ন্যাটো বাহিনী সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার পর, আফগানিস্তানকে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, এমনকি টানাহ্যাঁচড়াও হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে বা ‘অস্ত্র' হিসেবে ব্যবহার হতে পারে তালেবান,
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং সেনাপ্রধান পারভেজ মুশাররফ সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘পাকিস্তানের জন্য বিপদের কথা হলো, আফগানিস্তানের ওপর ভারতের প্রভাব রয়েছে৷ তাই তারা আফগানদের মধ্যে পাকিস্তানবিরোধী ভাবমূর্তি গড়ে তুলবে৷''
অন্যদিকে এ মাসেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ বিবিসি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘যেসব জঙ্গি দেশের জন্য হুমকি নয়, তাদের টার্গেট করে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার কোনো মানে নেই৷ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যারা শত্রু, তাদের আমাদের শত্রু বানাতে হবে কেন?'' উল্লেখ্য, এ কথা বলার সময় হাক্কানি নেটওয়ার্কের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্কে কোনো নতুন মোড় আসেনি৷ পাকিস্তানের রাজনীতিতে তালেবান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করছে৷ আফগানিস্তান থেকে যৌথ-বাহিনী চলে যাওয়ার পর সেখানকার অবস্থা একই রকম হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
লন্ডনভিত্তিত সাংবাদিক ও গবেষক ফারুক সুলেহরিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘বর্তমানে দিল্লির সাথে কাবুলের খুব ভালো সম্পর্ক৷ অন্যদিকে ইসলামাবাদ আফগান তালেবানদের সহায়তা করছে, সরতাজ আজিজ যা প্রকাশ্যেই বলেছেন৷ তাই পাকিস্তান যে আফগানিস্তানকে তাদের রাজনৈতিক ক্রীড়াক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইবে তার আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷''
যে লড়াই আজও চলছে...
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত নিয়ে গবেষণা করছে হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট রিসার্চ (এইচআইআইকে)৷ তাদের হিসেবে, গত বছর গোটা বিশ্বে চারশোর মতো সংঘাত ঘটেছে, যার বিশটি সরাসরি যুদ্ধ৷ এই নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
শান্তির কোনো লক্ষণ নেই
ধর্মান্ধতা, দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থের লোভ কিংবা ক্ষমতা দখলের বাসনা – হাজার হাজার বছর ধরে যুদ্ধ, সংঘাতের কারণ ঘুরে ফিরে এগুলোই৷ ২০১৩ সালেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট রিসার্চ (এইচআইআইকে) গত বছরের উল্লেখযোগ্য কিছু সংঘাত, যুদ্ধের কথা প্রকাশ করেছে ‘কনফ্লিক্ট ব্যারোমিটার ২০১৩’ শিরোনামে৷
ছবি: Reuters
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো
গত বছর কিভু-তে সেনাবাহিনী নিয়মিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে৷ ২০১৩ সালের শেষের দিকে অবশ্য সরকার ঘোষণা দেয়, বিদ্রোহীদের দমনে সক্ষম হয়েছে তারা৷ অন্যদিকে এম২৩ গোষ্ঠীর ঘোষণা, এখন থেকে রাজনৈতিক পথে দাবি আদায়ের চেষ্টা করবে তারা৷
ছবি: Melanie Gouby/AFP/GettyImages
মালি
মালিতে উগ্র ইসলামপন্থিরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে৷ ২০১২ সালে সে দেশের উত্তরাঞ্চলের একটা বড় অংশ তাদের দখলে চলে যায়৷ ফলশ্রুতিতে মালি সরকারকে যুদ্ধে সহায়তায় এগিয়ে আসে ফ্রান্স৷ এরপর পিছু হটতে বাধ্য হয় উগ্র ইসলামপন্থিরা৷ বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মালিতে শান্তি রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে৷ তবে সে দেশে বিভিন্ন জঙ্গি এবং আত্মঘাতী হামলার খবর মাঝে মাঝেই শোনা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাইজেরিয়া
উগ্র ইসলামপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম নাইজেরিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷ এই লক্ষ্য পূরণে সে দেশের খ্রিষ্টান এবং মধ্যপন্থি মুসলমানদের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে গোষ্ঠীটি৷ ছবিতে একটি হামলায় নিহতদের জন্য সমাধি খুঁড়ছেন তাদের খ্রিষ্টান আত্মীয়রা৷ নাইজেরিয়ায় আরো একটি সংঘাত চলছে৷ তৃণভূমি ইস্যুতে খ্রিষ্টান কৃষকরা লড়াই করছেন গবাদি পশু পালক মুসলমানদের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুদান
গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী আফ্রিকার বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারি বাহিনী এবং তাদের অনুসারীদের সঙ্গে লড়াই করছে৷ যুদ্ধের কারণে কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে এবং অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে নিযুক্ত ন্যাটো বাহিনী স্থানীয় বাহিনীর হাতে সে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পরও সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ তালেবান এবং অন্যান্য চরমপন্থি গোষ্ঠী সে দেশের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী হামলা এবং ‘বুবি-ট্র্যাপ’-এর মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে সংঘাত থামার কোন লক্ষণ নেই৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, আফগানিস্তানে ২০১৩ সালে আড়াই হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মেক্সিকো
মাদক, মানবপাচার, ব্ল্যাকমেল এবং চোরাচালানের মতো কর্মকাণ্ড মেক্সিকোর মাফিয়াদের অর্থ উপার্জনের উৎস৷ আয়ের এসব উৎস নিরাপদ রাখতে মাফিয়ারা একে অপরের সঙ্গে এবং প্রয়োজনে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ সে দেশে প্রতি সপ্তাহেই দাঙ্গার ঘটনা ঘটে৷ মেক্সিকো সরকারের হিসেব অনুযায়ী, গত বছর সে দেশে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সিরিয়া
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে৷ সেদেশ কার্যত বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে গেছে৷ কিছু অংশের দখল রয়েছে সে দেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনীর কাছে, বাকি বিভিন্ন অঞ্চল মধ্যপন্থি বিরোধী দল, উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দখলে চলে গেছে৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি মানুষ নিহত এবং নব্বই লাখের মতো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: Mohmmed Al Khatieb/AFP/Getty Images
ফিলিপাইন্স
চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিপাইন্সে মোরো সম্প্রদায় স্বাধীনতার দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷ মাঝে কিছুদিন অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকার পর ২০১৩ সালে আবারো তারা শুরু হয়েছে সহিংস সংগ্রাম৷ বিদ্রোহী গোষ্ঠী এমএনএলএফ সে দেশের দক্ষিণের দ্বীপগুলোর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে৷ যুদ্ধের কারণে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: Reuters
সোমালিয়া
সোমালিয়ায় আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর যুদ্ধ চলছে গত আট বছর ধরে৷ জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সেনাদের সহায়তায় সোমালিয়া সরকার আল-শাবাবকে ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে৷ তবে এখনো সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় অংশ জঙ্গি গোষ্ঠীর দখলে রয়েছে৷
ছবি: Mohamed Abdiwahab/AFP/Getty Images
দক্ষিণ সুদান
তিন বছর আগে স্বাধীনতা লাভ করা দক্ষিণ সুদানে এখনো সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ সে দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্টের পক্ষের সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল ফোর্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া প্রতিবেশী দেশ সুদানের দুটি রাজ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত রয়েছে দক্ষিণ সুদানের সেনারা৷
ছবি: Reuters
11 ছবি1 | 11
হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ সিগফ্রিড ও ভল্ফ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘বিভিন্ন তথ্য থেকে আমি এটা বুঝতে পেরেছি যে, আফগানিস্তান থেকে ভারতের আধিপত্য কেড়ে নিতে তালেবানকে একটা ‘টুল' বা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে পাকিস্তান৷''
এ বছরের প্রথমদিকে আফগানিস্তানে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্যের ঘোষণা দেয় ভারত৷ ভারত এর আগে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য কোনো দেশকে দেয়নি৷ তবে কাবুল ও ওয়াশিংটনের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষীয় নিরাপত্তা চুক্তি (বিএসএ) হয়েছে, তাতে পাকিস্তান বা ভারতের আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করা কঠিন হবে৷