1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফগানিস্তানকে আরো এক দশক সহায়তার প্রতিশ্রুতি

৬ ডিসেম্বর ২০১১

বন সম্মেলনে আফগানিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক সমাজের কাছ থেকে আরো এক দশক সাহায্য ও সমর্থন পাওয়ার একটা শক্ত ভিত তৈরি হলো৷ পাকিস্তানের উপস্থিতিহীন এই সম্মেলনে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা প্রশ্নে সঠিক কোন নির্দেশনা পাওয়া গেল না৷

আফগানিস্তান সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলরের (মাঝে) সঙ্গে আফগান প্রেসিডেন্ট এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীছবি: dapd

নিরাপত্তাই বড় শঙ্কা

আফগানিস্তান সম্মেলনে আফগানদের বড় অংশগ্রহণ থাকবে৷ এটাই স্বাভাবিক৷ আফগান সরকার থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ, শিক্ষার্থী, নারী সংগঠন, এমনকি ইমাম– সব অংশ থেকেই প্রতিনিধিত্ব ছিল বন সম্মেলনে৷ ২০১৪ সালের পর আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে সম্মেলনে অংশ নেওয়া কাবুলের বাসিন্দা নারী নেত্রী রোনসা ডোসেই সরাসরি জানালেন, আমাদের সীমান্ত আগে নিরাপদ রাখতে হবে৷ এজন্য পাকিস্তানের সহায়তা প্রয়োজন৷ কেননা, আমরা মনে করি, পাকিস্তানই সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে৷ তাই সেদেশের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনা কঠিন৷

রোনসা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিদেশি সেনারা সরে গেলে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে পারে৷

আফগানিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে রোনসা'র এই শঙ্কা অমূলক নয়৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণাও একই ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর মতে, আফগানিস্তানের সংকট নিরসনে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সমাজের দীর্ঘ সহযোগিতা৷ এই সহযোগিতা হতে হবে একইসঙ্গে নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন খাতে৷ একটি দেশের পুর্নগঠনে দশ বছর সময় যথেষ্ট নয়, জানান কৃষ্ণা৷

দশ বছর সহায়তা চান কারজাই

আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই অবশ্য আপাতত দশ বছরের সহায়তার অঙ্গীকারই চাইছেন৷ বন সম্মেলনে তিনি ২০১৪ সালের পরবর্তী এক দশক তাঁর দেশকে সহায়তার আহ্বান জানান৷ তাঁর সেই আহ্বান সাড়া দিয়েছে জার্মানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ৮৫টি দেশ এবং ১৫টি সংগঠন৷

আফগান সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনছবি: dapd

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, ২০১৪ সালে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পরও আন্তর্জাতিক সমাজের কাছ থেকে অব্যাহত নির্ভরযোগ্য সহায়তা পাবে আফগানিস্তান৷ তবে ভবিষ্যত সহায়তা হবে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা এবং পুর্নমিলন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন বন সম্মেলনে জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে আফগান জনসাধারণের সঙ্গে থাকতে প্রস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷

স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৮৯ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান ত্যাগের পর সেদেশের নিয়ন্ত্রণ আবারো চলে যায় জঙ্গিদের হাতে৷ ক্ষমতার শীর্ষে চলে আসে তালেবান৷ ২০১৪ সালে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আইসাফ বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগের পর সেদেশে যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই বিষয়েও সতর্ক করে দিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, আফগানিস্তান আবারো সন্ত্রাসবাদ এবং অশান্তির উৎসে পরিনত হলে গোটা বিশ্বকেই এর ক্ষতি পোহাতে হবে৷

বিনিময়

দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক সহায়তার বিনিময়ে আফগানিস্তান দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই আরো জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ বন সম্মেলনের পর আফগানিস্তান ও তার আন্তর্জাতিক সহযোগীদের এক ইশতেহারে বলা হয়েছে: ‘‘বেসামরিক মানুষদের রক্ষা, আইনের শাসন জোরদার করা এবং সব রকমের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে আফগানিস্তানে প্রাধান্য দেয়া হবে৷''

আন্তর্জাতিক আফগানিস্তান সম্মেলন শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জালমাই রাসুলও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও সুশাসনের প্রতিশ্রুতি দেন৷ তাঁর সঙ্গে যোগ দেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে৷ সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের উপস্থিত না থাকা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের অনেক কড়া প্রশ্নের মুখোমুখি হন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তবে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পাকিস্তান বন সম্মেলনে অংশ না নিলেও আফগানিস্তানের পুর্নগঠনে সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে৷ ফলে সেদেশের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও বন সম্মেলন সফল হয়েছে৷ অন্যদিকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাসুলি বলেন, আফগানিস্তানে শান্তি না ফিরলে পাকিস্তানেও শান্তি আসবে না৷ সুতরাং আন্তর্জাতিক সহায়তা শুধু আমাদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, পাকিস্তানের জন্যও৷

জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নানছবি: DW

বাংলাদেশের সহায়তার আশ্বাস

ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের পুর্নগঠনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে চায় বাংলাদেশ৷ বন সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ছিলেন জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসুদ মান্নান৷ আফগানিস্তানকে সহায়তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘একটি দেশকে নতুন করে গড়তে গেলে যেসব ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রয়োজন হয়, যেমন শিক্ষা, ব্যাংকিং, দূর্যোগ প্রতিরোধ -- শিক্ষা বলতে শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষা নয়, প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি সম্প্রসারণ, যুব উন্নয়ন -- এইসবগুলো ক্ষেত্রেই কিন্তু বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নয়ন করেছে গত চল্লিশ বছরে৷ এগুলোর ভিত্তিতে আমাদের নিজস্ব যে অভিজ্ঞতা আছে, সেগুলো আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই৷ এসব ব্যাপারে কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে, সেটা দিতেও বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে''৷

ইরানের আপত্তি

এদিকে, ২০১৪ সালের পর আফগানিস্তানে কোন প্রকার বিদেশি সেনা উপস্থিতির বিরোধিতা করেছে ইরান৷ সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর সালেহ বন সম্মেলনে বলেন, নির্ধারিত সময়ের পর আফগানিস্তানে বিদেশি সেনার উপস্থিতি সেদেশের স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে না৷

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পর মূলত সেনা প্রশিক্ষণ এবং বিশেষ বাহিনীর জন্য কিছু বিদেশি সেনা আফগানিস্তানে মোতান রাখার বিষয়ে একটি পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে৷ আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ ইরান এধরনের কোন উদ্যোগের বিরোধী৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ