মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রাক-নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ভেঙে মার্কিন সৈন্যদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আফগানিস্তানে রাখতে চলেছেন৷ সেটা কি আফগান খনিজ সম্পদের লোভে?
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প গত সপ্তাহে তাঁর বহুল প্রত্যাশিত আফগানিস্তান নীতি ঘোষণা করার সময় বলেন যে, তিনি শুধুমাত্র তাঁর ‘সহজাত প্রেরণার' উপর নির্ভর করে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্যদের পুরোপুরি অপসারণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এই সিদ্ধান্তের মুখ্য কারণ হিসেবে তিনি আফগানিস্তানে ইসলামপন্থি সন্ত্রাসের কথা বলেন৷ কিন্তু কাহিনির সেখানেই সমাপ্তি নয়৷
নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, ট্রাম্প আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ নিয়ে কথা বলেন ও গনি ‘‘তাঁদের প্রথম পর্যায়ের একটি আলাপচারিতায় খনিশিল্পকে অর্থনৈতিক সুযোগ হিসেবে তুলে ধরেন৷''
‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেশটিতে উত্তরোত্তর লিপ্ত থাকার পক্ষে এটা একটা যুক্তি হতে পারে'', এনওয়াইটি গত মাসে জানিয়েছিল৷ পত্রিকাটি লিখেছে, ‘‘(জুলাই মাসে) যখন আফগানিস্তান নীতিকে কেন্দ্র করে হোয়াইট হাউসে ক্রমেই আরো বেশি বিভাজনপূর্ণ বিতর্কের অবতারণা ঘটছে, তখন ট্রাম্পের তিনজন উচ্চপদস্থ সহকারী যুক্তরাষ্ট্রের রাসায়নিক শিল্পের মাইকেল এন. সিলভার নামের এক কর্মকর্তার সঙ্গে মিলিত হয়ে আফগানিস্তানে রেয়ার আর্থ আকরিক খননের সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন৷ মিস্টার সিলভারের কোম্পানি ‘অ্যামেরিকান এলিমেন্টস' বিশেষ করে এই রেয়ার আর্থ আকরিকের ব্যবসা করে থাকে, যা বিভিন্ন হাই-টেক পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়৷''
আহত আফগান যোদ্ধাদের কষ্ট
গত বছর প্রায় ১২ হাজার আফগান সৈনিক ও পুলিশকর্মী কর্তব্য পালন করতে গিয়ে তার মূল্য দিয়েছেন কোনো না কোনো অঙ্গ হারিয়ে – হাত, পা কিংবা চোখ৷ আজ তাঁরা প্রতিবন্ধী, অথচ সরকার বা সমাজের তরফ থেকে সাহায্য আসে অতি সামান্যই৷
২০১৫ সালে কুন্দুসে আহত হবার পর আফগান সৈনিক আবদুল রকিমকে চিকিৎসার জন্য কাবুলে দেশের বৃহত্তম সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ সেখানে তাঁর দু’টি পা-ই কেটে বাদ দিতে হয়৷ এছাড়া তাঁর কোমরের কাছ থেকে একটি গোলার টুকরো অস্ত্রোপচার করে বার করে নিতে হয়৷ সারা দেশে আফগান সেনাবাহিনীর ছ’টি হাসপাতাল আছে; আরো দু’টি তৈরি করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christine-Felice Röhrs
দেশের সেবায়
মার্কিন পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধুমাত্র এ বছরের প্রথম চার মাসে আফগান নিরাপত্তাবাহিনীর ৪,২৩৮ জন সদস্য আহত ও আরো ২,৫৩১ জন নিহত হয়েছেন৷ ২০১৬ সালে নিহত নিরাপত্তাকর্মীদের সংখ্যা ছিল মোট ৭,০০০; আহত হয়েছিলেন প্রায় ১২,০০০৷
ছবি: Hussain Sirat
‘শুধু’ একটা পা কাটা গেছে
কাবুলের সামরিক হাসপাতালে সৈনিক সেফাতুল্লাহ৷ তাঁর কপাল ‘ভালো’ – কুনার প্রদেশে তালেবানের রাখা একটি মাইনবোমার উপর পা ফেলে শুধু তাঁর ডান পাটা হাঁটুর নীচে অবধি জখম হয়৷ দেশে অস্ত্রোপচার সম্ভব নয় বলে অনেক আহত সৈনিক জমি-জমা বেচে বিদেশে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করেন৷
যুদ্ধে অঙ্গ হারিয়েছেন, এমন কিছু আফগান সৈনিক কাবুলে আফগান সেনাবাহিনীর একটি স্পোর্টস হলে ক্যানাডার ইনভিক্টাস গেমস-এর জন্য প্র্যাকটিস করছেন৷ সারা বিশ্বের প্রতিবন্ধী সেনাসদস্যদের জন্য এই ইনভিক্টাস গেমস একটি বিশেষ সুযোগ৷ কিন্তু আফগানিস্তানে অঙ্গহানির পরে যে সব সৈন্য সরকারের সাহায্য পেয়ে থাকেন, তাঁদের এক হিসেবে ভাগ্যবান বলা চলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christine-Felice Röhrs
বেঁচে থেকে লাভ?
মতিউল্লাহ ২০০৯ সালে কান্দাহারে গুরুতরভাবে আহত হন৷ অঙ্গচ্ছেদের পর তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন৷ পরে তিনি একটি ইউটিউব ভিডিওতে দেখেন, অন্যান্য দেশের প্রতিবন্ধীরা কি করতে পারেন ও নিজের সাহস ফিরে পান৷ মতিউল্লাহ আজ ‘‘বীরদের জন্য সাহায্য’’ নামের একটি এনজিও-র হয়ে কাজ করেন৷ তবে এখানেও তিনি ব্যতিক্রম, কেননা তিনি স্কুল পাস, তাঁর পরিবার তাঁকে সাহায্য করে থাকে ও তাঁর বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christine-Felice Röhrs
একেবারে একা সম্ভব নয়
শারীরিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ সাবেক আফগান সৈন্য ও পুলিশকর্মীকে একাই নিজেদের পথ করে নিতে হয়, কেননা তাঁরা প্রায় কোনোরকম সাহায্য পান না৷ তাঁদের অনেকেই লেখাপড়া জানেন না; অপরদিকে তাঁরা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকেও তাঁদের কিছু জানানো হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christine-Felice Röhrs
হাসপাতালে জায়গা কুলোয় না
অধিকাংশ ন্যাটো সৈন্য বিদায় নেওয়ার পর দেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের দায়িত্ব প্রায় পুরোপুরি আফগানিস্তানের উপর এসে পড়েছে – যার একটি ফল: ক্রমেই আরো বেশি নিরাপত্তাকর্মী গুরুতরভাবে আহত হচ্ছেন৷ আফগান সেনাবাহিনীর ছ’টি হাসরাতালে আর আহতদের জায়গা হচ্ছে না৷ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বা সামর্থ্যও আফগানিস্তানের নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Christine-Felice Röhrs
7 ছবি1 | 7
স্বভাবতই আফগানিস্তানের অব্যবহৃত খনিজ সম্পদ খনন করা হলে, দেশটি স্বয়ং তা থেকে উপকৃত হবে৷ অপরদিকে ট্রাম্প এই অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে আফগানিস্তান যুদ্ধের প্রভূত খরচ অংশত পুষিয়ে নিতে পারবেন৷
আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদের মূল্য এক থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলার বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান৷ দেশটিতে বিপুল পরিমাণ তামা, লোহা, ক্রোমাইট, পারদ, দস্তা, মূল্যবান রত্ন ও সেই সঙ্গে সোনা ও রুপা আছে – আরো বড় কথা, আফগানিস্তানে লিথিয়াম ও বিভিন্ন রেয়ার আর্থ এলিমেন্টের ডিপোজিট আছে, যা ব্যাটারি তৈরিতে কাজে লাগে৷
আফগান অর্থনীতির জন্য সুখবর
গত সপ্তাহে আফগান প্রেসিডেন্ট গনি একটি ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আফগানিস্তান নীতিকে স্বাগত জানানোর সময় বিশেষ করে মার্কিন-আফগান অর্থনৈতিক সহযোগিতার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন৷ ‘‘আমাদের এই দীর্ঘ ১৪ বছরের আফগান সংঘাতের অবসান ঘটানো উচিত, যাতে আগামী প্রজন্মেরা দেশের সম্পদ থেকে উপকৃত হতে পারে'', বলেন গনি৷
গনি উল্লেখ করেন যে, আফগানিস্তানের সবচেয়ে সমস্যাকর এলাকাগুলি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ; তাঁর সরকার ভবিষ্যতে খনিশিল্পের দিকে আরো বেশি নজর দেবেন৷
আফগানিস্তানে ক্ষমতার অন্তহীন লড়াই
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান হামলার ১৬ বছর পরও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটি ইসলামপন্থিদের সন্ত্রাসের কবল থেকে রেহাই পায়নি৷ কূটনৈতিক এলাকায় সাম্প্রতিক হামলাই বলে দিচ্ছে, জঙ্গিরা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
কাবুলের সবচেয়ে নিরাপদ এলাকায় হামলা
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ৩১ মে ভয়ঙ্কর ট্রাক বোমা হামলায় অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছে৷ এবার জঙ্গিরা হানা দিয়েছে কাবুলের ‘গ্রিন জোনে’ অবস্থিত অত্যন্ত সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকায়৷ হামলায় জার্মান অ্যাম্বাসিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ কোনো গোষ্ঠী তাৎক্ষণিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি৷ তবে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন তালেবান এবং আইএস অতীতে এই শহরে বড় হামলাগুলো করেছিল৷
ছবি: REUTERS/O. Sobhani
অতীতের পুনরাবৃত্তি
কাবুলের কূটনৈতিক এলাকায় এই হামলা দীর্ঘ ধারাবাহিকতারই পুনরাবৃত্তি৷ এর আগে মে মাসেই আইএসের বোমা হামলায় ৮ বিদেশি সৈন্য প্রাণ হারায়৷ এর আগে মার্চে কাবুলের কূটনৈতিক এলাকায় আফগান সামরিক হাসপাতালে হামলায় রোগী-ডাক্তার-নার্সসহ ৩৮ জন নিহত এবং ৭০-এর বেশি আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Hossaini
মরিয়া আক্রমণ
গত এপ্রিলে আফগানিস্তানের তালেবানরা সে দেশে থাকা যৌথ বাহিনী এবং আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর উপর আক্রমণ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়৷ জঙ্গি সংগঠনটি বলছে, চলতি বছর তারা আক্রমণের কৌশল বদলেছে৷ ২০১৬ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত মোল্লাহ আখতার মনসুরের নামে তারা এর নাম দিয়েছে, ‘অপারেশন মনসুর’৷
ছবি: Reuters
ট্রাম্পের আফগান নীতি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো তার আফগান নীতি ঘোষণা করেননি৷ আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগলিম্যান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ট্রাম্পের আফগান নীতি অনেক ক্ষেত্রেই ওবামা প্রশাসনের মতোই হবে৷ তাঁর মতে, ওবামার মতো ট্রাম্পও হয়ত তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে সমঝোতার ধারণার পথেই হাঁটবেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Ernst
আফগান শান্তি প্রক্রিয়া
কিন্তু তালেবানরা শান্তি আলোচনায় কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই জঙ্গি দল সমঝোতার পথে হাঁটবে বলে মনে হচ্ছে না৷ এখন যুদ্ধেই তাদের পূর্ণ মনোযোগ৷ ২০০১ সালের পর এরা এখন সবচেয়ে বেশি জেলা নিয়ন্ত্রণ করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
পাকিস্তানি সহায়তা
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি গত বছর বলেছিলেন, পাকিস্তান তালেবানকে সমঝোতার টেবিলে আনবে বলে আর আশা করা যাচ্ছে না৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসলামাবাদ তালেবানকে আফগানিস্তানে ভারতীয় প্রভাব কমাতে ব্যবহার করছে৷ পাকিস্তানি তালেবানের (তেহরিক-ই-তালেবান) সাবেক মুখপাত্র এহসানুল্লাহ এহসান সম্প্রতি ধরা পড়েন৷ তালেবানের ভারত সহায়তা দিচ্ছে– এমন অভিযোগ করার পর ইসলামাবাদ তাকে মাফ করে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Muslim
যুদ্ধবাজ নেতাদের ভূমিকা
তালেবান ছাড়াও আফগানিস্তান জুড়ে রয়েছে নানা গোষ্ঠিগত ও আঞ্চলিক যুদ্ধবাজ নেতা৷ আফগান রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে হেজবি ইসলামির নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার ২০ বছর পর এ বছরের মে মাসে কাবুলে ফিরে আসেন৷ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আফগান সরকার তার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছিল৷ এতে অন্যান্য যুদ্ধবাজ নেতা ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সরকারের সাথে সুসম্পর্ক গড়তে উৎসাহী হবে বলে আশা করেছিল সরকার৷
ছবি: Reuters/O.Sobhani
রাশিয়ার স্বার্থ
বহু বছর নিরাপদ দূরত্বে থাকার পর রাশিয়া আবার আফগানিস্তানে তার যোগাযোগ বাড়াতে শুরু করেছে৷ কিন্তু এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক অবস্থায় মনে হচ্ছে, রাশিয়া আর আগের মতো দীর্ঘস্থায়ী এই দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকতে চাচ্ছে না৷ গত কয়েক মাসে চীন, পাকিস্তান ও ইরানকে সাথে নিয়ে রাশিয়া বেশ কয়েকটি আফগান-সম্মেলনও করেছে৷
ছবি: picture-alliance/A. Druzhinin/RIA Novosti
অদক্ষ সরকার
ক্ষমতার এই অন্তহীন লড়াইয়ে প্রেসিডেন্ট গনির সমর্থন কেবলই কমছে৷ ব্যাপক দুর্নীতি এবং সরকারে থাকা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ সন্ত্রাস দমনের লড়াইকে দুর্বল করে দিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/K. Pempel
9 ছবি1 | 9
খনিজ সম্পদ উদ্ধার সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের মধ্যে কোনো যৌথ পরিকল্পনা করা হয়েছে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে খনি ও খনিজ তেল মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মির আহমদ জাওয়িদ সাদাত ডয়চে ভেলেকে বলেন যে, সে বিষয়ে কোনো সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি৷ আফগান সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, বলে সাদাত জানান৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, খনিশিল্প থেকে আফগান-মার্কিন দু'পক্ষেরই লাভবান হওয়া প্রয়োজন; ট্রাম্প যদি আফগান খনিশিল্পকে ‘যুদ্ধের মুনাফা' হিসেবে গণ্য করেন ও এ বিষয়ে তাঁর নীতি স্বচ্ছ না হয়, তাহলে আফগানিস্তানে সহিংসতা ও মার্কিন সৈন্যদের উপর আক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে, বলে তাদের ধারণা৷
জিহাদিরাও ভাগ চায়
২০০৭ সালে মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে ঘোষণা করে যে, আফগানিস্তানে অতুলনীয় খনিজ সম্পদ আছে৷ কিন্তু দুর্নীতিতে ডুবে থাকা খনিশিল্প তালিবানের অর্থসংগ্রহের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস – খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকাগুলিতে সহিংসতার একটা কারণই হলো তাই৷ দৃশ্যত আফগান সীমান্তে সরকারি চেকপয়েন্ট দিয়ে খোলাখুলি ভাবে আকর পাচার হয়ে থাকে৷
অপরদিকে মার্কিন সংস্থারা আফগানিস্তানে মাইনিং কন্ট্র্যাক্ট পেতে শুরু করলে, তালিবান নিজেদের প্রচারণার কাজে তা ব্যবহার করবে, বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা৷ এছাড়া তারা তাদের অর্থসংগ্রহের এমন একটি উৎস বিনাযুদ্ধে ছেড়ে দেবে না৷ তালিবান ও ইসলামিক স্টেট ছাড়া আফগান গোষ্ঠীপতিরাও এই খনিজ সম্পদে তাদের ভাগ চাইবেন, বলে বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে দিয়েছেন৷ কয়েক হাজার বাড়তি মার্কিন সৈন্য পাঠিয়ে খনিশিল্পে কোনো ব্যাপক পরিবর্তন আনা যাবে, বলে তারা মনে করেন না – যদিও খনিশিল্প থেকে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নতি ঘটার আশা আছে৷
কাবুলে বিধ্বংসী গাড়ি বোমা
৩১শে মে সকালে কাবুলের দূতাবাস এলাকায় একটি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৯০ জন নিহত ও আরো ৪০০ জন আহত হয়েছেন বলে আফগান কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে প্রকাশ৷ হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
কালো ধোঁয়া
বোমাটি একটি ময়লা ফেলার গাড়িতে রাখা ছিল বলে রয়টার্সের খবরে প্রকাশ৷ বিস্ফোরণের পর দূতাবাস এলাকার আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়৷ জার্মান দূতাবাসসহ বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের অবস্থান এই এলাকায়৷ আফগান রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবনও এখানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
জার্মান দূতাবাসের প্রহরী নিহত
কাবুলের জার্মান দূতাবাস এই বোমা আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কিনা, তা এখনও অজ্ঞাত৷ কিন্তু বিস্ফোরণে জার্মান দূতাবাসের এক আফগান সিকিউরিটি গার্ড নিহত ও দূতাবাসের দু’জন কর্মী আহত হয়েছেন বলে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
শক্তিশালী বোমা
বিস্ফোরণ এতই জোরালো ছিল যে, অনেক দূরের বাড়িঘরেরও জানালা-দরজা উড়ে গেছে৷ এই হামলার যাবতীয় দায়িত্ব অস্বীকার করেছে তালেবান৷ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট ইতিপূর্বে কাবুলে এ ধরনের আক্রমণ চালিয়েছে৷
ছবি: Reuters/O. Sobhani
লক্ষ্য ছিল ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভ?
ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন ‘রেজোলিউট সাপোর্ট’ মিশন জানিয়েছে যে, আফগান নিরাপত্তা বাহিনী বোমার গাড়িটিকে ‘গ্রিন জোনে’ ঢুকতে দেয়নি৷ আরএস মিশনের হেডকোয়ার্টার্স ঐ গ্রিন জোনেই অবস্থিত৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
একাধিক দূতাবাসের ক্ষতি
কাবুলের ফরাসি, তুর্কি ও চীনা দূতাবাসগুলি বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে দৃশ্যত কোনো কূটনীতিক আহত হননি৷ বিবিসি জানায়, তাদের এক ড্রাইভার সাংবাদিকদের অফিসে নিয়ে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন৷ চারজন সাংবাদিককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: Reuters/H. Sayedi
আফগান আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরৎ পাঠানো বন্ধ রাখছে জার্মানি
একটি চার্টার উড়াল ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আর কোনো উড়াল হবার সম্ভাবনা নেই৷ কারণ, হিসেবে বলা হয়েছে, কাবুলের জার্মান দূতাবাসের কর্মীদের এখন প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই৷ গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে মোট ৯২ জন আফগান নাগরিককে বিমানযোগে স্বদেশে ফেরৎ পাঠানো হয়৷
ছবি: Reuters/M. Ismail
‘আরেকটা কঠিন বছর’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন সৈন্যদের সাবধান করে দিয়ে বলেছেন যে, উগ্রপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ‘‘আরো একটি সংকটজনক বছরের’’ জন্য তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে৷