সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, আফগানরা মনে করেন ১০ বছর আগের তুলনায় দেশটি এখন ভুল পথে চলেছে৷ এছাড়া জরিপে নিজেদের হতাশার কারণ হিসেবে নিরাপত্তাহীনতা, দুর্নীতি, বেকারত্ব ও অর্থনীতির বেহাল অবস্থাকে দায়ী করেছেন তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
১৮ই নভেম্বর এশিয়া ফাউন্ডেশনে পুরো দেশের মানুষের ওপর চালানো এ মতামত জরিপ প্রকাশিত হয়৷ গতবছর একই ধরনের জরিপে আফগানদের ৫৭.২ শতাংশ মনে করতেন দেশ ঠিক পথে চলছে৷ ৩৭.৯ শতাংশ মনে করতেন ঠিক পথে চলছে না৷ বর্তমানে সেখানে ৫৪.৭ শতাংশ আফগান মনে করেন যে, দেশ ঠিক পথে চলছে৷ আর ৪০.৪ শতাংশ মানুষ ঠিক অন্য কথা ভাবেন৷
‘আফগানিস্তান ইন ২০১৪: আ সার্ভে অফ দ্য আফগান পিপল' শিরোনামে একটি জন সমীক্ষায় দেখা যায়, সেদেশের মানুষের হতাশার প্রধান কারণ নিরাপত্তাহীনতা (৩৮ শতাংশ), দুর্নীতি (২৪ শতাংশ), বেকারত্ব (২৩ শতাংশ), বাজে অর্থনীতি (১০ শতাংশ) এবং নির্বাচনে জালিয়াতি (৯ শতাংশ)৷
রিপোর্টটটি এমন সময় প্রকাশ হলো যখন বিদেশি সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে আফগানিস্তানে জঙ্গি হামলার ঘটনা বেড়েছে৷ এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে নতুন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর, ক্ষমতা ভাগাভাগির চাপে আরো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷
আফগানিস্তানে জীবন ও যুদ্ধ
দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের ছবি তুলছেন ইরানের ফটোগ্রাফার মাজিদ সাঈদি৷ ছবিগুলো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এনে দিয়েছে তাঁকে৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখা যাক আফগানিস্তানকে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলনা!
কাবুলে যু্দ্ধাহতদের জন্য তৈরি একটা নকল হাত নিয়ে খেলছে দুই কিশোরী৷ এমন কিছু ছবিই তেহরানের মাজিদ সাঈদিকে এনে দিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার৷
ছবি: Majid Saeedi
ছবিই বলে হাজার কথা
১৬ বছর বয়স থেকে ছবি তুলছেন মাজিদ৷ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের দিকেই তাঁর সমস্ত মনযোগ৷ জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের মতো ম্যাগাজিন এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর তোলা ছবি৷
ছবি: Majid Saeedi
আফগানিস্তানের শিশুরা
ডিডাব্লিউকে সরবরাহ করা মাজিদের ছবির অনেকগুলোতেই ফুটে উঠেছে আফগান শিশুদের জীবনে যুদ্ধের প্রভাব৷ এ ছবিটি যুদ্ধের কারণে হাত হারানো এক আফগান শিশুর৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদকের অভিশাপ
আফগানিস্তানের খুব বড় এক সমস্যা মাদক৷ বলা হয়ে থাকে বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ মাদকদ্রব্যই নাকি উৎপন্ন হয় আফগানিস্তানে৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম হয় দেশটিতে৷ দেশের অনেক নাগরিক আফিমসেবী৷ জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের অন্তত তিন লক্ষ শিশু নিয়মিত আফিম সেবন করে৷
ছবি: Majid Saeedi
রোল কল
কাবুলের এক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে ক্যাডেটদের রোল কল চলছে৷ জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ আফগান নিরাপত্তাকর্মীদের অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল৷ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করে তোলা৷ ২০১৪ সালের শেষেই অবশ্য আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Majid Saeedi
ভয়ংকর শৈশব
স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সুযোগ শিশুদের কমই মেলে৷ স্কুলে গেলে নগণ্য কারণেও হতে হয় শিক্ষকের কঠোর শাসনের শিকার৷ তা সহ্য করেও পুরো সময় থাকা হয়না, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করতে আগেভাগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের৷ আফগানিস্তানে শিক্ষার হার খুবই কম৷ ২০১১ সালে জার্মান সরকারের উদ্যোগে একটি তথ্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছিল৷ তখন আফগানিস্তানের শতকরা ৭২ ভাগ পুরুষ আর ৯৩ ভাগ নারীই ছিল নিরক্ষর৷
ছবি: Majid Saeedi
বোরখা এবং পুতুল
আফগান নারীরা পুতুল বানাতে শেখার ক্লাসে৷ মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে এখানে পুতুল বানাতে শেখানো হয় তাঁদের৷ আফগান নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যই এ উদ্যোগ৷
ছবি: Majid Saeedi
তালেবানের প্রতিশোধ
২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পরই আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালেবান৷ প্রতিশোধমূলক সে হামলায় প্রাণ যায় চারজনের, আহত হয়েছিলেন ৩৬ জন৷ ছবিতে দু’জন আহতকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলাধুলা
হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে একটু বিশ্রাম৷ আফগানিস্তানে শরীর চর্চা খুব জনপ্রিয়৷
ছবি: Majid Saeedi
যুদ্ধের আবাদ
গত ৩০টি বছর ভীষণ প্রভাব ফেলেছে আফগানদের জীবনে৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধের প্রভাব৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদ্রাসা
কান্দাহারের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুরা৷
ছবি: Majid Saeedi
হত্যার প্রশিক্ষণ
কুকুরের লড়াইও আফগানিস্তানে খুব জনপ্রিয়৷ কুকুরদের এমনভাবে লড়াই করতে শেখানো হয় যাতে তারা প্রতিপক্ষকে একেবারে মেরে ফেলে৷ কুকুরের জীবনেও যুদ্ধের প্রভাব!
ছবি: Majid Saeedi
12 ছবি1 | 12
আফগানিস্তানের এশিয়া ফাউন্ডেশনের বর্তমান কর্ণধার আব্দুল্লাহ আহমাদজাই বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের সময় থেকে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি এসেছে৷ এর ফলে দেশের মানুষের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে৷''
জরিপে আরো দেখা গেছে দেশের নিরাপত্তাবাহিনীর প্রতি ৭০ শতাংশ মানুষের আস্থা রয়েছে৷ ৫৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, বিদেশি সেনাদের দ্বারা এদের প্রশিক্ষণ দরকার৷ তবে এবারের জরিপে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো অর্থনীতি নিয়ে মানুষের মতামত৷ দেশের মানুষ দুর্নীতিকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷
এছাড়া মুখোমুখি প্রশ্ন উত্তরে বেশিরভাগ মানুষ জানিয়েছেন জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণে পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন তাঁরা৷ কেননা আগে কেবল উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের তালেবানের ঘাঁটি থাকলেও বর্তমানে দক্ষিণ পূর্বেও জঙ্গিবাদ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে৷
তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এতটা হতাশ হওয়ার কিছু নেই৷ এর কারণ হিসেবে তাঁরা কিছু পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন৷ তাঁরা বলছেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি গত দু'মাসে যেসব সংস্কার করেছেন, তাতে আফগানরা আশার আলো দেখতেই পারে৷ এছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে এরই মধ্যে তিনি কিছু শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা প্রশংসার দাবি রাখে৷''