আফগানদের সেমিফাইনাল: এ কি রূপকথা?
২৬ জুন ২০২৪ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জনের এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে নিজেদের দলকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন আফগানরা৷ অধিনায়ক রশিদ খান সেখানে একটি নাম, যিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার৷ গুরবাজ, নাভিন, ফারুকীদের মতো এমন আরো অনেক খেলোয়াড় তৈরি করেছে তারা৷
সেমিফাইনালে ওঠার পর রশিদ বলেন, ‘‘অবিশ্বাস্য৷ অনুভূতি ব্যক্ত করার কোনো ভাষা নেই আমার৷ এ অর্জনে দেশে সবাই খুব খুশি৷''
অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশকে হারিয়ে ক্যারিয়ারের এমন অর্জন নিশ্চিত করতে গিয়ে তাকে অবশ্য তালেবানদের দখলে থাকা নিজ দেশ থেকে পরিবারসহ দূরে থাকতে হয়েছে৷ তাদের হোম ম্যাচ খেলতে হচ্ছে আরব আমিরাতে৷ ২০২১ সালে তালেবান ফের আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে৷
এ অর্জন কতটা ইতিবাচক?
পুরুষদের খেলার ক্ষেত্রে এ অর্জন তো ইতিবাচকই বটে৷ খেলাধুলা নিয়ে একটা সাধারণ আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তালেবান সরকার তাদের আন্তর্জাতিক পরিসরে খেলার সুযোগ দিচ্ছে৷ কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি এমন নয়৷ আগের তালেবান আমলের পর নারীদের ক্রিকেট দল এ খেলায় বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠে৷ গত দুই দশকে তারা অনেকটাই এগিয়ে যায়৷ কিন্তু ২০২১ সালে সব শেষ হয়ে যায়৷ তখন নারীদের অনেক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়৷
২০২১ সালে তৎকালীন আফগান নারী ক্রিকেট পরিচালক টুবা সাঙ্গার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি না৷ তারা আমাদের খেলতে দেবে না৷ তালেবান যেখানে নারীদের মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নেয়া হচ্ছে, সেখানে ক্রিকেট খেলা অনেক দূরের বিষয়৷''
আইসিসি কী বলছে?
ক্রিকেটের পরিচালনা পর্ষদ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, আফগানিস্তান তাদের সদস্য থাকতে পারে না৷ কারণ এক, সদস্য দেশগুলোতে অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য হচ্ছে না৷ কারণ তালেবানের প্রভাব স্পষ্ট এবং অনেক খেলোয়াড়কেও তালেবান সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবিতে দেখা গেছে৷
তারওপর আইসিসির নির্দেশনা হলো, দেশে নারীদের খেলারও সুব্যবস্থা ও সাংগঠনিক পরিস্থিতি থাকতে হবে৷ সেটি আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে একেবারেই প্রযোজ্য নয়৷
অন্য দেশগুলোর কী অবস্থা?
অন্য দেশগুলো কোনো উচ্চবাচ্য ছাড়াই আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলে যাচ্ছে৷ অবশ্য টুর্নামেন্ট ছাড়া আফগানরা বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলার সুযোগ কম পায়৷ অস্ট্রেলিয়া অবশ্য ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তারা আফগানদের বিপক্ষে একটি সিরিজ না খেলার সিদ্ধান্ত জানায়৷ এর কারণ তালেবানরা নিজ দেশে নারীদের অধিকার হরণ করছে৷
মার্চে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানায়, ‘‘গত বারো মাসে আমরা অস্ট্রেলিয়ার সরকারের সঙ্গে আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করেছি৷ সরকার আমাদের জানিয়েছে, আফগানিস্তানে নারীদের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে৷''
এর জবাবে রশিদ খান বলেছিলেন, তিনি খুবই ‘দুঃখ পেয়েছেন' এই ঘটনায়৷
তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা খেলেন জানিয়ে বলেন, ‘‘আপনি আমার সতীর্থদের সঙ্গে খেলতে চান না অথচ আমার সঙ্গে খেলতে চান৷ তাহলে সমস্যাটা কোথায়? এর অর্থ আমি আমার সতীর্থদের ছোট করছি, আমার দেশকে ছোট করছি৷''
ক্রিকেটের রাজনীতি কেমন?
আইসিসি এর আগেও এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে৷ শ্রীলঙ্কাকে কিছুদিনের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে নিষিদ্ধ করেছিল৷ তার আগে জিম্বাবোয়েও ২০১৯ সালে এমন নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়৷
আইসিসি সবচেয়ে বড় অবস্থান সম্ভবত নিয়েছিল সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৯৭০ থেকে ১৯৯১ সালের মাঝামাঝি৷ সে সময় তাদের দেশে ‘অ্যাপারথাইড' বা বর্ণবাদের চূড়ান্ত রূপ বিরাজ করছিল৷
ম্যাট পিয়ারসন/জেডএ