আন্দোলন চলবে আগামী ১০ দিন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ইউএনএইচসিআর-এর সামনে
জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত বিষয় সামলায় ইউএনএইচসিআর। দিল্লিতে তাদের হাই কমিশনের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেছেন আফগান শরণার্থীরা।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
কাজের দাবি
আফগান শরণার্থীদের দাবি, দিল্লিতে তারা শরণার্থী হিসেবে থাকতে পারেন, কিন্তু কাজ করতে পারেন না। ফলে জীবনধারণ করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অবিলম্বে তাদের কাজের অধিকার দিতে হবে বলে জানিয়েছেন শরণার্থীরা।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
হাজার হাজার শরণার্থী
দিল্লিতে প্রায় ২২ হাজার আফগান শরণার্থী থাকেন। বহু বছর ধরে তারা দিল্লির বাসিন্দা। সাম্প্রতিক কালে আরো শরণার্থী এসেছেন আফগানিস্তান থেকে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ভবিষ্যত কী
শরণার্থীদের বক্তব্য, আফগানিস্তানের যা অবস্থা, তাতে তারা দেশে ফিরে যেতে পারবেন না। অন্য দেশে শরণার্থী হয়েই থাকতে হবে। কিন্তু সেখানে কাজের অধিকার না পেলে জীবনধারণ করাই অসম্ভব।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
শরণার্থী কার্ড
এমনই শরণার্থী কার্ড দেওয়া হয় জাতিসংঘের দপ্তর থেকে। অভিযোগ, এই কার্ড দেখিয়ে ভারতে থাকা যায়, কিন্তু কাজের সুযোগ পাওয়া যায় না। শিক্ষা-স্বাস্থ্যের অধিকার থেকেও বঞ্চিত থাকতে হয়।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
বিক্ষোভে শিশুরাও
দিল্লির বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে শিশুরাও। তাদের মুখে স্লোগান, 'আমাদের ভবিষ্যত কী'? অনেকেরই দাবি, তারা ইউরোপ বা অ্যামেরিকায় শরণার্থী হিসেবে যেতে চায়, কিন্তু জাতিসংঘ সে সুযোগও দিচ্ছে না।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নয়
আফগান শরণার্থীদের দাবি, তাদের আন্দোলন ভারতের বিরুদ্ধে নয়। ভারত তাদের থাকতে দিয়েছে, তারা কৃতজ্ঞ। কিন্তু জাতিসংঘ তাদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
আন্দোলন চলবে
শরণার্থীরা জানিয়েছেন, ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
8 ছবি1 | 8
অ্যামেরিকা এবং ন্যাটোর কাছেও একই আবেদন জানিয়েছে তালেবান। বলা হয়েছে, তারা যেন 'আফগান এক্সপার্ট' অর্থাৎ, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তারদের নিজেদের দেশে না নিয়ে যান।
তালেবানের এই বক্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসেছেন আহমেদ গনি। পেশায় চিকিৎসক। ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, ''তালেবানের আশঙ্কা, গুরুত্বপূর্ণ পেশার সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ মানুষই দেশ ছাড়ছেন। সে কারণেই এই নির্দেশ জারি করতে হয়েছে।'' কিন্তু পেশাজীবীরা কি তা মানবেন? গনির বক্তব্য, পুরনো তালেবান শাসন যারা দেখেছেন, তারা কেউ আফগানিস্তানে থাকতে চাইছেন না। গনিকেও এক সময় তালেবান বন্দি করেছিল। সেই ইতিহাস বলে চিকিৎসকের বক্তব্য, ''কে চাইবে অনিশ্চয়তা এবং কড়া অনুশাসনের মধ্যে জীবন কাটাতে?'' গনির বক্তব্য, তালেবান শাসনে নারীদের অবস্থান কী হবে, তা-ও এখনো স্পষ্ট নয়। এই অনিশ্চয়তা কোনো শিক্ষিত মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া মুশকিল। সে কারণেই অনেকে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন।