আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়া আফগান নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ইউরোপের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
বিজ্ঞাপন
‘‘বিতাড়নের (আশ্রয়প্রার্থী) সংখ্যা বাড়াতে দৃঢ়সংকল্প ইউরোপীয় সরকারগুলো অবৈধ ও বেপরোয়া নীতি বাস্তবায়ন করছে,’’ বলেন অ্যামনেস্টির শরণার্থী ও অভিবাসী অধিকার বিষয়ক গবেষক আনা শেয়া৷ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই মন্তব্য করেন তিনি৷ শেয়া বলেন, আফগানিস্তানে সহিংসতা যে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে সে ব্যাপারে ‘ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ' করে রেখেছে ইউরোপীয় সরকারগুলো৷ দেশটিতে শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত আফগানদের তাদের দেশে ফেরত না পাঠানোর অনুরোধ করেছে অ্যামনেস্টি৷
সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে তালেবানের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে এই আহ্বান জানালো মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি৷ রাজধানী কাবুলেও বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ জাতিসংঘের হিসেবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে আফগানিস্তানে বিভিন্ন হামলায় কমপক্ষে ১,৬৬২ জন সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে৷ এই সময়ে আহত হয়েছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ৷ হতাহতদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ কাবুলে হামলার ঘটনার শিকার হয়েছেন৷
অ্যামনেস্টির গবেষক শেয়া জানান, ইউরোপ থেকে আফগানদের ফেরত পাঠানোর সংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ বেড়েছে৷ অ্যামনেস্টি বলছে, ২০১৫ ও ২০১৬'র মধ্যে এই সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে ৩,২৯০ থেকে ৯,৪৬০ হয়েছে৷ ‘বিদেশি সহায়তার উপর নির্ভরশীল’ হওয়া সত্ত্বেও আফগান সরকারের উচিত মানুষ ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা না করা, বলছে অ্যামনেস্টি৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা ইউরোস্ট্যাট বলছে, জুন পর্যন্ত তার আগের ১২ মাসে এক লক্ষ আট হাজার ৫৫ জন আফগান নাগরিকের নাম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে৷ সংখ্যার বিচারে এক্ষেত্রে আফগানদের চেয়ে এগিয়ে আছে একমাত্র সিরীয়রা৷
জার্মানি থেকে সবচেয়ে বেশি বিতাড়ন
অ্যামনেস্টির রিপোর্ট বলছে, ইউরোপের মধ্যে জার্মানি থেকে সবচেয়ে বেশি আফগানকে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ সংখ্যার হিসেবে সেটি ৩,৪৪০ জন৷ এর পরে আছে গ্রিস (১,৪৮০), সুইডেন (১,০২৫), ব্রিটেন (৭৮৫) ও নরওয়ে (৭৬০)৷
আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়া আফগানদের দেশে ফেরত পাঠানোর জার্মান সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনীতিবিদ ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)
১৪ সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মানি থেকে আফগানিস্তানে বিতাড়ন
২০১৬ সালের মাঝমাঝি সময়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া ৩৪ আফগান শরণার্থীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷ সেটা শুরু৷ এরপর মাঝখানে কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারো বিমানে করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে তাঁদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
বিমানে করে ফেরত পাঠানো
গত ১২ সেপ্টেম্বর ১৫ জন শরণার্থীকে ডুসেলডর্ফ বিমানবন্দর থেকে আফগানিস্তানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বিমানে তুলে দেয়া হয়৷ প্রত্যেকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হয়ে গেছে৷ গত মে মাসে কাবুলে জার্মান দূতাবাসের সামনে প্রাণঘাতি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের পর আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল৷ এখন আবার শুরু হয়েছে৷ জার্মানির সবুজ দল এবং বামদল এর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
একটা সুযোগের আশায় লড়াই
গত মার্চে কটবুসের একদল শিক্ষার্থী গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়৷ তিন আফগান সহপাঠীকে যাতে ফেরত পাঠানো না হয়, সেজন্য প্রচারণা চালিয়েছিল তারা৷ এজন্য তারা বিক্ষোভ করে, স্বাক্ষর সংগ্রহ করে৷ এমনকি আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া সেই তিন আফগান শিক্ষার্থীর পক্ষে লড়তে একজন আইনজীবী নিয়োগের অর্থও সংগ্রহ করা হয়৷ যে তিন শিক্ষার্থীর জন্য এত আয়োজন, তাদের একজনকে দেখা যাচ্ছে ওপরের ছবিতে৷
ছবি: DW/S.Petersmann
‘কাবুল নিরাপদ নয়’
‘প্রাণঘাতি বিপদের দিকে যাত্রা’, গত ফেব্রুয়ারি মাসে মিউনিখ বিমানবন্দরে প্রতিবাদস্বরুপ দেখানো এক পোস্টারে একথা লেখা ছিল৷ যেসব বিমানবন্দর থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো হয়, সেসব বিমানবন্দরে মাঝেমাঝেই হাজির হন এমন প্রতিবাদকারীরা৷ গত ডিসেম্বর থেকে মে মাস অবধি অনেক আফগান শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ চলতি বছর এখন অবধি আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে ২৬১ জনকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
ভ্যুর্ৎসবুর্গ থেকে কাবুল
মধ্য ত্রিরিশে পা দেয়া বাদাম হায়দারিকে সাত বছর জার্মানিতে কাটানোর পর গত জানুয়ারিতে দেশে ফেরত যেতে বাধ্য করা হয়৷ তিনি অতীতে ইউএসএইডে কাজ করেছেন এবং তালেবানের কাছ থেকে বাঁচতে জার্মানিতে এসেছিলেন৷ তালেবানের ভয় এখনো তাড়া করছে হায়দারিকে৷ তিনি আশা করছেন, শীঘ্রই হয়ত আবারো জার্মানিতে ফিরতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C.F. Röhrs
নিগৃহীত সংখ্যালঘু
গত জানুয়ারি মাসে আফগান হিন্দু সমীর নারাংকে কাবুলে ফেরত পাঠানো হয়৷ ফেরত পাঠানোর আগ অবধি তিনি জার্মানির হামবুর্গে পরিবরাসহ ছিলেন৷ জার্মান পাবলিক রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আফগানিস্তান নিরাপদ নয়৷’’ যেসব সংখ্যালঘু রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়ায় আফগানিস্তানে ফেরত যাচ্ছেন, তারা মুসলিমপ্রধান দেশটিতে সংখ্যালঘু হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Wiedl
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফিরে যাওয়া
পকেটে মাত্র বিশ ইউরো নিয়ে জার্মানি থেকে আফগানিস্তানে ফেরত যান রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে ব্যর্থরা৷ তাঁরা চাইলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংগঠন আইওএম’এর সহায়তা নিতে পারেন৷ তাছাড়া সে দেশে জার্মান অর্থায়নে তাদের মানসিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা রয়েছে৷